somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাহিত্যের সহযাত্রী “ম”

২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলা সাহিত্য আকাশে অসংখ্য সাহিত্য শিল্প প্রকাশনার মাঝে মাত্র কয়েকটি সংখ্যা দিয়েই আলোচনায় চলে এসেছে কবি মাসুম বিল্লাহ্ এর সম্পাদনায় সাহিত্যের সহযাত্রী “ম”। সাহিত্য কাগজটির দ্বিতীয় বর্ষের চতুর্থ সংখ্যাটি ছাপার অক্ষরে প্রকাশযোগ্য করার জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছেন মাসুম বিল্লাহ। সঙ্গে সহযাত্রী দু’জন আরিফুর রহমান খান ও কাজী শাহরিয়ার। ভাষার যত্ন আত্তি নিয়েছেন আসিয়া খাতুন। চারু পিন্টুর নামলিপি ও মাসুম বিল্লাহ এর প্রচ্ছদ ও অঙ্গসজ্জায় সজ্জিত হয়ে সংখ্যাটি বর্তমানে চলছে।

একশত বারো পৃষ্ঠার এই সংখ্যাটি কবির সিদ্দিকীর “ম” কে নিয়ে লেখা কবিতা দিয়ে শুরু হয়েছে। ‘ম’ কে ভালোবেসে লেখা কবিতাটিই বলে দেয় পাঠকের মনে কতটুকু জায়গা করে নিয়েছে। কবি আবুল বাসার সেরনিয়াবত লিখেছেন “মেঘ বালিকা এবং সোনালী বিকেল” শিরোনামের দীর্ঘ কবিতা গুচ্ছ। ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনকে নিয়ে স্মৃতিকথায় উঠে এসেছে তার জীবনের একটি মুহুর্তের কথা। একজন সৎ নির্লোভী কমরেডের কথা এই স্মৃতি কথাটি বেশ গুছিয়ে উপস্থাপন করেছেন মাসুম বিল্লাহ্।

“ম” এর পর পৃষ্ঠা অলংকৃত করেছেন আফসানা খান ‘মুক্তিযোদ্ধা ডা. আমানুর রহমান খান’ স্মরণে লিখেছেন স্মৃতিকথা। যে স্মৃতিকথা বলে যায় অনেক অজানা কথা। লেখক ওমর শামস কবি জীবনানন্দ দাশ কে নিয়ে লিখেছেন, শুদ্ধতম কবি ও কবিতা কাকে বলে? তুলে ধরেছেন জীবনানন্দ কেন বাংলা কবিতায় মৌলিক? রুপসী কবিকে নিয়ে এই বিশ্লেষণ পুনর্বার মনে করিয়ে দেয় জীবনানন্দ দাশ ই আধুনিক ও শুদ্ধতম কবি। তিনি সুনিপুণ ভাবে বেশ কিছু গ্রন্থপঞ্জি থেকে তুলে ধরেছেন কবির নিজস্ব ভাষা, কাব্যভঙ্গি নিয়ে আলোচনা।

এই সংখ্যায় মিলন আশরাফ, নোবেল বিজয়ী বিখ্যাত লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ‘দি স্নো অব কিলিমানজারো’ গল্পগ্রন্থ থেকে একটি গল্প অনুবাদ করেছেন। গল্পটির শিরোনাম “একটি দিনের অপেক্ষায়” অসুস্থ পুত্র ও তার বাবার কিছুটা মুহুর্তের বিষয়াবলী নিয়ে লেখা গল্পটা বেশ ভালোই ফুটে উঠেছে অনুবাদে।
‘স্বপ্নযাত্রা’ শিরোনামে একটি ট্রেন ভ্রমণকে কেন্দ্র করে গল্প লিখেছেন রুপক আরিফ এবং শরিফুল শিপু জীবন ঘটিত বিষয় নিয়ে লিখেছে ‘তির্যক’ নামের গল্প।
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছিল এক যুবক, পথে ঘটে যায় অপ্রত্যাশিত ঘটনা যা তীব্র আনন্দকে নিরানন্দে পরিনত করে। এই বিভীষিকাময় গল্পটি লিখেছেন আব্দুল মজিদ।

