
ক্লাস ফোরে থাকতে আমরা সাইকেল চালানো শিখলাম। তারপর একে অন্যের বাড়িতে নিয়মিত যাওয়া আসা শুরু হলো। ক্লাস এইটে থাকতেই আমরা বিভিন্ন আঁশ বাগান বাঁশ বাগানে লুকিয়ে, আদাড়ে বাদাড়ে ঘুরা ঘরি করে বিড়ি সিগারেট খাওয়া শিখলাম। এভাবে দেখতে দেখতে আমাদের ১৮ বছর পূর্ণ হয়ে গেল।
একদিন দেখি আমার দোস্তে সাইকেলের বদলে মটারসাইকেলে করে আমার বাড়িতে ঘুরতে আসছে। কোথায় ঘুরতে নিয়ে যাবে।
কিন্তু আমি তো মটরসাইকেলে চড়তে পারবো না, পরিবারের কড়া আপত্তি। কারন আমার পরিবারের কয়েকজন মেম্বার মটরসাইকেল অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে, তাই মটরসাইকেল চালানো শিখা তো অনেক দুরের কথা তার উপর চড়েও যেন কখনও না বসি। এবং বাস্তবিকই এটা একটা কিলিং মেশিন।
সেদিন বাপ মার নির্দেশ অমান্য করে গোপনে দোস্তের সাথে ঘুরতে বের হয়ে গেলাম। সেদিন সে এত জোরে গাড়ি চালাচ্ছিলো মূহুর্তের জন্য মনে হয়েছিলো পরিবারে মৃতের তালিকায় বোধহয় এবার আমার নাম উঠতে যাচ্ছে।
দোস্তরে সেদিন বার বার বলি আস্তে চালাও। সে বলে চুপচাপ বইসা থাকো কিছু হবেনা। বলতে বলতেই সামনে দিক থেকে আসা অন্য একটা মটরসাইকেলের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ। আমার দোস্তে আমাকে আর মটরসাইকেলকে নিজ নিজ ভাগ্যের হাতে ছাইড়া দিয়া নিজে ক্যামনে কইরা নিরাপদে নাইমা পড়লো। আমি আর মটরসাইকেল দুজনাতে বড়ই আহত হইলাম। এই হচ্ছে আমার প্রাণের দোস্ত।
সেদিনের সেই অ্যাক্সিডেন্টের পরও গোপনে আমরা অনেক জাগায় ঘুরে বেড়িয়েছি কিন্তু শিখার ইচ্ছা কখনই ব্যাক্ত করিনি। হঠাৎ একদিন শিখতে ইচ্ছা হলে বাড়ি থেকে বেশ কিছু দুরে এক কলেজ মাঠে চালানো শিখলাম। পরেরদিনই উঠলাম রাস্তায়। দোস্তের পাড়ায় ঢুকে গেলাম, চলে গেলাম অনেক দুরে। আমার দোস্তে পিছনে বসে এইটা করো ঐটা করো বিভিন্ন ইনসট্রাকশন দিয়েই যাচ্ছে। সব কিছু সুন্দর ভাবেই চলছিলো। গাড়ি যে চালাতে পারছি এই আনন্দে আমি একেবারে আত্মহারা। হঠাৎ দেখি এক মহিলা তিন টা ছাগল নিয়ে সামনে দিয়ে চলে আসছে। দুটা ছাগলকে পাশ কাটালাম। পিছনের ছাগলটা আমার চাকার সামনে এমন ভাবে পড়লো যে ধাক্কা খেয়ে কোন দিকে যেন ছিটকে চলে গেল। মরলো না বাঁচলো জানিনা। আমার হাত ততক্ষনে কেঁপে গেছে। দোস্তের দেয়া সমস্ত ইনসট্রাকশন আমি ভুলে গেছি। অ্যাক্সিলেটরে জোরে চাপ দিয়ে বসলাম। রাস্তার ধারে ছিলো এক গোয়াল ঘর। তার পাশেই ছিলো একটা গর্ত, যেখানে রাখা ছিলো কয়েকদিনের জমা করা গোবর। যেগুলো পরে গাছের সার হিসেবে ব্যবহার হবে। গর্তের মধ্যে পড়ে গেলাম। যখন উঠলাম দেখি আমার মুখের ভিতর কাদার মত কিযেন ঢুকে গেছে। যখন বুঝলাম জিনিষটা কি, কি বলবো, জঘন্য :-& ।
পাশের পুকুরে গোসল করলাম। বাড়ি আসার সাথে সাথে একটা গোটা পেস্টের অর্ধেক শেষ করে ফেললাম। তারপরেও সন্দেহ যায় না, মুখ ঠিক মত পরিস্কার হলো তো?
পরের দিন সকালে আমার দোস্তের বাবা কোরবানীর জন্য কোথায় একটা ছাগল পছন্দ করে রেখেছে তাই দেখার জন্য ছেলেকে সাথে নিয়ে বের হয়ে গেলো এবং যে জাগায় অ্যাক্সিডেন্টটা হয়েছিলো সেখানেই তিনি রিকশা দাঁড় করালেন। দোস্তে জানতে চাইলো আব্বা এইখানে থামলা কেন? বাপে উত্তর দিলো এইখানেই তো সেই ছাগল কিনেছি।
কি আর বলি, যে ছাগলটাকে আমি ধাক্কা দিয়েছিলাম, যেটার জন্য আমাকে ..............................................ছিঃ। সেটাই হচ্ছে ওদের এবারের কোরবানীর ছাগল। দাম ৯৭৫০ টাকা।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৫৭