আমরা যা কিছু ভাবপ্রবণ হয়ে ভাবপ্রকাশের জন্য প্রকাশ করি তাই হলো ভাষা। আমরা যা ভাবি, যা আমাদের ভাবতে প্রভাবিত করে বা ভাবতে বাধ্য করে সেটা হলো অনুভূতি। যদি প্রশ্ন করা হয়, জীবন কি? তবে এ প্রশ্নও চলে আসে, জন্ম কি ও মৃত্যু কি? এখানে মৃত্যু ও এর পরবর্তী কিছু বিষয় নিয়ে লিখতে ইচ্ছা হলো।
মৃত্যু : মৃত্যু (ইংরেজি ভাষায়: Death) বলতে জীবনের সমাপ্তি বুঝায়। জীববিজ্ঞানের ভাষায় প্রাণ আছে এমন কোন জৈব পদার্থের (বা জীবের) জীবনের সমাপ্তিকে মৃত্যু বলে। অন্য কথায়, মৃত্যু হচ্ছে এমন একটি অবস্থা (state, condition) যখন সকল শারিরীক কর্মকাণ্ড যেমন শ্বসন, খাদ্য গ্রহণ, পরিচলন, ইত্যাদি থেমে যায়। কোন জীবের মৃত্যু হলে তাকে মৃত বলা হয়।
মৃত্যু বিভিন্ন স্তরে ঘটে থাকে। সোমাটিক মৃত্যু হল সামগ্রিকভাবে কোন জীবের মৃত্যু। নির্দিষ্ট অঙ্গ, কোষ বা কোষাংশের মৃত্যুর আগেই এটি ঘটে। এতে হৃৎস্পন্দন, শ্বসন, চলন, নড়াচড়া, প্রতিবর্ত ক্রিয়া ও মস্তিষ্কের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। সোমাটিক মৃত্যু ঠিক কখন ঘটে তা নির্ণয় করা দুরূহ, কেননা কোমা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, এবং ঘোর বা ট্রান্সের মধ্যে থাকা ব্যক্তিও একই ধরনের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে থাকেন।
সোমাটিক মৃত্যুর পর অনেকগুলি পরিবর্তন ঘটে যা থেকে মৃত্যুর সময় ও কারণ নির্ণয় করা যায়। মারা যাবার পরপরই পার্শ্ববর্তী পরিবেশের প্রভাবে দেহ ঠান্ডা হয়ে যায়, যাকে বলে Algor mortis। মারা যাবার পাঁচ থেকে দশ ঘণ্টা পরে কঙ্কালের পেশীগুলি শক্ত হয়ে যায়, যাকে বলে Rigor mortis, এবং এটি তিন-চার দিন পরে শেষ হয়ে যায়। রেখে দেয়া দেহের নীচের অংশে যে লাল-নীল রঙ দেখা যায়, তাকে বলে Livor mortis; রক্ত জমা হবার কারণে এমন হয়। মৃত্যুর খানিক বাদেই রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। আর তারপরে দেহের যে পচন শুরু হয়, তার জন্য দায়ী এনজাইম ও ব্যাক্টেরিয়া। দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিভিন্ন হারে মারা যায়। সোমাটিক মৃত্যুর ৫ মিনিটের মধ্যেই মস্তিষ্কের কোষগুলির মৃত্যু ঘটে। অন্যদিকে হৃৎপিণ্ডের কোষগুলি ১৫ মিনিট এবং বৃক্কেরগুলি প্রায় ৩০ মিনিট বেঁচে থাকতে পারে। এই কারণে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সদ্যমৃত দেহ থেকে সরিয়ে নিয়ে জীবিত ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব।
বিভিন্ন ধর্ম ও ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী মৃত্যু ও মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে নানাবিধ বিশ্বাস প্রচলিত আছে। যেমনঃ
ইসলামঃ-
✔ মৃত্যু যন্ত্রণাঃ রাসুল ( সাঃ) যখন মৃত্যু যন্ত্রণায় উপস্থিত হলেন তখন নিজের সাথে এক জগ পানি রেখেছিলেন , আর সেখান থেকে নিজের হাত ডুবিয়ে নিয়ে মুখ মুছতেন এবং বলতেন, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ইন্না লিল মাওতি লা সাকারাত, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” -অর্থাৎ: নিশ্চয়ই মৃত্যু যন্ত্রণা বড়ই তীব্র এবং বড়ই কঠিন
