১
আমরা যখন জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক আলোচনা জল্পনা-কল্পনা ও প্রশ্ন-উত্তরে মুখর তখন অনেকটাই শোরগোল না করে সরকার অবশেষে ভারতের সঙ্গে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র/প্রকল্পের জন্য চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করে। লাভ-ক্ষতির হিসেব করলে এই প্রকল্প বাঙলাদেশের জন্য ক্ষতিকর এবং এর পরিবেশ ও জনপদে এই প্রকল্পের ঋণাত্মক প্রভাব থাকবে দীর্ঘমেয়াদি।
বাস্তবতা হলো ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রয়োজন ও বিদ্যুতের ঘাটতি মেটানোর জন্য আমাদের প্রচুর বিদ্যুৎ দরকার। এইদেশে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন না থাকা অনেকটা স্বপ্নতুল্য। ফুরিয়ে আসছে গ্যাসের মজুত, যা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অনেকাংশে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া নদীর গতিপথ, আবহাওয়া ও জলবায়ুর চক্রের উলটপালটের কারণে যথেষ্ট বৃষ্টি ও বর্ষা না হওয়া এবং ভারত-কর্তৃক বাঁধ দিয়ে দেশে নদীগুলোতে পানির প্রবাহের তারতম্যের কারণে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন-ও যথেষ্ট নয়। অর্থাৎ, বিদ্যুৎ ক্রয় না করলে অথবা নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন না করলে দেশ জ্বালানি-বিপর্যয়ে পড়বে। বিদ্যুৎ ক্রয় দীর্ঘমেয়াদিভাবে লাভজনক নয়, তাই আমাদের মনোযোগ দিতে হবে নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে। কী ধরণের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন দেশের জন্য লাভজনক ও নিরাপদ? কোথায় সেই কেন্দ্র হওয়া উচিত? রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র কি অর্থনৈতিক ও ভৌগলিক এই সুবিধাগুলো প্রদান করবে?
২
রামপাল প্রকল্পের জন্য বাগেরহাটে ১৮৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ করে (অনেক পরিবারকে উচ্ছেদ করে) বালু ভরাটের মাধ্যমে দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য চুক্তি হয় বাঙলাদেশ (বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড; পিডিবি) ও ভারতের (ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার কর্পোরেশন; এনটিপিসি) মধ্যে। এই প্রকল্প হবে বাঙলাদেশের পৃথিবী বিখ্যাত ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের মাত্র ৯-১৩ কিলোমিটারের মধ্যেই (যদি সরকারিভাবে দাবি হচ্ছে যে এটি সুন্দরবনের বাফারজোনের ১৪ কিলোমিটার দূরে), যা সুন্দরবনের বনাঞ্চল, পরিবেশ ও জীবসম্পদের জন্য বিপদজনক, এমনকি দীর্ঘমেয়াদিতে সুন্দরবনের টিকে থাকার জন্য আশংকাজনক। ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে এই প্রকল্প হবে কয়লা-ভিত্তিক, যার নির্মাণ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিরুৎসাহিত করা হয় অথবা কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রয়েছে কঠোর আইন, যেহেতু এটি পরিবেশবান্ধব নয় এবং মানুষ ও জীববৈচিত্রের জন্য ক্ষতিকর। যেমন, কানাডা ও ফ্রান্সে কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে রয়েছে কঠোর আইন (প্রমাণ করতে হবে যে এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়, যথেষ্ট ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে তা অনুমোদিত হবে না) ও জনমত।
৩
প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষরের আগে কোনো প্রকার পরিবেশ-বিপর্যয় বিষয়ক যাচাই ও গবেষণা না করে সরকার চুক্তি স্বাক্ষর করে। পরে সরকারি সমীক্ষাতেই (প্রস্তাবিত রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিবেশ সমীক্ষা) দেখা যায় যে এটি পরিবেশ, বিশেষ করে সুন্দরবনের সংরক্ষিত জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানি হবে বিভিন্ন দেশ থেকে, যেহেতু সুন্দরবন-সংলগ্ন নদীপথ জাহাজ চলাচলের জন্য উপযুক্ত নয় এই কয়লা ছোট ছোট নৌকো ও লঞ্চের মাধ্যমে বহন করে নিয়ে যেতে হবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে, এই মালামাল ওঠানামা ও চলাচলে (কয়লা-ভর্তি নৌকা ডুবি) রয়েছে কয়লা পানি ও পরিবেশে নিঃসৃত হওয়ার ঝুঁকি। ফলে আবর্জনা, তেল, জাহাজ-লঞ্চ-নৌকা চলাচলে জলদূষণ ইত্যাদিতে সুন্দরবন ও সংলগ্ন পরিবেশের জল ও বায়ু দূষণ। শুধু তাই নয়, এই চলাচলে সৃষ্ট ঢেউয়ে প্লাবিত হবে আশপাশের জমি, এবং ক্ষয় হবে সুন্দরবনের ভূমি যা সুন্দরবনের গাছগাছালির জন্য প্রয়োজনীয়। এছাড়া রয়েছে নির্মাণকাজ ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানোর ফলে সৃষ্ট শব্দ দূষণ ও আলো-দূষণ, যা সুন্দরবন ও আশপাশের জনপদের মানুষ ও প্রাণীদের জীবনচক্রে বিশেষ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।
শুধু সুন্দরবন নয়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের মানুষ ও জনপদের জন্য ব্যাপারটি ক্ষতিকর হবে। গবেষণায় দেখা গেছে যে কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের পাশে বসবাসকারী মানুষজন দীর্ঘমেয়াদে ৩-৬ গুণ বেশি আক্রান্ত হন ক্যান্সার, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও নিউরোডিজেনারিটিভ স্নায়ুরোগে, যেহেতু কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফলে সৃষ্ট বায়ু ও জল দূষণ মানুষকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। সরকার বলছে যে এই প্রকল্পের ফলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে, অথচ এই প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে উচ্ছেদ করা হয়েছে হাজার হাজার মানুষকে, যারা এখন ভূমি ও কর্মহীন। এই জনপদের মানুষের প্রধান জীবিকা মাছ আহরণ, সুন্দরবন থেকে গাছগাছালি মধু ইত্যাদি আহরণ ও কৃষিকাজ; বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফলে সৃষ্ট দূষণে দীর্ঘমেয়াদে যখন পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে সুন্দরবন বিনষ্ট হবে তখন আরো অধিক মানুষ ভূমি ও জীবিকাহীন হয়ে যাবে। অর্থাৎ, অল্প কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের বিনিময়ে নষ্ট হচ্ছে অনেক মানুষের জীবন ও জীবিকা।
এই প্রকল্প বাঙলাদেশের জন্য লাভজনক নয়। মাত্র ১৫% বিনিয়োগ করে ভারতীয় এনটিপিসি ৫০% মালিকানা পাবে, এবং পিডিবিকে এনটিপিসি থেকে বিদ্যুৎ কিনতে হবে। অর্থাৎ, আমাদের উৎপাদিত বিদ্যুৎ আমাদের পরিবেশ ও জনপদ নষ্ট করে উৎপাদিত বিদ্যুৎ অন্যের কাছ থেকে আমাদের কিনতে হবে! ধারণা করা হচ্ছে এই প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম হবে স্বাভাবিক বাজারমূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি, অর্থাৎ পিডিবিকে লোকসান-জনক ভর্তুকি দিতে হবে অথবা বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে। তাছাড়া রয়েছে এই প্রকল্পের জন্য গৃহীত ঋণ ও এর সুদের হারের লোকসান।
এনটিপিসি যদি এই প্রকল্প ভারতের অংশের সুন্দরবনের আশপাশে করতে চাইতো তবে অনুমতি পেতো না, ভারতীয় আইন মতে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও জনবসতির ১৫-২৫ কিলোমিটারের মধ্যে এই ধরণের প্রকল্পের অনুমোদন নেই। তবে এনটিপিসি কেনো বাঙলাদেশের সুন্দরবন অংশে এসে ৯-১৩ কিলোমিটার মধ্যে বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে আগ্রহী। উল্লেখ্য, ভারতের মধ্যপ্রদেশে এই এনটিপিসি আরেকটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের অনুমোদন পায় নি। অর্থাৎ, বাঙলাদেশ নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারছে। তাজমহলের সৌন্দর্যহানি যেনো না হয় পরিবেশ দূষণের কারণে যেজন্য ভারতীয় সরকার এর আশপাশের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ধরণের বিশাল কারখানা (যা পরিবেশ দূষণ করতে পারে), বিমানবন্দর স্থাপন কিংবা বিশাল প্রকল্প স্থাপন নিষিদ্ধ করেছে, আমাদের দেশে সুন্দরবন সংরক্ষণে এমন আইন তো নেই, বরং আমরা উঠেপড়ে লেগেছি সুন্দরবনের কাছাকাছি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে!
কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অন্যান্য ধরণের যেকোনো ধরণের বিদ্যুতকেন্দ্র থেকে বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড ছাড়ে পরিবেশে। এছাড়া রয়েছে বিষাক্ত সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, ক্যাডমিয়াম, লেড, ছাই ইত্যাদি গ্যাস ও ভারী ধাতুর পরিবেশে নির্গমন, ফলে এসিড-বৃষ্টি অবধারিত, ফলে অনায়সে ধসে পড়বে সুন্দরবনের বিভিন্ন গাছগাছালি ও প্রাণীদের জীবনচক্র, যেহেতু তাদের খাদ্য ও বায়ু বিষাক্ত হয়ে পড়বে। মানুষের জন্য-ও এই প্রভাব প্রযোজ্য।
সর্বোপরি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাঙলাদেশ, বিশেষ করে সুন্দরবন ও সংলগ্ন মানুষ, জনপদ ও বনাঞ্চলের জন্য ক্ষতিকর এবং ভৌগলিকভাবে বেমানান ও অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক।
৪
বাঙলাদেশে একেকটি প্রকল্প মানে হচ্ছে একেকটি দুর্নীতি-উৎসব। পদ্মা-সেতু সংক্রান্ত দুর্নীতির জন্য কানাডার আদালত পর্যন্ত গিয়েছে। খটকা লাগে পিডিবি ও বাঙলাদেশ সরকার এতোসব জনমত, গবেষণা, সমীক্ষা ইত্যাদি উপেক্ষা করে কার স্বার্থে কী লোভে সুন্দরবনের কাছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে এতো মরিয়া? অথচ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র যদি স্থাপন করতেই হবে এমন নীতিতে অটল থাকে সরকার এই প্রকল্প হতে পারতো উত্তরাঞ্চলের যেকোনো জেলায়, কিংবা অন্যান্য নদীসংলগ্ন অববাহিকায়। কেনো সুন্দরবন? আমাদের গর্ব করার মতো একটি সম্পদকে কেনো ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া?
৫
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন না করে সরকার নজর দিতে পারতো নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে। প্রথমে মাথায় আসে সৌরশক্তি-নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন। ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে বাঙলাদেশ সৌরশক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উত্তম জায়গা। এখানে বছরের পাঁচ থেকে সাত মাস মাঝারি থেকে প্রখর রোদ থাকে, ফলে বছর দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাঁধা নেই। সৌরশক্তি ও নবায়নযোগ্য অন্যান্য শক্তি (যেমন, বায়ু, জল ইত্যাদি) ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটি বড় অসুবিধা হচ্ছে এর সঞ্চয় ও পরিবহনে। কিন্তু আধুনিক ব্যাটারি প্রযুক্তিতে যে অগ্রগতি হচ্ছে (যেমন, টেসলার পাওয়ারওয়াল ব্যাটারির প্রযুক্তি) তাতে এটি এখন বড় সমস্যা নয় এবং আগামী পাঁচ বছর নাগাদ প্রযুক্তি আরো সহজল্ভ্য ও সস্তা হয়ে ঊঠবে। এছাড়া বর্তমানে সৌর প্যানেলের কর্মদক্ষতা ২৫-৪০%, কিন্তু বিজ্ঞানিরা ধারণা করছে আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে এই কর্মদক্ষতা ৬০-৮০% শতাংশে উন্নত হবে, ফলে সাধারণ জ্বালানি ব্যবহার (যেমন, গ্যাস, তেল ইত্যাদি) করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেয়ে সৌরশক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন সস্তা, টেকসই, ও সহজল্ভ্য হয়ে উঠবে। এছাড়া, বাঙলাদেশে যে ধরণের ভবননিমার্ণ হয় (যেমন টিনের চাল, কংক্রিটের ছাদ) ইত্যাদিতে সৌর প্যানেল বসানো এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ অনেক সহজ, অনেক দেশের মতো তুষারপাত (ও বছরের ছয় থেকে আট মাস শীতকাল) ও দীর্ঘ শীতের ভয় নেই। পর্তুগাল সৌর ও বায়ুশক্তি ব্যবহার করে সম্পূর্ণ নবানয়নশক্তি ব্যবহার করে ৪ দিন