আবার ওপেন প্রপোজ !! বিজ্ঞ জনেরা বিচলিত , হায় হায় , কি হলো কি হলো !! এত অধঃপতন এও কি স'হা যায় !! হায় ! হায় ! মরি মরি জাত গেলো জাত গেলো । ইত্যাদি ইত্যাদি আরও অনেক কিছু । কিন্তু এতো হায় হায় করে কি হবে ? এখনই তো ওদের প্রেম করার বয়স , ওরা তো ওটা করবেই । হয়তো বলবেন এভাবে খোলাখুলি হয়ে কেন , চুরি করে নয় কেন ? কিন্তু প্রেম তো চুরি করে করার জিনিস না , পরকীয়া হলে সেটা চুরি করে করার একটা বিষয় থাকে । প্রেম করাটা তো অন্যায় না , পরকীয়া অন্যায় হতে পারে যেখানে অন্যকে ঠকানোর একটা ব্যপার থাকে । প্রেম করছে করুক না , সমস্যা কি ? এই বিষয়টাকে খুব গুরুত্ব সহকারে বাঁধা দেয়ার ফলেই ছেলে মেয়েরা এই বিষয়টাতেই বেশী আগ্রহ প্রকাশ করে থাকে এবং তাদের প্রধান কাজ থেকে সরে আসে । একটু বোঝার চেষ্টা করুন ওদের উঠতি বয়সটাকে এবং হরমোনাল পরিবর্তনকে । সব কিছুর সাথে ভারসম্য বজায় রেখে ওদের প্রধান যে কাজ সেদিকে ওদের কিভাবে ধাবিত করা যায় সেই চিন্তা করলেই বোধ হয় বুদ্ধিমানের কাজ হবে ।
আবার কেউ কেউ হয়তো বলবেন আমাদের শাশ্বত সংস্কৃতিতে ওরা আঘাত হেনেছে । কোন সংস্কৃতির কথা বলছেন একটু খোলাসা করে বলবেন কি ? আমি তো জানি যুগে যুগে অনেক গুলো সংস্কৃতির সূচনা হয়েছিলো এবং সময়ের প্রয়োজনে নতুন ধারায় নতুন যুগে গা ভাসিয়েছিল আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতি, এবং এখনো ভাসাচ্ছে । এটাই তো প্রকৃতির নিয়ম , এরকমই তো হয় । নদীর বাঁক যেমন আপনার আর আমার ইচ্ছা অনুযায়ী চলে না এই সংস্কৃতিও তেমনি আপনার আর আমার ইচ্ছার এতোটুকু পরোয়া করে না । সে প্রয়োজন এবং সময় বুঝে বুঝে রঙিন হয়ে আমাদের দিকে ঘুরে ঘুরে তাকাবে । আমি বলছি না সেটার সাথে গা ভাসিয়ে নিঃশেষ হয়ে যেতে । বরং বলছি সেটাকে বুঝতে এবং এর সাথে সুস্থ সহ-অবস্থান কিভাবে করা যায় সেই চিন্তা করতে ।
হিন্দি সিরিয়াল গুলো পাশ্চাত্য কালচার বিকৃত এবং অতিরঞ্জজিত করে প্রচার করে , আর সেগুলোই বাংলার মানুষ ধীরে ধীরে মজ্জাগত করে নিচ্ছে ব্যপক হাড়ে । হিন্দি সিরিয়াল অথবা হিন্দি সিনেমা গুলো পাশ্চাত্যকে নকল করে আর সেই নকল কালচার আবার বাংলাদেশ নকল করে । আর এই নকলের নকল কি ধরনের উদ্ভট হতে পারে তা এই বর্তমান অবস্থা দেখে কিছুটা হলেও উপলব্ধি করা যায় । কিন্তু কি বা করার আছে , বর্তমান বাংলাদেশের নাটক সিনেমা অথবা টিভি প্রোগ্রাম গুলো কি বর্তমান আধুনিক জেনারেশনকে বিনোদন দিতে সক্ষম ? আমার তো মনে হয় না । এরকম অবস্থায় বিদেশি চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েও তেমন কোন কাজ হবে বলে মনে হয় না । ইন্টারনেট তো বন্ধ নিশ্চয়ই করা যাবে না , সেটাই যদি করা হয় তাহলে তো অন্ধকার ঘরে বন্দীদশার মত অবস্থা হবে । তাই টিভি চ্যানেল বন্ধ করে কোন লাভ হবে না । বরং দেশীয় কালচার , সামাজিক মূল্যবোধ এবং মানুষ হিসেবে ভালো মন্দের জ্ঞান দিতে হবে সরকারি উদ্যোগে এবং পারিবারিক ভাবেও ।
