বয়সের সাথে সাথে মানুষের ভাবনা,
মানুষের আবেগগুলোও কি বুড়ো হয়?
শৈশব-কৈশোরে যে প্রাণ, যে প্রত্যয়
থাকে, সে সতেজতা কতোটা থাকে প্রৌঢ় বয়সে?
একদিন যে মোরা পাহাড় ডিঙোতে চাই অনায়াসে,
জীবন-অপরাহ্নে সে চেতনাগুলোই ক্ষয় হয়ে আসে
যৌবনে, মধ্যগগনে প্রদীপ্ত সূর্যের মতোন
আমরা যে আলোক ছড়াই,
পদাঘাতে ভেঙে দিতে চাই
অচল-পাথরসম চেপে থাকা অন্ধ-সংস্কার,
বার্ধ্যকে সে সংস্কার ধীরে ধীরে জেঁকে বসে নিজেকেই।
জরাজীর্ণ পঙ্কিলে ভরে আসে মন।
জীবনের শেষ ক্ষণে পা পড়ে যখন
অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো ছাড়পত্র পাবার আশায়
পাসপোর্ট প্রক্রিয়াকরণের প্রয়াস চালায়,
কিছুদিন পর হবে ভিসার আয়োজন।
কোনো এক বৃদ্ধের গল্প বলি
জীবন-সায়াহ্নে এসে মনে পড়ে গেছে তার
জীবনের সোনাঝরা মুহূর্তগুলি-
ছিলো তার উদ্দাম-যৌবন!
মনুষ্য নাগালের মধ্যে যতোগুণ থাকে,
সব গুণে ছিলো তার দৃপ্ত বিচরণ।
সাহিত্য, বিতর্ক, সভা, সংঘ, খেলা, গ্রন্থগত শিক্ষা
সবকিছুতে আর সকলের অপেক্ষা
তার অগ্রে অগ্রে আছিলো গমন।
বন্ধুদের আড্ডা ছিলো, ছিলো প্রেয়সীর মন
কপোত কপোতী যথা চঞ্চল
হয়ে ওঠে একের বিরহে,
হতো তারাও তেমন।
কোথা তারা দুজন আজ!
রিয়েলিটির টাইডাল সার্জ
দুজনকে ফেলে গেছে দু মেরুতে ছিটকে।
আবেগের ওম ভুলে, সীমান্তের শীতকে
তারা আজ করেছে আলিঙ্গন।
হৃদয়ে স্মৃতির মেঘ ঘনায় যখন
বাষ্পরুদ্ধ হয়ে আসে বৃদ্ধের কণ্ঠ
বুকের ভেতর চাপা ব্যথা, আকণ্ঠ
ভুজনসম আটকে দিতে চাহে তার শ্বাস প্রশ্বাস।
অতীতকে ভুলবার কী এক দুঃসহ প্রয়াস!
আবেগের বাড়াবাড়ি
দৃদ্ধের নক্ষত্র-নাড়ী
সমস্তে এনে দেয় বেগের আবেগ।
ভাবে, চিৎকার করে বলি বারবার
‘ফিরে পেতে চাই সেই জীবন আবার,
যে জীবন ছিলো বন্ধনহারা
আবার ধরতে চাই তার হাতজোড়া
ভালোবাসি তোমাকেই,
বেঁচে রবো তোমাতেই,
কী করে বেঁচে রবো আমি, তুমি ছাড়া’?