✔ মৃত্যু পরবর্তী জীবনঃ হজরত বারা ইবনে আজেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে জানাযায় বের হই। এতে বর্ণিত হয় যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কবরবাসীর নিকট দু’জন ফেরেশতা আসবেন। অতঃপর তাকে উঠিয়ে বসানো হবে এবং জিজ্ঞাসা করবেন, তোমার রব কে? তখন সে (মুমিন হলে) বলবে, আমার রব আল্লাহ।
আবার জিজ্ঞাসা করবেন, তোমার দ্বীন কি? উত্তরে সে (মুমিন হলে) বলবে, আমার দ্বীন ইসলাম। তাকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করবেন, তোমাদের নিকট প্রেরিত এ ব্যক্তিটি কে ছিলেন? উত্তরে সে (মুমিন হলে) বলবে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।’ (মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ)
অন্য হাদিসে এসেছে যে, মৃতব্যক্তিকে দাফনের পর আত্মীয় স্বজন যখন চলে যায়, মৃতব্যক্তি তখন তাদের হাটাচলা বা জুতার শব্দ শুনতে পান। অতঃপর মৃতব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদে দু’জন ফেরেশতা আসেন।
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘বান্দাকে (মৃতব্যক্তি) যখন তার কবরে রাখা হবে এবং তার সাথীরা সকলে চলে যায়, তখন সে তাদের জুতা-স্যান্ডেলের শব্দ শুনতে পায়।
অতঃপর তার নিকট দু’জন ফেরেশতা আসবেন এবং তাকে বসিয়ে বলবেন, ‘এ মানুষটি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে (দুনিয়াতে) কি বলতে? তখন সে (মুমিন হলে) বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুল।
অতঃপর তাকে বলা হবে, দেখ জাহান্নামের সে স্থানটি যার পরিবর্তে আল্লাহ তাআলা তোমাকে বেহেশতের স্থান প্রদান করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তখন সে উভয় স্থান অবলোকন করবে।
আর কাফের বা মুনাফেক (প্রশ্নের উত্তরে বিশ্বনবি সম্পর্কে) বলবে, ‘জানি না, মানুষেরা যা বলতো তাই বলতাম। তখন তাকে বলা হবে, তুমি জাননি এবং পড়নি। অতঃপর তার দু’কানের মাঝে লোহার হাতুড়ি দ্বারা প্রহার করা হবে। আর সে (তখন) এমনভাবে চিৎকার করবে, যা মানুষ ও জ্বিন ব্যতিত তার পার্শ্ববর্তী সকলেই (জীব-জন্তু ও পশু-পাখি) শুনতে পাবে।’
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মালাকুল মউত মুসা আলাইহিস সালামের নিকট এসে তাকে বলেন, আপনার রবের ডাকে সাড়া দিন। তিনি বলেন, অতঃপর মুসা আলাইহিস সালাম মালাকুল মউতকে থাপ্পড় মেরে তার চোখ উপড়ে ফেলেন। তিনি বলেন, অতঃপর মালাকুল মউত আল্লাহর নিকট ফিরে গেল এবং বলল, আপনি আমাকে আপনার এমন বান্দার নিকট প্রেরণ করেছেন যে মরতে চায় না, সে আমার চোখ উপড়ে ফেলেছে, তিনি বলেন, আল্লাহ তার চোখ তাকে ফিরিয়ে দেন, আর বলেন, আমার বান্দার নিকট ফিরে যাও এবং বল, আপনি হায়াত চান? যদি আপনি হায়াত চান তাহলে ষাঁড়ের পিঠে হাত রাখুন, আপনার হাত যে পরিমাণ চুল ঢেকে নিবে তার সমান বছর আপনি জীবিত থাকবেন। তিনি বলেন, অতঃপর? মালাকুল মউত বলল, অতঃপর মৃত্যু বরণ করবেন। তিনি বলেন, তাহলে এখনি দ্রুত কর। হে আমার রব, পবিত্র ভূমির সন্নিকটে পাথর নিক্ষেপের দূরত্বে আমাকে মৃত্যু দান কর”। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আল্লাহর শপথ আমি যদি তার নিকট হতাম, তাহলে রাস্তার পাশে লাল বালুর স্তূপের নিকট তার কবর দেখিয়ে দিতাম”।
