স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে হলে অবশ্যই আমাদের সবার আগে যেটা করতে হবে ? সেটা হলো আমাদেরকে ভারতের বিরোধিতা করতে হবে !এই কঠিন বিষয়টা মাথায় এল আজ ব্লগার চাঁদগাজী ভাইয়ের বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য কি দরকার? এই শিরোনাম পোস্ট থেকে । লেখক আহমদ ছফা'র কোন একটি
লেখায় বলেছিলেন যে,আমাদের বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। আমরা এই রাষ্ট্রের নাগরিক। এই নিয়ে আমাদের গর্বের শেষ নেই।
বাংলাদেশের অতিত শাসনের দিক তাকালে অনেক কিছু নিয়ে ভাবতে হয় ।ইতিহাস আমরা সকলেই কম বেশি পড়েছি আচ্ছা আমরা সেই ইতিহাসের কোন পাতায় কি দেখাতে পারবো অতীতের কোন সময় বাঙ্গালি একক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে পেরেছে । ইতিহাসে তেমন কোন প্রমাণ খুঁজে পাই নাই। শশাঙ্কের কথা বলা যায় বটে কিন্তু শশাঙ্ক বাঙ্গালি ছিলেন এই প্রমাণ কেউ হাজির করতে পারেনি। তারপরেও ভারতবর্ষের দিল্লীকেন্দ্রিক কেন্দ্রীয় শাসনের প্রতিকূলে এখানে নানা বংশের শাসকেরা রাজত্ব করেছেন। কিন্তু তাদের কেউই আশা করি বাংলার মাটির সাক্ষাৎসন্তান ছিলেন না।অতিতের কথা বাদই দিলাম এখনকার কথাই বলা যাাক এই আধুনা যুগেও আমরা পড়ে রয়েছি ভারতকে ধরে,
যেমনঃ এখনো ভারত থেকে যে পরিমান পিয়াজ,আদা,রসুন ক্রয় করে আনছি চাইলে বা কৃষি কাজে একটু বেশি পরিশ্রম দিলে তার থেকে
অনেক বেশি আমাদের বাংলাদেশেই এগুলো ফলানো সম্ভব।এরপর চলুন একটু মিডিয়ার দিকে তাকাই সেখানেও দেখতে পারি আমরা আমাদের দেশের নাটক,ফ্লীম,না দেখে ভারতে সিরিয়াল নিয়ে পরে রয়েছি ।আসতে আসতে এখন ভারতের অভিনেতা,অভিনেত্রীরা,আমাাদের দেশে ঢুকে পড়ছেন।অথচ আমাদের দেশের নাটকও কম ভালো নয় কিন্তু,তাছাড়াও যেখানে আমাদের
দেশের কোন চ্যানেলই ভারতের ক্যাবল অপারেটরেরা চালান না,আর আমরা আমাদের পকেটের টাকা দিয়ে তাদের কাছ থেকে চ্যানেল কিনছি ।তাহলে আমাদের উন্নয়ন হবে কি করে ? এভাবে গারমেন্টস থেকে শুরু করে অনেক ব্যবসা শিল্পীয়ই আসতে আসতে আমাদের
দেশ থেকে চলে যেয়ে এখন বাসা বাঁধছে ভারতে ।এ বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশের ব্যবসা শিল্প প্রঠিস্তান বা বড় বড় শিল্পপতিদের
ভাবার অনেক সময় আছে ।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙ্গালি জাতি সর্বপ্রথম নিজেদের একটা জাতিরাষ্ট্র গঠন করেনন। বাঙ্গালি জাতির নিজস্ব একটি রাষ্ট্র গঠন করার ঘটনাটি ভারত উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি অচিন্তিতপূর্ব ঘটনা। উপমহাদেশের অন্য দুটি রাষ্ট্র ভারত এবং পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করলে আসলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটিকে অধিকতর রাষ্ট্রবিজ্ঞানসম্মত আধুনিক রাষ্ট্র বলে মেনে নিতে হবে সকলকে। ভারত কিংবা পাকিস্তানকে জাতীয় রাষ্ট্র বলা যাবে না। ভারত রাষ্ট্র বটে কিন্তু ভারতীয় জাতি বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। এ কথাগুলো অনেক সময় ভারতীয় চিন্তানায়করাই চিন্তা করেন। বাংলাদেশ একই সঙ্গে একটি রাষ্ট্র এবং জাতিও বটে।এই রাষ্ট্রের জন্মপ্রক্রিয়াটিও লক্ষ করার মত। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সংগ্রামের উন্মেষ ও স্বায়ত্তশাসন এবং স্বাধিকার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তার বিকাশ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে তার পরিণতি। বাংলাদেশের জন্মপ্রক্রিয়ার প্রতিটি ঘটনা ভারতবর্ষের ইতিহাসকে প্রভাবিত করেছে। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের পরে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ভাষা আন্দোলনের জন্ম নিয়েছে। বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের অনুকরণে ভারতের আসাম, পাঞ্জাব এবং কাশ্মীর ইত্যাদি রাজ্যে স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে পাঞ্জাব এবং কাশ্মীরের জনগণ স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেছেন।
