গাঙ্গেয় অববাহিকায় গড়ে উঠা বাংলাদেশ,যুগ যুগ ধরে পদ্মা, মেঘনা আর বক্ষ্রপুত্রের মিলিত ধারায় সন্চিত পলি মাটিতে সৃষ্ট এই দেশ। এই বাংলাদেশের সমগ্র ভুভাগের উপর দিয়ে এই প্রধান নদীসমূহ আর তার সাথে সংযুক্ত অসংখ্য শাখা নদীর প্রবাহিত ধারা এই দেশকে করেছে সবুজ আর শস্যে সমৃদ্ধশালী। তার প্রমান মেলে ছোটদের গল্পে , এক ছিল গ্রাম সেখানে ছিলো গোলা ভরা ধান , নদী ভরা মাছ । কিন্ত আজ সেগুলো শুধুই রুপকথার মত শোনায় , যদিও বিজ্ঞানের কল্যানে হাইব্রীড বীজ আর গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভুগর্ভস্হ পানি ব্যবহার করে কোনরকমে আজও বাংলাদেশ টিকে আছে শস্য উৎপাদনের দিক থেকে । কিন্ত রাজার ধন যেমন খরচ করতে করতে একসময় শেষ হয় । একইভাবে ভুগর্ভস্হ পানির অত্যাধিক ব্যবহারের কারনে যেকোন সময়ে কৃষিতে সেচের পানির অভাবে নেমে আসতে পারে দূর্যোগের ঘনঘটা। বাংলাদেশ পরিণত হতে পারে ইথিওপিয়ার, সোমালিয়ার মত চিরদূর্ভিক্ষের একটি দেশে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে একদিকে যেমন সমুদ্রের পানির উচ্চতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে । অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী দেশের একতরফাভাবে বাঁধ আর আন্তঃসীমান্ত নদীসমূহ হতে পানি প্রত্যাহারের কারনে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে মরুকরনের দিকে। শুকিয়ে গেছে অসংখ্য শাখা নদী, মরে গেছে খাল,বিল হাওড়সমূহ। একইসাথে ধীরে ধীরে পদ্মা, মেঘনা আর বক্ষ্রপুত্রের মত প্রধান নদীর গভীরতা নেমে এসেছে শুন্যের কোঠায়। বাংলাদেশের জীবন-মৃত্যু এখন নির্ভর করছে সম্পূর্নভাবে এই আন্তঃসীমান্ত নদীসমূহের ভাগ্য নির্নয়ের উপর। বাংলাদেশের সাথে ভারতের আন্তঃসীমান্ত নদীর সংখ্যা মোট ৫৪টি এবং মিয়ানমারের সাথে রয়েছে ৩টি। এই নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে রয়েছে ভারতের সাথে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের জটিলতা। অতীত বিচার করলে এই নদীর পানি অংশীদারীত্বের বিষয়টির বিতর্ক শুরু হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্ব থেকে। এই নদীর পানির অংশীদারীত্বের বিষয়ে সবচাইতে আলোচিত ইস্যু হচ্ছে ফারাক্কা বাঁধ। এই বাঁধটি মূলত ১৯৫৯ সালে তৎকালীন ভারত সরকার হুগলী নদীর তীরে অবস্হিত কলকাতা বন্দরের নাব্যতা বৃদ্ধির স্বাপেক্ষে বন্দরের অভ্যন্তরীণ এবং আন্তজার্তিক ব্যবসা-বানিজ্যর সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সর্বপ্রথম ফারাক্কা বাঁধ তৈরীর পরিকল্পনা গ্রহন করে।
ছবি-১ : কালো স্তম্ভগুলো অভ্যন্তরীণ এবং সাদা স্তম্ভগুলো বর্হিবাণিজ্যকে নির্দেশ করে [Hebblethwaite G (1997). The impact and implications of the Farakka Barrage upon Bangladesh. B. Sc. Thesis. Newcastle University. UK]
কিন্ত পরবর্তীতে একটি গবেষণাপত্রে উঠে এসেছে এই ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে কলকাতা বন্দরের কোন উল্লেখ্যযোগ্য পরিবর্তন সাধন সম্ভব হয়নি (চিত্র- ১)। সে সময়ে এই বাঁধ তৈরীর বিরুদ্ধে পাকিস্তান প্রবল আপত্তি জানানো স্বত্তেও পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোলযোগের ভেতরে ভারত ১৯৬১ সাল থেকে ফারাক্কা বাঁধ তৈরীর কাজ শুরু করে দেয়। পরবর্তীতে পাকিস্তানের প্রস্তাবিত যৌথ আলোচনার বিষয়টি বিভিন্ন কারনে পিছিয়ে যায় ফলে দুই দেশের মধ্যে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত কোন ধরনের আলোচনা এ বিষয়ে আর সম্ভব হয়নি।১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ডামাডোলে ফারাক্কা বাঁধের কাজ অনেকদূর এগিয়ে যায়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর নতুন করে এই ফারাক্কা বাঁধের বিষয়ে আলোচনা শুরু করে এবং ১৯৭২ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সফল কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রিচুক্তি সম্পাদিত হয় ।
