হুররেম সুলতান জিনি রোক্সেলানা হিসেবেও পরিচিত ছিলেন,তিনি উসমানীয় সম্রাট প্রথম সুলাইমানের প্রিয়তম প্রমোদ দাসী বা উপপত্নী এবং পরবর্তীকালে তার বৈধ স্ত্রী ও সম্রাটের সন্তান শাহজাদা মুহাম্মদ, মিরহিমাহ সুলতান, শাহজাদা আবদুল্লাহ, সুলতান দ্বিতীয় সেলিম, শাহজাদা বায়েজিদ এবং শাহজাদা জাহাঙ্গীরের মাতা।তিনি ছিলেন উসমানীয় ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাধর নারীদের মধ্যে একজন এবং নারীদের সালতানাত নামে পরিচিত শাসনকালের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব। তার স্বামী প্রথম সুলায়মানের শাসনকালে তিনি সুলতানের প্রধান স্ত্রী বা হাসেকি সুলতান ছিলেন। তিনি তার স্বামীর মাধ্যমে ক্ষমতা অর্জন করেন এবং উসমানীয় সাম্রাজ্যের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করেন তাছাড়াও তিনি সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।কিছু ঐতিহাসিকের মতে জন্মসূত্রে রোক্সেলানার আসল নাম ছিল আলেকজান্দ্রা রুসলানা লিসোভস্কা বা আনাস্তাযজা লিসোভস্কা এবং শৈশবে তার ডাকনাম ছিল নাস্তিয়া । অটোম্যানদের মধ্যে তিনি প্রধানত হাসেকি হুররেম সুলতান বা হুররেম হাসেকি সুলতান হিসেবে পরিচিত ছিলেন পাশাপাশি আরও পরিচিত ছিলেন রোক্সেলানা, রোক্সোলানা, রোক্সেলানে, রোসসা এবং রুজিকা নামে আর তুর্কি ভাষায় হুররেম আর ফার্সি ভাষায় ভাষায় খুররাম অর্থাত সদা প্রফুল্ল এবং আরবিতে করিমা অর্থাত অভিজাত। রোক্সেলানা সম্ভবত তার মূল নাম নয় বরং তার ডাকনাম ছিল যা তার রুসাইন বংশসূত্রকে নির্দেশ করত সে সময়ের প্রচলিত নাম "রুস্লানা"র সাথে তুলনা করে প্রাচীন রোক্সোলানির নামানুসারে রোক্সেলোনি বা রোক্সেলানি ১৫শ শতাব্দী পর্যন্ত ইউক্রেনীয়দের মাঝে একটি অন্যতম প্রচলিত নাম ছিল। সুতরাং তার ডাকনামের শাব্দিক অর্থ হল রুথেনিয়ার ব্যক্তি ।
প্রায়য় ১৬শ-শতাব্দীতে অঙ্কিত Rossa Solymanni uxor নামক হুররেম সুলতানের লাতিন তৈলচিত্র
আধুনিক তথ্যলিপিসমুহে রোক্সেলানার শৈশবের কোন তথ্য পাওয়া যায় না এ সকল তথ্যভাণ্ডার রোলেক্সানার রুসাইন এবং ইউক্রেনীয় জাতিত্ব অথবা তার জন্মস্থান হিসেবে পোল্যান্ড রাজ্যকে উল্লেখ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ১৬শ শতাব্দীর মাঝামাঝি ক্রিমীয় খানাতে লিথুনিয়ার রাজ ডিউক জমিদারির প্রতিনিধি মিখালন লিটভাইন তার ১৫৪৮ সাল থেকে ১৫৫১ সালের ভিতরে রচনা এবাউট কাস্টমস অফ তাতারস লিথুনিয়ান্স এন্ড মস্কো De moribus tartarorum, lituanorum et moscorum বাণিজ্য বিষয়ক বর্ণনার মাঝে উল্লেখ করেন যে বর্তমান তুর্কি সম্রাটের সবচেয়ে প্রিয়তম স্ত্রী তার ভবিষ্যৎ পুত্রের মাতা যে তার পরবর্তীকালে শাসন করবেন তিনি আমাদের ভূমি থেকে অপহৃত হয়েছেন।