‘ম’ এর পরবর্তী পৃষ্ঠা থেকে শুরু হয়েছে কবিতা পর্ব। লিখেছেন অনেক নবীন-প্রবীণ মঈন চৌধুরী, সাইয়েদ জামিল, আলমগীর মাসুদ, আফরোজা কনা, তাসকিন ফাহমিনা, জব্বার আল নাঈম, সুলতানা শিপু, সুফিয়া জামান, ইলিয়াস বাবর, সুমন দাস মুন্না, বিদ্যুৎ দেব, মোকসেদুল ইসলাম, শামীম খান যুবরাজ, হিমু রহমান সহ আরও অনেকে। সমকালীন কবিতা পেরিয়ে খুলনা থেকে সোহেল নওরোজ “ভালোবাসার কারিগর” শিরোনামে গদ্য লিখেছেন। অবন্তী কে নিয়ে ভালোবাসা আর বিরহ কিংবা খানিকটা আফসোস মিশ্রিত এই গদ্যটি প্রকাশিত হয়েছে যেন আধ ফোটা ফুল হয়ে। গদ্য থেকে বেড়িয়ে “দ্য জেন্টল উইমেন ম্যাগাজিন” এর সূত্র ধরে ব্যাগের কারিগর ক্যাটি হিলিয়ারের ব্যাগ বিষয়ক কথামালা নিয়ে লন্ডন থেকে লিখেছেন সালমান আহমদ।

এরপর বেশ ক’জন কবির যুগল কবিতা রয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ের উপর লিখিত এই কবিতা গুলো অন্যরকম এক আভা সৃষ্টি করেছে যেন। মাহবুব মিয়াজী লিখেছেন, অনুচিন্তা- “ছায়াবাজির পুতুলখেলা” ছেলেবেলাকার দেখা সেই শোলার তৈরি পুতুল নাচের কথাটিই তুলে ধরেছেন তিনি। দেশ থেকে ক্রমশই লোকায়ত ঐতিহ্য গুলো হারিয়ে যেতে বসেছে তারই ভাবনাটির প্রকাশ ঘটিয়েছেন।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাঠানো বেশ কিছু কবি বন্ধুদের লেখা রয়েছে এই সাহিত্য কাগজটিতে। লিপিবদ্ধ কবি/লেখকদের বাইরে ও প্রান্তিক পর্যায়ের লেখকদের জায়গা করে দেবার এই সাহসিকতার পরিচয়টি দিয়েছেন ‘ম’ সম্পাদক। শুধু কবিতা কিংবা আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ নয় সাহিত্যের এ কাগজটি বেশ কয়েকটি অনুগল্পও রয়েছে।

মাসুম বিল্লাহ লিখেছেন ‘ধরা’ নামের একটি গল্প। পিতা ও পূত্রের এই গল্পটিতে জীবনের কথা প্রকাশ পেয়েছে। জীবনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য যে কখনও কখনও মানুষকে অসৎ হতে হয় তারই প্রতিফলন ঘটেছে গল্পে।
জেরুজালেমের বাসিন্দা ফরায়েজ কে নিয়ে একটি মনস্তাত্বিক ধ্বংসের গল্প লিখেছেন রবিন রহমান। গল্পের শিরোনাম ‘ভাঁজ’। চিঠির ভাঁজে থাকা প্রেম একদিন অবলীলায় চাপা পড়ে যায় বোমার আঘাতে। চুর্ণ-বিচুর্ন দালানের নিচে হারিয়ে যায়।

এক যাপিত জীবনের প্রেম ও বাড়ি থেকে পলায়ন পর্ব নিয়ে গল্প তুলে ধরেছেন রুবেল রানা। অল্পতেই শেষ হয়ে যাওয়া এই গল্পটির শিরোনাম ছিল ‘অন্য একজন’। আব্দুস সোবহান বাপ্পির ‘নবুইত্যা কানার ঝি’ নামের গল্পটি নামকরণে যতখানি পাকাপোক্ত, গল্পে ততটা নয়। তবুও সময়ের প্রয়োজনে গল্প হয়ে ধরা দিয়েছে। এম ইয়াসিন আরাফাত লিখেছেন জ্যোতি নামের একটি অসম্পূর্ন প্রেমের গল্প। এই সংখ্যায় যুক্ত হয়েছে কবি আনোয়ার কামাল এর লেখা কবিতা বিষয়ক ভাবনা ও কবিতা নিয়ে কথা। খুব সহজেই কবি এখানে তুলে ধরতে পেরেছেন কেন কবিতা আসে? কিভাবে কবিতা হয়ে উঠে।