ছবি-২ : ভারতের অভ্যন্তরে অবস্হিত ফারাক্কা বাঁধ।
এই চুক্তিতে বাংলাদেশ যেমন একদিকে ফারাক্কা বাঁধের উপর ভারতের অধিকার কে মেনে নেয় অন্যদিকে ভারতও গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যাদার হিসেবে বাংলাদেশের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়। চুক্তি মোতাবেক ভারত গঙ্গার পানিবন্টনে রাজী হয়। ১৯৭২ সালে এই আন্ত:সীমান্ত নদী সংযোগ এবং পানি বন্টনের বিষয়াদি ব্যাপারে উভয় দেশের বিশেষজ্ঞদের সম্বন্বয়ে গঠিত হয় যৌথ নদী কমিশন। কিন্ত পরিতাপের বিষয় সু-প্রতিবেশি মনোভাবসম্পন্ন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কোন এক অজানা কারনে ভারত চুক্তির বরখেলাপ করে এবং চুক্তি না মেনে পানির পরিমান কমিয়ে দেয় । এভাবে নানা কৌশলে ভারত ১৯৭৫ সালে একদিকে ফারাক্কা বাঁধের তৈরীর কাজ সম্পূর্ন করে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ১৯৭৫ সালে তার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দূর্যোগের কারনে এই বিষয়ে মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হয়।
ছবি-৩ : মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যাদার হিসেবে বাংলাদেশের অধিকারের দাবীতে লং মার্চ অনুষ্ঠিত হয় মে , ১৯৭৬ সালে
ভারতের এই বিমাতাসুলভ আচরণের কারনে বাংলাদেশের সাধারন মানুষেরা ক্ষেপে উঠে এবং মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যাদার হিসেবে বাংলাদেশের অধিকারের দাবীতে লং মার্চ অনুষ্ঠিত হয় মে , ১৯৭৬ সালে । এটি ছিল সর্বপ্রথম ভারতের তৈরী ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সাধারন জনগনের অংশগ্রহনে প্রবল জনমতের প্রতিফলন। পরবর্তীতে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি জাতিসংঘে উথ্থাপনে সম্মত হলে মাওলানা ভাসানী রাজশাহীর কানসাটে তার লং মার্চ সমাপ্ত করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি জাতিসংঘে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক উথ্থাপিত হলেও জাতিসংঘ বাংলাদেশকে তার ন্যায্য হিস্যা ফিরিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়। এভাবে বাংলাদেশ কখনও তার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সদিচ্ছার কারনে অথবা আন্তজার্তিক পরিমন্ডলে ভারতের শক্তিশালী লবীর কারনে ব্যর্থ হয়েছে তার সাধারন জনগনকে গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা ফিরিয়ে দিতে। এভাবে পরবর্তী আশির দশকে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক শীতলতার কারনে এই বিষয়ে তেমন কোন উল্লেখ্যযোগ্য অগ্রগতি ঘটেনি । কিন্ত অন্যদিকে ভারত তার দেশের ভেতরে প্রবাহিত অসংখ্য আন্ত: সীমান্ত নদীসমূহে একের পর এক বাঁধ তৈরি করে। বাংলাদেশ সরকার অনুধাবন করে শুধু গঙ্গা নয় বরং তিস্তা এবং বহ্মপুত্রের ন্যায় নদীগুলো তার নাব্যতা হারাতে বসেছে ভারতের এই অ-প্রতিবেশিসুলভ মনোভাবের কারনে। বিষয়টির তাৎপর্য অনুধাবন করে বাংলাদেশ সরকার চেষ্টা করে এই নদীসমুহের সাথে সংষ্লিষ্ট দেশগুলো বিশেষ করে নেপাল ও চীনকে সাথে নিয়ে বহুপক্ষীয় একটি আলোচনার মাধ্যমে স্হায়ী