একদিন হযরত উমর রাঃ কা’ব রাঃ কে বললেন- হে কা’ব মৃত্যু সম্পর্কে বলুন। তিনি বললনে যে মৃত্যু হল একটি কাঁটাযুক্ত গাছের ন্যায়। সে গাছটি আদম সন্তানের পেটে প্রবেশ করিয়ে দিলে তার প্রতিটি কাঁটা শিরা উপশিরায় গেঁথে গেল। অতঃপর কোন শক্তিশালী ব্যাক্তি সেটা ধরে টান দিলে তার কিছু অংশ ছিঁড়ে চলে এল আর কিছু অংশ রয়ে গেল।
হযরত হাসান বসরী বর্ননা করেন নবী করীম সাঃ বলেন, মুমিনের মৃত্যু যন্ত্রনা ও কষ্ট ৩০০ বার তলোয়ারের আঘাতের সমান। মৃত্যু সম্পর্কে যার এ বিশ্বাস রয়েছে তার উচিত নেক কাজ করে ও পাপ কাজ পরিত্যগ করে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নেয়া। কারন মানুষ জানে না যে মৃত্যু কখন আসবে।
ইবন আযেব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে এক আনসারীর জানাযার সালাতের জন্য বের হয়ে কবর পর্যন্ত গেলাম, তখনও মাটি দেওয়া হয় নি, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কিবলামুখী হয়ে বসলে আমরাও তাঁর পাশে বসলাম। সকলেই এমন নীরবতা অবলম্বন করছে যেন তাদের মাথায় পাখি বসেছে (কোনো নড়াচড়া নেই)। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর হাতে একটি কাঠি ছিল, যার দ্বারা তিঁনি মাটিতে দাগ দিচ্ছিলেন। অতঃপর তিনি একবার আকাশের দিকে আবার মাটির দিকে তাকাতে লাগলেন এবং তাঁর দৃষ্টি একবার উপরের দিকে তুলেন আবার নিচের দিকে নামান, (এভাবে তিনবার করলেন) অতঃপর বললেন, তোমরা আল্লাহর নিকট কবরের শাস্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা কর। (এ কথাটি দুই বা তিনবার বললেন) তারপর বললেন, হে আল্লাহ! কবরের আযাব থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি, কথাটি তিনবার বললেন। তারপর বললেন, মুমিন বান্দা যখন ইহকাল ত্যাগ করে পরকালের দিকে অগ্রসর হয়, তখন তার নিকট সূর্য্যসদৃশ শুভ্র বর্ণের মুখবিশিষ্ট ফিরিশতা জান্নাতের কাফন ও সুগন্ধি নিয়ে আকাশ থেকে অবতীর্ণ হয়ে চোখের শেষ দৃষ্টি দূরত্বে বসে থাকে। অতঃপর মালাকুল মাউত তার মাথার পাশে বসে বলতে থাকে হে পবিত্র আত্মা! অন্য বর্ণনায় হে শান্তিপ্রিয় আত্মা! আল্লাহর ক্ষমা এবং সন্তুষ্টির দিকে বের হয়ে আসো। তিনি বলেন, তখন সে আত্মা কলসির মুখ থেকে পানি বের হওয়ার ন্যায় শরীর থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসলে মৃত্যুর ফিরিশতা তা হাতে তুলে নেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে, যখন তার রূহ বের হয় তখন আকাশ ও জমিনসহ সকল ফিরিশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকে, সেই সাথে তার জন্য আকাশের সকল দরজা খুলে দেওয়া হলে প্রত্যেক দরজার অধিবাসীগণ আল্লাহর নিকট দোয়া করে যেন তার রূহটি তাদের নিকট দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। মালাকুল মাউত রূহটি হাতে নিয়ে এক মুহুর্তের জন্যও তার হাতে রাখতে পারেন না; বরং সাথে সাথে সেই অপেক্ষাকারী ফিরিশতারা নিয়ে জান্নাতের সুগন্ধি সম্বলিত কাফনে তুলে নেয়।
