গত ৪ঠা জুলাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করতে যান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পদ প্রত্যাশী (সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক) ১৬৯ নেতা কর্মী । পদ প্রত্যাশীদের বিশাল কলেবর দেখে প্রধানমন্ত্রী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন “তোমরা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পদ চাও কেন ?।।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের এবারের সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের “নতুন মডেল” কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন এবং সিন্ডিকেট মার্কা নির্বাচন পদ্ধতি বাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির পদে চমক দেখাতে চান । এরই ধারাবাহিকতায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক পদে আবেদন পড়ে ৩২৩ টি এবং যাচাই-বাচাই শেষে ১৬৯ জন দেখা করার সুযোগ পান ।
প্রধানমন্ত্রী যখন দায়িত্ব নিয়েছেন আশা করি কমিটি তে চমক আসবে বা ছাত্রলীগ তার গৌরবান্বিত অতীত ফিরে পাবে । তবে প্রশ্ন হল দুইটা পদের জন্য ৩২৩ বা ১৬৯ সংখ্যা টা একটু বেশি হয়ে গেলো না । আমিও যদি প্রধানমন্ত্রীর মত করেই প্রশ্ন করি ,তারা সভাপতি বা সাধারন সম্পাদকের পদ চায় কেন ?
আচ্ছা ,যারা পদ প্রত্যাশী তারা কি সবাই মেধাবী বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কে ধারন করে ?
তারা কি ছাত্রলিগের ইতিহাস জেনে রাজনীতি করে ? তারা কি জানে ৫২ ,৫৪ ,৬৬,৬৯,৭১,৯১ সালে ছাত্রলীগ কেমন ছিল । ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড কি ছিল ? শিক্ষা শান্তি প্রগতি মটো ধারন করা ছাত্রলীগের এসব কর্মীরা কি সবাই তার ধারক ???
এক কথায় বলব না । পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ধারক বাহকের পাশাপাশি ধর্মীয় উগ্রতা কিংবা সন্ত্রাস লালন করে এমন ব্যক্তি ও আছেন ।যারা বিভিন্ন সময় খুন-খারাবি ,ধর্ষণ ,চাঁদাবাজি ,টেন্ডারবাজি করেছে ,ক্যাম্পাসে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে । সে সব ব্যক্তিবর্গ রাও অবশ্যই মনোনয়ন পত্র কিনেছেন এবং যথারীতি ছাত্রলীগের প্রধান পোস্ট পেতে মরিয়া হয়ে আছেন । তারা যদি পদে আসে তাহলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাতে গড়া সংগঠনের কি অস্তিত্ব থাকবে ভাবছেন ?
মেনে নিলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গোয়েন্দা লাগিয়েছেন ,যাচাই-বাচাই করেই কমিটি দিবেন । কিন্তু পদ প্রত্যাশী যদি ১০ জন হত তাহলে কাজটা করা সহজ হত ,এখন যেখানে সময় ক্ষেপন হচ্ছে ,বিভ্রান্ত হতে হচ্ছে । সেই সাথে আরেকটি প্রশ্ন থেকে যায় ,প্রধানমন্ত্রীর দেয়া কমিটি কি তাদের কার্যক্রম চালাতে পারবে , যেখানে ১৬৭ জন পদ বঞ্চিত আছে । আমরা সবাই জানি ছাত্র সংগঠন গুলোতে এখন আর ঐক্য নেই । কেন্দ্রীয় থেকে স্কুল কমিটি প্রতিটি কমিটিতেই অনৈক্যের সুর । সভাপতি ,সাধারন সম্পাদক এ গ্রুপিং আর বিরোধ । তাদের বিরোধে প্রতিনিয়ত বলি হচ্ছে সাধারন ছাত্র ,পথচারী থেকে সবাই । সেক্ষত্রে আমি আমার এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিকের কথা বলতে পারি যে ২০১৩ সালে ছাত্রলীগের আত্মকলহে মৃত্যুবরণ করে । কিংবা আনন্দমোহন কলেজ ছাত্রলীগের নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে এক পথচারী শিশুর মৃত্যু সবার বিবেককে তখন জাগ্রত করে দিয়েছিল । আর প্রতিটি ভার্সিটি তেই ছাত্রলীগের আত্মকলহে পক্ষ-বিপক্ষের অসংখ্য নেতা কর্মী বলি হচ্ছে ।
১৬৯ জন পদপ্রার্থীর মধ্যে ১৬৭ জন হবে পদবর্জিত(সভাপতি/সাধারন সম্পাদক পদ) হবে তারা যে নিজেদের মধ্যে আত্মকলহে জড়াবে না, আবার সংঘর্ষ বাধাবে না তার কি গ্যারান্টি । আবার যে দুয়েকটা লাশ পড়বে না তার কি গ্যারান্টি আছে ???