সমাধানে পৌছাঁনোর । কিন্ত বরাবরের মত ভারত সুকৌশলে বহুপাক্ষিক আলোচনাকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশকে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসতে বাধ্য করে। এবং ইতিহাসের পাতা ঘাটলে পরিসংখ্যানে দেখা যায় এ যাবৎ যত দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এই দুই দেশের মধ্যে সংঘটিত হয়েছে তাতে বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের লাভ বেশি হয়েছে এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে "লাভের গুড় পিপড়েতে খেয়েছে" বলে প্রমানিত হয়েছে।
ছবি-৪:তিস্তা বেসিনে চলমান এবং নির্মানাধীন জলবিদূৎ প্রকল্পসমূহ(সূত্র: http://sandrp.in/basin_maps/Teesta 150411.jpg)
অবশেষে ১৯৯৬ সালে শুষ্ক মওসুমে পানিবন্টনের ক্ষেত্রে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারের সাথে আরেকটি চুক্তি সই করে। কিন্ত পরিতাপের বিষয় এইবারও বাংলাদেশে এই চুক্তির মাধ্যমে কোন আশার আলো দেখতে ব্যর্থ হয়। সবশেষে ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর সরকারী সফরে তিস্তার পানি বন্টনের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখ্যযোগ্য অগ্রগতি দারুনভাবে বাধাগ্রস্হ হয় পশ্চিমবংগের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর আপত্তির কারনে। আরেকটি বিষয় এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য যে সম্প্রতি ভারত সির্ধান্ত নিয়েছে তিস্তার উপরে বেশ কটি জলবিদূৎ কেন্দ্র স্হাপনের এবং বরারবরের মত এবারও এই বিষয়ে তারা বাংলাদেশের কোন সির্ধান্তের তোয়াক্কা করেনি। একইভাবে তিস্তার উজানে ভারত একের পর এক বাঁধ তৈরী করে চলেছে। এবং বেশ কটি বাঁধ বিষয়ক প্রকল্পের কাজ চলমান অবস্হায় রয়েছে। এবং এবিষয়ে একইভাবে ভারত একতরফাভাবে তার নিজস্ব পরিকল্পনা মোতাবেক প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। বিশেষ করে গজালডোবা ব্যারাজের মাধ্যমে তিস্তার পানি বাংলাদেশে প্রবেশের পূর্বে বাধা দিয়ে সংযোগ খালের মাধ্যমে পশ্চিমে প্রবাহিত করা হয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তের উত্তর দিকে হতে। এই সংযোগ খাল মিলিত হয়েছে মহানন্দা নদীর উপরে অবস্হিত মহানন্দা ব্যারাজের সাথে । এখানে আরো একটি সংযোগ খালের মাধ্যমে মহানন্দার পানি এবং একইসাথে তিস্তার পানি নিয়ে যাওয়া হয়েছে পস্চিমবংগে কৃষিকাজের সেচে ব্যবহার করার জন্য। আর বাংলাদেশের উত্তরান্চল বন্চিত হয়েছে তার ন্যায্য হিস্যা হতে। ফলস্বরুপ বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে দ্রুত মরুকরনের দিকে (https://www.youtube.com/watch?v=fLIUeckpn8g)।
ছবি-৫ : গজালডোবা ব্যারাজ এবং মহানন্দা ব্যারাজের মাধ্যমে তিস্তার পানি বাংলাদেশে প্রবেশের পূর্বে বাধা দিয়ে সংযোগ খালের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পস্চিমবংগে কৃষিকাজের সেচে ব্যবহার করার জন্য।
বাংলাদেশের সিলেটে প্রবাহিত সুরমা কুশিয়ারার উজানে ভারতের বরাক নদীর উপর টিপাইমুখ বাঁধ ভারতের আরেকটি প্রকল্প যা কিনা একতরফাভাবে ভারতের নিজস্ব সির্ধান্তে তৈরী হতে যাচ্ছে। এই বাঁধ সরাসরি বাংলাদেশের মরুকরনকে করবে প্রভাবিত, দারুনভাবে ক্ষতিগ্রস্হ করবে এই অন্চলের ইকোসিস্টেমকে এবং ঘনঘন প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারন হয়ে দাড়াবে। আন্তঃসীমান্ত নদীসমূহের পানি বন্টনের বিষয়ে এ যাবৎ অনুষ্ঠিত সকল পর্যায়ের দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকের একটি পরিসংখ্যান নিলে দেখা যাবে বাংলাদেশের প্রাপ্তির হার একেবারে শুন্যর কোঠায়। সম্প্রতি ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত ১০ জুলাই ২০১৪ তে ভারতের অভ্যন্তরভাগে প্রবাহিত নদীসমুহের মধ্যে সংযোগ স্হাপন প্রকল্পের জন্য ১ বিলিয়ন রুপির বাজেট ঘোষনা করেছে (Click This Link) । এথেকে সহজেই অনুমেয় এই বিষয়ে ভারত মোটামুটিভাবে একক সির্ধান্তে এই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
