যাকাত ফিতরা দান সাদাকা যাদের হক তাদের কষ্ট করে খুঁজে বের করে দিতে হবে, এতেই অপরিসীম সওয়াব। 'প্রফেশনাল ভিক্ষুক'দের দিলে গোনাহ্ হবে।
কথাটা কঠিন শোনালেও,
কেন বললাম?
আল্লাহর রাসূল (দঃ) ভিক্ষুকদের উৎসাহিত করেছেন এই ধরনের কোনো নজির নেই।
নিজের ভরণপোষণের জন্য কেউ সাহায্য চাইলে তিনি ওই সাহায্যপ্রাথীর 'শেষ সম্বল' কম্বলখানা বিক্রি করে কুঠার কেনার পরামর্শ দিয়েছেন।
কিন্তু প্রত্যেক বেলায় খাবার দাবারের জন্য নিয়মিতভাবে দান করার ব্যবস্থা করেন নি। তিনি রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন, তিনি চাইলে তা করতে পারতেন কিন্তু তা করেননি।
আমরা গরীবকে সাহায্য করব তাকে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য। অভাব মিটিয়ে সে যেন আয়ের ব্যাবস্থা করতে পারে।
ভিক্ষার মতো 'সহজ প্রাপ্তি' আর নেই। তাই অলস ও অকর্মণ্য লোকেরা এই সুযোগ গ্রহণ করতে চায়। সে কারণেই সাহায্যপ্রার্থী আগেও ছিল এখনো আছে। মানুষ সাহায্য চাইতে আসে এবং সাহায্যপ্রার্থীকে কোরআনের নির্দেশ মোতাবেক ধমক দেওয়া যাবে না। (৯৩:১০) তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। এখানে যে ভিক্ষা দিতে উৎসাহিত করা হয়েছে কথাটা তা নয়।
পরিচিত সাহায্যপ্রার্থীকে এককালীন সাহায্য দেওয়া এক কথা আর অপরিচিত মানুষকে তার সঠিক অবস্থা কি তা না জেনে তাকে ভিক্ষা দেওয়া অন্য কথা।
অনেকে বলেন, যারা চায় বা যাচ্ঞা করে, যেটাকে বলা হয়েছে "সায়েলুন" বা যারা সায়েল ওদেরকে দিতে হবে। আমার মনে হয়, এর ব্যাখ্যা হচ্ছে যারা দৈনন্দিন কোন জিনিসের জন্য হঠাৎ প্রয়োজনে চায় তারা, সূরা আল মাউনে (১০৭:৭) যেটার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। আমার ভুলও হতে পারে কিন্তু আমার মনে হয়েছে, এর মানে এটা হতে পারে না "যারা প্রত্যেক বেলায় সকাল-বিকাল খাওয়ার জন্য আপনার কাছে চায়"!
নিতান্তই সুস্থ-সবল কেউ, যে পুরোপুরিভাবে অচল বা অথর্ব হয়ে যায়নি, সে আপনার কাছে খাওয়া-পরার জন্য প্রতিবেলায় হাত পেতে চাইবে আর আপনি দেবেন, এই ধরনের শিক্ষা মনে হয় ইসলাম দেয়নি। এদেরকে 'সায়েল'-এর মধ্যে গণ্য করা সঠিক হবে বলে আমার মনে হয়না।
ইসলামের উদ্দেশ্য দায়িত্বশীল নাগরিক তৈরি করা।
যারা পরিপূর্ণভাবে অচল কঠিন রোগে আক্রান্ত কোন কিছুই করতে পারে না তাদেরকে সামাজিক ভাবে সাহায্য করতে হবে। কিন্তু সে প্রতিদিন ভিক্ষা করতে থাকবে এবং সবাই তাকে ভিক্ষা দেবে, এটা মুসলমান সমাজের চিত্র হতে পারে না।
বর্তমানে এই করোনাকালে অভাবের সুযোগ নিয়ে যারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং একাধিক জায়গা থেকে খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ করার পরও এদের অভাব মিঠছে না, তাদেরকে যাচাই-বাছাই করে সাহায্য দিতে হবে। কারণ, এরা সকাল থেকে ভিক্ষা করতে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিক্ষা করে যায়, কিন্তু এদের পকেটে ভরে না! যদি এমনটা হতো যে সে ভিক্ষা করতে বসেছে তার খাবারের পয়সা হয়ে গেলে সে চলে গেল আজকের মাতো, তা এরা করেনা। তাই আমি এদেরকে বলি "প্রফেশনাল ভিক্ষুক"! এদেরকে আপনি আমি সবাই চিনি বা চেহারা দেখে বের করতে পারি।
ভিক্ষাকে 'বৃত্তি' হিসেবে গ্রহণ করাটা পাপ। ইসলাম কখনো এটাকে সমর্থন করে না, করতে পারে না। ভিক্ষুকের সাথে দুর্ব্যবহার করা বা তাকে অপমান করাটা এই সমস্যার সমাধান নয়। আমরা নিজেরা নিজেদের অলসতার জন্য যদি কারো ভিক্ষাবৃত্তির পাপকে সহযোগিতা করি, তাহলে পাপের অংশ আমাদের উপরও আসার কথা।
আমাদেরকে সক্রিয় হতে হবে, ব্যক্তিগতভাবে নিজেদের আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে এবং সক্রিয় হতে হবে সামাজিকভাবে সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যম। এ ব্যাপারে ব্যাপক সচেতনতা এবং কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত নিজ নিজ অবস্থান থেকে, ভিক্ষাবৃত্তি উৎখাত করার জন্য।
সুতরাং আপনাকে আমাকে দেখতে হবে যে, সমাজে যারা মিসকিন আছে, যারা চাইতে পারেনা, যারা প্রকৃতঅভাবী, যারা সাহায্য না পেলে উপোস করবে তাদেরকে কষ্ট করে খুঁজে বের করতে হবে।
প্রকৃতপক্ষে যাকাত-ফিতরা সাদাকা এবং দান এইসব অভাবী মিসকিনদের হক। এটা আমরা প্রফেশনাল ভিক্ষুদের হাতে দিলে 'হক আদায়' করা হবে না।
সেজন্য বলছি এতে গুনাহ হবে। এদেরকে খুঁজে বের করা কষ্টের কাজ। এ কষ্ট না করার জন্যই আমরা ইচ্ছামত যারা চাইতে আসে তাদের হাতেই এই যাকাত সাদেকা তুলে দিচ্ছি। এটা আমাদের অকর্মণ্যতা অথবা অলসতা।
আমরা এই কষ্ট স্বীকার না করলে আমাদের সমাজে ভিক্ষুকের প্রাদুর্ভাব থেকেই যাবে। এটা আমাদের জন্য সুখের কথা নয়, ভালো কথা নয়।
প্রকৃত অভাবী মিসকিনদের খুঁজে বের করার জন্য যেসব সংগঠন বা গ্রুপ কাজ করছে আমরা তাদের সহযোগিতা গ্রহণ করতে পারি এবং এই গ্রুপ গুলোকেও যাচাই-বাছাই করে যাদের উপর আমাদের আস্থা আছে তাদের কাছে এই অর্থ পৌঁছে দিতে পারি।
আল্লাহ আমাদের দানকে কবুল করুন। আমাদের সমাজের অভাবকে দূর করে দিন। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০২০ বিকাল ৪:৪৪