হযরত সামুরা বিন জুনদুব(রা) বলেন, রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রায়ই তার সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করতেন যে, তোমাদের মাঝে কেউ কি কোনো স্বপ্ন দেখেছ ?একদিন সকালে তিনি নিজেই বলতে লাগলেন যে, আজ রাতে আমার নিকট দুজন লোক এল এবং বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে নিয়ে গেল।যাওয়ার পথে আমরা শায়িত একটি লোকের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম। এই শায়িত লোকটির মাথা অপর একটি লোক পাথর দিয়ে কেচতেছিল। পাথর মারার পর মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পাথরটি দূরে ছিটকে পড়ছে। পুনরায় মারার জন্যে লোকটি পাথর সংগ্রহ করতে গেলে এই ফাকে মাথা পুনর্জন্ম নিয়ে নেয় এবং ঐ লোকটি ফিরে এসে আবার পাথর মারে। এভাবে অনবরত চলছে।
আমি আমার সাথীকে বললাম, সুবহানাল্লাহ ! এই দুজন ব্যক্তি কে ? আমার সাথী বলল, আরো সামনে অগ্রসর হও।
আমরা সামনে অগ্রসর হলাম। দেখলাম একটি লোক চিত হয়ে শুয়ে আছে আর অপর একটি লোক লোহার একটি করাত দিয়ে তার মুখের এক পাশের চোয়াল চিরছে। এক পাশ চিরে যখন অন্য পাশে চিরতে যাচ্ছে তখন পূর্বের চিরা অংশ জোড়া লেগে যাচ্ছে। এভাবে অনবরত উলট-পালট করে তাকে চিরছে।
আমি বললাম, সুবহানাল্লাহ ! এই ব্যক্তি কে ? আমাকে বলা হলো আরো সামনে চলো।
আমরা সামনে অগ্রসর হয়ে একটি চুল্লি দেখতে পেলাম। চুল্লির মাঝে খুব হৈ চৈ এর শব্দ শোনা যাচ্ছিল। চুল্লিতে ঊঁকি মেরে দেখতে পেলাম তাতে উলংগ কিছু নারীপুরুষ রয়েছে। আগুনের লাভা যখন তাদের তলদেশ থেকে উদগীরণ করে তখন তারা চিৎকার করে উঠে, আর দেখলাম সেখানে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে অসহনীয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা ? আমাকে বলা হল আরও সম্মুখে অগ্রসর হও।
সামনে অগ্রসর হয়ে একটি নহর পেলাম। যার পানি রক্তের ন্যায় লালবর্ণের। এ পানিতে একটি লোক সাঁতার কাটছিল। অপর একটি লোক অনেকগুলো পাথর নিয়ে নদীর কিনারে দাঁড়ানো। সাঁতারু লোকটি সাঁতরিয়ে যখন নদীর কিনারে আসে তখন তার মুখ খুলে দেয় এবং কিনারায় লোকটি তার মুখে একটি পাথর ঢুকিয়ে দেয়। এমনটা হচ্ছিল বারবার। আমি জানতে চাইলাম, এই লোকটি কে ? আমাকে বলা হল , আরোও সামনে অগ্রসর হও।
সামনে গিয়ে অত্যন্ত কদাকার একটি লোকের সাক্ষাৎ পেলাম। তার নিকট আগুন ছিল এবং সে আগুন প্রজ্জ্বলিত করছিল এবং চতুর্পাশে চক্কর কাটছিল। আমি জানতে চাইলাম এই লোকটি কে ? জবাব এলো আরো সামনে অগ্রসর হও।