এখন আসি ৩২৩ জন যোগ্য ও অযোগ্য কর্মী কেন কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান পদ চায় । বর্তমানে যারা ছাত্রলীগ করে তাদের অধিকাংশেরই উদ্দেশ্য ক্ষমতার দাপট দেখানো । দু বছর পদে দেখে গাড়ি ,বাড়ি কিংবা একাধিক কোম্পানি বানানো । বাংলাদেশ ছাত্রলীগের যারা কর্মী দলীয় ভাবে তাদের কোন বেতন না থাকলেও দু বছর পর তারা প্রবাস জীবন কিংবা দুয়েকটা কোম্পানির মালিক হয়ে যান ।ছাত্র অবস্থায় তাদের এমন আঙুল ফুলে কলা গাছ হবার কারণ কি ,তাদের অর্থের উৎস কি ? সে আমি না বললেও আপনারা জানেন । তারা ক্ষমতায় থেকে বিভিন্ন সরকারী কাজের টেন্ডার পায় যদিও তাদের অনেকরই নিজস্ব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নেই । তারা চাঁদাবাজি করে ,সন্ত্রাস কায়েম করে অর্থ সংগ্রহ করে । আবার সেই অর্থের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে নিজেদের মধ্যেই সংঘর্ষে জরায়, নিরীহ ছাত্ররা প্রান হারায় । এই যে ক্ষমতার দাপট আর অর্থ মোহ এই দুইটা কারণই মুখ্য বলে বিশেষজ্ঞ জন মনে করেন । তাছাড়া আরও একাধিক কারণ রয়েছে ।
কিন্ত অতীতে ছাত্রলীগে এসব স্বার্থবাজ কর্মীর আধিক্য ছিল না । ফলে তাদে।র মধ্যে অনৈক্যে থাকলেও হানাহানির পর্যায়ে যেতনা । তাদের লক্ষ ছিল জাতীয় রাজনীতি করা ।ভবিষ্যতে পার্লামেন্ট মেম্বার হয়ে জনগনের সেবা করা । তারা যদি কোম্পানি আর ক্ষমতার দাপট দেখানোর রাজনীতি করতেন তাহলে আজকে আব্দুল মান্নান ,শাজাহান সিরাজ , ওবায়দুল কাদের ,নানক সাহেব দের মত ব্যক্তিদের জাতি পেত না ।
এখনো সবাই এই কাতারে পড়ে না । যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করেন তারা কখনো এমন স্বার্থবাজ হতে পারেনা । চাঁদাবাজি করতে পারেন না । মানুষ মারতে পারে না । এখনো এমন ত্যাগি নেতা কর্মী ছাত্রলিগে আছে ।তাদের ক্ষমতা আনলে পাল্টে যাবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ,ফিরে পাবে তার অতীত ইতিহাস ।
আমি আশাবাদী মানুষ । এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন বিচক্ষন মানুষ ।আশা করি ছাত্রলীগের এবারের কেন্দ্রীয় কমিটি হোক বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কমিটি ,চাঁদাবাজ -সন্ত্রাস মুক্ত কমিটি । যে কমিটি আমাদের আরেকটা ওবায়দুল কাদের কিংবা নানক উপহার দিবে ,দেশের যে কোন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়বে । অস্র নয় কলম নিয়ে ক্যম্পাসে যাবে । ক্যাম্পাস বন্ধ নয় খোলা রাখার জন্য আন্দোলন করবে । ছাত্রদের যেকোন ন্যায্য দাবীর আদায়ে তৎপর হবে ।
আবারো ছাত্রলীগ তার গৌরবের অতীত ফিরে পাক । সেটাই প্রত্যাশা ও দাবী ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৯