স্কুলের বাচ্চা মেয়েদের বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত জনসচেতনতার কথা বুঝাতে গিয়ে আজ জনরোষের স্বীকার।
খন্ডিতভাবে একটি অংশ বেছে নিয়ে ছাগলনাইয়ার মাননীয় ওসি মহোদয়ের বক্তব্যকে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। উনি ফিরতি ভিডিওতে পরিস্কার করেছেন, অনেক প্রবাসী আছেন যারা অল্প বয়স্ক মেয়েকে বিয়ে করে বিদেশ চলে যান বেশ অনেক বছরের জন্য, এরপর সেই মেয়েটির সামাজিকভাবে, পারিবারিকভাবে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট শুধু সেই বোঝে।
আসলে এই বিষয় নিয়ে কথা বলাও এখন অপরাধের হবে। কারন হাজার কষ্ট স্বীকার করলেও মেয়েদের কিছু বলা যাবে না, এটাই পুরুষ শাসিত সমাজের চিত্র। আবার ৩৫-৪০ বছরের মাঝ বয়সী পুরুষের সাথে ১৫-১৬ বছরের মেয়ের বিয়ে ঠিক করলেও বাবা মায়ের সিদ্ধান্তের উপর কিছু বলা যাবে না, এটা সমাজের নীতি।
সেখানে পুলিশ অফিসার জনসচেতনতার কথা বলে সত্যি অপরাধ করে ফেলেছেন। তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বলা হচ্ছে, তার ফাঁসীর দাবীও করছেন কেউ কেউ, অনেকে আপত্তিকর ভাষায় গোটা পুলিশ বাহিনীকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে ফেলছেন একেবারেই!
বাল্য বিবাহ দেশ থেকে, সমাজ থেকে দূর হবে কিভাবে? আমরাই তা জোড় করে রেখে দিচ্ছি সমাজে। উপযুক্ত পয়সাওয়ালা পাত্র দেখলেই তার বয়স নিয়ে ভাবি না, মেয়ের বয়স নিয়েও ভাবি না। তুলে দেই তার হাতে।
আসলে সংসার মানে কি?
আমি জানি, এখানে অনেকেই আমার মতের বিরুদ্ধে মন্তব্য করবেন হয়তো, তার আগে একটু নিরপেক্ষভাবে ভেবে দেখুন, বাল্য বিবাহ কি আপনি সমর্থন করেন? পুলিশ অফিসারের পরে দেওয়া ব্যাখ্যামুলক ভিডিওর কথাগুলোকে আপনি কি অস্বীকার করেন?? এখানে প্রবাসীদের বিবাহ করতে না করা হয়নি কিছুতেই। এখানে প্রবাসীদের বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে স্কুলের শিক্ষার্থীদের সচেতন করা হয়েছে মাত্র। যাতে বিদেশে থাকে, এমন পয়সাওয়ালা পাত্র দেখলেই অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে পাত্রস্থ করে না দিতে পারে কোন বাবা-মা।
ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর (রা) এর সময়ের একটি ঘটনা। খলীফা প্রায় সময়েই রাতের বেলা ছদ্মবেশে শহরের বা লোকালয়ের আশেপাশে ঘোরাফেরা করতেন। মানুষের অবস্থা বোঝার চেষ্ঠা করতেন। তেমনি একদিন রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় একটি ঘরের পাশ দিয়ে যাবার সময় এক মেয়ের কান্না তার কানে এসে পড়ল। মেয়েটি বিলাপের সুরে কাঁদতেছিল আর বলছিল, ইস! আমার স্বামী যদি আজ আমার পাশে থাকত, তাহলে এই রাতটা কতই না আনন্দের হতে পারত!
খলীফা পরদিন সেই মেয়েকে ডেকে পাঠালেন ও তার স্বামীর খোঁজ করলেন। মেয়েটি জানাল, তার স্বামী একজন সৈনিক। রাষ্ট্র রক্ষার কাজে তিনি বাইরেই বেশিরভাগ সময় থাকেন।
খলীফা এরপর জানতে চাইলেন, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে কতদিন স্বামী ছাড়া থাকতে পারে? উত্তরে জানলেন খুব বেশি হলে ৪ মাস।
তারপর থেকে হযরত ওমর (রা) তার সৈন্যদের মাঝে প্রতি ৪ মাস পর পর ছুটি বাধ্যতামুলক করেছিলেন নিজেদের পরিবারকে সময় দেবার জন্য।
এই হিসেবে প্রবাসী ভাইয়েরা কি এমন কোন ছুটি নিতে পারেন?
উপযুক্ত বিয়ের বয়স হবার পর মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হোক, তাতে তো কারও কোনই আপত্তি থাকার কথা নয়। প্রবাসীরা আমাদের দেশের সম্পদ। তাদের কষ্টের টাকা দেশের অর্থনিতিতে অনেক ভুমিকা রাখে। এ কথা অনস্বীকার্য। প্রবাসীদের অসম্মান আমরা কেউ যেমন চাইনা, তেমনই বাল্যবিবাহকেও আমরা কেউ কাম্য করিনা।
সুন্দর ও একটি সুখি বাংলাদেশ দেখার প্রত্যয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৩