২০১১ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সদিচ্ছা থাকা সত্বেও পশ্চিমবংগের রাজ্য সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর তৃণমূল সরকারের চরম বিরোধিতার কারনে তিস্তা নদী থেকে বাংলাদেশ তার ন্যায্য পানির হিস্যা পেতে ব্যর্থ হয়। কিন্ত অনেকেরই কাছে বিষয়টি অবাক করার মত হতে পারে যে কিভাবে রাজ্য সরকার তার কেন্দ্রীয় সরকারের মতামতকে অগ্রাহ্য করতে পারে। কিন্ত ভারতের সংবিধানের নিচের এই ধারাটি পড়লে বোঝা যাবে কিভাবে মমতা সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিপক্ষে অবস্হান নেয়ার।
"Under the Indian constitution, a state government has the power to make laws in respect of water resources of that state. The Parliament has the power to legislate the regulation and development of interstate rivers. Thus the authority of the state Government over water can be exercised, subject to certain limitations that may be imposed by the Parliament. Here it is important to make clear distinction between an inter-state river and an intra-state river. A river that lies within one state from its source to its mouth is an intra-state river and any river which flows in the territory of two or more states is an inter-state river. The legislative framework of the constitution related to water is based on Entry 17 of the State List, Entry 56 in the Union List, and Article 262 of the Constitution (http://www.nih.ernet.in/rbis/rights.htm)."
সংবিধানের ধারা মোতাবেক কেন্দ্রীয় সরকার তার রাজ্য সরকারকে বহুপূর্বে তার রাজ্যর অভ্যন্তরে প্রবাহিত নদীসমুহের উপর একচেটিয়া অধিকার দান করেছেন শুধুমাত্র কিছু সীমিত অধিকার কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে রেখে । ফলে ভারতের ভেতরেই উজানমুখী রাষ্ট্রের একতরফা বাঁধ তৈরীর জন্য ভাটির দিকে অবস্হিত রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে যেমন একদিকে তৈরি হয়েছে পানি বিরোধ নিয়ে জটিলতা (আর সে কারনেই ভারত সরকার তার আন্ত: রাষ্ট্রের মধ্যে বিরোধ মেটাবার জন্য বাধ্য হয়ে পৃথক আইন The Inter-State River Water Dispute Act-1956 প্রনয়ন করে) । অন্যদিকে যে নদীসমূহের সাথে ভারতের প্রতিবেশী অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে আন্ত:সীমানা রয়েছে সেই সকল রাষ্ট্রের সাথে ও ভারতের তৈরী হয়েছে পানি ভাগাভাগি নিয়ে জটিলতা। আর একারনেই পশ্চিমবংগের একচেটিয়া স্বার্থরক্ষার জন্য পশ্চিমবংগের রাজ্য সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অবস্হান নেয়ার। একটি বিষয় এখন দিনের আলোর মত পরিষ্কার যে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে বাংলাদেশকে এককভাবে পানির ন্যায্য হিস্যার বিষয়ে সির্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা নেই। এছাড়া পশ্চিমবংগের বর্তমান রাজ্য সরকার তার