somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিশোয়ার চৌধুরি : এ যুগের পান্তা বুড়ি

১৫ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৮:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী এর "পান্তা বুড়ি"র কথা কি আপনাদের মনে আছে ? 



তাহলে শুনুন ,এক চোর বুড়ির পান্তা চুরি করে খেয়ে ফেলতো । সেই দুঃখে বুড়ি রাজার কাছে বিচার চাইতে গেলো । যাওয়ার পথে  শিং মাছ , বেল , গোবর ও ক্ষুরের সাথে দেখা হলে তারা জানতে চাইলো বুড়ি কোথায় যাচ্ছে ? মনের দুঃখে বুড়ি তার সব কথা বললো । এরপর তারা বললো বাড়ী ফেরার সময় আমাদের নিয়ে যেও । রাজাকে না পেয়ে  বাড়ি ফিরবার সময় তার শিং মাছ , বেল , গোবর ও ক্ষুরের কথা মনে হলো। সে তাদের সকলকে তার থলে করে নিয়ে এলো ।

পান্তাবুড়ি তার বাড়ির আঙিনায় আসার সাথে সাথে তখন ক্ষুর তাকে বললে, ‘আমাকে ঘাসের উপর রেখে দাও।’ তাই বুড়ি ক্ষুরখানাকে ঘাসের উপর রেখে দিল।

গোবর বললো, ‘আমাকে পিঁড়ির উপর রেখে দাও।’তাই বুড়ি গোবরটাকে পিঁড়ির উপর রেখে দিল।

বেল বললে, ‘আমাকে উনুনের ভিতরে রাখো।’   বুড়ি তাই করলো। 

শিং মাছ বললো, ‘আমাকে তোমার পান্তাভাতের ভিতরে রাখো।’ বুড়ি তাই করলো।তারপর রাত হলে বুড়ি রান্না-খাওয়া সেরে ঘুমিয়ে গেলো । 

সেই রাতে  চোর  এসে যেই না পান্তা ভাতের হাঁড়িতে হাত দিলো, শিং মাছ তার হাতে কাঁটা ফুটিয়ে দিলো । ব্যথার জ্বালায় চোর লাফ দিলো আর অমনি গোবরের গাদায় পা পিছলে পরে  ক্ষুর লেগে পা কেটে  গেলো । পায়ের আঘাতে গোবর ছিটে চোখে-মুখে এসে পরলো । চোর সামনে পুকুরে হাত-পা ধুয়ে বুড়ির চুলার ওপর  হাত-পা গরম করতে  যেই গেলো , অমনি বেলটি ফেটে চোরের চোখে-মুখে লেগে ফোসকা পরে গেলো ।

বেল ফাটার শব্দে বুড়ি ‘কে রে! কে রে!’  বলে জেগে উঠলো। চোর তখন দে দৌড়।সেই হইতে চোর আর বুড়ির ত্রিসীমানায় আসে না। মজা করিয়া বুড়ি পান্তা ভাত খায় আর সারা দিন বসিয়া ছেঁড়া কাঁথায় জোড়াতালি দেয়।

এ তো গেলো ছোটদের আনন্দের দেয়ার পান্তাবুড়ির গল্প । কিন্তু আধুনিক যুগের পান্তাবুড়ি গল্প এখন আর অজানা নয় ... বাংলার মেয়ে কিশোয়ার চৌধুরীর বদৌলতে । 

কিশোয়ার চৌধুরীর খাবার উপস্থাপন  শুরু থেকেই ভালোলাগতো আর এখন তো ভালোলাগার কারণ টাই বেড়ে গেলো। অবশ্যই তা বাংলা খাবারকে এক অন্যন্য ভাবে উপস্থাপনের জন্য। এর আগে রাশেদুল হাসান(২০১৭) বাংলা খাবারকে ফোকাস করেছেন। পান্তা বুড়ির সেই সাধের পান্তাকে বিশ্বের দরবারে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করে  আধুনিক পান্তাবুড়ির খেতাবতা তিনি নিয়েই নিলেন । 
বর্তমানে বাংলা খাবারের চাহিদা বেড়েই চলছে আর সেই চাহিদাকে নিজের বুদ্ধি ও জ্ঞান দিয়ে পরিবেশন করে প্রশংসা পাওয়া কম নয় আমাদের জন্য।

আমাদের  প্রতিটি বাঙালী পরিবারে একজন কিশোয়ার বা একজন রাশেদ আছে। তাদেরকে আজকের অবস্থানে আসতে পরিবারের সাপোর্ট অনেকটাই কাজে দিয়েছে। এজন্যই একজন মানুষ তার কাজের প্রতি ভালোবাসা ও আত্মবিশ্বাসকে জোর দিয়ে নিজেকে সাফল্যমন্ডিত করতে পারে। উনারা নিজ পরিবারের কাছে চ্যাম্পিয়ন সবসময়ই। মানুষের মনে জায়গা করে নেয়ার চেয়ে বড় কিছু নেই। 

