উৎসব মানেই আনন্দ আর এই আনন্দ কিন্তু রকমারি খাবার ছাড়া একদম জমে না। দুর্গাপুজা উপলক্ষ্যে দেশের সর্বাধিক প্রচলিত জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর নকশাতে প্রকাশিত হয়েছে আমার রান্না করা সাবেকি স্বাদের কিছু খাবারের রেসিপি ।
আমার প্রিয় বল্গবাসীদের সামনে সেই রেসিপি গুলো হাজির করলাম । আশা করি বাংলার এই পুরনো রান্নার স্বাদ আপনাদের মন জয় করবে । আর যদি এই রেসিপিগুলো বাড়িতে রান্না করেন অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না ।
বেসনে মোড়ানো পোস্ত চিংড়ির কষা
উপকরণ :
ক) বেসনের রুটির জন্য - বেসন ২ কাপ, ময়দা ১/২কাপ , আদা বাটা ১/২চা চামচ, ধনেপাতা কুঁচি ১/২কাপ , সরষেরতেল ২চা চামচ, ঈষৎ উষ্ণ গরম পানি প্রয়োজন মতো , লবণ সামান্য ।
খ) চিংড়ি মাছের জন্য - চিংড়ি মাছ ৮টি , লেবুররস ২চা চামচ, কাঁচামরিচ কুঁচি ১ চা চামচ , লবণ সামান্য ।
গ) ফোঁড়নের জন্য - মেথি ১/৪চা চামচ,জিরা ১/৪চা চামচ , শুকনোমরিচ ২ টি , তেজপাতা ২ টি ।
ঘ) কষানোর জন্য - সরষে তেল ১/২কাপ , আদাবাটা১ চা চামচ , জিরে বাটা ১/২চা চামচ, ধনিয়া গুড়ো ১/২চা চামচ, নারকেল বাটা ২ চা চামচ , হলুদ গুড়ো ১/২চা চামচ, মরিচ গুড়ো ১চা চামচ, বাদাম বাটা ২ চা চামচ , নারকেল দুধ ১কাপ , পানি ১কাপ , কাঁচামরিচ ৪টি , গরমমশলা গুড়ো ১/২চা চামচ, লবন স্বাদমতো।
প্রণালী :
চিংড়ি মাছের খোসা বেছে মাঝ বরাবর সাম্য কেটে রগ বের করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রাখুন । এবার মাছগুলোতে কাঁচামরিচ কুঁচি , সামান্য লবণ ও লেবুর রস মেখে রাখুন । অন্য একটি বাটিতে (ক)নং উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে কিছুটা নরম আকারের ডো করে রুটির মতো বেলে নিন ।এবার এই রুটিতে অল্প করে পোস্ত বাটা ছড়িয়ে চিংড়ি মাছ বিছিয়ে রুটি রোলের মতো করে মুড়িয়ে কলাপাতায় বিছিয়ে ১০ মিনিট ভাপিয়ে তুলে রাখুন । প্যানে সরষের তেল দিয়ে মেথি , শুকনোমরিচ , জিরা ও তেজপাতা ফোঁড়ন দিন । এবার একে একে বাটা ও গুড়ো মশলা দিয়ে ভালোকরে কষাতে থাকুন । তেল উপরে উঠে এলে নারকেল দুধ ওপানি দিন । ঝোল কিছুটা কমে ঘন হয়ে এলে আগে থেকে ভাপিয়ে রাখা বেসন চিংড়ি গুলো সাবধানে দিয়ে আলতোভাবে নেড়ে কাঁচামরিচ ওগরম মশলা গুড়ো ছড়িয়ে ঢেকে ৫মিনিট দমে রেখে নামিয়ে পোলাও বা লুচির সাথে পরিবেশন করুন ।
কাঞ্জলী মাখা
উপকরণ :
কলা গাছের কাঞ্জল মাঝারি আকারের ১টি , ছানা ১/২ কাপ,স্বেদ্ধ ছোলারডাল ৪ টেবিল চামচ, ভাজা বাদাম ২ চা চামচ, নারকেল কোড়া ১/২কাপ , আদা বাটা ১ চা চামচ , জিরা গুড়ো ১চা চামচ,ধনিয়া গুড়ো ১/২চা চামচ, হলুদ গুড়ো১/২চা চামচ, নারকেল দুধ ১ কাপ, কাঁচামরিচ আধাবাটা ৬টি , তেজপাতা২ টি, এলাচ ২ টি ,গোটা জিরে ১/২চা চামচ,সরষের তেল ১/২কাপ , ঘি ২চা চামচ, লবণ স্বাদমতো ।
প্রণালী:
কলার কাঞ্জল কেটে ধুয়ে গরম পানিতে দুই মিনিট ভাপিয়ে পানি ঝরিয়ে রাখুন । ঝড়ানো পানি রেখে দিন ।প্যানে তেলদিয়ে তাতে কাঁচামরিচ আধা বাটা , তেজপাতা,এলাচ , গোটা জিরে ফোঁড়ন দিন । এতে বাকী বাটা ও গুড়ো মশলা দিন ।কাঞ্জল স্বেদ্ধ সামান্য পানি দিয়ে মশলা কষিয়ে স্বেদ্ধ কাঞ্জল ওনারকেল কোড়া দিয়ে ভাজুন । একটি বাটিতে ১কাপ নারকেল দুধ ও ১/২ কাপ কাঞ্জল স্বেদ্ধ পানি মিশিয়ে দিয়ে স্বেদ্ধ ছোলা ও স্বাদমতো লবণ দিয়ে ঢেকে ঢিমে আঁচে রান্না করুন । কিছুটা শুকিয়ে ভেজা ভেজা অবস্থায় এলে নামিয়ে ছানা ও ঘি ছড়িয়ে গরম ভাত অথবা লুচির সাথে পরিবেশন করুন ।
