গত বুধবার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, "যদি কেউ কোটা চায়, তাহলে এখন কোটা চাই বলে আন্দোলন করতে হবে। সেই আন্দোলন যদি ভালোভাবে করতে পারে, তখন ভেবেচিন্তে দেখা হবে, কী করা যায়।"
প্রধানমন্ত্রীকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে বেশ পছন্দ করি,তার চিন্তা-চেতনা , দূরদর্শিতা আমাকে মুগ্ধ করে ।কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই উক্তি আমি মানতে পারলাম না।একজন দায়িত্বশীল মানুষ কখনো এভাবে কথা বলতে পারেনা ।
চলতি বছরের প্রথম দিক থেকেই সাধারন ছাত্ররা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছিল ।যৌক্তিক দাবিতে সেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ ও সরকারের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন নগ্ন হামলা চালিয়েছে ,ছাত্রদের রক্তাক্ত করেছে ,লাঞ্ছিত করেছে । লাঠিপেটা ,হাতুড়ী পেটা , টিয়ারশেল , গুম,হুমকি, জেল ,রিমান্ডসহ আরও ভিন্ন ভিন্ন কায়দায় নির্যাতন করেছে ।তবু ,সাধারন ছাত্ররা তাদের দাবিতে অনড় থেকেছে এবং সে পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে । এই ঘোষণা সরকারের দানীয় জিনিস না বরং আন্দোলনকারীরা রক্ত দিয়ে আদায় নিয়েছে । সেই সাথে মন্ত্রী পরিষদ সচিবের পর্যালোচনার সুপারিশের প্রেক্ষিতেই সরকার কোটা বাতিল ঘোষণা করেছে । যা সম্পূর্ণ যৌক্তিক ।
কিন্তু বাতিল ঘোষণার পাশাপাশি সকারের দায়িত্বশীল পদে থেকে আবার আরেক পক্ষকে অযৌক্তিক আন্দোলন করতে উস্কানি দেওয়া কতটা যৌক্তিক । এদেশের ছাত্রদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এভাবে মাইন্ড গেম খেলার অধিকার কারো নেই । সাধারন ছাত্ররা কারো ক্ষমতায় যাবার সিঁড়ি কেন হবে ? আন্দোলনকারী সহ সরকারের বিভিন্ন পক্ষ থেকে কোটা বাতিল নয় বরং যৌক্তিক সংস্কারের কথা বলা হয়েছে বারবার ।কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত না করে হঠকারী সিদ্ধান্ত দিয়ে এদেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ কে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে ।
এখন হয়তো কোটার পক্ষে আন্দোলনে নামা সুবিধাভোগীরা আদালতে যাবে ,কারন তারা রাজপথে ব্যর্থ হবে ? যেহেতু তারা সরকারের অনুকম্পা পাচ্ছে তাই এই বিষয়ে আদালত হয়তো তাদের পক্ষেই রায় দিবে ,এবং আমি নিশ্চিত সেই রায় সরকার যেমন চাচ্ছে তেমনি হবে ।এতে ২৬-২৭ লাখ বেকার জনগোষ্ঠী প্রত্যাখ্যাত হবে নয়তো সেই রিট আজীবনের জন্য ঝুলে যাবে ,কারন বাংলাদেশের বিচার বিভাগ এর দিকে দৃষ্টি দিন পরিস্কার বুঝে যাবেন । আন্দোলনকারীরা তখন কোটা নিয়ে সরকার কে চাপ দিতে পারবেনা কারন বিষয়টা আদালত তদারকি করতেছে এমন অজুহাত সামনে চলে আসবে ।আর আদলত যেহেতু অতটা সহজে দ্রুত গতিতে রায় দিবেনা তাই চাকরি প্রক্রিয়া যেভাবে আছে সেভাবেই চলবে । মাঝখান থেকে আন্দোলনকারীরা হাতুড়ী পেটা খেয়ে লেংরা হয়ে গেল যারা সরকারী কেন প্রাইভেট চাকরিতেও অযোগ্য বলে গন্য হবে ...।এখন বুঝেন আন্দোলনের ফল কি হয় !!! হায়রে সরকারের মাথা ,আহারে সেলুকাস ।আমরা দর্শক আর তারা নাট্য নির্দেশক মাঝে তাদের অনুকম্পা প্রাপ্ত ২০-৩০ জন শাহবাগি চার্লি চ্যাপলিন ।