আমরা জাতি হিসেবে খুব আন্তরিক ও ভালোবাসা প্রবণ। তা সে ভালোবাসা মানুষের জন্য চিরকালই বহাল আর খাবারের জন্য জন্যে হলে তো সেখানে চলে আসে  ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে ধোঁয়া ওঠা এক সূক্ষ্মতম ভালোবাসার। যেখানে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের হাত ধরে মাটির বাসনে সরষে ঝোলের মাঝে শুয়ে থাকা ইলিশের টুকরোটাও আধুনিকতার পরশ পেয়ে যায়। তখন সে নিজেকে কালো চিনেমাটির থালার মাঝখানে সাদা ভাতের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা সরষে ঝোলের মাঝে দাঁড়ানো অবস্থায় আবিস্কার করে যে, পুরো বিশ্ব তাকে কুর্নিশ করছে । ঐতিহ্যকে আধুনিকতার শেকলে বাঁধতে গিয়েও এইভাবে উপস্থাপন করার পেছনে কোন এক শৈল্পিক ভাবসমৃদ্ধ হাজার হাজার কিশোয়ার বা রাশেদ জড়িত। ভাগ্য ভালো হলে কেও আলোর দিশা পেয়ে যায়, আর দূর্ভাগ্য হলে আলো সাময়িকভাবে নিভে যায়। কিন্তু শিল্পের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান একবার চলে  এলে বস্তুতপক্ষে তা তুষের আগুনের মতোই জ্বলে। সামান্য আগুন পেলেই শুকনোমরিচটাও জানান দেয় তার উপস্থিতি। 


তবে কিশোয়ার বা রাশেদুল হাসান অস্ট্রেলিয়ান মাস্টার শেফ এ বাংলা খাবারের পরিবেশনা আমাকে নতুন করে উৎসাহিত করেছে। মনে পড়ছে ২০১৯ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে পহেলা বৈশাখের রেসিপিতে প্রায় ২০ রকমের বাঙালী ঘরানার খাবারের পাশাপাশি পান্তাভাত এর রেসিপি ছিলো । আর সামাজিকভাবে কিছু উচ্চমাত্রায় সুস্থ মানুষের কারণে পান্তাভাতের রেসিপি ট্রলে পরিনত হয়। পুরো বৈশাখী আনন্দে আমি ট্রল গুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম কোন অশিক্ষিত মানুষ এসব করেনি। শিক্ষিত ব্যাক্তিবর্গের পাশাপাশি দেখলাম রান্না সংশ্লিষ্ট অনেকেই পান্তাভাতের রেসিপি নিয়ে মজা করছে। যারা করেছে তারাও হুজুগে। কেও প্রটেস্ট করতে গেলেও শুনতে হয়েছে নানান কথা। তো সেসময় মনে পরলো সুশিক্ষা ও স্বশিক্ষা দুটো আলাদা বিষয়। তাই নিজেকে অসুস্থ বানালাম না। তবে ভাবতে ভালো লাগছে যারা সেদিন পান্তাভাতের রেসিপি নিয়ে ট্রল করেছিলো তারাও হয়তো আজ কিশোয়ারের পান্তাভাত ও আলুভর্তার অসাধারণ উপস্থাপনার কথা বলেছে। 

ধৈর্য্য ও জ্ঞান হচ্ছে দুধ ও ভাতের মতো। এরা আলাদা আলাদা ভাবেও সম্মানিত আর একসাথে হলে তো খাবারের শেষ দিকে শো স্টপারের কাজ করে। নিজেকে ছোট ভাববেন না। আপনার গুণাবলি আজ না হোক কাল পরশু কথা বলবেই। ততদিন পর্যন্ত নিজের কাজের সাথে প্রতারণা করবেন না (  একান্তই ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা ) । আমাদের গর্ব কিশোয়ার চৌধুরী ধৈর্য্য ও জ্ঞান দিয়ে নিজেকে প্রমাণিত করেছে। 


পোস্টের স্থিরচিত্রটি আনার খুব মন কেড়েছে তাই এই চিত্রটি বল্গবাসীদের সাথে শেয়ার করলাম। কারণ নানান রকম মানুষের ভালোবাসা মাখানো খাবার গুলোর প্রতিনিধিত্ব করেছেন একজন কিশোয়ার চৌধুরি।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৮:৩৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×