ছানামোহন
উপকরণ :
তরল দুধ ৩ লিটার ( ১/২ কাপ লেবুর রস ফুটন্ত তরল দুধে দিয়ে ছানা তৈরি করুন ভাল করে পানি ঝরিয়ে নিন) , চিনির সিরা ৪কাপ ( ২ কাপ পানি ও৩ কাপ চিনি জ্বাল দিয়ে সিরা বানিয়ে নিন ) , ময়দা ১/২চা চামচ, চালের গুড়ো ১/২চা চামচ, তরল দুধ ১/২কাপ , নারকেল বাটা ২ চা চামচ , দুধের সর ১ কাপ, মাওয়া ২চা চামচ , আধাভাঙ্গা বাদাম ১/২কাপ , এলাচ গুড়ো ১/২চা চামচ , কিসমিস কুঁচি ১ চা চামচ, ঘি ১/২কাপ , তেল ২কাপ ।
প্রণালী :
একটি পাত্রে ছানা, এলাচ গুলো সামান্য, ময়দা ও চালের গুড়ো মিশিয়ে ভালোভাবে মিশ্রণ তৈরি করে ডো বানিয়ে নিন। এবার ছাঁচ অথবা হাতের সাহায্যে ছোট বাটির আকারে গড়ে তেল ওঘি এর মিশ্রনে ভেজে চিনির সিরায় ১০ মিনিট ডুবিয়ে তুলে ঠান্ডা করে রাখুন ।এবার বাকি ছানা ভালোভাবে মথে নিয়ে এতে একে একে তরল দুধ, দুধের সর, নারকেল বাটা মিশিয়ে ভালোভাবে ফেটিয়ে নিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন । এই মিশ্রনে মাওয়া , আধাভাঙ্গা বাদাম , কিসমিস কুঁচি আলতোভাবে মিশিয়ে নিন।এবার ছানার বাটিতে মিশ্রণ দিয়ে ঠান্ডা করে উপর থেকে সামান্য ঘি ছড়িয়ে পছন্দমতো সাজিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার ছানামোহন ।
সাবেকী পায়েস
উপকরণ :
তরল দুধ ২ লিটার, তুলশীমালা চাল ২০০ গ্রাম, ঘি ১/২ কাপ, চিনি ১/২ কাপ, দারচিনি ছোট সাইজের ১ টুকরো, এলাচ ২ টি ,মাওয়া ২ চা চামচ, বাদাম বাটা ২ টেবিল চামচ, কিশমিশবাটা ১ টেবিল চামচ, বাদাম কুঁচি ও ঘি সামান্য সাজানোর জন্য। প্রনালী- চাল ধুয়ে পানি ছেঁকে রাখুন ।প্যানে তরল দুধ , এলাচ ও দারচিনি মিশিয়ে মৃদু আঁচে জ্বাল দিয়ে অর্ধেক করে নিন । অন্য প্যানে ঘি দিয়ে চালহাল্কা ভেজে নিন । এবার জ্বাল দেয়া তরল দুধ ভাজা চালের মধ্যে ঢেলে নাড়তে থাকুন যাতে দানা না বেধে যায় । চাল কিছুটা স্বেদ্ধ হয়ে এলে একে একে বাকী সব উপকরণ দিয়ে নাড়তে থাকুন । সব উপকরণ ভালোভাবে মিশে বেশিরভাগ মিহিহয়ে এলে নামিয়ে ঠান্ডা করে পছন্দমতো পাত্রে ঢেলে সাজিয়ে পরিবেশন করুন ।
পুর ভরা শিউলিপাতার বড়া
উপকরণ :
কচি শিউলিপাতা ৮টা, নারকেলবাটা ১চা চামচ,ছানা ২ টেবিল চামচ, সরিষা বাটা ১ চা চামচ , কাঁচামরিচ কুঁচি ২ টি ,ধনেপাতা কুঁচি ১ চা চামচ, বেসন ১/২কাপ, চালের গুড়ো ১কাপ , হলুদগুঁড়ো ১/২চা চামচ, কালোজিরে সামান্য, লবণ স্বাদমত, তেল ২ কাপ ।
প্রণালী :
কচি শিউলিপাতাগুলো ভাল করে ধুয়ে নিন। একটি পাত্রেবেসন, চালের গুড়ো, হলুদ গুঁড়ো,কালোজিরে, পানি ভালোভাবে মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। অন্য একটি পাত্রে পাতা ও তেল বাদে বাকী সব উপকরণ মিশিয়ে পুর তৈরি করুন । এবার ধুয়ে রাখা পাতাগুলোকে চ্যাপ্টা করে তাতে পরিমানমতো মিশ্রণ দিয়ে আয়তাকারে গড়ে রাখুন। প্যানে তেল গরম করে পুরভরা পাতাগুলো ব্যাটারে ভাল করে ডুবিয়ে গরম তেলে সোনালি রঙ করে ভেজে নামিয়ে গরম ভাতের সাথে কাসুন্দি দিয়ে পরিবেশন করুন।
দুর্গাপুজা উপলক্ষ্যে রেসিপি গুলো "নকশা"তে ১৩/১০/২০২০ সালে প্রকাশিত হয়েছে
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:৫১