আপনাদের কি ২০১৩ সালের গন জাগরন মঞ্চের কথা মনে আছে ? পুলিশি নিরাপত্তায় সেখান যৌক্তিক দাবিতে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা একত্র হয়েছিলাম ,আন্দোলন করেছিলাম ।সে আন্দোলনের সরকারের কোন বাধা ছিল না বরং সম্মতি দিয়েছিল ।
লক্ষ করুন সরকার এবারো আরেকটা অযৌক্তিক আন্দোলন করতে উস্কানি দিচ্ছে ,প্রকাশ্যে মদদ দিচ্ছে । জনবল কিংবা জনসমর্থন না থাকুক তবু তারা শাহবাগ দখল করছে ,পুলিশ নির্বাক দর্শক ।তাই ,সামনের দিনেও এভাবেই তাদের জন বিচ্ছিন্ন আন্দোলন হয়তো চলবে ,হয়তো সরকারের সহযোগী সংগঠন সমর্থন দিবে ,ভাড়া করে হলেও বিশাল জনসমাগম দেখাবে । কিন্ত এর মাধ্যমে আমরা যারা নিষ্পেষিত তারা আরও নিষ্পেষিত হব ।সরকারের চলমান মাইন্ড গেম কিংবা কমেডি ড্রামাতে উনারাই অবশেষে জিতবে ।
তবে ,কোটা বহাল চাই পক্ষ শক্তিদের বলতেছি ,যদি পারেন নিজ ক্ষমতায় ,নিজেদের দাবির যৌক্তিকতা বুঝিয়ে সমর্থন আদায় করেন ,রাজপথে পুলিশ কে বন্ধু হিসেবে কেন প্রতিপক্ষ হিসেবে মোকাবেলা করেন দেখি কত দিন আন্দোলন চলে আপনাদের ।
পুলিশ এখনও আগের মতো করে তাদের হয়রানি করুক ,মিথ্যা মামলা ,হামলা ,জেল ,জরিমানা ,রিমান্ডে নেইক তাহলে বুঝবো পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করতেছে ।
সরকারের সহযোগী সংগঠন কে বলব ,আপনারাও মাঠে নামুন ।এই গুটি কয়েক সুবিধাবাদিরা তো সরকারের ঘোষণার বিরুদ্ধে মাঠে নামছে ,সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করছে ,তাদের কে প্রতিহত করা আপনাদের ইমানি দায়িত্ব । পারলে তাদেরকেও হাতুড়ী পেটা করুন ,পারবেন ?
পারবেন না ।আপনারা সেটাই করেন যা আপনাদেরকে দিয়ে করানো হয় ।এবার আপনাদের কে দিয়ে জনগুরুত্তপূর্ণ কাজ টা সরকার করাবে না ।তাই ,আপাতত উনাদের সমর্থন দিয়ে যান।
তবে মনে রাখা দরকার , বৈষম্যের বিরুদ্ধে মানুষ যখন একবার জেগেছে তখন একদিন না একদিন যুদ্ধ জয় হবেই ।হয়তো আজকে আপনাদের পলটি খাওয়া গেমে আমরা হেরে যাবো কিন্ত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আপনার পৃথিবী ধ্বংসঅব্ধি হারতে থাকবেন ।যেমন মীরজাফর ,মুসতাকরা প্রতিনিয়ত হেরে যাচ্ছে আমাদের কাছে ।
তাই ,ভবিষ্যতের কথা ভেবেই সিদ্দান্ত নিন ,ক্ষমতা দুদিন পরে থাকবে না ,আপনারা ,আমরা কেউ থাকবো না ।মরে পচে যাবো ।কিন্তু আমাদের কর্ম ঠিকই বেচে থাকবে ,ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন আপনাদের কে শুয়ারের বাচ্চা বলে গালি না দেয় , এখন যেমন আমরা আল-বদর ,আল- শামস , কাদের ,নিজামিদের,সাকা,সাইদিদেরকে প্রতিনিয়ত শুয়ারের বাচ্চা বলে গালি দেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:১৮