শীতকাল মানেই প্রতি রাতেই গ্রাম কিংবা শহরে র অলিতে গলিতে মাইকের পর মাইক লাগিয়ে চরম মাত্রায় শব্দ দূষণের মাধ্যমে কিছু আলেম ওলামাদের চিৎকার , তর্জন গর্জন এর মাধ্যমে ধর্মীয় বিষবাষ্প ছড়ানোর উপলক্ষ। মাঝে মাঝে মাহফিলের মাঝখানে কিংবা শেষের দিকে সরকারের গুণকীর্তন ও শুনা যায় ,আয়োজকদের তেলবাজিও শুনা যায়।
আগে ধর্মীয় মাহফিল হত ধর্মীয় জ্ঞানহীন মানুষদের মাঝে ধর্মীয় জ্ঞান দানের জন্য ,তাদের ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য কিন্তু বর্তমানে ওয়াজ মাহফিল মানেই ব্যাবসা। বেশির ভাগ মাদ্রাসা ও মসজিদ কমিটিও ধর্মীয় ব্যাবসার স্বার্থে মাহফিল কে ব্যাবহার করে ।মাহফিলের নামে নিজেদের পকেট ভারী করে।
হ্যাঁ শুনতে খারাপ শুনা গেলেও এটাই সত্যি ।বর্তমানের ওয়াজ মাহফিল গুলোর প্রচারনা পত্র কিংবা ব্যানার গুলোতে দেখবেন আমন্ত্রিত ধর্মীয় বক্তাদের চাইতে রাজনৈতিক নেতাদের নাম বেশি ।কারণ,বেশি নেতা মানেই মাহফিলের খরচ বাবদ বেশি টাকা উত্তোলন।
আবার নেতাদের কাছ থেকে বেশি টাকা আদায়ের জন্য মাহফিল কেও জনাকীর্ণ করতে হবে ।
তাই ইউটিউব ,ফেসবুক এ বেশি ভাইরাল কিংবা শিশু বক্তা,নও মুসলিম,কিংবা দুই ফিট বক্তা,হেলিকপ্টার হুজুর,অমুক পীর ,তমুক অলি এমন পদবিধারীদের আমন্ত্রণ জানানো হয় । গ্রাম কিংবা শহরময় যাত্রার মত করে রাতভর মাহফিলের প্রচারে মাইকিং করা হয়।
মাহফিলের শুরুতে আওয়ামী নেতারা মঞ্চে উঠে ব্যানারে নিজের নাম টা দেখে প্রশান্তির ঢেঁকুর তুলে সরকারের গুন কীর্তন করা শুরু করে ,নির্বাচনে ভোট চায়,ধর্মীয় মাহফিলের মঞ্চে দাড়িয়ে অজস্র মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয় ,বিরোধী পক্ষ কে গালাগালি করে ,তাদের নিয়ে কুৎসা রটনা করে ।
এরপরে জামাতি,হেফাজতি , চরমোনাই আলেম - ওলামারা সার্ফক্সেল দিয়ে সরকারের শিক্ষা নীতি ,নারী নীতি, পররাষ্ট্র নীতি কে ধুয়ে দেয় ...
হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে হেফাজতিরা ধর্মীয় বিষবাষ্প ছড়ায় আর মঞ্চে বসে আওয়ামী লীগ নেতারা ঠিক ঠিক মাথা নাড়ায় ...
আমার ভাবতে অবাক লাগে .. এই নেতারা মুজিব আদর্শের রাজনীতির ধারক বাহক বলে প্রচার করলেও নিজেদের সাম্প্রদায়িকতার বেড়াজাল থেকে আজও মুক্ত করতে পারেনি ...মুখে মুজিব আদর্শ প্রচার করলেও মন থেকে তা গ্রহণ করতে পারে নাই ।
আমি আরো অবাক হই ... যখন দেখি বিরোধীদলের নেতারা গনতন্ত্রের চর্চার জন্য কোন সভা সমাবেশের অনুমতি পায় না .. কারণ, তারা সমাবেশে সরকার বিরোধী ,দেশ বিরোধী কথা বলতে পারে ..
