মানি অর্ডারে পাঠানো টাকা গ্রহণ করার সময় ‘বুঝিয়া পাইলাম’ লিখে স্বাক্ষর করতে হয়। যে লোকটা টাকা নিয়ে এসেছে সে যে সত্যি সত্যি টাকাটা মালিকের হাতেই দিয়েছে, এটা প্রমাণ করার জন্যই এই নিয়ম চালু করা হয়েছে। এই নিয়ম অন্যান্য ক্ষেত্রেও চালু হলে কেমন হয়, আসুন, দেখি।
চেয়ারম্যান সাহেব যে এই পিরিয়ডে পাবলিকের সঙ্গে ভালো আচরণ করেছেন, এটা পরে পাবলিক মনে নাও রাখতে পারে। আর মনে না থাকলে তারা আবার ভোটও দেবে না। তাই পরবর্তী সময়ে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য এখন লিখিত প্রমাণ রাখা অতি আবশ্যক—
চেয়ারম্যান সাহেবের একত্রিশ দন্ত বিকশিত হাসি (একটা দাঁত পোকায় খেয়ে ফেলেছে)
করমর্দন করার জন্য চেয়ারম্যান সাহেবের নিজ উদ্যোগে বাড়িয়ে দেওয়া হাত (হাতে কোনো চুলকানি ছিল না)
দশ কেজি করে গম (যদিও বাড়িতে এনে মাপার পর সাড়ে আট কেজি হয়েছে)
অত্যন্ত শ্রুতিমধুর কিছু বক্তৃতা (অন্য কোনো চেয়ারম্যান এত শুদ্ধ ভাষায় বক্তৃতা দিতে পারে নাই)
ভবিষ্যতে নরমাল রাস্তাঘাট তো বটেই, টয়লেটে যাওয়ার রাস্তাটাও পাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিসহ আরও অনেক কিছু—
বুঝিয়া পাইলাম
(গোবেচারা পাবলিকের স্বাক্ষর)
বি.দ্র.: স্বাক্ষরদাতাকে অবশ্যই ভোটার হতে হবে।
এবার বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে প্রসঙ্গ। বর্তমানে যে ভাড়াটে আছে তাঁকে যে অনেক সুবিধা দেওয়া হয়েছে তার একটা প্রমাণ রাখতে পারলে পরবর্তী সময়ে নতুন ভাড়াটেকে এই প্রমাণপত্র দেখিয়ে বিশ্বাস করানো যেতে পারে এই বাসায় থাকলে কত সুবিধা পাওয়া যায়। তো, প্রমাণপত্রে বর্তমান ভাড়াটের পক্ষ থেকে যা যা লেখা থাকবে—
বাড়িওয়ালার খাসকামরার সামনে দিয়ে জুতা হেঁচড়িয়ে হাঁটার সুবিধা
বাড়িওয়ালার সঙ্গে এক সোফায় বসে চা দিয়ে বিস্কুট ভিজিয়ে খাওয়ার সুবিধা
ছাদে যাওয়ার সুবিধা তো বটেই, ছাদের কোনায় দাঁড়িয়ে পাশের বাড়ির জানালায় উঁকি মারার সুবিধা
বাড়িওয়ালাকে ‘স্যার’ বলে না ডেকে খালু বা জেঠা বলে যখন তখন ডাকার সুবিধা
বাড়িভাড়া দেওয়ার সময় ভাড়ার সঙ্গে পুরোনো এবং ছেঁড়া টাকা চালিয়ে দেওয়ার সুবিধাসহ আরও অনেক সুবিধা—
বুঝিয়া পাইলাম
(পুরোনো ভাড়াটের স্বাক্ষর)
কাস্টমারকে ভালোভাবে ঠকাতে না পারলে লাভও হবে না। ম্যানেজার যে কাস্টমারকে ঠকাতে পারছে তা হোটেলমালিককে দেখানোর জন্য লিখিত প্রমাণ লাগবেই। তো, মালিকের হাতে যে কাগজটি তুলে দেওয়া হবে তাতে লেখা থাকবে—
ভাতের সঙ্গে মাঝারি আকারের তিনটি ইটের কণা (কামড় লাগার সঙ্গে সঙ্গে কড়াৎ করে আওয়াজ দিতে সক্ষম)
তরকারিতে তেলাপোকার পাখার অংশবিশেষ।
তরকারির সঙ্গে রুচি-নিরোধক বিশেষ একটি গন্ধ, যে গন্ধ তরকারির মেয়াদোত্তীর্ণতার দিকে ইঙ্গিত করে
খাওয়ার পানিতে একাধিক পতঙ্গ, যারা গ্লাসের ভেতর সাঁতার কাটতে পারদর্শী
ডালের সঙ্গে সমুদ্রসদৃশ অযাচিত পানিসহ আরও অনেক কিছু—
বুঝিয়া পাইলাম
(ঠকাখোর কাস্টমারের স্বাক্ষর)
নিজের কোম্পানিতে বাবা তাঁর ছেলেকে নিয়োগ করলেন। ছেলে যে কোম্পানির সবাইকে দৌড়ের ওপর রেখে কাজ করাতে পারছে, এর লিখিত প্রমাণ বাবাকে একদিন না একদিন দেখাতে হবেই। তাই দরকার কর্মচারীদের স্বাক্ষরসংবলিত কাগজ। স্বাক্ষরের আগে লেখা থাকবে—
যখন-তখন টেবিল চাপড়ানো ঝাঁড়ি (এমন চাপড় টেবিলের পায়া নড়বড়ে করে দিতে সক্ষম)
মুরগির রক্তের মতো লাল চোখের চোখরাঙানি (চোখরাঙানির সময় চোখ থেকে চশমা খুলে রাখা হয়)
একদম নাকের কাছে আঙুল এনে সাঁই সাঁই করে আঙুল ঘোরানো
‘চালু কইরা কাজ করো মিয়া’-জাতীয় মুখস্থ ডায়ালগ
অফিস টাইম শেষ হয়ে যাওয়ার পর বোনাস (!) হিসেবে আরও ম্যালা কাজের চাপসহ আরও অনেক কিছু—
বুঝিয়া পাইলাম
(দৌড়ের ওপর থাকা কর্মচারীর স্বাক্ষর)
আপনার শ্বশুরবাড়ি থেকে একপাল মেহমান এল বেড়াতে। আপনি তাদের যতই পেট ফাটিয়ে খাওয়ান না কেন, তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ কিন্তু পরবর্তী সময়ে বদনাম করতে পারে। তাই লিখিত প্রমাণ রাখার স্বার্থে একটা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে রাখতে পারেন—
আসার সঙ্গে সঙ্গে ‘আহলান সাহলান’ বাক্যের সহীহ উচ্চারণ (আহলান সাহলানের তরজমাও করে দিয়েছে কেউ কেউ)
হাত-পা ধোয়ার জন্য তো বটেই, জুতার তলা ধোয়ার জন্যও গরম পানি
খেতে খেতে বেয়াই-বেয়াইনের মুখের খোশগল্প
খাওয়ার পর খাটে হাত-পা-মাথা ছড়িয়ে নাকে আওয়াজ তুলে ঘুমানোর সুবিধা
বিদায়ের সময় আবার বেড়াতে আসার নেমন্তন্নসহ আরও অনেক কিছু—
বুঝিয়া পাইলাম
(মেহমানের পালের মধ্য থেকে যার হাতের লেখা পাঠযোগ্য তার স্বাক্ষর
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৪:২২