১৬শ শতাব্দীর পরবর্তী এবং ১৭শ শতাব্দীর শুরুর দিকে তুর্কি বিষয়ে গবেষক পোলিশ কবি সামুয়েল ত্বারদভস্কির দেয়া তথ্য অনুসারে হুররেম সম্ভবত কোন ইউক্রেনীয় অর্থোডক্স ধর্মযাজক পিতার ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন। তিনি পোল্যান্ড রাজ্যের রুথেনীয় ভয়ভডেশিপের প্রধান শহর ল্বও এর ৬৮ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বের রুহাটাইন নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন যা বর্তমান পশ্চিম ইউক্রেন ।১৫২০ এর দশকে ক্রিমিয়ার তাতাররা ওই এলাকার একটি তড়িৎ অভিযানের সময় তাকে বন্দী করেন এবং একজন দাসী হিসেবে নিয়ে আসেন। সম্ভবত প্রথমে ক্রিমিয়ার নগরী কাফফায়, যা দাস ব্যবসার একটি প্রধান কেন্দ্র তারপর কনস্টান্টিনোপলে এবং তাকে প্রথম সুলাইমানের হারেমের জন্য বাছাই করেন।
জার্মান বারোক চিত্রশিল্পী অ্যান্টন হিকেল এর আঁকা রোলেক্সানা এবং প্রথম সুলাইমান আনুমানিক ১৭৮০ সাল ।
অল্প সময়ের মধ্যেই রোক্সেলেনা তার মনিব সুলায়মানের সুনজরে চলে আসেন এবং সমসাময়িক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ঈর্ষার পাত্রীতে পরিণত হন। শীঘ্রই তিনি সুলায়মানের প্রিয়তম সঙ্গিনী বা হাসেকি সুলতান হয়ে ওঠেন। সুলতানের উপর হুররামের প্রভাবের কথা দ্রুত আশেপাশের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। তিনিই সুলতানের সর্বাধিক সংখ্যক সন্তানের জন্ম দেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে চিরায়ত প্রথা ভঙ্গ করে তিনি দাসত্ব হতেও মুক্তি লাভ করেন। দুইশত বছরের অটোম্যান ঐতিহ্যকে ভঙ্গ করে একজন প্রাক্তন উপপত্নী এভাবে অবশেষে সুলতানের বৈধ পত্নী হয়ে ওঠেন যা প্রাসাদ এবং নগরীর প্রত্যক্ষদর্শীদের জন্য অত্যন্ত হতবাককারী একটি বিষয় ছিল।এই ঘটনা সুলাইমানকে ওরহান গাজির ১৩২৬ সাল থেকে ১৩৬২সালের পর প্রথম দাসী বিবাহকারী সুলতানের পরিচয় এনে দেয় এবং প্রাসাদে হুররামের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে যার ফলশ্রুতিতে তার অন্যতম পুত্র দ্বিতীয় সেলিম ১৫৬৬ সালে সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার লাভ করেন।
১৫৪৯ সালে সিগিস্মন্ড দ্বিতীয় অগাস্টাসকে পোল্যান্ডের সিংহাসনে আরোহণ করায় অভিনন্দন জানিয়ে লেখা হুররেম সুলতানের পত্র।
