শয়তান হল একটি চরিত্র যাকে বিভিন্ন ধর্ম দুষ্ট বা খারাপ প্রকৃতির, একই সাথে ক্ষমতাশালী, স্রষ্টার এবং মানবজাতির শত্রু বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। সাধারনভাবে ধরা হয় যে শয়তান উৎপথগামী ও অবিশ্বাসী এবং অন্যান্যদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। শয়তান শব্দটির শাব্দিক অর্থ হল অপবাদদানকারী ব্যক্তি অথবা অভিশপ্ত।আরবি ভাষায় শয়তান (شيطان) মানে "বিপথে", "দূরবর্তী", বা মাঝে মাঝে "শয়তান" এবং হিব্রু ভাষায় সাতান ( שָּׂטָן ) মানে "শত্রু" বা "দুশ্মন" । ইব্রাহিমীয় ধর্মের গ্রন্থসমূহে আবির্ভুত একটি চরিত্র যে মানবজাতির মধ্যে মন্দ, প্রতারণা এবং প্রলোভন এনেছে, এবং মানবজাতির বিপথগামী হিসাবে পরিচিত হয়। কুরআন এবং এর পূর্বসূরী বাইবেল ইত্যাদি ধমর্গ্রন্থ মতে ইবলিশ নামীয় ফেরেশতা পথভ্রষ্ট হয়ে শয়তানে পরিণত হয়েছে যে মানুষকে ধোকা দিয়ে পথভ্রষ্ট করার ক্ষমতা রাখে এবং চেষ্টা করে চলছেন। এই ফেরেশতা আদিতে সৃষ্টিকর্তার অনুগত ছিল। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার আদেশ প্রতিপালনে অস্বীকার করে সে শয়তানে পরিণত হয়। সে মিথ্যা এবং পাপের পথে মানবজাতিকে প্রলুব্ধ করে চলেছে। হিব্রু বাইবেল এবং নিউ টেস্টামেন্ট, সাতান প্রাথমিকভাবে একটি ফরিয়াদি এবং প্রতিপক্ষ, একটি সন্দেহাতীতভাবে অমঙ্গলকামনাকারী সত্তা। ইবলিস বা শয়তান কুরআন অণুযায়ী আল্লাহ ধোঁয়াহীন আগুন থেকে বা আগুনের বিশুদ্ধ শিখা অন্যান্য সব জিন সহ থেকে ইবলিসকে এবং মানুষকে মৃত্তিকা দ্বারা তৈরি করেছেন। ঔদ্ধত্য ছাড়াও ইবলিসের প্রাথমিক বৈশিষ্ট যে সে পুরুষ, নারী, এবং জিনদের হৃদয়ের মধ্যে মন্দ পরামর্শ নিক্ষেপ করা ছাড়া অন্যান্যশক্তি ক্ষমতা নেই ।
শয়তান সম্পর্কে কুরআনে যা বর্নণা দেয়া আছে ?
(*) এটা বিতাড়িত শয়তানের উক্তি নয়। (At-Takwir: 25)
(*) হে আমার পিতা, শয়তানের এবাদত করো না। নিশ্চয় শয়তান দয়াময়ের অবাধ্য। (Maryam: 44)
(*) এই কোরআন শয়তানরা অবতীর্ণ করেনি। (Ash-Shu'araa: 210)
(*) নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। (Al-Israa: 27)
(*) শয়তান তাদেরকে বশীভূত করে নিয়েছে, অতঃপর আল্লাহর স্মরণ ভূলিয়ে দিয়েছে। তারা শয়তানের দল। সাবধান, শয়তানের দলই ক্ষতিগ্রস্ত। (Al-Mujaadila: 19)
(*) আমি আপনাকে বলব কি কার নিকট শয়তানরা অবতরণ করে? (Ash-Shu'araa: 221)
(*) এবং তাকে সংরক্ষিত করেছি প্রত্যেক অবাধ্য শয়তান থেকে। (As-Saaffaat: 7)
(*) আমি আকাশকে প্রত্যেক বিতাড়িত শয়তান থেকে নিরাপদ করে দিয়েছি। (Al-Hijr: 17)
(*) শয়তান তোমাদের অনেক দলকে পথভ্রষ্ট করেছে। তবুও কি তোমরা বুঝনি? (Yaseen: 62)
(*) আমার বান্দাদেরকে বলে দিন, তারা যেন যা উত্তম এমন কথাই বলে। শয়তান তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধায়। নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (Al-Israa: 53)
(*) শয়তান যেন তোমাদেরকে নিবৃত্ত না করে। সে তোমাদের প্রকাশ্য শুত্রু। (Az-Zukhruf: 62)
(*) যারা ঈমানদার তারা যে, জেহাদ করে আল্লাহর রাহেই। পক্ষান্তরে যারা কাফের তারা লড়াই করে শয়তানের পক্ষে সুতরাং তোমরা জেহাদ করতে থাক শয়তানের পক্ষালম্বনকারীদের বিরুদ্ধে, (দেখবে) শয়তানের চক্রান্ত একান্তই দুর্বল। (An-Nisaa: 76)
(*) শয়তানরাই মানুষকে সৎপথে বাধা দান করে, আর মানুষ মনে করে যে, তারা সৎপথে রয়েছে। (Az-Zukhruf: 37)
(*) তারা শয়তানের মত, যে মানুষকে কাফের হতে বলে। অতঃপর যখন সে কাফের হয়, তখন শয়তান বলেঃ তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি বিশ্বপালনকর্তা আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করি। (Al-Hashr: 16)
(*) বলুনঃ হে আমার পালনকর্তা! আমি শয়তানের প্ররোচনা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি, (Al-Muminoon: 97)
