রিমি ইসলাম। প্রেম করে বিয়ে করেছেন দশ বছর। পালিয়ে। নাঈম ইসলামের হাত ধরে। প্রথমে দুইপক্ষ মেনে না নিলেও একসময় মেনে নেয়। হাজব্যান্ড নাইম ইসলাম ব্র্যাক ব্যাঙ্কের এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার। দশ বছরের সংসারে একটি ছেলে। আর একটি মেয়ে ছিল
.
বিয়ের আট বছরের মাথায় সপরিবার একটি ভয়াবহ এক্সিডেন্টের স্বীকার হন। প্রাইভেট কার আর হানিফ পরিবহনের মুখোমুখি সংঘর্ষ। মেয়েটির মৃত্যু হয়। ছেলে এবং নাইম ইসলাম অল্পের জন্য বেচেঁ গেলেও রিমি ইসলামের ভাগ্য সহায় হয়নি। প্যারালাইজড। দুই পা নাড়ানোর ক্ষমতা হারিয়েছেন
.
তিন মাস পর হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরলেন। হুইল চেয়ারে। বাসা অনেক ফাকাঁ ফাকাঁ। মেয়েটির অভাব ভুলার নয়। প্রতিটা কোনায় কোনায় পাঁচ বছরের মেয়েটির ছাপ স্পষ্ট। এমন অনেক রাত গেছে রিমি ইসলাম লামিয়া লামিয়া করে চিৎকার করে কেঁদে উঠেছেন। তবুও নতুন করে আবার সবকিছু সাজানোর চেষ্টা
.
এক মাস হলো গ্রাম থেকে পনেরো বছরের একটি মেয়েকে আনা হয়েছে সুমী ইসলাম এবং সংসারের সব কিছুই দেখাশোনার জন্য। মেয়েটি দেখতে অনেক লক্ষি। কাজেও বেশ। সংসার অনেক ভালভাবেই গুছিয়ে নিয়েছেন। রিমি ইসলামের যত্নের সিংহভাগ ই ওই মেয়েটি কর। গোসল করিয়ে দেয়া থেকে রান্নাবান্না সব কিছু
.
একদিন রাতে ..
চারদিকে নিস্তব্ধতা। কিচেন থেকে একটু কথা কাটাকাটি র আওয়াজ। রিমি ইসলাম ঘুম ঘুম চোখে একটু কান পাতলেন
'ভাইজান ছাইরা দেন/আপামনি জানতে পারলে মইরা যাইবো/আপনারে আমি আমার ভাইয়ের মতন জানি/আপনে আমার এই সর্বনাশ কইরেন না/আপনার পা দুইটা ধরি'
'তুই চিন্তা করিস না/তোর আপামনি কোনদিনই জানতে পারবে না/আর তুই আর আমি ঠিক থাকলেই হবে'
এরপর সব নিরব। হঠাৎ করে একটা চিৎকার
'মা ... গো'
মূহুর্তেই কিচেন থেকে ট্যাব দিয়ে পানি পরার বাজে আওয়াজ
.
মনে হলো অনেক বড় একটা দমকা হাওয়া এসে তার বিশ্বাসের পাতা গুলো ঝরিয়ে দিয়ে গেল। এতোদিনের বিশ্বাস এতো দিনের ভালবাসার কোন মূল্যই খুঁজে পাচ্ছিলেন না বেডে শুয়ে থাকা নিথর দেহের রিমি ইসলাম। উনি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না এই নাঈমের সাথে উনি একসময় পরিবারের কথা চিন্তা না করেই হাত ধরে পালিয়ে গিয়েছিলেন। অনেক ঝড়ঝাপটা পাড়ি দিয়েছেন। কিছুতেই মিলাতে পারছেন না
.
রিমি ইসলামের মনে হচ্ছিল মুখের উপরে থাকা বালিশটা সরিয়ে অনেক জোড়ে গলা ছেড়ে চিৎকার করে কান্না করতে। মনে হচ্ছিল এতোদিন তিল তিল করে গড়া সংসার টা ভেঙে তছনছ করে দিতে। কিন্তু পারলেন না। কেননা আজ পাঁচটি মাস ধরে রিমি ইসলামের সাথে নাঈম ইসলাম কোন প্রকার সম্পর্কে একদমই লিপ্ত হতে পারেনি
.
এভাবেই দিন যাচ্ছে। রিমি ইসলামের অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে। কিন্তু উনার মনের দিক থেকে না। প্রতিদিনই উনাকে একই বাস্তবের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। প্রতিদিনই তাকে সেই অসহায় মেয়েটির করুন স্বরে প্রকম্পিত হতে হয়। প্রতিদিনই তাকে সেই একই ট্যাবের পানি পড়া শব্দে কাতর হতে হয়
.
অনেক বারই পাশে থাকা ফল কাটার ছুরি দিয়ে নিজের গলা দুই খন্ড করতে যেয়েও থেমে গেছেন। অনেক বার ই বালিশের নিচে নিজের মুখ রেখে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মরে যেতে চেয়েছেন। পারেন নি। ছেলের মুখের দিকে চেয়ে
.
নিজের অসহায়ত্বের কারণে এতো ভালবাসার পরেও রিমি ইসলামের সব কিছুই মেনে নিতে হচ্ছে। এবং হবে। তিন বছরের ছেলেটির মুখের দিকে তাকিয়ে
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৪৫