পুজোর প্রসাদে বিভিন্ন ফল-ফলাদি থাকলেও আসল আকর্ষণ থাকে খিচুড়ি আর লাবড়াতে । অনেক সময় সাথে লুচি-সুজিও থাকে । আমার কাছে আমার মামার বাড়ির ( মীরেরসরাই , চট্টগ্রাম ) স্বরস্বতী পুজো সেরা ।
মামা বাড়িতে পুজোর আগের দিন রাতে প্রতিমা এনে মন্দিরে রাখার মুহূর্ত ঢাকঢোল কাসর বাজিয়ে বরণ করার সেই আনন্দ মিস করি । রাত জেগে মন্ডপ গুছানো ও পরিস্কার করা আর একটু করে ঘুমিয়ে আবার খুব সকালে উঠে স্নান সেরে নতুন জামাকাপড় পরে পুজোর বিভিন্ন কাজে একে অপরকে সাহায্য করা ।
পুরোহিতের জন্য অপেক্ষা করাতেও আনন্দ ছিলো , তিনি এলে আয়োজন করে সবাই মিলে অঞ্জলি প্রদান । এই অঞ্জলি দেয়ার সময় সবাই বিশেষ করে ছোটরা গাঁদা ও পলাশ ফুল হাত ভরে নিয়ে বসতাম । সব বই দেবীর পাশে রেখে দিতাম বিশেষ করে যে বিষয়ে দুর্বল মতে হতো সেই বইটাই আগে দিয়ে দিতাম । এরপর অঞ্জলী শেষ করে প্রসাদ খাওয়ার সময় এক বিশাল পাথরের থালা বা বড় কোন পাত্রে মেখে সবাই খেতাম । এ আনন্দ গুলো হাজার বছরেও আসবে না আর । বিকেলের দিকে পাশের গ্রাম ঘুরে বেরানো আর সাথে সেই প্রসাদ খাওয়ার বাসনা পুরণ করা । সেই সময় গুলো এক নির্ভেজাল ছিলো ।
এবার আসি বড় বেলায় , বড় বেলায় নিজস্ব স্কুলে পুজোর অঞ্জলি দেয়া এরপর বিকেলে সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করা । এরপর কলেজে উঠে সেই একই ভাবে অঞ্জলি প্রদান আর সন্ধ্যেবেলা পুরো ঢাকার পুজামন্ডপ গুলো ঘুরে বেড়ানো । আর অবশ্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ও শাঁখারিবাজার সেই তালিকার বাইরে নয় । এভাবেই এখন পুজোর সময় এসে চলেও যায় শুধু বার বার পেছন ফিরে তাকিয়ে জীবনের মানে টা খুঁজে আবারো সামনে এগিয়ে যেতে হয় নতুন কিছুর জন্য ।
পলাশ ফুলের মায়ার বাসন্তী পাঞ্জাবীটা এবার তোলা থাক , স্মৃতি গুলো জমে জমে বরফ শীতল হয়ে থাকুক । যাতে করে ফেলে আসা আনন্দ-বেদনা গুলো একজায়গায় চিরসবুজ হয়ে স্থির হয়ে থাকে ।
সত্যি বলতে ছোট বেলার স্বরস্বতী পুজো আর বড় বেলার পুজোর তফাৎ অনেক । কিন্তু পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ,আত্মীয়-স্বজনের সাথে অতিবাহিত সময় গুলো বারবার মনে করিয়ে দেয় একটা সময় মানুষের ভালো যায় । হয়তো আগামীতেও ভালো কিছু সময় অপেক্ষায় আছে আমাদের ।
নিজস্ব কিছু স্মৃতি চারণ নিয়েই আজকের পোস্ট ( পাঞ্জাবীটি আমার খুব পছন্দের তাই বল্গবাসীদের দেখিয়ে দিলাম ) ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:৩৮