আমরা সামনে অগ্রসর হয়ে একটি শ্যামল উদ্যানে উপস্থিত হলাম।উদ্যানের মধ্যবর্তী স্থানে এত দীর্ঘকায় একজন ব্যক্তির সাক্ষাৎ পেলাম যে উচ্চতার কারণে তার শির আমাদের নজরে আসছিল না।আর এই দীর্ঘ লোকটির পাশে অনেকগুলো শিশুর সমাগম। আমি ইতোপূর্বে এই শিশুদেরকে কখনো দেখিনি। আমি জিজ্ঞেস করলাম এই সকল লোক কারা ? উত্তর এল আরো সামনে অগ্রসর হও।
অতঃপর আমরা দৃষ্টিনন্দন মনোরম একটি উদ্যানে প্রবেশ করলাম। এত নন্দিত উদ্যান আমি এর আগে কখনো দেখিনি।আমি আমার সঙ্গীটির নির্দেশে ভিতরে প্রবেশ করলাম। ভেতরে দেখি স্বর্ণ রূপার নির্মিত একটি শহর।আমরা শহরের প্রধান ফটকের নিকট এলাম। আমাদের জন্য ফটক খোলা হল। অতঃপর ভিতরে প্রবেশ করলাম। প্রবেশ করার পর আমাদের সামনে কিছু লোক এল যাদের দেহের অর্ধাংশ অত্যন্ত সুন্দর কিন্তু অপরাংশ অত্যন্ত কদাকার। আমার সঙ্গীটি তাদেরকে বলল, তোমরা সামনের নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়। তারা যেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল। নদীটি ছিল খুবই প্রশস্ত, দুধের ন্যায় শুভ্র ছিল এর জলরাশি। তারা নদী থেকে উঠে আসার পর তাদের দেহের বিকৃতি দুরীভূত হয়ে গেল। সর্বাংগ রূপ ধারণ করল সৌন্দর্য্যের দ্যুতিতে। আমার সঙ্গীটি আমাকে বলল – এটি হল ‘আদন জান্নাত’। এটিই তোমার মূল নিকুঞ্জ। আমি দৃষ্টি উঠালাম। দেখি একটি শুভ্র বর্ণের মহল। সঙ্গীটি বলল, এটিও তোমার নীড়। আমি বললাম, আল্লাহ তোমার কল্যাণ করুক। আমাকে আমার নিলয়ে একটু প্রবেশ করতে দাও। সে বলল- এখন নহে। তবে তুমি অবশ্যই এই মহলে প্রবেশ করবে।
এরপর আমি প্রথম থেকে এ পর্যন্ত যা কিছু দেখলাম এর রহস্য জানতে চাইলাম। সে বলল-
প্রথম যে ব্যক্তি যার মাথা চূর্ণ হতে দেখেছ সে হলো কোরআনের জ্ঞান অর্জনকারী ওই ব্যক্তি যে কোরআনের জ্ঞান অর্জন করে ভুলেও গিয়েছে এবং ফরয নামায ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তার সাথে এমন আচরণ কিয়ামত পর্যন্ত করা হবে।
দ্বিতীয় ব্যক্তি যার মুখমন্ডল চিরতে দেখেছ সে হল ঐ ব্যক্তি যে সকালে ঘর থেকে বের হয় এবং দিনভর মিথ্যা কথা বলে বেড়ায়। তার সাথেও কিয়ামত পর্যন্ত এমন আচরণ করা হবে।
তৃতীয়, চুল্লির ভিতর উলংগ নারী পুরুষ জ্বলতে দেখেছ, এরা হল ব্যভীচারী নারী পুরুষ।
চতুর্থ দৃশ্যটি হল সুদ ভক্ষণকারীর যাকে তুমি রক্তের নদীতে সাঁতার কাটতে দেখেছ।
পঞ্চম, যাকে আগুন প্রজ্জ্বলিত করতে দেখেছ সে হল জাহান্নামের ভারপ্রাপ্ত ফেরেশতা।
ষষ্ঠ উদ্যানের দীর্ঘ লোকটি হল, হযরত ইব্রাহীম(আ) । আর আশেপাশের শিশুরা হল ইসলামের মৃত্যু বরণকারী শিশু।
সপ্তম, শ্রেণীর লোক হল পুণ্য অর্জনকারী ওই সকল লোক যারা পুণ্যের পাশাপাশি কিছু পাপের ও মিশ্রণ ঘটিয়ে ফেলেছে। কিন্তু অবশেষে আল্লাহর রহমত তাদেরকে ঘিরে ফেলেছে এবং মন্দের অভিশাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিয়েছে। রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এরপর এই সাথীরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে বলল, আমি হলাম জিবরাঈল(আ) এবং সে মিকাঈল(আ)।
✔ পবিত্র আল কোরআনে মৃত্যু সম্পর্কিত আয়াতসমূহঃ-
সূরা আল বাক্বারাহ :
আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না।
