বোস ভাতৃদ্বয় এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন বইয়ের লেখক শরৎ চন্দ্র বোসের নাতনি বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন স্বাধীন এবং অখন্ড বাংলার পরিকল্পনা, সাথে শরৎ বোসের সাথে এই বিষয়ে জিন্নাহ,গান্ধী এবং অন্যান্য কংগ্রেসী নেতৃবৃন্দু সহ বৃটিশ অফিসিয়ালস, ভাইসরয় মাউন্টব্যাটেন এর মধ্যকার বিনিময়কৃত চিঠি পত্রও উঠে এসেছে সে বইয়ে।ধর্মের ভিত্তিতে বাংলা ভাগ হওয়া থেকে রক্ষা করতে একটি শক্তিশালী পরিকল্পনার খসড়া চুক্তির সন্ধান মেলে যেটি শরৎ চন্দ্র তৈরি করেন ১৯৪৭সালের ২০শে মে বাংলার কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের নেতাদের মধ্যে।গান্ধী শুরুতে এই পরিকল্পনায় উৎসাহ দেখালেও পরে বিশ্বাসঘাতকতা করেন শরৎ বোসের সাথে এবং তার পূর্বের প্রতিজ্ঞায় ফিরে যান।নেহেরু, প্যাটেল এবং অন্যান্য কংগ্রেসী নেতারা শুরু থেকেই এই পরিকল্পনার তীব্র বিরোধীতা করেন,অথচ জিন্নাহ বলেন তিনি এই পরিকল্পনা মেনে নেবেন যদি বৃটিশ এবং কংগ্রেস সেটা গ্রহন করে ।২০শে মে এর সেই চুক্তির সুচনায় বলা হয়, বাঙালী মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান এবং বৌদ্ধদের রয়েছে সর্বজনীন মাতৃভাষা এবং তারা জাতীগত, সামাজিক, কৃষ্টিক, অর্থনৈতিকভাবে আবদ্ধ। ফলে তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য হচ্ছে একটি স্বাধীন ও অখন্ড বাংলা যেখানে তারা পুরোপুরিভাবে একে অপরকে সাহায্যে করবে।পরিকল্পনাটি ১৬ জন মুসলিম এবং ১৪ জন হিন্দু সদস্যের সমন্বয়ে একটি অন্তবর্তীকালীন মন্ত্রীসভা গঠিত হয়ে একটি স্বাধীন এবং অখন্ড বাংলার জন্য পাইলট সংবিধান তৈরি পর্যন্ত গড়ায়। খসড়া চুক্তিতে বলা হয়ঃ “বাংলা হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন একটি রাষ্ট্র এবং কোন ইউনিয়নে পাকিস্তান বা ভারত যোগ দেয়ার প্রশ্নে আইনসভা দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তীতে সীদ্ধান্ত নেবে।
মাধুরী বোস বলেন তার দাদা শরৎ বোস ছিলেন কট্টর জাতীয়তাবাদী এবং ভারত ভাগের বিরুদ্ধে। কিন্তু তিনি যখন বুঝলেন দেশ ভাগ অবশ্যম্ভাবী তখন তিনি সীদ্ধান্ত নিলেন বাংলাকে কিভাবে এই ট্রাজেডি থেকে রক্ষা করা যায় এবং ভাঙনের বাহিরে রাখা যায়। তিনি চেয়েছিলেন উপনিবেশ উত্তর তিনটি রাষ্ট্র যথারিতি, ভারত, পাকিস্তান এবং ঐক্যবদ্ধ সমাজতান্ত্রিক রিপাবলিক অফ বেঙল।বোস পরবর্তীতে দেশ ভাগের জন্য কংগ্রেসকেই বেশি দায়ী করেন মুসলিম লীগের চেয়ে।তিনি বোস পরিবারকে বলেন ১৯৩৭ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনের পূর্বে শেরে বাংলা ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টির সাথে নির্বাচনী বোঝাপড়া করতে কংগ্রেস হাই কমান্ডের অস্বীকৃতি ছিল সাঙ্ঘাতিক ভুল। তিনি আরো মনে করতেন ১৯৪৭ সালে কংগ্রেস নেতৃত্ব ক্ষমতার জন্য খুবই তাড়াহুড়ো করছিল ফলে সবকিছুই অনুমোদন করে যা তাদের প্রতিরোধ করা দরকার ছিল।
ভারত ভাগ নিয়ে অন্যান্য ঐতিহাসিকেরা আগেই বলেছেন ১৯৪৭ সালে দেশভাগ নিয়ে জিন্নাহ তার পরিকল্পনা পূনর্বিবেচনা করতে রাজি ছিলেন যদি বোস ভাতৃদ্বয় কংগ্রেসের নেতৃত্ব তাদের হাতে নিতে পারতেন।ঐতিহাসিকদের মতে জিন্নাহ নেহেরু, প্যাটেল সহ অন্যান্য কংগ্রেসী নেতাদের সাথে মধ্যস্থতা করতে গররাজি ছিলেন।মাধুরী বোস, সেইজ পাবলিকেশন কর্তৃক তার বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে এসব কথা বলেন।
উৎসঃ ২৮.০১.১৬ বিডি নিউজ ২৪.কম
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৯:৩৪