বিচারক বললেন- দুই সন্তান অথবা ইসলাম যে কোনো একটিকে বেছে নিন,তার জন্যে এটা ছিল বেশ কস্টকরঃ-
বিচারক তাকে তার দুই সন্তান ও ইসলামের মধ্যে যে কোনো একটিকে বেছে নিত
ে বললে মহাদ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়েন মিসেস অ্যাসিলিমি। একজন মমতাময়ী মায়ের জন্য সন্তানের দাবী ত্যাগ করা তো দূরের কথা, তাদের কাছ থেকে একদিনের জন্য দূরে থাকাও অশেষ কঠিন। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইসলামের প্রতি ও মহান আল্লাহর প্রতি ভালবাসার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মার্কিন নও-মুসলিম মিসেস অ্যাসিলিমি।
অথচ তিনি এর আগে মনে করতেন ইসলাম একটি কৃত্রিম ধর্ম এবং মুসলমানরা হল অনুন্নত ও পশ্চাদপদ একটি জাতি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটারের একটি ভুল তার জীবনের মোড় পুরোপুরি বদলে দেয়। বর্তমানে তিনি বিশ্ব মুসলিম নারী সমিতির সভানেত্রী হিসেবে মুসলিম মহিলাদের অধিকার রক্ষার কাজে মশগুল।
যেভাবে ঘটনার সূত্রপাতঃ
মার্কিন নও-মুসলিম"আমিনা অ্যাসিলিমি" কম্পিউটারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নতুন টার্মের ক্লাসে ভর্তি হওয়ার জন্য নিবন্ধন করতে গিয়ে একটি ভুল বিষয়ের ক্লাসে ভর্তি হন। কিন্তু এ সময় সফরে থাকায় তিনি তার ওই ভুল বুঝতে পারেননি। পরে যখন এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তখন জানতে পারেন যে ওই বিষয়ের ক্লাসে যোগ দেয়া ছাড়া তার জন্য অন্য কোনো উপায় নেই। আর ওই ক্লাসের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই আরব মুসলমান।
যদিও মিসেস অ্যাসিলিমি আরব মুসলমানদের ঘৃণা করতেন, কিন্তু বৃত্তির অর্থ বাঁচানোর জন্য তাদের সহপাঠী হওয়া ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা ছিল না তার। এ অবস্থায় তার মন খুব বিষণ্ণ হয়ে পড়ে। কিন্তু তার স্বামী যখন বললেন, হয়ত স্রস্টা এটাই চেয়েছিলেন এবং তিনি হয়তো তোমাকে আরব মুসলমানদের মধ্যে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারের জন্য মনোনীত করেছেন; তখন খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্য নিয়েই মিসেস অ্যাসিলিমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই ক্লাসে গেলেন।
তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন,
"আমি সিদ্ধান্ত নিলাম মুসলমানদের বই-পুস্তক দিয়েই তাদের কাছে এ ধর্মের ভুল চিন্তা-বিশ্বাস প্রমাণ করব। এই উদ্দেশ্যে আমার বন্ধুদের বললাম তারা যেন আমার জন্য পবিত্র কুরআনের একটি কপিসহ কিছু ইসলামী বই-পুস্তক নিয়ে আসেন যাতে এটা দেখানো যায় যে ইসলাম ধর্ম একটি মিথ্যা ধর্ম এবং তাদের নবীও আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ নয়।"
"কখনও ভাবিনি যে ইসলাম সম্পর্কে পড়াশুনা করতে গেলে বিশেষ ঘটনা ঘটবে ও এমনকি আমার প্রাত্যহিক জীবন-ধারাও বদলে যাবে। সে সময়ও এটা কল্পনাও করতে পারিনি যে খুব শিগগিরই আমি আমার হৃদয়ের প্রশান্তির পাখাগুলো ও ঘুমিয়ে থাকা ঈমান নিয়ে ইসলামী বিশ্বাসের সৌভাগ্যের আকাশে উড্ডয়ন করব।"
এর পরের ঘটনা বলতে গিয়ে মিসেস অ্যাসিলিমি বলেছেন, আমার আচরণে কিছু পরিবর্তন আসা সত্ত্বেও নিজেকে তখনও খ্রিস্টানই মনে করতাম।একদিন একদল মুসলমানের সঙ্গে সংলাপের সময় আমি যতই তাদের প্রশ্ন করছিলাম তারা অত্যন্ত দৃঢ়তা ও দক্ষতার সঙ্গে সেসবের জবাব দিচ্ছিলেন। পবিত্র কুরআন সম্পর্কে আমার অদ্ভুত সব মন্তব্য ও বক্তব্যের জন্য তারা আমাকে একটুও পরিহাস করেননি। এমনকি ইসলাম সম্পর্কে আমার তীব্র আক্রমণাত্মক বক্তব্য শুনেও তারা মোটেও দুঃখিত ও ক্রুদ্ধ হননি। তারা বলতেন, জ্ঞান মুসলমানের হারানো সম্পদ। আর প্রশ্ন হল জ্ঞান অর্জনের একটি পথ। তারা যখন চলে গেলেন মনে হল আমার ভেতরে যেন কিছু একটা ঘটে গেছে।