‘অপুষ্পক উদ্ভিদের ছায়া’ শিরোনামে একটি দীর্ঘ কবিতার জন্ম দিয়েছেন কবি পিয়াস মজিদ। নারী ও পুরুষের চিত্রায়নের খুব দক্ষতার সাথে তুলে এনেছেন কবিতায় উদ্ভিদ রুপ। এছাড়া মাসুম বাদল লিখেছেন প্রেমের কবিতা ‘স্বপ্নভঙ্গ’। কবি ইকবাল রাশেদ সুপর্নাকে নিয়ে লিখেছেন প্রেম-বিরহের পদাবলী। বাংলাদেশের ষড়ঋতু ও শীত নিয়ে ফিচার রচনা করেছেন মুহাম্মদ দিদারুল আলম। সোহেল মল্লিক ও সোহেল রানা লিখেছেন দীর্ঘ ছড়া।
পত্রাবলী বিভাগের এই পর্বে দুটো পত্র স্থান পেয়েছে। সিউল প্রবাসী বন্ধুদের প্রতি রাজিবুল উল হুদার লেখা এবং মায়ের কাছে লেখা আমিনুল ইসলাম সোহাগ এর চিঠি। অনেক কথা আর গল্প ভরা এই চিঠিগুলো সমসাময়িক সময়ের জন্য বেশ উপাদেয়।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ৫০বছর নিয়ে অব্যয় রহমান অনেক তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সাজিয়েছেন একটি অসাধারণ প্রবন্ধ। যার ধারাবাহিকতা পরবর্তী সংখ্যা গুলোতেও চলবে। শিশু-কিশোর উপন্যাসিক দন্তস্য রওশন রচনা করেছেন ‘তুর্য’ নামের দুর্দান্ত একটি কিশোর গল্প। পরিশেষে ছোট কাগজের প্রকাশনা নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন সম্পাদক আবু সাঈদ। সেই অভিজ্ঞতায় চোখ বুলিয়ে চলে যাই অতীতের দিনগুলোতে। একটি সাহিত্য কাগজ প্রকাশনায় অনেক রকমের সীমাবদ্ধতা থাকে আর সেই সেইসব সীমাবদ্ধতা জল্পনা-কল্পনায় মিশেই সৃষ্টি হয় এই সাহিত্যের ছোট কাগজ।

একশত বারো পৃষ্ঠায় সজ্জিত সাহিত্যের সহযাত্রী “ম” এর সৃষ্টিশীলতাকে অভিনন্দন জানাই। “ম” এর পেছনে যাদের আন্তরিকতার শ্রম এই সৃষ্টি দিয়েছে তাদের জন্যও রইল শুভকামনা। ভবিষ্যতে কবি/সাহিত্যিকদের পাঠ প্রিয় হয়ে উঠবে “ম” সেই আশা রইল।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:১৬
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এসব লুটপাটের শেষ কোথায়!

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:১৮

আধা লিটারের পানির বোতল দোকানদার কেনে সর্বোচ্চ ১২.৫০ টাকায় আর ভোক্তার কাছে বিক্রি করে ২০ টাকা। এগুলো কি ডাকাতি না?

গোপন সূত্রে যতটুকু জানা যায়,
প্রাণ ৮.৫ টাকা কেনা
ফ্রেশ ১০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। চারুকলায় আগুনে পুড়ে গেল ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ ও ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৪৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নববর্ষের শোভাযাত্রা উদ্‌যাপনের জন্য বানানো দুটি মোটিফ আগুনে পুড়ে গেছে। এর মধ্যে একটি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি ও আরেকটি শান্তির পায়রা।



আজ শনিবার সকালে চারুকলা অনুষদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৬

ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা
March for Gaza | ঢাকা | ২০২৫

বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম
আল্লাহর নামে শুরু করছি
যিনি পরাক্রমশালী, যিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকারী,
যিনি মজলুমের পাশে থাকেন, আর জালেমের পরিণতি নির্ধারণ করেন।

আজ আমরা, বাংলাদেশের জনতা—যারা জুলুমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডক্টর ইউনুস জনপ্রিয় হয়ে থাকলে দ্রুত নির্বাচনে সমস্যা কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৪১



অনেকেই ডক্টর ইউনুসের পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার কথা বলছেন। এর জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় নির্বাচন। আদালত যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বহাল করেছে সেহেতু ডক্টর ইউনুস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডিসেম্বরে নির্বাচন : সংস্কার কাজ এগিয়ে আনার পরামর্শ প্রধান উপদেষ্টার

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৪৯


ড. ইউনূস সাহবে কে বুঝি পাঁচবছর আর রাখা যাচ্ছে না। আজ বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সাথে মত-বিনিময়ের সময় ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন কে সামনে রেখে তিনি দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কারের এগিয়ে আনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×