একতরফা পানি প্রত্যাহার এর দাবী থেকে পিছু হটার সম্ভবনা কম। কারন সামনের বছরগুলোতে একদিকে যেমন জনসংখ্যার বৃদ্ধির কারনে অধিক শস্য ফলানো এবং পানির ব্যবহারের পরিমান বৃদ্ধির কারনে আন্ত:সীমান্ত নদী হতে পানি প্রত্যাহারের ঘটনা বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে আশংকাজনকভাবে শুষ্ক মওসুম ব্যাতীত অন্যান্য মওসুমেও পানি প্রবাহের পরিমান হ্রাস পাওয়ার পরিমান অন্যান্য যেকোন সময়ের তুলনায় অনেক কমে যেতে পারে । এই পানি প্রত্যাহার ছাড়াও জলবিদূৎ উৎপাদনের জন্য একতরফাভাবে যত্রতত্র বাঁধ নির্মানের কারনেও একদিকে যেমন নদীর গতিপথের পরিবর্তন হচ্ছে সেইসাথে ঘটতে চলছে অস্বাভাবিক মরুকরনের মত ঘটনা। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন একদিকে দক্ষিনের বংগোপসাগরের জলবায়ুজনিত কারনে সাগরের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য প্রায় ১৭ ভাগ ভূমি হারানোর সম্ভবনা রয়েছে । অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরের নদনদীর প্রবাহিত স্বাদু পানির স্বাভাবিক প্রবাহের উচ্চতা কমে যাওয়ার ও সেইসাথে সাগরের পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় ঘটতে পারে আর্সেনিক দূষন এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ঘটতে পারে চরম পরিবেশ বিপর্যয়।
একটি বিষয়ে এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্যযোগ্য যে, একটি রাষ্ট্রের কোন স্হানীয় আইন কখনোই একই বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট আন্তজার্তিক আইনের উপরে স্হান নিতে পারেনা। যে নদীসমুহ ভারতের অভ্যন্তরভাগের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে , সেই নদীসমূহের উপরে এই অন্চলের মানুষেরও সমান অধিকার রয়েছে। এছাড়া UN Convention on the Law of the Non-navigational Uses of International Watercourses (Click This Link) স্পষ্টভাবে এই কনভেনশনের ধারা সমুহের এর আলোকে বলা হয়েছে যে, কোন রাষ্ট্র তার একক সির্ধান্তের মাধ্যমে কোন নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে রুদ্ধ বা গতিপথকে পরিবর্তিত করতে পারবেনা এবং কোনভাবেই এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রকে এককভাবে আন্ত:সীমান্ত নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বন্চিত করতে পারবেনা। অথচ ভারত তার নিজস্ব রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে যুগযুগ ধরে UN Convention on the Law of the Non-navigational Uses of International Watercourses এর ধারাগুলোকে সুষ্পষ্টভাবে লংঘন করে সেই কাজটি করে আসছে। অবশ্য এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে ভারতের যেহেতু এই UN Convention on the Law of the Non-navigational Uses of International Watercourses কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি তাই এ বিষয়ে সরাসরি ভারতর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্হা নেয়া যাবে না। কিন্ত আন্তজার্তিক পরিমন্ডলে এই আইন যখন বাধ্যবাধকতায় উপনীত হবে, সেইসময়ে ভারতের উপরে আন্তজার্তিকভাবে চাপ প্রয়োগ করা সম্ভব হতে পারে।