ধরে সারাদেশের জ্বালানি সরবরাহ মিটিয়েছে সম্প্রতি, এবং এখনো ৮৫-৯০% জ্বালানি (বিদ্যুৎ) হচ্ছে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে। নেদারল্যান্ড অনেকদিন ধরে সমুদ্রে টার্বাইন স্থাপন করে সমুদ্রের ঢেউ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ স্থাপন করছে অন্যান্য নবায়নযোগ্য শক্তির পাশাপাশি, পারমাণবিক-নির্ভর বিদ্যুতকেন্দ্র বিপর্যয়ের পরে জাপান-ও মনোযোগ দিচ্ছে এই প্রযুক্তিতে এবং তারা তাদের সমুদ্রপৃষ্ঠ কয়েক কিলোমিটার জায়গা জুড়ে সৌর প্যানেল স্থাপন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। বাঙলাদেশের রয়েছে দীর্ঘ সামুদ্রিক সীমানা। এখানে জাপান ও নেদারল্যান্ডসের মতো নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে, যা হবে পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র-ও স্থাপন করতে পারে বাঙলাদেশ। রাশিয়া এই ব্যাপারে সহযোগিতার ও সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে। যদি-ও ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকা হিসেবে এই ব্যাপারে বাঙলাদেশকে সর্তক হতে হবে তারপর-ও সাম্প্রতিককালে রাশিয়া ও জাপান পোর্টেবল পারমাণবিক চুল্লি বিষয়ক প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছে অনেক, এইসব চুল্লি সহজে বহনযোগ্য, সহজে শাট-ডাউন করে দেয়া যায় বিপর্যয়ের সময়ে, এবং তেজক্রিয়-বর্জ্যের পরিমাণ কম। ফ্রান্সের বিদ্যুৎ চাহিদার ৭১% আসে পারমাণবিক উৎস থেকে, এবং ফ্রান্স দীর্ঘদিন ধরে (প্রায় ৩০ বছর ধরে) এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে কোনো বড় দুর্ঘটনা ছাড়াই, পারমাণবিক প্রযুক্তি সম্পর্কে আমাদের অহেতুক ভীতি আছে, এই যা।
বিদ্যুতকেন্দ্র ও কাঠামোগত স্থাপনার জন্য দরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও চিন্তাধারা। আজকে যে প্রযুক্তি লাভজনক না-ও মনে হতে পারে (স্থাপনের খরচের কথা চিন্তা করে) দীর্ঘমেয়াদে চিন্তা করলে তা অনেক লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব। যেমন, যুক্তরাষ্ট্র ১৯৮০ সালে দুটো পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের স্থাপনের জন্য কাজে লাগলে-ও পরে স্থগিত করে লাভ হবে না ভেবে, কিন্তু সম্প্রতি এই কাজ শেষ করতে যাচ্ছে যেহেতু এখন পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ অনেক কমে গেছে। সুতারাং, বাঙলাদেশকে বরণ করে নিতে হবে আধুনিক প্রযুক্তি, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র (তা যেখানেই হোক না কেনো) পরিবেশের জন্য বাজে, মানুষ ও প্রাণীদের জন্য দুর্বিষহ।
৬
সরকার যেহেতু চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করে ফেলেছে আমাদের লড়তে হবে প্রতিবাদ করতে হবে এই চুক্তি বাতিলের জন্য। এটি সহজ হবে না, কিন্তু অকল্পনীয়-ও নয়। কারণ, আমরা এর আগে-ও অনেক রাজনৈতিক ক্ষতিকে থামিয়ে দিতে পেরেছি। যদি সবকিছু উপেক্ষা করে সরকার এই প্রকল্প চালু রাখতেই চায় আমাদের উচিত কীভাবে ক্ষতি মিনিমাইজ করা যায় সেদিকে নজর দেয়া (জিরো নির্গমন, গ্যাস ও বিষাক্ত ধাতুর নির্গমনের জন্য ফিল্টার ব্যবহার, পানি ও বায়ু দূষণ না করার জন্য চাপ দেয়া ও নজরের ব্যবস্থা করা, সার্বিক তদারকি করা)। তা না হলে আমাদের জাতীয় প্রতীক রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাঙলার বাঘ কেবলই হবে স্মৃতি, যেনো “পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর।“
banglatribune.com এ পূর্বপ্রকাশিত