somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ভালোবাসার গল্প

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভালোবাসি, ভালোবাসি


এ গল্প “ আমার” আর “তার”। সে ছিল একান্তই আমার।“তাকে” সবসময় রেখেছি অন্তরে সযন্তে । প্রকাশ করি নি কখনো শঙ্কায়। বাইরের বিষাক্ত পরিবেশে “তার” কিছু হলে যে আমি শেষ হযে যাবো। কিন্তু আজ আমি বলব তার কথা। হায়! কেন সে ফিরে আসে বার বার আমার জীবনে? সে ছিল আমার সহপাঠি, আমার প্রথম আর শেষ ভালোবাসা। জানতাম না এটাই ভালোবাসা কিনা: তবুও বোধহয় তাকেই ভালোবেসেছিলাম। হাঠাৎ করেই ভালোবেসেছি বোধ হয় ঠিক ছিল না তবুও, তবুও তাকে ভালো লাগত। অকারণ ভালো লাগা তখন আমার সমগ্র অস্তিত্ব জুড়ে বটবৃক্ষের ঝুড়ির মত ছড়িয়ে পড়েছে । অনেক দিন পর বুঝেছিলাম এই হল প্রথম দেখায় প্রেম। বাবার বিচিত্র জীবিকা হেতু ভ্রাম্যমান আমরা ঠাঁই গেড়েছিলাম তার নগরে। সময়ের বিশ্বাসঘাতকতায় সেরা কলেজে ভর্তি না হতে পেরে করেছিলাম আফসোস অথচ তার বিনিময়ে পেলাম একটা পুরো জীবন। এ শুধু তারই জন্য।

নার্গিস ম্যাডামের প্রথম ক্লাসের রোলকলে জানলাম তার নাম বহ্নি। হ্যাঁ তার নাম বহ্নি। আমার জীবনের সমগ্র অস্তিত্বের সাথে জুড়ে থাকা “বহ্নি” । তারপর প্রতিদিন নার্গিস ম্যাডোমের রোলকালের সময় অপেক্ষায় থাকতাম আমার স্বপ্ন বালিকার চপল গলার “ইয়েস ম্যডাম” শোনার জন্য বরাবর প্রথম সারিতে বসা এই আমি চির স্থায়ীভাবে শেষ সারিতে বসতে লাগলাম । রোলকলে তার উদ্ধত হাত একটি বার দেখবো বলে এই আমি শুধু চেয়ে থাকতাম । কি দারুণ দেখাতো সুন্দর সেই হাত, স্বচ্ছ নখগুলোতে মেহেদীর রং, মসৃন কব্জির কাছে রুপালী ব্রেস্লেট। উদ্ধত হাতে মোহবিষ্ট্ আমি আমায় ভুলে যেতাম। নার্গিস ম্যাডামের ধমক আমাকে ফিরিয়ে আনতো বাস্তবে। ম্যাডামের বকা দিয়ে ক্লাস শুরু ছিল নিয়মিত ঘটনা। কেন জানি না একদিন ম্যাডামের চড় খেলাম, মনে পড়ে না আর কোনদিন চড় খেয়েছি কিনা শিক্ষকের কাছ্ থেকে। অবাক নয়নে তাকাই, দেখি সবাই আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে আছে। চোখ খুঁেজছিলো একজনকেই, পেলামও তাকে , তার মিষ্টি মাখানো হাসি মুখ আমার অস্তিত্ব ছাপিয়ে উঠেছে। তার হাসিটা একবার ও বিদ্রুপের মনে হয় নি। তবুও কেন যে কান্নায় চোখ ভিজে উঠেছিলো সেদিন আমার । অশ্র“ ভেজা চোখে তবুও তাকিয়ে রই তার দিকে । মনে হয় কত জোনাক তাকে ঘিরে এই আমার করে চায়। হায়! এত কেন ভাল লাগে তারে?

ক্লাসে মনোযোগী আমি তাকিয়ে থাকতাম তার দিকে। সমগ্র মনোযোগ ছিল তাকে ঘিরে । স্যারের বিদ্রুপাত্মক ধমকে ঘোর কাটতো , সবার চাপা বিদ্রুপের হাসিতে আগুন জ্বলে যেত মাথায় , অথচ তার নিলর্জ্জ অপার্থিব সুন্দর হাসি কি ভালোই না লাগতো । হায়! এত কেন ভালো লাগে তারে ! কত কিছু বলতে চাই তাকে পারি না কেন বলতে?........