আন্তজার্তিক পরিমন্ডলে সেই ১৯৭৬ সালে এই পানির ন্যায্য হিস্যার দাবীটি যখন জাতিসংঘে উথ্থাপিত হয় তখন বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য কোন মংগলজনক ফলাফল বয়ে আনতে ব্যর্থ হয়। এর কারন হতে পারে বাংলাদেশ তখন ছিল একটি শিশু রাষ্ট্র , অর্থনৈতিকভাবে দূর্বল, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত এবং বিদেশী বন্ধুহীন। অন্যদিকে শক্তিশালী এবং বৃহৎ রাষ্ট্র ভারতের অবস্হান ছিল কূটনৈতিক দিক থেকে অনেক শক্তিশালী অবস্হানে। এবং সবচাইতে গূরুত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের সমস্যা সম্পর্কে জাতিসংঘ যথেষ্ঠ সহানুভূতিশীল ছিল কিন্ত বাংলাদেশের দাবীর প্রতি সমর্থন জানাতে পারে বা আইনগত ভিত্তি দিতে পারে এমন কোন আন্ত:সীমান্ত নদী বিষয়ক আইন বা কনভেনশন সেসময়ে ছিলনা যার মধ্যমে বাংলাদেশের ন্যায় একটি দূর্বল রাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষা নিশ্চিত করা যেত। পরবর্তীতে ১৭ মার্চ ১৯৯২ সালে হেলসিংকিতে সর্বপ্রথম আন্তঃসীমান্ত নদী এবং আন্তজার্তিক জলাধার পানি সংরক্ষন ও ব্যবহারের উপর নীতিমালা (Click This Link) প্রনয়ন করা হয়। শুরু থেকে এই নীতিমালাকে আইন আকারে প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি সীমাবদ্ধতা ছিল। এই নীতিমালাকে আইন আকারে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে ৩৫তম সদস্যর মাধ্যমে স্বীকৃত হওয়ার বিষয়টি বাধ্যকতার পর্যায়ে ছিল।
“Article 36: Entry into Force
1. The present Convention shall enter into force on the ninetieth day following the date of deposit of the thirty-fifth instrument of ratification, acceptance, approval or accession with the Secretary-General of the United Nations.” (Click This Link )
অবশেষে গত ১৯ মে ২০১৪ সালে ভিয়েতনাম জাতিসংঘের আন্তঃসীমান্ত নদী এবং আন্তজার্তিক জলাধার পানি সংরক্ষন ও ব্যবহার সম্পর্কিত কনভেনশনে ৩৫তম সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এখানে উল্লেখ্য যে, মিকং রিজিওনে লাওস, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামের মধ্যে এর পূর্বে মিকং চুক্তি সম্পাদিত হলেও মিকং রিজিওনে লাওস ও অন্যান্য রাষ্ট্রের একতরফা পানি প্রত্যাহার ও বাঁধ নির্মানের কারনে ভিয়েতনাম তার ন্যায্য পানির হিস্যা আদায়ে এই কনভেনশনকে স্বীকৃতি দেয়। ফলে জাতিসংঘের আন্তঃসীমান্ত নদী এবং আন্তজার্তিক জলাধার পানি সংরক্ষন ও ব্যবহার সম্পর্কিত কনভেনশনে আর্টিকেল ৩৬ পরিচ্ছেদ ১ অনুযায়ী ৩৫তম সদস্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতির মধ্যে দিয়ে এই কনভেনশন আইন আকারে প্রকাশের আর কোন আইনগত বাধা রইল না ।
ছবি-৬ : গত ১৯ মে ২০১৪ সালে ভিয়েতনাম জাতিসংঘের আন্তঃসীমান্ত নদী এবং আন্তজার্তিক জলাধার পানি সংরক্ষন ও ব্যবহার সম্পর্কিত কনভেনশনে ৩৫তম সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
অবশেষে গত ১৯ মে ২০১৪ সালে ভিয়েতনাম জাতিসংঘের আন্তঃসীমান্ত নদী এবং আন্তজার্তিক জলাধার পানি সংরক্ষন ও ব্যবহার সম্পর্কিত কনভেনশনে ৩৫তম সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। (http://www.internationalrivers.org/blogs/259 ) এখানে উল্লেখ্য যে, মিকং রিজিওনে লাওস, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামের মধ্যে এর পূর্বে মিকং চুক্তি সম্পাদিত হলেও মিকং রিজিওনে লাওস ও অন্যান্য রাষ্ট্রের একতরফা পানি প্রত্যাহার ও বাঁধ নির্মানের কারনে ভিয়েতনাম তার ন্যায্য পানির হিস্যা আদায়ে এই কনভেনশনকে স্বীকৃতি দেয়। ফলে জাতিসংঘের আন্তঃসীমান্ত নদী এবং আন্তজার্তিক জলাধার পানি সংরক্ষন ও ব্যবহার সম্পর্কিত কনভেনশনে আর্টিকেল ৩৬ পরিচ্ছেদ ১ অনুযায়ী ৩৫তম সদস্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতির মধ্যে দিয়ে এই কনভেনশন আইন আকারে প্রকাশের আর