প্রথমেই বলে রাখি নিরাপদ হবার এইটা আমার প্রথম পোষ্ট। আমার ভাষার ব্যবহারে অনেক সীমাব্দ্ধতা থাকার কারনে প্রচন্ড ইচ্ছা থাকা সত্বেও অনেক কিছু লিখতে পারিনা। আজকে লিখতে বসলাম কারন গতকাল রাতে এক বন্ধুর সাথে ছাত্র জীবনের অনেক কথা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নিম্নের বিষয়টি উঠে এসেছিলো।
২০০৮ এর প্রায় প্রথম দিকের কথা, আমি তখন MBA ফোর্থ সেমিস্টারের ছাত্র। গ্রুপে আটজন বন্ধু আমি, মোবিন, শামিম ভাই, আনোয়ার ভাই, পারভেজ ভাই, রেজা, মিলন এবং জাহাঙ্গীর সারাদিন প্রায় একসাথেই থাকতাম। এদের মধ্যে রেজা এবং জাহাঙ্গীর বাদে সবাই ছিলো খুব রসিক স্বভাবের। এখানে সকলের চরিত্র বিশ্লেষনে যাবনা কারন মূল কথা যাকে নিয়ে সে আমাদের জাহাঙ্গীর।
এদের মধ্যে আমি এবং মোবিনই ছিলাম রাজশাহীর স্থানীয়। বাকিরা রাজশাহীর বাইরে হওয়ায় তারা ভিন্ন ভিন্ন মেসে অবস্থান করতো। আমাদের মধ্যে একদিন একজন প্রস্তাব করলো সবাই আমরা ভিন্ন ভিন্ন জাগায় না থেকে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে একসাথে থাকি। এতে সবাই রাজি হলে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার কাছে একটা বাসা ভাড়া নেয়া হলো। (পরে যে বাড়িটা এখনো আমাদের জীবনে একটা অভিসাপ হয়ে আছে )। প্রত্যেকেই নিজ নিজ মেসের সিট ছেড়ে দিয়ে ভাড়া বাড়িতে এসে উঠলো। একমাত্র জাহাঙ্গীরই তার মেসের সিটটা ধরে রাখলো, আমি দুই জাগাতেই থাকবো এই কথা বলে। আমি এবং মোবিন ঐ বাড়িতে মাঝেমধ্যে থাকতাম শুধুই একজন গেস্ট হিসেবে।
জাহাঙ্গীরের নিজের বাড়ি রাজশাহীর বাঘমারা, যা অনেকের কাছেই জে.এম.বি প্রধান এলাকা হিসেবে পরিচিত। যে বিষয়টা অনেকেই জানেন না সেটি হচ্ছে বাঘমারার মানুষ একে অন্যের বিরুদ্ধে মামলা করতে খুব ভালোবাসে। মামলা সে ছোটই হোক আর বড়ই হোক মামলা একটা হলেই হলো।দেখা গেল সেখানকার কোন এক লোক রাজশাহী বেড়াতে আসলো হঠাৎ তখন তার মনে পড়ে যাবে, "রহিমুদ্দুরির গরুতে গত বছর আমার ক্ষ্যাতের ফসল নষ্ট করেছে। এতদ্দুর যখন কষ্ট করে আসলাম তখন একটা মামলা ঠুকেই যায় "।
জাহাঙ্গীর ছিলো তার মেসের মেস ম্যানেজার কিছুটা প্রভাবশালীও বটে। তাকে বাইরে থেকে দেখে যতটা চিনেছিলাম সে ছিলো কিছুটা ধার্মিক। মাঝে মধ্যে দেখতাম নামাজ পড়তো। তার সামনে ১৮+ কথা বার্তা বললেই দেখতাম চোখ মুখে একটা বিরক্তির ভাব ফুটিয়ে তাকিয়ে আছে। সমবয়সী সব মেয়েরা ছিলো তার কাছে বোনের মত বয়স্করা মা-খালার মত। এই ছিলো আমাদের জাহাঙ্গীর।
একদিন সকাল বেলা খবরের কাগজে দেখতে পেলাম জাহাঙ্গীরকে গত রাতে র্যাব গ্রেপ্তার করেছে তার মেস থেকে। কারন জানতে পারলাম সে রাজশাহী কলেজ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন মেয়েকে বিভিন্ন প্রলোভনে তার রুমে নিয়ে এসে খারাপ কাজ করতে বাধ্য করত এবং সেগুলো গোপন ভিডিওতে ধারন করতো। পরবর্তিতে ব্ল্যাকমেইল। বেশির ভাগ মেয়েই লোক লজ্জার ভয়ে চুপ থাকতো। কিন্তু তাদের মধ্যে একজন সহ্যের চরমে পৌছিয়ে র্যাবকে খবর দিলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার ব্যাপারে এই সকল তথ্য বের হয়ে আসে। তার রুম থেকে ভিডিও ক্যামেরা, কম্পিউটার,সিডি ইত্যাদি জব্দ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে বহিস্কার করা হলো। কিন্তু সেকি আসলেই শাস্তি পেয়েছিলো? না। মাস দুয়েক পর কর্তৃপক্ষ আবার তাকে ক্লাস করার অনুমতি দেয়। যেই মেয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে এসেছিলো উকিলের পরামর্শে সেই মেয়েকে জাহাঙ্গীর বিয়ে করলে মেয়ের পরিবার তার বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করে নেয় এবং সকল অভিযোগকে সে মিথ্যা প্রমানিত করতে সক্ষম হয়।
বাড়িটা ভাড়া নেয়ার পর আমরা জাহাঙ্গীরকে প্রায় বলতাম ওর কম্পিউটারটা ভাড়া বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য। আল্লাহর অশেষ রহমত যে, প্রথমত সে পিসিটা নিয়ে আসেনি আর দ্বিতীয়ত সে বাড়ির সব গুলো সুইচ বোর্ড ছিলো নষ্ট। চিন্তা করলে ভয় লাগে, যে রাতে জাহাঙ্গীর গ্রেপ্তার হলো সেই রাতে জাহাঙ্গীর সহ সবাই যদি একসাথে সেই ভাড়া বাড়িতে অবস্থান করতাম তবে পরের দিন পেপারের হেডিংটা চেন্জ হয়ে হতো "পর্ণ সিডি তৈরির একটা চক্র ধরা পড়েছে"।
শেষ কথা: একদিন রাত্রে বেলা মোবিনের বাড়িতে গেলাম, আমাকে কি একটা সিনেমা দেখাবে। সিনেমা শুরু হলে ছবির প্রিন্ট দেখে বিরক্ত হয়ে কিছু একটা বলতে গিয়েও হঠাৎ করে থেমে গেলাম। বুঝতেই পারছেন কেন। প্রশ্ন হচ্ছে জাহাঙ্গীরের কম্পিউটার সিডি সব কিছুই থানায় জমা ছিলো। তাহলে সেই সিডি গুলোকে বাজারজাত করে ব্যাবসাটা করলো কারা???
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১০:৫১