দিন যায়। কথা হয়না কিছুই,শুধু তাকিয়ে থাকি , তারে দেখে যাই। বসন্ত বরণ অনুষ্ঠানে সারাটা সময় অবাক চোখে তাকিয়ে থাকি বহ্নির দিকে। একই রকম শাড়ী , একই রকম সাজ , তবুও এত অসাধারন কেন ও। চুলের খোপায় বেলী ফুলের মালা নিজেকে ধন্য করেছিলো স্বপ্নবালিকার রূপের অংশ হয়ে । বহ্নির উদ্ভাসিত রূপে ভুলে গেলাম ভরামঞ্চে কবিগুরুর কবিতা আবৃত্তি। সমগ্র দর্শকের তিরষ্কার নিয়ে নেমে আসি মুগ্ধ চোখে বহ্নিকে দেখতে দেখতে । মনে হয় কত জোনাক তারে ঘিরে আলো ছাড়ায়! এই আমার করে চায়। দিন কাটতে থাকে কিন্তু বহ্নিকে বলা হয় না কিছুই। শুধু চেয়ে রই, স্যার ম্যাডামের ধমক খাই আর সহপাঠীদের বিদ্রুপ সহ্য করে যাই । একদিন জানলাম বাবা চলে যাবেন, আমাদেরকেও,যেতে হবে । এখানকার সাথে এই বিচ্ছেদের খবর জানাই না কাউকে। শেষ দিনের মত কলেজে যাই। উদভ্রান্তের মত খুঁজে ফিরি বহ্নিকে । কোন দিন যার সামনে যাই নি , নিরুপায় আজ আমি তাকে ডেকে নিয়ে আসি হতবাক বান্ধবীদের মাঝ থেকে। এই হাস্যময়ী মিষ্টি চেহারার মেয়েটি জানে না, কখনোই জানবে না আমি তাকে কতটুকু ভালোবাসি! আমার সত্তায় কতখানি সে ! মুখে বলিনি কিছুই হৃদয়ের কথা কি পৌছায় না তবুও? সামনে দাড়িয়ে কথা বলব কি চিরদিনের মত ওকে হারানোর শঙ্কায় আমি কেঁদে ফেলি , এতও জল আমার দুচোখে ছিল! আমার কান্নায় হতভম্ব বহ্নি দৌড়ে পালায়। হায় বহ্নি! পারলাম না তোমায় বলতে যা বলতে চাই। আমি যে সাতদিনের মধ্যে চলে যাব, আর কোন দিন দেখা হবে না। কত কথা বলার ছিল বলা হয় না কিছুই। চলে আসার আগের দিন বর্ষন সিক্ত দুপুরে আবার তাকে দেখলাম । টুপটুপ বৃষ্টি আর মেঘ গর্জনের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া দীর্ঘ চুলে অসহায়, ক্লান্ত বহ্নি। আমার কষ্ট হয় ! জলের ছিটায় তার ভেজা øিগ্ধ মুখখানির দিকে অবাক তাকিয়ে রই। আমাকে দেয়া তার মিষ্টি হাসিতে হারিয়ে ফেলি নিজেকে, ফিরে আসি আাবার বহ্নিহীন বাস্তবতায় । সে চলে গেছে কিছুই না বলে। বলা হলো না আমার কোন কথাও। শুধু সামনা সামনি দাঁড়িয়ে থাকা কিছু সময়। ওই শেষ বার ওকে দেখি, তারপর চলে আসি আমরা চিরদিনের মত।

বেলায় বেলায় সময় কেটে যায়। তার কথা ভুলতে পারি না , ভুলতে চাই ও না । অব্যক্ত ভালবাসা , তার অসম্ভব সুন্দর মায়াবী মুখ নিয়েই আমার বেঁচে থাকা । হায় বহ্নি! “ভালোবাসি” বলাটা যে কতটা সুখের তা বুঝেছি তোমাকে না বলতে পারার কষ্ট থেকে। অসংখ্য জোনাক ঘেরা স্মৃতি আজও তোমাকে ঘিরে রাখে ,এই আমার করে চায়! এক সময় জোনাকীর আলো নিভে যায়, আমি বলে যাই, “ভালোবাসি , ভালোবাসি, বহ্নি! তোমাকে ভালোবাসি।”
শুনছ কি তুমি বহ্নি? আশায় রই আমি।
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এসব লুটপাটের শেষ কোথায়!

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:১৮

আধা লিটারের পানির বোতল দোকানদার কেনে সর্বোচ্চ ১২.৫০ টাকায় আর ভোক্তার কাছে বিক্রি করে ২০ টাকা। এগুলো কি ডাকাতি না?

গোপন সূত্রে যতটুকু জানা যায়,
প্রাণ ৮.৫ টাকা কেনা
ফ্রেশ ১০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। চারুকলায় আগুনে পুড়ে গেল ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ ও ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৪৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নববর্ষের শোভাযাত্রা উদ্‌যাপনের জন্য বানানো দুটি মোটিফ আগুনে পুড়ে গেছে। এর মধ্যে একটি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি ও আরেকটি শান্তির পায়রা।



আজ শনিবার সকালে চারুকলা অনুষদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৬

ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা
March for Gaza | ঢাকা | ২০২৫

বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম
আল্লাহর নামে শুরু করছি
যিনি পরাক্রমশালী, যিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকারী,
যিনি মজলুমের পাশে থাকেন, আর জালেমের পরিণতি নির্ধারণ করেন।

আজ আমরা, বাংলাদেশের জনতা—যারা জুলুমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডক্টর ইউনুস জনপ্রিয় হয়ে থাকলে দ্রুত নির্বাচনে সমস্যা কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৪১



অনেকেই ডক্টর ইউনুসের পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার কথা বলছেন। এর জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় নির্বাচন। আদালত যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বহাল করেছে সেহেতু ডক্টর ইউনুস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডিসেম্বরে নির্বাচন : সংস্কার কাজ এগিয়ে আনার পরামর্শ প্রধান উপদেষ্টার

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৪৯


ড. ইউনূস সাহবে কে বুঝি পাঁচবছর আর রাখা যাচ্ছে না। আজ বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সাথে মত-বিনিময়ের সময় ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন কে সামনে রেখে তিনি দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কারের এগিয়ে আনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×