কোন আইনগত বাধা রইল না । এখন শুধু এই নীতিমালা আইন আকারে প্রকাশের সময়ের অপেক্ষায়। এই আইন শুধু ভিয়েতনামের স্বার্থরক্ষা নয় বরং পৃথিবীর সকল ভাটির দেশ বিশেষ করে যারা পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বন্চিত তারা পাবে একটি আইনের ভিত্তি বা প্লাটফর্ম যেখানে দাড়িয়ে তারা তাদের অধিকার আদায়ের কথা বলার সুযোগ পাবে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা জয় এখন শুধু ইতিহাস অথচ আজ হতে কয়েক বছর আগেও এই ইতিহাস ছিল আমাদের জাতীয় জীবনের একটি স্বপ্ন । বর্তমান সরকারের গভীর প্রজ্ঞাবোধ এবং সময়োপযোগী সির্ধান্ত সম্ভব করেছে এই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিনত করতে। সরকারের সঠিক সির্ধান্ত এবং যোগ্য ব্যক্তিদের আন্তজার্তিক পরিমন্ডলে দেশের পক্ষে কাজ করার সুযোগ সম্ভব করেছে সমুদ্রসীমার উপর বাংলাদেশের অধিকারকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে । এই সমুদ্রসীমা ছিল বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য, কিন্ত তারচেয়ে বহুগুনে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের আন্ত:সীমান্ত নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের বিষয়টি। কারন এই পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের উপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের জীবন মৃত্যু। যেই প্লাটফর্ম বা আইনী ভিত্তির উপর দাড়িয়ে বাংলাদেশ তার দাবী বিশ্ব-দরবারে তুলে ধরতে পারতে পারে সেই বহুল প্রতিক্ষীত কনভেনশনের প্রধান কিছু বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে দেয়া হলঃ
ক। এই কনভেনশন আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি ন্যায়সঙ্গত পদ্ধতিতে ব্যবহারের জন্য একটি আইনি কাঠামো তৈরি করে ।
খ। এই কনভেনশন উন্নয়ন, সংরক্ষণ, ব্যবস্হাপনা ও আন্তর্জাতিক নদী রক্ষা এবং বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অনুকূল এবং টেকসই ব্যবহারের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।
গ। এই কনভেনশন প্রকৃতিদত্ত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে অক্ষুন্ন রেখে, ভৌগলিক জলসম্পদ বিষয়, পানি, জলবায়ু, পরিবেশগত এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কারণসমূহকে বিবেচনায় নিয়ে জলের ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার কে স্বীকৃতি দেয়।
ঘ। আন্তঃসীমান্ত নদীর উপর তথ্য এবং উপাত্ত বিনিময় করতে রাষ্ট্রসমূহের জন্য এই কনভেনশন প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করবে।
ঙ। আন্তঃসীমান্ত নদীর তীরবর্তী রাষ্ট্রসমূহের ক্ষতি রোধ করার জন্য একই নদীর তীরবর্তী অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহ কর্তৃক উপযুক্ত ব্যবস্হা গ্রহণে বাধ্য করবে।
চ। এই কনভেনশন আন্তঃসীমান্ত নদীর তীরবর্তী সকল রাষ্ট্র সমূহের মধ্যে সহযোগিতা এবং প্রতিবেশীসুলভ সহৃদয়তার গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেয়।