কোন জাতিকে যদি টিকে থাকতে হলে তার নিজস্ব একটা নির্ভরযোগ্য অর্থনীতি থাকতে হবে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সিকি শতাব্দী অতীত হয়ে গেল তবুও বিদেশি পর্যবেক্ষকরা একটি প্রশ্ন প্রায়শ করে থাকেন, ভারতের পূর্বপ্রান্তে যে একচিলতে ভূমি যেখানে অভাবের করুণ হাহাকার এবং দারিদ্রের মর্মপীড়িত দীর্ঘশ্বাস বাতাসে রোদনের মত ঘুরে বেড়ায় সেই দেশটি নিজের পায়ে ভর দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হতে পারবে কি? এটা একটা খুবই প্রয়োজনীয় এবং মূল্যবান প্রশ্ন। অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হতে না পারলে স্বাধীনতার গালভরা বক্তব্য অধিক তাৎপর্য বহন করে না।
আজকের যেটা বাংলাদেশ সেটা একসময়ে অবিভক্ত ভারতের অন্তর্গত অখণ্ড বাংলার অংশ ছিল। তারপরে এই অঞ্চল পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। এই প্রতিটি বিভাজনের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ নিজস্ব একটা স্বতন্ত্র চরিত্র অর্জন করেছে। আমরা পাকিস্তানের অংশ নই বলেই গর্ববোধ করি। একই কারণে ভারতীয় ইউনিয়নের একটি অন্তর্ভুক্ত রাজ্য নই বলেও আমাদের গর্বের শেষ নেই।
ভারতের ক্রমপ্রসরমান শিল্প বাণিজ্যের অগ্রগতির প্রভাব অগ্রাহ্য করে বাংলাদেশ কি করে তার নিজস্ব একটি অর্থনীতি নির্মাণ করবে? এই জিনিশটি আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের চিন্তাভাবনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারেনি।কেউ ভারতপ্রীতি দেখিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। কেউ কেউ ভারতবিদ্বেষ মূলধন করে রাষ্ট্রক্ষমতা অধিকার করেছে। কিন্তু একটি স্বাধীন জাতীয় রাষ্ট্রের নিজস্ব একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক বুনিয়াদ তৈরি করার প্রয়াস কেউ গ্রহণ করেনি।
অনেকে ভারত বিরোধিতা মানে হিন্দু বিরোধিতা বুঝে থাকেন। কিন্তু আমি কথাটা বলছি সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে। ছোটদেশকে তার নিজস্ব অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনেই বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে বড়দেশের বিরোধিতা করতে হয়। এর মধ্যে সংকীর্ণতা কিংবা হীনমন্যতা খোঁজার কোন অবকাশ নেই। ছোটদেশকে তার নিছক ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করে বৃহত্তর প্রতিবেশির প্রতিবন্ধকতার জাল ছিন্ন করতে হয়। যে জাতি ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করা শেখেনি তাকে বড় দেশের লেজুড় হিসেবে অস্তিত্ব রক্ষা করতে হয়। একটা স্বনির্ভর দেশ নির্মাণ করতে হলে আমাদের কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্যই ভারতের বিরোধিতা করতে হবে।এখানে কিছু বিষয় বুঝতে হবে যেমন,নিছক শত্রুতা, নিছক ঘৃণা, নিছক বিরোধিতা এগুলো কোন কাজের কথা নয়। অন্ধকারের শক্তির ওপর আস্থাস্থাপন করলে রসাতলে যাওয়ার পথটাই পরিষ্কার হয়। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা, পারস্পরিক কল্যাণকামনা এগুলো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জিনিশ। কিন্তু জাতীয় অর্থনীতির উজ্জীবনের প্রশ্নে বড়দেশের বিরোধিতা করা একটি স্বাস্থ্যকর লক্ষণ।তাইওয়ান যদি মূল চীনের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ না করত তো এত দ্রুত তার অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটত না। কোরিয়া জাপানের পার্শ্ববর্তী একটি অসহায় দেশ ছিল। শিল্পোন্নত জাপানের কাছে নতিস্বীকার না করে নিজের পায়ের ওপর দাঁড়াবার সময়োচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কারণে আজকের পৃথিবীতে কোরিয়া একটি সম্মানজনক স্থান অধিকার করতে পেরেছে।
ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশকে তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ত্বরান্বিত করার জন্য একটি নিজস্ব অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। নইলে ক্রমসম্প্রসারমাণ ভারতীয় শিল্পবাণিজ্যের চাপে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উত্থান সুদূর পরাহত হয়ে দাঁড়াবে।
পোস্টে আহমদ ছফার কিছু লেখা হুবহ তুলে ধরা হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ২:৩৪