বিভ্রান্ত সব শব্দের ভিতরে প্রতিদিন একা একা
খেলা করি, নিজের ভিতরে নিজের যুদ্ধ হয়…
নিজেকে নিজে দণ্ডিত করি, ক্রসফায়ার দিই,
নিজেকেই নিজে দিয়ে দিই দুইশ বছর জেল।
সশ্রম কারাদন্ড! তুই শালা দুইশ বছর কবিতার
ভিতরে পঁচে-গলে মর। নিজের বিরুদ্ধে নিজে
ঘোষনা করি, তোকে কবিতা লেখার সকবিতা
কারাদন্ড দেওয়া হলো। তুই শালা কবিতা লেখ।
কি কি যে সব আমি লিখি, আবার মাঝে মাঝে
কোনো কিছুই লিখি না। একটা ডিস্টোপিয়ান
রাষ্ট্রের চারিত্রিক অধঃপতনের বোঝা মাথায়
নিয়ে আমাদেরকে পথ চলতে হয়। পথ চলতে
চলতে দেখি, আমার শ্রমিক আমরণ অনশনে
মারা যাচ্ছে। আমরা কয়জন উহ আহ করি…
হাঁটতে হাঁটতে আমি দেখতে পাই, আমাকে
গ্রাস করছে পৃথিবীর দূষিততম শহর, আমার
নাকে এসে লাগছে গুম, খুন আর ধর্ষণ শেষে
মেরে ফেলা মৃত সব বেঁচে যাওয়া মানুষের ঘ্রাণ!
একটা পঁয়ত্রিশ টাকা দামের মাক্স কিনে নিজের
ভিতরে নিজে ঢুকে পড়ি। আমার গন্ধ লাগে না!
আমি ভাবি, আমি কবি। আমি ফুল-পাখি, লতা-
পাতা নিয়ে কবিতা লিখবো। প্রেমিকার চুলের
বিন্যাস নিয়ে আমি কবিতা লিখবো। কিন্তু
আমি জানতাম না, একটা ডিস্টোপিয়ান রাষ্ট্রে
কবিদের প্রেম লিখবারও অধিকার থাকে না!
রাষ্ট্র আমাকে জানিয়ে দিলো, আমার পাটকল
শ্রমিক বুড়া চাচা এই রকম আমরণ অনশনে
মারা যাবে। আমার প্রেমিকা কোনো এক রাতে
চিরদিনের জন্য আর বাসায় ফিরে আসবে না।
লতা-পাতা, ফুল-পাখির কবিতাও আমি লিখতে
পারবো না, কারণ; আমরা কয়লা বিদ্যুৎ, চুল্লি
আর উন্নয়ন দিয়ে সমস্ত এলাকা ভরে ফেলবো!
আমি তখন আমার সব খোলস ছেড়ে বের হয়ে
আসি। এক হাতে আমার প্রেমিকার হাত আর
অন্য হাতে আমার কবিতার প্ল্যাকার্ড নিয়ে হাঁটা
ধরলাম উন্নয়নকামী রাষ্ট্রের মাথামুণ্ডের দিকে…
আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, রাষ্ট্রের কোনো
মাথামুণ্ড নাই! আমি তখন দাবি জানালাম, যেই
রাষ্ট্র আমি পাবার আগেই বেহাত হয়ে গেছিলো,
যেই রাষ্ট্রের কলাটা মুলাটা অন্যরা খায়, সেই
রাষ্ট্র আমার না। গণমানুষের মুক্তির কথা ভাবা
আমার বেহাতি রাষ্ট্রটা আমাকে ফিরিয়ে দিন।
আপনারা তখন হা হা হা করে হেসে উঠলেন--
আমি তখন আরো বেশি নিজের ভিতরে ঢুকে
পড়ি। নিজেকে নিজে ক্রসফায়ার দিই, দুইশ
বছর কারাদণ্ড। আমি ভাবি, আমাকেই এখন
লিখতে হবে, আমাদের বেহাত হয়ে যাওয়া সেই
রাষ্ট্র, যেইটা আসলে আমাদের চরমতম কবিতা।
আমি লিখলাম, আমার রাষ্ট্র আমাকে ফিরিয়ে
দিন। আপনারা আমাকে গুম করে ফেললেন…
বিভ্রান্ত সব শব্দের ভিতরে আমি প্রতিদিন একা
একা খেলা করি। আমাকে আমি খুঁজে পাই না!
০৩ জানুয়ারি, ’২০। পৌষের রাত।
মিরপুর, ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:০৩