somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভীনবাসী ডায়েরী ।। তিন ।।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভীনবাসী ডায়েরী ।। এক ।।
ভীনবাসী ডায়েরী ।। দুই ।।
ভীনবাসী ডায়েরী ।। তিন ।।

মানুষ হার্টফেইল কীভাবে করে জানিনা, তবে হৃদযন্ত্র হঠাৎ বিকল হলে কেমন বোধ হয়, তা পূর্বে না জানলেও সেদিন অন্তত জেনেছিলাম, এবং ভালভাবেই। ‘মাওলা ভাই নেই’- এই বোধ আমাকে এতটাই অসহায় করে তুলল যে, নিজেকে মনে হলো মুমূর্ষ রোগি, এবং জীবনের শেষপ্রান্তে আচমকা পৌঁছে যাবার পরও শেষ আশা নিয়ে এদিক-ওদিক তাকালাম, না নেই, আর তখন প্রায় উন্মাদের মতই যতটুকু সামনে এসেছিলাম তারচেয়ে বেশি ছুটে এলাম পেছনে! কিন্তু কোথায় মাওলা ভাই, নেই তো নেই! দুঃখে কেঁদে ফেলব কিনা বুঝতে না পেরে আবার পূর্বের স্থানে ফিরে এলাম, এবং ঘন ঘন এদিক-ওদিক তাকাতে গিয়েই দেয়ালে টাঙানো বিশালাকার ঘড়ির মধ্যে ১০টা ৩০ দেখে রীতিমতো ভেউ ভেউ করে কেঁদে ফেলতে ইচ্ছে হলো, আর সেই কষ্টের মাঝেই মনে মনে বসের চৌদ্দগুষ্ঠির উদ্ধার করতে থাকলাম, ‘এই বেকুবটারে কেন আমার সাথে পাঠালেন? দেশে কি বেকুবের অভাব পড়েছিল, নাকি আমাকেই সবচেয়ে বড় বেকুব ঠাউরে পাঠিয়ে দিয়েছেন তার সাথে’? আর মাত্র ১৫মিনিট বাকি ফ্লাইটের! ওহ খোদা কী করি? কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার টার্মিনালে যেতে লাগবে কম করেও ১০ মিনিট, সেখান থেকে আবার বাসে করে যেয়ে উঠতে হবে প্লেনে। ‘হে মাবুদ, তুমিই শেষ সহায় গরীবের’-এমন আর্তনাদ বেরিয়ে আসতে না আসতেই শুনি কেউ নাম ধরে ডাকছে পেছন থেকে। ঘাড় ঘুরিয়ে মাওলা ভাইয়ের হন্তদন্ত মুখটা দেখামাত্রই মনে হল, জীবনে এর চেয়ে স্মরণীয় ঘটনা আর হতে পারেনা! আহা সাধের দুবাই, এখনও তুমি ফসকে যাওনি হাত থেকে। এটুকুই কেবল ভাবতে সমর্থ হলাম, এবং মুহূর্তমাত্র দেরি না করে মাওলা ভাইয়ের বাম হাতটা মুঠো করে ধরে প্রায় দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে টার্মিনালে পৌঁছে হাফাতে হাফাতে যে কাজটা প্রথম করলাম তা হল, মাওলা ভাইয়ের মুখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে, ‘ফালতামু মারার আর জায়গা পাননা মিয়া, আপনার জন্য যদি প্লেন মিস করতাম’! মাওলা ভাই প্রতিক্রিয়াহীন এবং আমার উচ্চবাচ্য শুনে বেশ নিরীহভাবেই বলল, ‘আপনেই না বললেন জোরে পা চালান, আমার ভার বওয়া পাও, দু’ধাপ মারি দেহি আপনে নাই, হের পর পেঝনে দোড়াত দোড়াত আসি দেহি আপনে’!

মাওলা ভাইয়ের উত্তর শোনার পর আর একটি কথাও আমি বলিনি, প্লেনে ওঠা পর্যন্ত তো নয়ই, এবং যখন কথা বললাম তখন মাওলা ভাইয়ের দু’ধাপ স্মরণ রেখেই বললাম, ‘আমি তো মনে করেছিলাম আপনি পেছনে পড়ে গেছেন’! মাওলা ভাই কিছু বললনা, বরং কিছুক্ষণ পর একটা লাল টকটকে আরবী মেয়ে সবাইকে হেড ফোন দিতে থাকলে, মাওলা ভাই মুখটা আমার দিকে এগিয়ে এনে, ‘ও ভাই এহানেও তো দেহি সেই যন্তর, আমি এবির লিবোনা। মাগীগুল্যানের খালী টেকা কামানের তাল। হেই ক্যানেই সুন্দর সুন্দর মাগীগুল্যান বাছি বাছি রাখিছ’। মাওলা ভাই সত্যিই নিলনা কানাকানির যন্তর, কিন্তু আড়চোখে আরবী বিমানবালাটাকে ঠিকঠাক দেখে নিতে ভুললনা। আর ভুলবেই বা কেন, দেখবার জিনিস যদি দৃষ্টি ও হৃদয় দুই-ই সমানভাবে তৃপ্ত করে, তবে বলি, বিসমিল্লাহ সহকারে দেখ, এবং আলহামদুলিল্লাহর নাম মুখেও এনোনা ভুলে! পরে জেনেছিলাম তিনমাস হয়েছে মাওলা ভাই বিয়ে করেছে। আমি তার ব্যাপারটা বুঝলাম কিন্তু, এক খোদা ছাড়া আমারটা বুঝবে কে? যতবার এইসব আরবী বিমানবালারা ঘুরে-ফিরে সামনে আসে, ততবারই পেনেলোপে ক্রুজ যেন মুখের কাছে উন্মুক্ত বুক নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। আর পড়বেইবা না কেন, একে তো গুরুস্তনী, তার উপর যদি কোন রাখ-ঢাক থাকে। আর ত্বক এতটাই শুভ্র যে, শিরা-উপশিরা তো বটেই, এমনকী প্রবাহমান রক্তধারাও যেন দৃশ্যমান। শেষ অব্দি কামনাকে রাগে পর্যবসিত করে মাওলা ভাইয়ের কানে কানে বললাম, ‘ভাই দেখেছেন মাগীগুল্যান কেমুন সুন্দর, মুন চায়...’। মাওলা অপার্থিবভাবে হাসে, এবং সায় দিয়ে জানায়,’হ, পরীর লাহান’, আর আমি একই দিনে দ্বিতীয়বার আকাশে উড়ার আনন্দে আনমনেই বলে উঠলাম, 'বেঁচে থাকো হ্যামবার্গার আমার, বেঁচে থাকো পটোটো’!

ছ’ঘন্টার জার্নি শেষে যখন দুবাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে নামলাম তখন দুপুর একটা, এবং ইমিগ্রেশন ফর্মালিটিস শেষ করে বাইরে এসে দাঁড়াতেই মনে হল, আশে-পাশে কোথাও আগুন লেগেছে, যার উষ্ণ হলকা এসে লাগছে চোখে-মুখে। মে ১২, মধ্যপ্রাচ্যে আগুন পড়ার শুরু মাত্র, যা কিনা জুনে ভর-ভরন্ত হয়ে জুলাইয়ে ফেটে পড়ে, এবং আগষ্ট পর্যন্ত চারিদিক যথেচ্ছভাবে জ্বালিয়ে, সেপ্টেম্বরে ক্ষান্ত দেয়। তার পরের মাসগুলো দুবাই কতটা আকর্ষণীয় ও উপভোগ্য, তা যারা শীতকালীন সময়ে এসেছে (অক্টোবর-মার্চ), তারা খুব ভালভাবেই জানে। সেসব পরের কথা। ৪৩ডিগ্রী তাপমাত্রায় এয়ারপোর্টের বাইরে ওয়েটিং লবিতে দাঁড়িয়ে মনের সুখে পর পর দু’দুটো সিগারেট ফুঁকে যখন এদিক-ওদিক তাকালাম, তখন বুকটা ধক করে উঠল! আমাদেরকে দেয়া তথ্যানুযায়ী কারও আসার কথা নিতে, যার হাতে থাকবে বড় অক্ষরে ভি.এ.এল.ই.সি.এইচ.এ. বর্ণ সম্বলিত প্ল্যাকার্ড। কিন্তু, কোথায় সেই কেউ? প্রায় ঘন্টা ধরে চতুর্দিক পায়চারী করে যখন হতাশার চরম উঠেছি, ঠিক তখনই একজন উদয় হলো দেবতার মতো এ ফোর সাইজের কাগজে কাঙ্খিত বর্ণসম্বলিত প্ল্যাকার্ড উঁচু করে, যা দেখার জন্য আমাদের চারখানা চোখ গত এক ঘন্টা হা-পিত্তেশ করে মরেছে! ফলে দেখামাত্রই মনে হলো দৌঁড়ে গিয়ে লোকটাকে জড়িয়ে ধরি, ধরে বলি,’আই লাভ ইউ ম্যান’। না, দৌঁড় দিইনি, এবং জড়িয়ে ধরার সেই আবেগ সেদিন রুখতে পেরে নিজেকে বহুবার সাবাসি দিয়েছি পরে, বলেছি, ‘সাবাস বেটা, ‘বাপ দাদার মান-ইজ্জত শেষ পর্যন্ত টিকিয়ে রাখতে পেরেছিস এই ভীনবাসে’।


অরণ্য
মধ্যপ্রাচ্য, দুবাই
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×