কে বিচারক, কে সরকার, কে খালা কে হাসি?
আমরা জানি কারা রাজাকার, দিবই ওদের ফাঁসি।
উত্তাল শাহবাগের সৌভাগ্য সবার সাথে শেয়ার করছি বিস্তারিত। বিশেষ করে যে ভাইরা আজকে দেশের বাইরে থাকার কারণে দেখতে পারছেন না আমাদের জাতীয় জাগরণ- এবং যারা ঢাকার বাইরে।
১. চারুকলা
চারুকলার গেটে, ছবিমেলার সামনে, পুরো রাস্তা বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
রাস্তার বুকে আঁকা হচ্ছে হিংস্র পশুর চেহারা। জামাতের চেহারা। শিবিরের চেহারা। রাজাকারের চেহারা।
একটা দশ বারোফুটি বাঘ বানানো হয়েছে হলদে ডোরা রঙ করে। হয়ত বাঁশের ফ্রেমে কাগজ দিয়ে তার উপর রং করে। বাঙালির প্রতীক। চারুকলার ছাত্রছাত্রীরা অঙ্কনে ব্যস্ত।
২. ব্লগারগণ
ব্লগাররা দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটা গ্রুপে। কালকের গ্রুপটা বেশ বড় ব্যানার নিয়ে দাঁড়ানো। শ্লোগান দিতে দিতে গলা ভেঙে গেছে ভাইবোনদের। শতাধিক ব্লগার। একটা গ্রুপে কখনো নারী বাঙালি চিৎকার করছেন, কখনো পুরুষ। সে কী উদ্যম, সে কী উদ্যোগ!
৩. গ্রন্থাগারের সামনে গানের পিকআপ
ভয় কী মরণে, থাকিতে সন্তানে,
মাতঙ্গী মেতেছে আজ নতুনও রঙ্গে।
পিকআপের গায়ের ব্যানারে, চিহ্নিত সব রাজাকারের ফাঁসির দাবি। পথে পথে এই পিকআপ আজকে ছুটে বেড়িয়েছিল। ধানমন্ডি ও অন্যান্য জায়গাতে। কালো পিকআপে কালো বিশাল একজোড়া সাউন্ডবক্সে বুক তাতানো দেশের গান। সাধু, সাধু।
৪. ১৫০ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, আর যারা সমর্থন জানিয়েছেন
মানুষ গরার কারিগর, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ঢাবির দেড়শো শিক্ষক আমাদের সাথে বুকে বুক মিলিয়েছেন। ড. মুনতাসীর মামুন। ঢাকা চার আসনের এমপি। অনেক অনেক মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড এর লাল পতাকার ভিতরে হাতে ধরা বেয়োনেট দেখা গেছে। লালন চর্চা কেন্দ্র- পার্ক থেকে এসেছেন সাধকরা, সত্যিকার লালন চর্চাকারীরা। এসেছেন তাদের সাথে তারুণ্যের প্রতিনিধিরা। হাতে মোমবাতির ঝলক, বুকে দেশের জন্য ভালবাসা।
৫. বহু রাজনৈতিক দল
আলাদাভাবে কারো নাম নিব না। শাহবাগ বিপ্লবের চেতনার সাথে দলীয় কোন চেতনাই যায় না। কিন্তু অনেক রাজনৈতিক দল ও সঙ্গঠনের বিশেষ করে তারুণ্য শাখা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। মিছিল আসছিল, মিছিল যাচ্ছিল। মশাল মিছিল, পতাকা মিছিল, মোমবাতি মিছিল।
একটা সঙ্গঠনকে দেখা যাচ্ছিল অনেকটা যেন বিপ্লবের নেতৃস্থান নিয়ে নিচ্ছে, তাতে বিপ্লবের কিছু এসে যাবে না। বিপ্লব গণমানুষের, রাজার নয়, রাজার নীতির নয়।
৬. ঝুলছে কাদের মোল্লা
জায়গায় জায়গায় ঝুলছে কাদের মোল্লা। ওর জুতা পরিহিত কুশপুত্তলিকা। অনন্য দৃশ্য।
৭. মূল সমাবেশ
মূল সমাবেশে সবাই ছিলেন বসে। নারী, পুরুষ, তিন বছরের শিশু। শাহবাগের পুরো চত্ত্বর ভরে উঠেছিল। সবাই বসে বসে দিচ্ছেন শ্লোগান। গাইছেন দেশের গান। জাগরণের গান। অদ্ভুত দেশপ্রেমের ছোঁয়া সর্বত্র। অবাক করা সব শ্লোগান-
পাকিস্তানের প্রেতাত্মা,
পাকিস্তান ফেরৎ যা!
