নিউ ইয়র্কে জানুয়ারির কোন এক শীতের সকালে বসে আছি বাইতুল মামুর মসজিদের নিচতলায়। কিছুক্ষণ পরেই নাকি একটা অনুষ্ঠান হবে। কিছু বক্তা থাকবেন, সাথে নাকি কয়েকজন বাংলাদেশী পুলিশ অফিসার এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছেন, বক্তব্য দিবেন। অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ পরে একজন পুলিশ অফিসার বক্তব্য দেবার জন্য উঠে দাঁড়ালেন। ধরে নিই তার নাম করিম।
অফিসার করিম আজ ১১ বছর ধরে নিউ ইয়র্কের পুলিশ বিভাগে কর্মরত আছেন। তিনি নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশী কমিউনিটির বিভিন্ন উন্নয়নের কথা বললেন অনেক গর্বের সাথে। এখানে বলে রাখা ভালো, আমেরিকায় ইমিগ্রান্ট হয়ে আসা অন্যান্য দেশের মানুষের তুলনায় বাংলাদেশের কমিউনিটি অনেক নতুন এবং আকারে ছোট। তবে উন্নয়নের দিক থেকে অন্যদের তুলনায় ঈর্ষনীয়। তিনি তার বক্তব্য শেষ করলেন একটা ছোট ঘটনা দিয়ে যে ঘটনাটি আমার এই লেখার মূল কেন্দ্র।
নিউ ইয়র্ক সিটিতে অনেকগুলো শপিং মল আছে । তার ভেতর একটা হল কুইন্স সেন্টার বা কুইন্স মল। এটি নিউ ইয়র্ক সিটির সব থেকে বড় বাঙ্গালী অধ্যুষিত এলাকা জ্যাকসন হাইটস এর নিকটেই অবস্থিত। সেই কারণে অন্যান্য জাতির মানুষের মত বাংলাদেশীরাও সেখানে বিভিন্ন প্রয়োজনে কেনাকাটা করতে যান। কিন্তু একজন বাংলাদেশী প্রবাসী হিসেবে বলতে লজ্জা করে, শপিং মল থেকে ফেরার পথে কিছু কিছু বাংলাদেশী আছেন যারা ( পুরুষ এবং মহিলা ) নিজেদের জামার মধ্যে, কাপড়ের মধ্যে, ব্যাগের মধ্যে করে কাপড় চুরি করার চেষ্টা করেন এবং শপিং মলের দরজার কাছে এসে ধরা পড়েন। অনেক বড় শপিং মল, ছোটখাটো দোকানের মত চোখের সামনেই সিকিউরিটি ক্যামেরা থাকে না। থাকলেও সহজে দেখার উপায় নেই। তাই এই সকল প্রবাসী বাংলাদেশীরা মনে করে বাংলাদেশের মত জিনিসপত্র লুকিয়ে নিলে কেউ আর ধরতে পারবে না। এই মনে করে দরজায় আসতেই এলার্ম বেজে উঠে এবং ধরা পড়ে যায়।
বাংলাদেশের মত চোর ধরলে এখানে উত্তম মধ্যম দেয়ার কোন আইন নেই। তাই কতৃপক্ষ তাদেরকে পাশের পুলিশ স্টেশনে পাঠিয়ে দেন। সেই পুলিশ অফিসেই আবার বাংলাদেশী ৫/৬ জন বাংলাদেশী অফিসার আছেন যারা সেখানে নিয়মিত কাজ করেন। অফিসার করিমও তাদেরই একজন। তিনি বলেন যখন দেখি প্রতি সপ্তাহে কেউ না কেউ চুরির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে আমার স্টেশনে আসে তখন প্রবাসী স্বদেশী হিসেবে লজ্জায় আমার মাথা নত হয়ে যায় সবার কাছে
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ব্যাপারটা আসলেই অনেক কষ্টের, এবং দুঃখের। এটি একটি সচেতনতামূলক পোস্ট। বাংলাদেশী কিছু কিছু প্রবাসীর এমন অনাকাঙ্ক্ষিত কৃতকর্মের নেতিবাচক প্রচার আমার লক্ষ্য নয়।