সেই একই সরকার কিভাবে প্রতি রাতেই হাজার হাজার মঞ্চে সরকার বিরোধী ,মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার মূলনীতি পরিপন্থী , ধর্মীয় উস্কানি মূলক সম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানোর অনুমতি দেয় ???
আমি ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিলের বিরুদ্ধে নই .. অবশ্যই প্রতিটা মানুষের ধর্ম প্রতিপালনের অনুমতি আছে .. ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজন আছে কিন্তু ধর্মীয় শিক্ষার নামে সাধারণ মানুষকে সাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা দেওয়া , অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি ঘৃণার জন্ম দেওয়া , অন্য ধর্মের প্রতি অশ্রদ্ধার শিক্ষা দেওয়া .. নারীদের ঘরের কোণে রাখার শিক্ষা দেওয়ার মত মাহফিলের এবং আলেমদের অবশ্যই ঘৃণা করি .. অবশ্যই ওই সব মাহফিল ও আলেমদের ওয়াজ করাকে বন্ধ ঘোষণা করার দাবী জানাই ।
এই কথিত ধর্মীয় নেতারা খুবই সূক্ষ্ম ভাবে সাধারণ মানুষের অন্তরে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার মূলনীতি বিরোধী মতবাদকে গেড়ে দিচ্ছে .. এবং তারা নিজেদের আদর্শ কে সুকৌশলে প্রচার করছে ।আর এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ আবারো মৌলিক ভাবে পাকিস্তান হতে বেশিদিন লাগবে না কারণ এসব ধর্মীয় নেতারা মনেপ্রাণে পাকিস্তানি মূল্যবোধ কেই ধারণ করে ।
এসব ধর্মীয় নেতারা এখনও বঙ্গবন্ধু কে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকার করতে নারাজ ,তারা ২১শে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে ফুল দিতে নারাজ ,তারা স্বাধীনতা দিবস , বিজয় দিবসে শহীদদের প্রতি সম্মান জানানো কে বলে শিরক ,তারা এখনও ভাস্কর্য কে মূর্তি বলে সঙ্গায়ন করে ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে .. নারীদের ঘরের বাইরে চাকরি করা ,ব্যাবসা করার বিরোধিতা করে ,তারা ভিন্ন ধর্ম ও ভিন্ন মতের মানুষদের জবাই করার মতে বিশ্বাস করে ... এমন মানিসিক ভাবে পাকিস্তানী মূল্যবোধে বিশ্বাসী আলেম গুলা নিখুঁত ভাবে বাঙ্গালী মূল্যবোধ বিরোধী বক্তব্য দিয়ে তাদের নিজেদের আদর্শ কে প্রচার করছে আর আওয়ামী নেতারা জি হুজুর জি হুজুর করছে ।
তাই ,মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করা আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকার পরেও যদি এদের বিষবাষ্প থেকে দেশকে রক্ষা করা না যায় , অদূর ভবিষ্যতে এই বাংলায় আওয়ামীলীগ বলে কোন দলের অস্তিত্ব থাকবে না।
একই সাথে আওয়ামী নেতাদের একটু মুজিব আদর্শ কে ধারণ ও লালন করা উচিত ... নিজের নাম দেখা যাবে অতিথী লিস্টে সে লোভে যেনতেন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া থেকেও বিরত থাকা উচিত ।একই সাথে মনে রাখা উচিত ধর্মীয় মাহফিল কোন রাজনীতির চর্চা স্থল না ... তাই মঞ্চে দাড়িয়ে সরকারি বক্তব্য না দেওয়াই উচিত কারণ ,ইসলাম ধর্ম নারীদের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করেনা।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:০০