দৌড়া গোলাম আজম,
তুই রাজাকার! তুই রাজাকার!!
দৌড়া নিজামী,
তুই রাজাকার! তুই রাজাকার!!
দৌড়া মুজাহিদ,
তুই রাজাকার! তুই রাজাকার!!
দৌড়া কাদের মোল্লা,
তুই রাজাকার! তুই রাজাকার!!
সবচেয়ে ভাল লেগেছে যেটা তা হল, ওদের কবর পাকিস্তানে দিতে বাংলাদেশের মানুষ একমত।
সে কী গা শিউরানো একাত্মতা! হাজার হাজার কন্ঠের এক সুরে, এক লয়ে শ্লোগান, এক তালে হাততালি, এক লয়ে চিৎকার!
৮. জয়বাংলার জয়জয়কার
জয়বাংলার ছিল জয়জয়কার। জয়বাংলার সাথে আর কিছু বলা হয়নি, এবং আর কিছু না বলার কারণেই তা হয়ত দলীয়করণমুক্ত হয়েছে। আসলেই তো, জয় বাংলা কারো দলীয় সম্পদ নয়। এ হল একাত্তরের শ্লোগান। একাত্তরের মুখের বুলি।
একাত্তরে আওয়ামীলীগ যেমন জয়বাংলা বলেছিল, তেমনি বলেছিল কমুনিষ্টরা আর তেমনি বলেছিল এমনকি আওয়ামীলীগের বিরোধীরাও।
আজকে সেই সুর দেখে খুব ভাল লাগল। এই প্রথম গলা ছেড়ে বলতে পারলাম, জয় বাংলা!
৯. পরবর্তী ঘোষণা
আজ রাত ন'টার পর থেকে বক্তব্য শুরুর কথা রয়েছে। তার আগ পর্যন্ত শুধু শ্লোগান আর শুধুই জাগরণের গান। দেশের গান। কালকে সকাল দশটা থেকে আবার শুরুর কথা রয়েছে। বিশেষ করে আগামী শুক্রবার সকাল থেকে এখানেই ডাক দেয়া হয়েছে মহা সমাবেশ। ছাত্র ও তারুণ্যের মহা সমাবেশ। বলা হচ্ছে, সবাইকে এসএমএস এর মাধ্যমে, ফোনের মাধ্যমে, অনলাইনের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া প্রয়োজন।
১০. অন্যান্য
দল করে করে বসে ছিল বিপ্লবীরা। মূলত তারুণ্যের জয়জয়কার। আপাত গৃহবাসী ও নেটচারী প্রজন্ম ভেঙে পড়েছে, ওদের চোখমুখ আর চালচলনেই তা স্পষ্ট। পিজি হাসপাতালের ছাদে মানুষ আর মানুষ, তারা মানুষ দেখতে চায়। তারা বঙ্গমাতার সন্তান দেখতে চায়।
আশেপাশে জটলা ছিল। অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত বিপ্লবীদের আনাগোনা। প্রায় দু কিলোমিটার পর্যন্ত।
বুদ্ধিজীবী, নেতৃবৃন্দ যেমন ছিলেন অনেক পরিমাণে, তেমনি দেখা গেছে অগুণতি সাধারণ মানুষ। একজন রিকশাওয়ালা, ফেরিওয়ালা, বয়েসি শ্রমজীবী মানুষ পর্যন্ত একাত্ম্য। অনেক অনেক দাঁড়ি-টুপির ধার্মিক মানুষ যেমন দেখা গেছে তেমনি খোদ সমাবেশের ভিতরে বোরখা পরিহিত মহিলা পর্যন্ত- যা দেখে আশ্চর্য হয়ে গেছি। প্রকৃতই এটা বাংলার বিষয়। বঙ্গভূমির বিষয়। ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোত্র-দল ও মতের বাইরের বিষয়।
(পোস্ট আরো আপডেট হতে পারে।)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৩১