আর এই সামান্য প্রেমটেমে কিছু হয় না , এই খানে জোরালো নিষেধাজ্ঞা না প্রয়োগ করে ছেলে মেয়েরা যাতে মাদকাসক্ত হয়ে না ওঠে সেদিকে খেয়াল রাখা উচিৎ । ছেলে মেয়েরা প্রেম করলে ওদের মধ্যে মাদকাসক্ত হবার সম্ভাবনা কম থাকে । তখন তারা নিজেকে ভালোবাসে অন্যকে ভালোবাসে , তাই নিজের জন্য নিজে ক্ষতিকর কম হয় ।
এই তো কিছু দিন আগে ঘটে যাওয়া কমার্স কলেজের কয়েকটি ছাত্র ছাত্রীকে বহিষ্কার করা হয়েছে প্রকাশ্যে প্রেম নিবেদন করার জন্য । আমার মাথায় কাজ করে না এটা কিভাবে বহিষ্কারের করণ হয় !!! আমার জানতে ইচ্ছে হয় কলেজের প্রিন্সিপালের কাছে , সে কি শিক্ষা দিলো তার কলেজের ছেলে মেয়েদের যে তারা কলেজের রীতিনীতি ভঙ্গ করার সাহস করে । কলেজ থেকে কি এই ধরনের বিধি নিষেধ আরোপ করা ছিল যে তারা রাস্তায় প্রকাশ্যে প্রেম করতে পারবে না ? ছেলে মেয়েরা যদি কোন নিয়ম ভঙ্গ করে তাহলে এটা অবশ্যই দেখবার বিষয় যে কর্তৃপক্ষ তাদের " কোড অফ কন্ডাক্টে" এই ধরেনের নিষেধাজ্ঞা রেখেছিল কিনা এবং তারা তাদের ছাত্র- ছাত্রীদের এ ব্যপারে অবগত করেছিল কি না । যদি এ ধরনের কোন নিষেধাজ্ঞা না থেকে থাকে " কোড অফ কন্ডাক্টে " তাহলে ছাত্র ছাত্রীরাদের দোষারোপ করা যায় না এবং তাদের বহিষ্কারের কোন অধিকার নেই কলেজ কর্তৃপক্ষের । আর যদি ওরকম নিষেধাজ্ঞা থেকে থাকে কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্র ছাত্রীদের অবগত না করে থাকে , তাহলেও তারা ছাত্র ছাত্রীদের বহিষ্কার করার অধিকার রাখে না আইনত , কারণ এমতাবস্থায় কলেজ তাদের কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয়েছে । কাজেই এরকম হলে কলেজ কর্তৃপক্ষকে সূ করে দিতে পারে গার্ডিয়ানরা ।
পরিশেষে বলতে চাই , পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে যদি না নিতে পারে কেউ তাহলে ভুগতে হবেই । অবশ্য আস্তে আস্তে মেনেও নেয় মানুষ , শুধু একটু সময় লাগবে এই যা । যেমন ফরেন বডি অর্থাৎ যে কোন ভাইরাস এবং ব্যক্টেরিয়া যখন এটাক করে মানব দেহে তখন মানুষের রি-একশনটা এবনরমাল হবেই , ধীরে ধীরে মানুষ সেগুলো কাটিয়েও ওঠে এবং শরীরও সহজ ভাবে নেয় পরবর্তী ভাইরাল অথবা ব্যক্টেরিয়াল এটাককে । আর , সংস্কৃতি নিয়ে যারা সচেতন তাদেরও আবার বলি , কোন কালচারই এক জায়গায় আটকে থাকে না বা এক নিয়মে চলে না । ধীরে ধীরে অতি সূক্ষ্ম পরিবর্তন হতে হতে আমূল পরিবর্তন আসে । ইতিহাসই এর সাক্ষ্য , ইতিহাস বিশ্লেষণ করে যদি দেখেন তবে দেখা যাবে একেকটি বড় বড় যুগের সূচনা হয়েছিলো সেই সময়ের মানুষের চিন্তাধারা অনুযায়ী । আবার ধীরে ধীরে সময়ের পরিবর্তনে চিন্তাধারা সহ সমাজের রীতি নীতি গুলোও বদলে গেছে , বদলে যেতে বাধ্য এটাই প্রকৃতির নিয়ম ।সময়ের অথবা কালের একটা বিশাল মানচিত্রেকে যদি সামনে আনা যায় তবে দেখা যাবে মৌলিক বলতে আসলে কিছুই নেই বা থাকে না , সবই কালের বিবর্তনে একটার সাথে আরেকটা মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় । তাই বলবো অতো নাগিং না করে পরিবর্তনকে সঠিক ভাবে গ্রহন করুন , এটাই মঙ্গলকর হবে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:২২