(*) আর সকল শয়তানকে তার অধীন করে দিলাম অর্থৎ, যারা ছিল প্রাসাদ নির্মাণকারী ও ডুবুরী। (Saad: 37)
(*) অতএব, যখন আপনি কোরআন পাঠ করেন তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করুন। (An-Nahl: 98)
(*) তারা আল্লাহকে পরিত্যাগ করে শুধু নারীর আরাধনা করে এবং শুধু অবাধ্য শয়তানের পূজা করে। (An-Nisaa: 117)
(*) কতক মানুষ অজ্ঞানতাবশতঃ আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে এবং প্রত্যেক অবাধ্য শয়তানের অনুসরণ করে। (Al-Hajj: 3)
(*) আমার কাছে উপদেশ আসার পর সে আমাকে তা থেকে বিভ্রান্ত করেছিল। শয়তান মানুষকে বিপদকালে ধোঁকা দেয়। (Al-Furqaan: 29)
(*) হে বনী-আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের এবাদত করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? (Yaseen: 60)
(*) হে ঈমানদারগণ, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, তখন তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে। যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া তোমাদের প্রতি না থাকত, তবে তোমাদের কেউ কখনও পবিত্র হতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করেন। আল্লাহ সবকিছু শোনেন, জানেন। (An-Noor: 21)
(*) তোমাদের যে দুটি দল লড়াইয়ের দিনে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল শয়তান তাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিল, তাদেরই পাপের দরুন। (Aali Imraan: 155)
(*) শয়তান তোমাদের শত্রু; অতএব তাকে শত্রু রূপেই গ্রহণ কর। সে তার দলবলকে আহবান করে যেন তারা জাহান্নামী হয়। (Faatir: 6)
(*) আর যদি শয়তানের প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে আল্লাহর শরণাপন্ন হও তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী। (Al-A'raaf: 200)
(*) হে আমার পিতা, আমি আশঙ্কা করি, দয়াময়ের একটি আযাব তোমাকে স্পর্শ করবে, অতঃপর তুমি শয়তানের সঙ্গী হয়ে যাবে। (Maryam: 45)
(*) পক্ষান্তরে যারা শয়তানের ভাই, তাদেরকে সে ক্রমাগত পথভ্রষ্ট তার দিকে নিয়ে যায় অতঃপর তাতে কোন কমতি করে না। (Al-A'raaf: 202)
(*) সে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদেরকে আশ্বাস দেয়। শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয়, তা সব প্রতারণা বৈ নয়। (An-Nisaa: 120)
(*) যার প্রতি আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন। শয়তান বললঃ আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট অংশ গ্রহণ করব। (An-Nisaa: 118)
(*) আপনি কি লক্ষ্য করেননি যে, আমি কাফেরদের উপর শয়তানদেরকে ছেড়ে দিয়েছি। তারা তাদেরকে বিশেষভাবে (মন্দকর্মে) উৎসাহিত করে। (Maryam: 83)
(*) যদি শয়তানের পক্ষ থেকে আপনি কিছু কুমন্ত্রণা অনুভব করেন, তবে আল্লাহর শরণাপন্ন হোন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (Fussilat: 36)
(*) স্মরণ করুণ, আমার বান্দা আইয়্যুবের কথা, যখন সে তার পালনকর্তাকে আহবান করে বললঃ শয়তান আমাকে যন্ত্রণা ও কষ্ট পৌছিয়েছে। (Saad: 41)
(*) শয়তান সম্পর্কে লিখে দেয়া হয়েছে যে, যে কেউ তার সাথী হবে, সে তাকে বিভ্রান্ত করবে এবং দোযখের আযাবের দিকে পরিচালিত করবে। (Al-Hajj: 4)
(*) যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত করে দেই, অতঃপর সে-ই হয় তার সঙ্গী। (Az-Zukhruf: 36)
(*) ফেরেশতারা বলবে, আপনি পবিত্র, আমরা আপনার পক্ষে, তাদের পক্ষে নই, বরং তারা জিনদের পূজা করত। তাদের অধিকাংশই শয়তানে বিশ্বাসী। (Saba: 41)
(*) তার সঙ্গী শয়তান বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমি তাকে অবাধ্যতায় লিপ্ত করিনি। বস্তুতঃ সে নিজেই ছিল সুদূর পথভ্রান্তিতে লিপ্ত। (Qaaf: 27)
(*) যাদের মনে ভয় রয়েছে, তাদের উপর শয়তানের আগমন ঘটার সাথে সাথেই তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনাশক্তি জাগ্রত হয়ে উঠে। (Al-A'raaf: 201)
