আমি যখন পিপাসা নিবারণে জল পাইনা,
পিপাসায় বুকের ছাতি ফেটে যায়,
তখন তারা ‘অর্থ’ নামের তরল পদার্থে মেটায় বুকের তৃষা।
আমার ডেরাঘরের চালে ছনের ছাউনি মেলেনা
তারা গড়ে তোলে সেকেন্ড হোম বিদেশ বিভুঁইয়ে।
ফুলে ফেঁপে ওঠে সুইস ব্যাংকের একাউন্টের ব্যাংক-ব্যালেন্স,
দেশীয় ব্যাংকের দরোজায় দরোজায়, নোটিশবোর্ডে নোটিশবোর্ডে–––
দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে ওঠে খেলাপীদের তালিকা।
যখন আমার পেটে ক্ষুধার আগুন জ্বলে দাউ দাউ
তখন তারা নেশায় মাতাল। মাদক নয়, রক্তে মেটায় নেশা।
দম্ভ চলে ক্ষমতার, চলে অপব্যবহার
সর্বনিচের রাজপথের ভিখিরি থেকে অট্টালিকার
উঁচুতলার নিবাসীর মাঝে।
আমজনতা অসহায়, নেই কোনো নিস্তার,
বেড়ে চলে নোংরামি আর হীনতার বিস্তার।
রাজনীতি কর, সাতখুন মাফ হবে অনায়াসে,
হাতে হ্যান্ডকাফ উঠবেনা কোনোদিনই কোনো অপরাধে।
‘অযাচিত’, ‘অনুচিৎ’ এসব শব্দতত্ব শুধু ব্যাকরণে-অভিধানে বন্দি।
বিধিবিধানের সংকলন সংবিধানে বিবৃত শুধু অধিকার, কর্তব্য, নিয়ম-আচার।
মানে কে সেসব কথা! স্বয়ং রাষ্ট্রযন্ত্র বুকে ধারণ করে আছে বিভেদের
অসম দাঁড়িপাল্লা।
হেন স্থানে হিতাহিত ভেবে চলে, কে এতো ‘বোকা’ হতে যাবে?
বুকে লাথি দিয়ে অন্যের, বড় হবার স্বপ্ন দেখে যে পারে যেভাবে।
যানযটে এম্বুলেন্সে কার রোগী মরে, ভেবে কভু দেখেছে কি কেউ?
ভিআইপি যাবে আগে, তার পরে যদি পারো যেতে চাইলে যেও।
এই হলো রাজাদের নীতি।
ভাবলেই মনে জাগে ভীতি।
আইনের বিপরীতে চলে ধর্মঘট।
হায়, নচিকেতা!
কী করে বুঝেছিলে তা?
অসভ্য-চোর-ডাকাত-দস্যুরাও বন্ধ ডাকে আজ।
ঘৃণা হয় দেখে এসবের এতোটা স্খলন,
বন্য নিকৃষ্ট পশুসব এ সমাজে তাণ্ডব চালিয়ে করে বিচরণ
বনের রাজার মতো বুক ফুলিয়ে।
বিক্ষোভ আর বিদ্রোহ, ঘৃণা-বিতৃষ্ণায় হৃদয়ের সিন্ধুজলে
পর্বত সমান হিন্দোল তোলে বিদ্রোহী প্রভঞ্জন,
প্রিয় শামসুর রাহমান, আমারও দেশদ্রোহী হতে ইচ্ছে করে তোমার মতোন।
প্রিয় মাতৃভূমি,
যখন দেখি তোর বুকে, মা, অসভ্যদের উলঙ্গ-আস্ফালন।