ইস্তাম্বুলের হেরেমে হুররেম সুলতান সুলায়মানের প্রথম স্ত্রী মাহিদেভরান সুলতানের একজন শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন। ১৫২১ সালে হুররেম তার প্রথম পুত্র মেহমেদের জন্ম দেন এবং এরপর আরও চার পুত্র যা সুলতানের একমাত্র পুত্রের মাতা হিসেবে অর্জিত মাহিদেভরানের মর্যাদাকে ধূলিসাৎ করে দেয়। সুলায়মানের মাতা, আয়শে হাফসা সুলতান এই দুই মহিলার শত্রুতাকে একপাক্ষিকভাবে গোপন রাখতেন কিন্তু ১৫৩৪ সালে তার মৃত্যুর পর একটি তুমুল লড়াই সঙ্ঘটিত হয় যেখানে মাহিদেভরান হুররেমকে মারধর করেন। এই ঘটনায় সুলাইমান ক্ষুব্ধ হয়ে পরবর্তীতে মাহিদেভ্রানকে পুত্র মুস্তফা সহ প্রাদেশিক রাজধানী মানিসায় পাঠিয়ে দেন। এই নির্বাসনকে দাপ্তরিকভাবে সবার কাছে দেখানো হল যে এটি হল সাঞ্জাক বেয়লিজি বা আপাত উত্তরাধিকারীর প্রথাগত প্রশিক্ষণ।
ব্রিটিশ রাজকীয় সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত রোলেক্সানার একটি আবক্ষ চিত্রকর্ম, প্রায় ১৬০০–৭০
হুররেম এবং মাহিদেভরান মিলে সুলাইমানের ছয় পুত্রসন্তানের জন্ম দেন, যাদের মধ্যে ৪ জন ১৫৫০ সালের মধ্যে জীবিত ছিল: মুস্তফা, সেলিম, বায়েজিদ, এবং জাহাঙ্গীর। তাদের মাঝে, মুস্তাফা ছিল বয়োজ্যেষ্ঠ উত্তরাধিকারী হিসেবে হুররেমের সন্তানের অগ্রবর্তী ছিলেন। হুররেম জানতেন যে নিয়মানুসারে মুস্তাফাই সুলতান হবে এবং তার নিজ সন্তানদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হবে। তথাপি মুস্তফাও সকল ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে বিচক্ষণ বলে অনেকেই তাকে প্রাধান্য দিত এবং পারগালি ইব্রাহীম পাশাও তাকে সমর্থন করতেন যিনি ১৫২৩ সালে সুলতানের প্রধান উজির হন। অনেক তথ্যসূত্রে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে ইব্রাহিম পাশা হুররেম সুলতানের চক্রান্ত এবং প্রাসাদে তার উঠতি প্রভাবের একজন ভুক্তভোগী ছিলেন বিশেষ করে অতীতে শাহজাদা মুস্তফাকে সমর্থন করার কারণে। হুররেমকে অন্তত আংশিকভাবে হলেও উত্তরসূরি বাছাই করার চক্রান্তের জন্য দায়ী বলে ধরা হয়। তবে সুলায়মানের স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও তিনি দাপ্তরিক এবং সরকারি কোন কাজে ভূমিকা রাখতেন না। এই বিষয়টি তার শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে প্রতিবন্ধক ছিল। প্রথম আহমেদের শাসনামলের আগপর্যন্ত সাম্রাজ্যে সুলতানের মৃত্যু হলে উত্তরসূরি নির্বচনের কর্মকাণ্ডে বেসামরিক অস্থিরতা এবং বিদ্রোহ প্রতিহত করতে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজপুত্রদের গোপনে বা প্রকাশ্যে হত্যা করা হতো। নিজ পুত্রদের প্রাণদণ্ডকে এড়াতে হুররেম মুস্তাফার অভিশংসনের সমর্থকদের নির্মূল করতে নিজ প্রভাবকে কাজে লাগাতে শুরু করলো।
১৮শ- শতাব্দীতে ভেনিসীয় চিত্রশিল্পীর আঁকা হুররেম সুলতানের আবক্ষ ছবি, নাম Rossa Solymanni Vxor।
এভাবে হুররেমের প্ররোচনায় পরিচালিত ক্ষমতার লড়াইয়ে সুলাইমান ১৫৩৬ সালে ইব্রাহিমকে খুন করেন এবং এবং তার তার কন্যা মিহিরমার স্বামী ও তার স্নেহভাজন জামাতা রুস্তম পাশাকে প্রধান উজির ১৫৪৪-১৫৫৩ এবং ১৫৫৫-১৫৬১ তার স্থলাভিষিক্ত করেন। বহু বছর পর সুলায়মানের দীর্ঘ শাসনামলের শেষের দিকে তার পুত্রদের শত্রুতা আরও স্পষ্ট ও প্রকট আকার ধারণ করে। অধিকন্তু, রুস্তম পাশা ও হুররেম সুলতান উভয়ই সুলায়মানকে মুস্তফার বিরুদ্ধে উসকিয়ে দেন এবং মুস্তফাকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। ১৫৫৩ সালে সফভীয় ইরানের বিরুদ্ধে অভিযানকালে সুলতান সুলায়মান মুস্তাফার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। একটি তথ্যসূত্র অনুসারে সে বছর তিনি তার বাবাকে সিংহাসনচ্যুত করার পরিকল্পনার অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয় তার অভিযুক্ত হওয়ার কারণটি প্রমাণিত ও অপ্রমাণিত হওয়ার মাঝখানে আঁটকে থাকে। মুস্তফার মৃত্যুর পর মাহিদেভরান প্রাসাদে তার অবস্থান হারান আসন্ন উত্তরাধিকারীর মা হিসেবে এবং বুরসায় গিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকেন।শেষের দিকে তার সৎপুত্র দ্বিতীয় সেলিম সুলতান হওয়ার পর ১৫৬৬ তাকে নিয়মিত ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করায় তাকে আর দারিদ্রে ভুগতে হয় নি।[১৫৫৮ সালে হুররেমের মৃত্যুর পরেই কেবলমাত্র তার পুনর্বাসন সম্ভবপর হয়।কথিত আছে যে, জাহাঙ্গীর, হুররেমের কনিষ্ঠ সন্তান, তার সৎ ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে বেদনাকাতর হয়ে কয়েক মাস পরেই মারা যান।
জোহান থিয়োডোর ডি ব্রাই এর খোদাইচিত্র, ১৫৯৬ সাল
১৫৫৩ সালে সুলায়মান মুস্তাফাকে প্রাণদণ্ড দেয়ার পর সৈন্যদের মধ্যে একটি বড়মাপের অসন্তুষ্টি ও অস্থিরতার উত্থান হয় যারা রুস্তম পাশাকে মুস্তফার মৃত্যুর জন্য দায়ী করেন। এ ঘটনায় সুলায়মান রুস্তম পাশাকে বরখাস্ত করেন এবং ১৫৫৩ সালে কারা আহমেদ পাশাকে প্রধান উজির হিসেবে নিয়োগ দেন। কিন্তু সবে দুই বছর পর, কারা আহমেদ পাশাও হুররেম সুলতানের নোংরা চক্রান্তের স্বীকার হন, কারণ হুররেম তার জামাতা রুস্তম পাশাকেই আবারও প্রধান উজির হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। ১৫৫৫ সালে কারা আহমেদ পাশাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় এবং রুস্তম পাশাকে আরও একবার প্রধান উজির ১৫৫৫সাল থেকে ১৫৬১সালে হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।সুলায়মান হুররেম সুলতানকে অটোম্যান সম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী বানিয়েছিলেন আর তার সমান মর্যাদা দিয়েছিলেন। অটোম্যানের ইতিহাসে অন্য কারো সুলতানের স্ত্রীকে এই মর্যাদা দেয়া হয় নি। এমনকি সুলতান সুলেমান দরবারে সভায় হুররেমকে তার পাশে বসাতেন এবং সভায় যেকোন বিষয়ে হুররামের পরামর্শ নিতেন। এমনকি কোন অফিসিয়াল কাগজে সুলতানের পাশাপাশি সম্রাজ্ঞী হুররেম সুলতানেরও স্বাক্ষর আর সিল লাগতো।সুলায়মান বাকি জীবনে রাজসভাতেও হুররেমকে তার সাথে থাকতে দেন যার ফলে আরেকটি প্রথা ভঙ্গ হয় আর তা হল যখন সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারীগণ উপযুক্ত বয়সে পৌঁছুবে তাদেরকে তাদের রাজ উপপত্নীসহ উত্তরাদিকারিদেরকে তাদের মাতাসহ নিকটস্থ প্রদেশে শাসনের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হবে উক্ত উপপত্নীদের সন্তান ক্ষমতায় বসার আগ পর্যন্ত তারা ফিরে আসতে পারবে না। সুলতানের রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবেও হুররেম ভূমিকা পালন করেছেন, এবং প্রতীয়মান হয় যে তিনি বৈদেশিক নীতি ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও প্রভাব রেখেছিলেন। রাজা সিগিসমন্ডাস দ্বিতীয় অগাস্টাসকে প্রেরিত তার দুটি চিঠি এখনো টিকে আছে, এবং স্বভাবতই তার জীবদ্দশায় পোলিশ অটোমান মৈত্রীচুক্তির মাধ্যমে পোল্যান্ড রাজ্যের সঙ্গে অটোম্যান সাম্রাজ্যের শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান ছিল।
ইউক্রেনের রোহাটাইনে অবস্থিত রোক্সেলানার স্মৃতিস্তম্ভ।
সুলতান সুলেইমান তার মুহিব্বি নামক ছদ্মনাম ব্যবহার করে হুররেম সুলতানের জন্য কবিতাটি লিখেছিলেন:
আমার নির্জনতার সিংহাসন, আমার সম্পত্তি, আমার প্রেম, আমার পূর্ণিমা।
আমার শ্রেষ্ঠ বন্ধু, আমার সখী, আমার চিরন্তন অস্তিত্ব, আমার সুলতান, আমার একমাত্র ভালোবাসা।
সুন্দরীদের মাঝে সবচেয়ে সুন্দরীতমা...
আমার বসন্তকাল, আমার সদা প্রফুল্ল মুখী ভালোবাসা, আমার দিবস, আমার প্রাণের প্রিয়া, আমার হাস্যোজ্জল পত্র...
আমার গুল্ম, আমার মিষ্টি, আমার গোলাপ, এ জগতে একমাত্র সেই আমাকে কোন দুঃখ দেয় নি...
আমার ইস্তাম্বুল, আমার কারামান, আমার আনাতোলিয়ার পৃথিবী
আমার বাদাকশান, আমার বাগদাদ আর খোরাসান
আমার সুকেশী রমণী, আমার হেলানো ভুরুর প্রণয়, আমার দুষ্টুমিভরা চোখের প্রেম...