(*) অবশেষে যখন সে আমার কাছে আসবে, তখন সে শয়তানকে বলবে, হায়, আমার ও তোমার মধ্যে যদি পূর্ব-পশ্চিমের দূরত্ব থাকত। কত হীন সঙ্গী সে। (Az-Zukhruf: 38)
(*) আমি আপনার পূর্বে যে সমস্ত রাসূল ও নবী প্রেরণ করেছি, তারা যখনই কিছু কল্পনা করেছে, তখনই শয়তান তাদের কল্পনায় কিছু মিশ্রণ করে দিয়েছে। অতঃপর আল্লাহ দূর করে দেন শয়তান যা মিশ্রণ করে। এরপর আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহকে সু-প্রতিষ্ঠিত করেন এবং আল্লাহ জ্ঞানময়, প্রজ্ঞাময়। (Al-Hajj: 52)
(*) অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রনা দিল, বললঃ হে আদম, আমি কি তোমাকে বলে দিব অনন্তকাল জীবিত থাকার বৃক্ষের কথা এবং অবিনশ্বর রাজত্বের কথা? (Taa-Haa: 120)
(*) এবং অধীন করেছি শয়তানদের কতককে, যারা তার জন্যে ডুবুরীর কাজ করত এবং এ ছাড়া অন্য আরও অনেক কাজ করত। আমি তাদেরকে নিয়ন্ত্রন করে রাখতাম। (Al-Anbiyaa: 82)
(*) যারা শয়তানী শক্তির পূজা-অর্চনা থেকে দূরে থাকে এবং আল্লাহ অভিমুখী হয়, তাদের জন্যে রয়েছে সুসংবাদ। অতএব, সুসংবাদ দিন আমার বান্দাদেরকে। (Az-Zumar: 17)
(*) এরা যে রয়েছে, এরাই হলে শয়তান, এরা নিজেদের বন্ধুদের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করে। সুতরাং তোমরা তাদের ভয় করো না। আর তোমরা যদি ঈমানদার হয়ে থাক, তবে আমাকে ভয় কর। (Aali Imraan: 175)
(*) তিনি বললেনঃ বৎস, তোমার ভাইদের সামনে এ স্বপ্ন বর্ণনা করো না। তাহলে তারা তোমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে। নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য। (Yusuf: 5)
(*) হে ঈমানদার গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (Al-Baqara: 208)
(*) হে মানব মন্ডলী, পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী ভক্ষন কর। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে নিঃসন্দেহে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (Al-Baqara: 168)
(*) নিশ্চয় যারা সোজা পথ ব্যক্ত হওয়ার পর তৎপ্রতি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে, শয়তান তাদের জন্যে তাদের কাজকে সুন্দর করে দেখায় এবং তাদেরকে মিথ্যা আশা দেয়। (Muhammad: 25)
(*) সুতরাং আপনার পালনকর্তার কসম, আমি অবশ্যই তাদেরকে এবং শয়তানদেরকে একত্রে সমবেত করব, অতঃপর অবশ্যই তাদেরকে নতজানু অবস্থায় জাহান্নামের চারপাশে উপস্থিত করব। (Maryam: 68)
(*) আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যে, যা আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ হয়েছে আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি এবং আপনার পূর্বে যা অবর্তীণ হয়েছে। তারা বিরোধীয় বিষয়কে শয়তানের দিকে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, যাতে তারা ওকে মান্য না করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়। (An-Nisaa: 60)
(*) এমনিভাবে আমি প্রত্যেক নবীর জন্যে শত্রু করেছি শয়তান, মানব ও জিনকে। তারা ধোঁকা দেয়ার জন্যে একে অপরকে কারুকার্যখচিত কথাবার্তা শিক্ষা দেয়। যদি আপনার পালনকর্তা চাইতেন, তবে তারা এ কাজ করত না। (Al-An'aam: 112)
(*) আমি সর্বনিম্ন আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুসজ্জত করেছি; সেগুলোকে শয়তানদের জন্যে ক্ষেপণাস্ত্রবৎ করেছি এবং প্রস্তুত করে রেখেছি তাদের জন্যে জলন্ত অগ্নির শাস্তি। (Al-Mulk: 5)
তাছাড়াও আরো অনেক আয়াত আছে যেখানে শয়তান সম্পর্কে আরো বিস্তারিত বলা হয়েছে । মানুষ মাত্রই ভুল পোস্টের মাঝে ভুল থাকলে,পাঠকদের অনুরোধ করছি ক্ষমাদৃষ্টিতে দেখার জন্য এবং ভুলগুলো ধরিদিবেন অবশ্যয় ভুল সংশোধনীয় আপ্রয়ন চেষ্টা করবো ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:১৮