ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের পানিপথ গ্রামের নিকটে ১৫২৬ সালের ২১শে এপ্রিল এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়।যুদ্ধক্ষেত্রে কামানের ব্যবহার হয়েছে এমন যুদ্ধের মধ্যে এই যুদ্ধ প্রথমগুলোর অন্যতম একটি । ২০ শতকের আগে এই অঞ্চলে আরো কয়েকটি গুরুত্বপূরণ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে।হিসাব অনুযায়ী বাবরের বাহিনীতে ১৫০০০ সৈনিক এবং ২০ থেকে ২৪টি ফিল্ড আর্টিলারি ছিল। ইবরাহিম লোদির বাহিনীতে সর্বমোট লোকসংখ্যা ছিল প্রায় ১০০০০০। তবে মূল লড়াইয়ের বাহিনীতে লোকসংখ্যা ছিল প্রায় ৩০০০০ থেকে ৪০০০০। তার পাশাপাশি যুদ্ধ হাতি ছিল প্রায় ১০০০।ইবরাহিম লোদির বাহিনীর আকার জানতে পেরে বাবর তার বাহিনীর ডান ভাগকে পানিপথ শহরের বিরুদ্ধে সুরক্ষিত করেন। সেজন্য বৃক্ষশাখা আচ্ছাদিত পরিখা খনন করা হয়। মধ্যভাগে দড়ি দিয়ে বাধা ৭০০টি গরুরগাড়ি রাখা হয়। প্রতি দুইটি গাড়ির মধ্যে ম্যাচলকম্যানদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়। সেই ব্যবস্থা প্রণীত হওয়ার সময় ঘোড়সওয়ারদের আক্রমণের জন্য যথেষ্ট স্থান রাখা হয়।ইবরাহিম লোদির সেনারা উপস্থিত হওয়ার পর তিনি দেখতে পান যে বাবরের সেনাদের বিন্যাস সংকীর্ণ। তিনি সংকীর্ণতম স্থানে আক্রমণের নির্দেশ দিলে বাবর তার পার্শ্বভাগের সুবিধা নেন। ইবরাহিম লোদির অনেক সেনা যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে ব্যর্থ হয় এবং যুদ্ধের মোড় ঘুরে গেলে তারা পালাতে শুরু করেন।বাবরের বাহিনী তাদের মাস্কেট, কামান ও ঘোড়সওয়ারদের নিয়ে আক্রমণ শুরু করে। যুদ্ধে ইবরাহিম লোদি পরাজিত ও নিহত হন।
বাবর এবং ইবরাহিম লোদির মধ্যে পানিপথের যুদ্ধ। দৌলত খান লোদি বাবরকে ভারত আক্রমণ করে ইবরাহিম লোদিকে পরাজিত করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। দেও গুজারাতি কর্তৃক ওয়াকিত ই বাবুরি গ্রন্থের চিত্রায়ন আনুমানিক ১৫৯০ সাল হবে
বাবরের কামান বন্দুক যুদ্ধক্ষেত্রে ভাগ্যনির্ধারণের ভূমিকা রেখেছে। তার কারণ প্রথমত ইবরাহিম লোদির বাহিনীতে কোনো গোলন্দাজ বাহিনী ছিল না। পাশাপাশি কামানের বিকট শব্দ লোদি বাহিনীর হাতিগুলোকে ভয় পাইয়ে দেয় ফলে হাতিগুলো লোদি বাহিনীর সেনাদের পদদলিত করা শুরু করে।
বাবর সেই যুদ্ধে তুলুগুমা এবং আরাবা নামক নতুন কৌশল ব্যবহার করেন। তুলুগুমা দ্বারা বোঝায় সমগ্র সেনাবাহিনীকে বেশ কিছু অংশে বিভক্ত করা যেমন মধ্য ও ডান এবং বাম পার্শ্ব। ডাম এবং বাম পার্শ্বভাগ সম্মুখ ও পশ্চাৎ অংশে বিভক্ত করা হয়। তার ফলে ক্ষুদ্র সেনাবাহিনী প্রতিপক্ষকে সবদিক থেকে ঘিরে ফেলতে সক্ষম হয়। সেনাদলের মধ্যভাগের সম্মুখ অংশে গরুর গাড়ি আরাবা স্থাপন করা হয়। সেগুলোকে দড়ি দিয়ে যুক্ত করে রাখা হয়। সেসব গাড়ির পিছনে কামান স্থাপন করা হয়েছিল। সেই দুই কৌশলের ফলে বাবরের গোলন্দাজ ইউনিট ধ্বংসাত্বক হয়ে উঠে। সামনে গরুর গাড়ি দ্বারা প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করায় কামানগুলো কোনো প্রকার হামলা সহ্য না করে গোলাবর্ষণ করতে সক্ষম হয়। কামানগুলোর মুখ ঘুড়িয়ে সহজেই অন্য লক্ষ্যের দিকে আক্রমণ করা যেত।যুদ্ধে ইবরাহিম লোদি তার ১৫০০০ সৈনিকসহ নিহত হন। গোয়ালিয়রের শাসক বিক্রমজিতও যুদ্ধে মারা যান। পানিপথের এই যুদ্ধ ভাগ্যনির্ধারণী ছিল। তার ফলে বাবর মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।
তথসূত্রঃButalia, Romesh C. The Evolution of the Artillery in India: From the Battle of Plassey to the Revolt of 1857, (Allied Publishing Limited, 1998), p. 16. আরও অন্যান্য সাইট।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৬ ভোর ৪:২৮