আমাদের একটা বিরক্তিকর সাবজেক্ট ছিল AI(Artificial intelegence) নামে। ওই সাবজেক্টটায় একটা বিখ্যাত আরেকটা মোটামুটি বিখ্যাত প্রবলেম ছিল। বিখ্যাত প্রবলেমটার নাম Vacuum World, আর মোটামুটি বিখ্যাত প্রবলেমটার নাম Wampus World। যারা কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়েছেন এই প্রবলেম দুটার নাম অবশ্যই শোনার কথা। আমি যেহেতু জাদরেল স্টুডেন্ট ছিলাম না তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগেনি যে প্রবলেম দুটোর নামের শেষে World শব্দটি কেন ব্যবহৃত হয়েছে। আরো তো হাজার হাজার প্রবলেম পড়েছি ওগুলোর নামের শেষেতো World বলে কোন শব্দ নেই। যাই হোক আসল কথা হল এই নিয়ে আমার মাথায় কোন প্রশ্ন আসেনি। এভাবে প্রত্যেক জিনিসের কেন খুঁজতে গেলে কোটি কোটি কেন-এর মানে জানতে হবে। এত জ্ঞানী হবার বোধহয় সময় ছিলনা। অবশ্য ক্লাসের এক বুদ্ধিজীবির কাছ থেকে এর মানে জেনে গিয়েছিলাম।বই পড়ে জানতে কষ্ট লাগত, কিন্তু রেডিমেড কেউ জ্ঞান দিয়ে গেলে সেটা হজম না করার মত হাবুল বোধহয় ছিলাম না।
কারন টা অনেকটা এরকম। AI সাবজেক্টটা কি? এটা যদি বাংলায় বলতে চাই তাহলে বলতে হবে রোবট অথবা রোবট যে লজিক দিয়ে চলে তা নিয়ে নিরস ঘ্যানর ঘ্যানর। কেউ এই সাবজেক্ট পড়ে রোবট বানাতে পারবে এটা চিন্তা করা নিতান্তই হাস্যকর। যাই হোক কথা অন্য দিকে চলে যাচ্ছে। আসল কথায় আসি Vacuum World, Wampus World। Vacuum World –এ একটা Vacuum cleaner আছে। ২টা কি ৪টা রুম আছে, Vacuum cleaner এর কাজ হল ওই রুম গুলোতে ময়লা আছে নাকি দেখা। থাকলে সাফ করা না থাকলে পাশের রুমে গিয়ে আবার দেখা। Vacuum cleaner ঐ ২টা কি ৪টা রুমই চিনে। ওটাই তার বিশ্ব, এর বাইরে আর কিছুই সে চেনেনা। Vacuum World নামকরনে হেতু মোটামুটি এটাই। Wampus World প্রবলেমের নাম করনের কারনটাও একই। একটা রোবট পাহাড়ে গোল্ড খুঁজতে যায়। ওখানে Wampus নামক পাহাড়ি দৈত্য থাকে, ধরলে খেয়ে ফেলবে, ইত্যাদি ইত্যাদি।
এখন এই দিবস সেই দিবসের কোন অভাব নেই। আজকালকার পোলাপাইনরাতো এগুলোতে আরো ওস্তাদ। আমিও যেহেতু আজকালকারই পোলাপাইন তাই আমিও মোটামুটি ওস্তাদ। মোটামুটি ওস্তাদ এজন্য বললাম, কারণ একজন কে অনেক বেশী ভালবেসেও গত ১৪ই ফেব্রুয়ারী ভালবাসা দিবস উদযাপন করতে ব্যর্থ হয়েছি। সবাই যখন প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে সারাদিন টো টো করে ঘুরে বেড়িয়েছে সেখানে আমি সারাদিন বাসায় বসে বসে যাবর কেটেছি কোন আক্ষেপ ছাড়াই। কারনটা অবশ্য অন্য। ১৪ই ফেব্রুয়ারি আমার ভালবাসা দিবস ছিলনা। কোন খানের কোন ভ্যালেন্টাইন নামক ব্যাক্তি কবে কি করেছে তার জন্য দুনিয়া শুদ্ধ সবার ভালবাসা দিবস ১৪ই ফেব্রুয়ারি হতে হবে আমি মানি না মানব না। এখন প্রশ্ন এসে পড়ে তবে আমার ভালবাসা দিবস কবে? এই নিয়ে আমার দুই বন্ধুর সুচিন্তিত বক্তব্য শুনে আমি একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। প্রথম বন্ধুর বক্তব্য ছিল ও যেদিন ওর ভালবাসার মানুষকে I love u বলেছে সেদিনটাই ওদের anniversary। দ্বিতীয় বন্ধুর বক্তব্য ছিল সে নাই জীবনে ৭ জনকে I love u বলেছে বাট কারো কাছ থেকে উত্তর পায়নি। মেয়ে যতদিন I love u না বলে ততদিন নাকি কিছুই হয় না। যদিও আমি একজনকেই ভালবাসা জ্ঞাপন করেছি তাও দ্বিতীয় যুক্তিটাই জোড়ালো মনে হল। সেই হিসেবে আমার ভালবাসা দিবস ৫ই মে।
আমি নগন্য একজন মানুষ। আমার একটা বিশ্ব আছে যেই বিশ্ব মোটে তিনটি জিনিস। তার মধ্যে একটি আবার শুধু অনুভব করা যায়। প্রথমটি হল আমি যাকে ভালবাসি, দ্বিতীয়টি হলাম স্বয়ং আমি আর তৃতীয়টি হল আমাদের দুজনকে ঘিরে যে ভালবাসার বলয় সেটা। বিশ্বাস করবেন কি, আমার বিশ্বটা না মোটেও ছোট কোন বিশ্ব না। মোটে দুইজন আর আমাদের ভালবাসা থাকলেও আমার বিশ্বটা না অনেক বড়, অসীম। বিশ্ব ভালবাসা দিবস বলতে কোন বিশ্বের কথা বলছি আশা করি এতক্ষনে বুঝতে পেরেছেন বৈকি।
এতক্ষনের বকবকানি পুরোটাই বৃথা যাবে যদি পরিনতিটা সুখের না হয়। যাকে ভালবাসি তাকে নিয়ে একটা Happy Ending চাই। Ending বলতে কি বোঝাতে চেয়েছি বুঝতে পেরেছেন কি? বিয়ে সাদি?? উহু, সেইটা না। Ending বলতে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস বুঝিয়েছি। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তাকে নিয়ে সুখি থাকতে চাই। আজকের দিনে এটাই চাওয়া।শুধু আজকের দিন না। প্রতিটাদিন আমি এটাই প্রার্থনা করি, করে যাব………
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:২১