এখন আর সময়ক্ষেপন নয় ইতিমধ্যে উত্তরান্চলের দেখা দিয়েছে মরুকরনের ভয়াল চিন্হ, দক্ষিনান্চলে দেখা দিয়েছে লবনক্ততা। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে এই পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের বিষয়টি এখন আর সম্ভব নয় এবং সেটা ইতিমধ্যে প্রমানিত হয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এবং সময়ে। বাংলাদেশ একটি বন্ধুপ্রতিম দেশ এবং সুপ্রতিবেশীসুলভ মনোভাবের পরিচয় ইতিমধ্যে এই দেশ তার কার্যকরনে বহুবার প্রমানিত করেছে। বাংলাদেশ চায় তার প্রতিবেশি দেশসমুহের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নিজের ন্যায্য অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত এবং সুসংহত করতে। এই লক্ষ্যে পৌঁছুতে হলে বাংলাদেশের মত একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের জন্য এতদিন যে বিষয়টির অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল সেই আইনী কাঠামো এখন প্রস্তুত। বাংলাদেশ সরকার ঠিক যেভাবে তার গভীর দেশপ্রেম এবং প্রজ্ঞাবোধের পরিচয় দিয়ে প্রতিবেশীদেশসমূহের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আন্তজার্তিক আইনের সাহায্য নিয়ে সমুদ্রসীমার উপর বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকারকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে । একইভাবে বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে আন্তঃসীমান্ত নদী বিষয়ক সংস্হাসমূহ, সরকারী মন্ত্রনালয় বিশেষ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এবং এই বিষয়ে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা এবং অতিদ্রুত এই UN Convention on the Law of the Non-navigational Uses of International Watercourses কে স্বীকৃতি দিয়ে এই কনভেনশনের আইনী কাঠোমোর মধ্যে নিজেকে অন্তর্ভূক্ত করে নেয়া। এক্ষেত্রে অতীতের ন্যায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে। এবং এই ধরনের অধিকার আদায়ে তাদের নিঃস্বার্থ এবং নিরলস শ্রমের প্রমান ইতিমধ্যে জাতি সমুদ্রসীমা জয়ের মধ্যে দিয়ে পেয়েছে।
সবশেষে স্কটল্যান্ডের এক বীর যোদ্ধার কাহিনী দিয়ে এই লেখার যবনিকাপাত টানবো। স্কটল্যান্ড তখন ইংল্যান্ডের অধীনে স্বাধীনতা আদায়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তত । কিন্ত যুদ্ধের মাঠে ইংল্যান্ডের বিশাল সৈন্যবাহিনী দেখে স্কটল্যান্ডের সৈন্যরা যুদ্ধের ময়দান ত্যাগের জন্য প্রস্ততি নিচ্ছে। এমন সময় সেই স্কটল্যান্ডের বীর যোদ্ধা উইলিয়ামস ওয়ালেস স্কটল্যান্ডের সৈন্যদের সামনে দাড়িয়ে বলেছিলো “আজ যদি তোমরা যুদ্ধের ময়দান ত্যাগ কর তাহলে তোমরা হয়ত আরো কিছুদিন বেঁচে থাকবে তবে সেই বেঁচে থাকার জন্য তোমাদের মুল্য দিতে হবে আজকের দিনের তোমাদের এই স্বাধীনতা আর অধিকারকে বিসর্জন দিয়ে। আর তোমাদের মাঝে যদি কেও সেই দিনগুলোর মুল্য আজকের দিনের বদলে কিনে নিতে চায় , সে যেন আমার সাথে লড়াই এর জন্য প্রস্তত হয় । আমরা হয়ত সকলেই বেঁচে থাকবোনা কিন্ত যারা থাকবে তারা বেঁচে থাকবে তাদের স্বাধীনতা আর অধিকার কে নিয়ে মাথা উঁচু করে "। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন এবং নির্ভীক জাতি। বাংলাদেশ চায় এই বিশ্ব দরবারে তার নিজস্ব অধিকার আর স্বাধীনতাকে নিয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে। এই বেঁচে থাকার জন্য তার অধিকারকে সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ সংঘাত নয় বরং বরাবরই একটি শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবে চেয়েছে একটি শান্তিপূর্ন সমাধানের পথ। আজকের এই আন্তঃসীমান্ত নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের জন্য এই দাবী তুলে ধরতে হবে বিশ্বদরবারের কাছে। আজ যদি কোন কারনে আমরা ব্যর্থ হই তাহলে আগামী দিনে হয়ত আমরা বেঁচে থাকবো তবে সেই বেঁচে থাকার জন্য আজকের দিনের নিস্পৃহতার কারনে আমাদের বিসর্জন দিতে হবে এই দেশের উর্বরতা আর সবুজ ফসলের ভবিষৎকে ।