একদিন একজন মুসলিম আলেমের সামনে সাক্ষ্য দিলাম: "আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।–আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রভু বা উপাস্য নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর রাসূল।"
মুসলমান হওয়ার পর হিজাব বা পর্দা বেছে নেন মিসেস অ্যাসিলিমি। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের ও সন্তানের মালিকানারও প্রশ্ন চলে আসে। এমনকি বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। বিচারক তাকে তার দুই সন্তান ও ইসলামের মধ্যে যে কোনো একটিকে বেছে নিতে বললে মহাদ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়েন মিসেস অ্যাসিলিমি। একজন মমতাময়ী মায়ের জন্য সন্তানের দাবী ত্যাগ করা তো দূরের কথা, তাদের কাছ থেকে একদিনের জন্য দূরে থাকাও অশেষ কঠিন। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইসলামের প্রতি ও মহান আল্লাহর প্রতি ভালবাসার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মার্কিন নও-মুসলিম মিসেস অ্যাসিলিমি।
আসলেওই অবস্থায় দুই বছর ধরে ইসলাম সম্পর্কে তার গবেষণা ও আল্লাহর ওপর নির্ভরতাই তাকে শক্তি যুগিয়েছে। তার মনে পড়ে কুরআনে উল্লেখিত হযরত ইব্রাহীম (আ.)'র সন্তান কুরবানি দেয়ার জন্য আল্লাহর নির্দেশ পালনের ঘটনা। মনে পড়ে কুরআনের এই আয়াত:
"যে ব্যক্তি আল্লাহর ইচ্ছার অনুগত, সে কি ঐ ব্যক্তির সমান হতে পারে, যে আল্লাহর ক্রোধ অর্জন করেছে? বস্তুতঃ তার ঠিকানা হল দোযখ। আর তা কতইনা নিকৃষ্ট অবস্থান!"
মার্কিন নও-মুসলিম মিসেস অ্যাসিলিমি মুসলমান হওয়ার পর আমেরিকায় ইসলাম প্রচারে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। কয়েক বছরের প্রচেষ্টার মাধ্যমে তিনি মুসলমানদের জন্য আরবী ভাষায় ঈদের শুভেচ্ছার সরকারি স্ট্যাম্প প্রকাশ করতে মার্কিন সরকারকে সম্মত করেন।
মিসেস আমিনা অ্যাসিলিমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ও শহরে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে তার অনুভূতি তুলে ধরে বক্তব্য বা ভাষণ দিয়েছেন। হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে-আসা এইসব ভাষণ শ্রোতাদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এইসব প্রচেষ্টার অন্যতম সুফল হিসেবে একদিন তার দাদী ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর তার বাবা, মা ও বোনও মুসলমান হন।
সন্তানদের ফিরে পাওয়াঃ
এর কিছু কাল পর তার সাবেক স্বামীও জানান যে তিনি চান তাদের মেয়েরা মায়ের ধর্মই অনুসরণ করুক। তিনি মেয়েদেরকে কেড়ে নেয়ার জন্য সাবেক স্ত্রী তথা অ্যাসিলিমির কাছে ক্ষমাও চান। আর অ্যাসিলিমিও তাকে ক্ষমা করে দেন। এভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের অপরাধে একদিন যারা তাকে ত্যাগ করেছিল তারা সবাই তাদের ভুল বুঝতে সক্ষম হয় ও সত্যকে স্বীকার করে নেয়। প্রাণপ্রিয় সন্তানদের ফিরে পাওয়াকে অ্যাসিলিমি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য আরও একটি বড় বিজয় বলে মনে করেন।
এভাবে আল্লাহ যাকে চান তাকে ঈমানের মহাসম্পদে সমৃদ্ধ করেন। তিনি জানেন কারা সত্যের ও আল্লাহর প্রেমিক।
[রেডিও তেহরান]
বিচারক বললেন- দুই সন্তান অথবা ইসলাম যে কোনো একটিকে বেছে নিন,
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন