ওমান উপকূলে ইজরায়েলি তেল ট্যাংকারের উপর ড্রোন হামলায় 2 জন নিহত হওয়ার পর যখন আমেরিকা ও ব্রিটেন ইরানকে এই হামলার জন্য দায়ী করেছে ঠিক সেই সময় আজ বৃহস্পতিবার ৫ ই আগস্ট ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইরানের উপর আঘাত হানার প্রস্তুতির কথা বললেন। ইজরায়েল বলছে তাদের কাছে শক্ত প্রমাণ আছে যে ইরান এম ভি মারসার স্ট্রিট নামের ওই তেল ট্যাংকার এ আক্রমণ চালিয়েছে। আজ একটি স্থানীয় সংবাদ পত্রের সাথে সাক্ষাতের সময় ইসরাইলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কে যখন জিজ্ঞাসা করা হয় যে ইরানের উপরে ইজরায়েল কি আঘাত হানতে পারে তার উত্তরে তিনি বলেন হ্যাঁ? ইরান ইসরাইলের জন্য স্থানীয়ভাবে একটি বড় সমস্যা এবং শীঘ্রই ইজরাইল বহুমুখী একটি সংঘাতে জড়িয়ে যাবে। এ ব্যাপারে ইরানের কাছ থেকে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। গতকাল বুধবার ইসলামিক রেভুলেশনার গার্ডের প্রধান বলেছিলেন যে ইরানের উপর আক্রমণ করার আগে ইরানের প্রতিরক্ষা এবং আক্রমণের সক্ষমতার কথা অন্যদের চিন্তা করা উচিত। উল্লেখ ২০১৫ সালে ইরানের পারমাণবিক গবেষণার উপর ছয় জাতির যে চুক্তি হয় ২০১৮ সালে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে এই চুক্তি থেকে বের হয়ে আসে | এরপর ইরান উচ্চ মাত্রায় ইউরেনিয়াম উৎপন্ন করেছে যা ২০১৫ সালের চুক্তিতে নিষিদ্ধ ছিল |ইজরাইল এই চুক্তির বরাবরই বিরোধিতা করে আসছে। উনিশ শত পঞ্চাশের দশকে শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভী ইরানের ক্ষমতায় থাকার সময়ে ইরান ইসরাইলের চমৎকার সম্পর্ক থাকলেও ১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লবের ফলে ইরান ইসলামিক রিপাবলিক হিসেবে পরিচালিত হওয়ার পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক সাপে-নেউলে চলছে | ২০১৯ সালে ইরান-ও ইসরাইল এর জাহাজে এই ধরনের বেশ কয়েকটি অঘোষিত আক্রমণের ঘটনা ঘটে যার জন্য দুই দেশ একে অপরকে দোষারোপ করেছিল ।এছাড়া সিরিয়াতে ইরান বশার আল আসাদের সমর্থনে সৈন্য ও গোলাবারুদ দিয়েছে | ইজরাইল ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার সিরিয়াই ইরানের বিভিন্ন ঘাঁটির উপরে আক্রমণ পরিচালিত করেছে কিন্তু তাতে তেমন কোনো লাভ হয়নি এবং ইরান তার প্রভাব বিস্তার করেই চলেছে । ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পের পরিচালক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক মহাসিন ফাকরিজাদেহ কে হত্যার জন্য ইরান ইসরাইল ও আমেরিকাকে দোষারোপ করে আসছে | ইরানের পারমানবিক কেন্দ্রে সাইবার হামলার জন্য ও ইরান ইজরাইল কে দায়ী করে আসছে | ইসরাইলের সাথে সিরিয়ার সীমান্ত আছে , সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরুর পর ইরান সেখানে তার সামরিক বাহিনী দিয়ে সহায়তা করার ফলে ইরানি বাহিনী এখন ইজরায়েলের খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে যা ইজরায়েলের জন্য একটি বড় মাথা ব্যথার কারণ। ১৯৮২ সালে লেবাননের শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের সামরিক সংগঠন হেজবুল্লাহ গঠনের পর থেকে ইসরাইলের সাথে ইরানের শত্রুতা আরো বেড়ে যায় কারণ হেজবুল্লাহকে অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিকপ্রশিক্ষণ দিয়ে শক্তিশালী করেছে ইরান। ২০০৬ সালে লেবানন এবং ইসরাইলের মধ্যে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয় সেই যুদ্ধে হিজবুল্লাহ ইসরাইলের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে যা ইরানের সমর্থনের ফলেই সম্ভব হয়েছে বলে ইসরাইল মনে করে। ইরানের মূল লক্ষ্য ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করা এবং লেবানন সিরিয়া ও প্যালেস্টাইনের মত দেশগুলোতে ইরানের প্রভাব ও প্রতিপত্তির বিস্তার রোধ করা।অন্যদিকে ইরান চাইছে অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহার ও সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে |আন্তর্জাতিক অবরোধ সত্ত্বেও ইরান রাশিয়া ও চীনের সহযোগিতায় তার সামরিক ও পারমানবিক শক্তি উৎপাদনের ক্ষমতা ক্রমেই বৃদ্ধি করেই চলছে। সামরিক দিক দিয়ে বিশ্বের মধ্যে ইরানের অবস্থান ১৪ তম আর ইসরাইলের অবস্থান ২০ | প্রচন্ড সামরিক শক্তির অধিকারী দুইটি দেশই মুখোমুখি কোন সংঘাতে জড়িত না হলেও ছায়া যুদ্ধ চলছে সিরিয়া লেবানন ও প্যালেস্টাইনে যেখানে ইসরাইল ও ইরান একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বীদেরকে সামরিক বা অন্য সহযোগিতা করে আসছে। উল্লেখ্য ইজরায়েলের পিছনে পশ্চিমা বিশ্ব তথা ব্রিটেন-আমেরিকা সহ অনেক শক্তিশালী দেশের সমর্থন রয়েছে।অপরপক্ষে ইরানের পিছনে পরোক্ষ ভাবে রাশিয়, চীন ও আরো কয়েকটি মুসলিম দেশের সমর্থনরয়েছে |দুই দেশের মধ্যে যে কোনো রকম যুদ্ধ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে এবং তা আঞ্চলিক বা বিশ্ব যুদ্ধে রূপ নিতে পারে | ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের পরে এইটুকু অনুমান করা যায় যে দুই দেশের মধ্যে মুখোমুখি বড় সংঘাত না হলেও যেকোনো মুহূর্তে ছোটখাটো যুদ্ধ বা আঘাত পাল্টা আঘাত এর সম্ভাবনা আছে |
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১:৫১