আমি সর্বদা তোমার গুণ গাইবো
আমি, এই ভগ্ন হৃদয়ের প্রেমিক, অশ্রুভরা চোখের মুহিব্বি প্রেমিক, আমিই তো সুখী।"
হুররেম সুলতান কর্তৃক নির্মিত তুর্কি স্নানাগার (হাম্মাম), কনস্টান্টিনোপল ১৫৫৬ সাল
রাজনৈতিক উদ্যোগসমূহের পাশাপাশি, হুররেম মক্কা থেকে জেরুজালেম পর্যন্ত বহু রাষ্ট্রীয় স্থাপনার প্রধান কাজের সাথে জড়িত ছিলেন সম্ভবত সেখানে খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী যুবাইদার কর্মের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি এই সকল সমাজসেবামূলক কার্যক্রম হাতে নেন। তার প্রথম স্থাপনাসমূহের মধ্যে ছিল একটি মসজিদ, দুটি মাদ্রাসা, একটি জলের ফোয়ারা, এবং কনস্টান্টিনোপলে নারী কৃতদাসী বাজারের আভরেত পাজারি সন্নিকটে একটি মহিলা হাসপাতাল। তার নির্দেশে নিকটবর্তী হাজিয়া সোফিয়ার উপাসক সম্প্রদায়ের সেবায় হাসেকি হুররেম সুলতান হামামি নামে একটি স্নানাগার নির্মিত হয়। ১৫৫২ সালে তিনি জেরুজালেমে দুস্থ ও অসহায়দের খাদ্যাভাব মেটাতে হাসেকি সুলতান ইমারেত নামে একটি রাষ্ট্রীয় লঙ্গরখানা প্রতিষ্ঠা করেন।হুররেম গরীব দুঃখীদের অনেক সাহায্য সহযোগীতা করতেন। এমনকি তিনি গরিব দুঃখীদের অবস্থা জানার জন্য ছন্দবেশে বাহিরে বের হতেন।তার নিজের করা অথবা তার নিজস্ব তাত্তাবধানের অধীনে করা কিছু সূচিকর্ম এখনো বিদ্যমান আছে, উদাহরণস্বরূপ ১৫৪৭ সালে ইরানের শাহ দ্বিতীয় তাহমাস্পকে দেওয়া এবং ১৫৪৯ সালে রাজা দ্বিতীয় সিগিসমন্ড অগাস্টাসকে দেওয়া সূচিকর্ম।এস্থার হান্ডালি বহু আনুষ্ঠানিকতায় তার সহকারী ও মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ইস্তাম্বুলের ফাতিহে অবস্থিত সুলায়মানিয়ে মসজিদে হুররেম সুলতানের তুরবে সমাধি।
হুররেম সুলতান ১৫ ই এপ্রিল ১৫৫৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন এবং ইযনিক মার্বেলপাথর দ্বারা সুসজ্জিত গম্বুজবিশিষ্ট স্বর্গের উদ্যানের আদলে তৈরি করা সমাধিতে তাকে সমাহিত করা হয় এটি সম্ভবত তার সদা হাস্যোজ্জল প্রকৃতির স্মৃতির প্রতি সম্মান রেখে করা হয়েছিল।সুলায়মানের সমাধির পাশেই তার সমাধি অবস্থিত যা সুলায়মানিয়ে মসজিদের প্রাঙ্গনে অবস্থিত আরও গাম্ভীর্যপূর্ণ গম্বুজবিশিষ্ট একটি পৃথক স্থাপত্য।হুররেম সুলতানের মূত্যুর পর সুলতান সুলেমান নিজ কাঁধে তার লাশের খাটিয়া বহন করেন। অটোম্যান সম্রাজ্যের ইতিহাসে কোনদিন কোন সুলতান তাদের স্ত্রীদের লাশের খাটিয়া বহন করেন নি। একমাত্র সুলতান সুলেমান তার প্রানপ্রিয় স্ত্রী হুররেমের মৃত্যুর পর তার সন্তানদের সাথে হুররামের লাশের খাটিয়া বহন করে ছিলেন। হুররেমের মৃত্যুর পর সুলতান সুলেমান বেশ কয়েক দিন দুঃখে কাতর ছিলেন।তার মৃত্যুর পর সমগ্র রাজপ্রাসাদে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল। তার মৃত্যুতে গরীব দুঃখীরা বেশি শোকাহত হয়েছিল। আজও তুরস্কের অনেক মানুষ হুররেমকে শ্রদ্ধার চোখে স্বরণ করেন।
তথ্যসূত্র ইন্টারনেট ।
http://www.practicalturkish.com/encyclopedia-h.html
https://books.google.com.pk/books?id=u-ehAgAAQBAJ
https://books.google.de/books?id=L6-VRgVzRcUC&pg=PA58&hl=de
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৬