এই শীতে কি কারো খেজুরের রস খাওয়া হয়েছে?
আজকে অনেক দিন পর খেজুরের রস খেলাম। সেই সাথে খুব ছোট বেলার কথা মনে পড়লো, সেই শীত আর এখনকার শীতের মধ্যে কত পার্থক্যই না চলে এসেছে। যদিও জীবন থেকে অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে, তারপরেও সেই পুরানো দিনের কথা মনে করে সেখান থেকে কিছুটা হলেও সুখ পেতে চেষ্টা করি।
শৈশবের সেই শীত তো কবেই হারিয়ে গেছে এখন প্রকৃতির শীতও যেন হারাতে বসেছে। গত কয়েক বছর থেকে লক্ষ করছি সেই হাড় কাঁপানো শীত বলতে যা বুঝায় সেই শীত এখন অনুপস্থিত। শীত আসছেও যেমন দেরীতে, যাচ্ছেও তাড়াতাড়ি। প্রতি বছর শীত আসলেও শীতের শৈশবের সেই সকালগুলো আর আসেনা। কোনদিন আর আসবেও না।
শীতের অনেক সকাল আগে খেজুরের রস আর মুড়ি দিয়ে শুরু করাতাম। আগে কত রকমের পিঠাই না বানানো হতো। যদিও রসের পিঠা, ভাপা পিঠা আর পাটিসাপটার প্রতি আসক্তিটা অন্য সবের চেয়ে একটু বেশিই ছিলো আমার। আমরা ভাই বোনেরা খড়ির চুলার পাশে চাদর মুড়ি দিয়ে বসে আগুন পোহাতাম আর পিঠা খেতাম। এখনও আমি সেই দিনগুলোকে চোখের সামনে নাচানাচি করতে দেখি।
সামনে যারা এই পৃথিবীতে আসছে বা নতুন প্রজন্মের কথা যদি বলি তারা এই সব কিছুর স্বাদ থেকে বলা যায় পুরোপুরি বঞ্চিত হতে যাচ্ছে। আমাদের সময়ের পিঠা গুলো এই সময়ের ফার্স্ট ফুড আর দামি সব খাবারের নামের নিচে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। আর সেই কারনেই কিনা জানিনা আমরা অনেক বাঙ্গালীরা বছরে একদিন পান্তা খেয়ে, আর পিঠা উৎসব পালন করে নিজেদের এক দিনের জন্য হলেও মনে করিয়ে দিই যে আমরা বাঙ্গালী।
আচ্ছা বলেন তো, আমরা সবাই বড় হয়ে কি হবো?
আমরা সবাই বড় হয়ে দাদা-দাদি, নানা-নানি হবো। তখন আমরা তাদেরকে আমাদের সময়ের গল্প বলে শুনাবো। যেমনটা আমরা শুনতাম আমাদের বাপ দাদাদের কাছ থেকে।
অবশ্য এটাও সত্য সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়। যে মানুষগুলো আমাদের পাশে বসিয়ে অনেক আদর করে এটা ওটা বানিয়ে খাওয়াতেন তাদের অনেকেই আজ আর জীবিত নাই। উনারাও বিদায় নিয়েছেন। সেই সাথে সেই আদর ভালোবাসা গুলোও যেন হারিয়ে গেছে।
(এটা সত্য মা খালাদের পর পিঠা বানানোর মত মানুষ আর কাউকেই দেখিনা। ফ্যামিলিতে যে দুচারটা ভাবি আছে ইনাদের কোনদিনও দেখলাম না পিঠা বানিয়ে বড় ভাইদেরকে খাওয়াতে।
আমার বউটাযে কেমন হবে সেটা নিয়ে একটু চিন্তাই আছি, কারন আমি কখনই চাইব না আমার বাচ্চা কাচ্চা এই সব পিঠার ফ্লেভার থেকে কখনও বঞ্চিত হোক)।
খুব ছোট বেলাতে সাঁতার শিখেছি। গ্রামেই মানুষ হয়েছি, আর বাড়ির পাশেই ছিলো নদী। ছোটতে দুরন্তপনা এত বেশি ছিলো যে পাল্লা দিয়ে সবার সাথে নদী পার হতাম। ফিরতি পথে মাঝ নদীতে হাত-পা যখন অবশ হয়ে আসত তখন বড়ই ভয় পেয়ে যেতাম। সাথে সাথে ওপর ওয়ালাকে ডাকতাম আর বলতাম, "আল্লাহ আমাকে এই বারের মত তীরে পৌঁছিয়ে দাও। আমি কথা দিলাম এর পর আর কোন দিনও সাঁতার কেটে নদী পার হব না।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, তারপরেও, যতবারই আমি সাঁতার কাটতে যেয়ে বিপদে পড়েছি, প্রতিবারই আল্লাহকে আমি একই কথা বলতাম, তিনি প্রতিবারই কবুল করতেন।
এই পদ্মাকে নিয়ে কত গল্প ছিলো আমার। কোথায় যে হারিয়ে গেল এই পদ্মা, ভাবতে খুবই কষ্ট লাগে।
একবার পানি নিয়ে একটা চুক্তি হয়েছিলো ভারতে সাথে, কিন্তু সেটা কি "পানি" চুক্তি ছিল নাকি "চর" চুক্তি ছিল, সে ব্যাপারে আজও আমার সন্দেহ যায় না। আগে পুরা চর জুড়ে নদী ছিলো, এখন পুরা নদী জুড়ে চর হয়েছে।
এই পদ্মায় এক সময় জাল দিয়ে মাছ ধরেছি, নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি, কখনওবা অন্য লোকের নৌকা চুপ করে খুলে নিয়ে তিন চারজন মিলে বের হয়ে যেতাম এদিক সেদিকে, জ্যোৎস্না রাতে অথবা গরমের সময় নদীর পাড়ে নৌকার উপর বসে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় পার করেছি।
আবার যদি পেতাম সেই দিনগুলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:৪০