সূরা আল ইমরান :
আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত।
প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয়।
হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিশ্চিতরূপে শুনেছি একজন আহবানকারীকে ঈমানের প্রতি আহবান করতে যে, তোমাদের পালনকর্তার প্রতি ঈমান আন; তাই আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের পালনকর্তা! অতঃপর আমাদের সকল গোনাহ মাফ কর এবং আমাদের সকল দোষত্রুটি দুর করে দাও, আর আমাদের মৃত্যু দাও নেক লোকদের সাথে।
অতঃপর তাদের পালনকর্তা তাদের দোয়া (এই বলে) কবুল করে নিলেন যে, আমি তোমাদের কোন পরিশ্রমকারীর পরিশ্রমই বিনষ্ট করি না, তা সে পুরুষ হোক কিংবা স্ত্রীলোক। তোমরা পরস্পর এক। তারপর সে সমস্ত লোক যারা হিজরত করেছে, তাদেরকে নিজেদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের প্রতি উৎপীড়ন করা হয়েছে আমার পথে এবং যারা লড়াই করেছে ও মৃত্যুবরণ করেছে, অবশ্যই আমি তাদের উপর থেকে অকল্যাণকে অপসারিত করব। এবং তাদেরকে প্রবিষ্ট করব জান্নাতে যার তলদেশে নহর সমূহ প্রবাহিত। এই হলো বিনিময় আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর আল্লাহর নিকট রয়েছে উত্তম বিনিময়।
সূরা আন নিসা :
তোমরা যেখানেই থাক না কেন; মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দূর্গের ভেতরেও অবস্থান কর, তবুও। বস্তুতঃ তাদের কোন কল্যাণ সাধিত হলে তারা বলে যে, এটা সাধিত হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর যদি তাদের কোন অকল্যাণ হয়, তবে বলে, এটা হয়েছে তোমার পক্ষ থেকে, বলে দাও, এসবই আল্লাহর পক্ষ থেকে। পক্ষান্তরে তাদের পরিণতি কি হবে, যারা কখনও কোন কথা বুঝতে চেষ্টা করে না।
যে কেউ আল্লাহর পথে দেশত্যাগ করে, সে এর বিনিময়ে অনেক স্থান ও সচ্ছলতা প্রাপ্ত হবে। যে কেউ নিজ গৃহ থেকে বের হয় আল্লাহ ও রসূলের প্রতি হিজরত করার উদ্দেশে, অতঃপর মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তবে তার সওয়াব আল্লাহর কাছে অবধারিত হয়ে যায়। আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।
সূরা আল আন-আম :
এটা এ জন্যে যে, আপনার প্রতিপালক কোন জনপদের অধিবাসীদেরকে জুলুমের কারণে ধ্বংস করেন না এমতাবস্থায় যে, তথাকার অধিবাসীরা অজ্ঞ থাকে।
সূরা আত তাওবাহ :
আর আল্লাহ কোন জাতিকে হেদায়েত করার পর পথভ্রষ্ট করেন না যতক্ষণ না তাদের জন্য পরিষ্কারভাবে বলে দেন সেসব বিষয় যা থেকে তাদের বেঁচে থাকা দরকার। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সব বিষয়ে ওয়াকেফহাল।
সূরা ইউনুস :
আর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের একেকজন রসূল রয়েছে। যখন তাদের কাছে তাদের রসূল ন্যায়দন্ডসহ উপস্থিত হল, তখন আর তাদের উপর জুলুম হয় না।
সূরা হুদ :
আর তোমার পালনকর্তা এমন নন যে, জনবসতিগুলোকে অন্যায়ভাবে ধ্বংস করে দেবেন, সেখানকার লোকেরা সৎকর্মশীল হওয়া সত্ত্বেও।
সূরা হিজর :
আমি কোন জনপদ ধবংস করিনি; কিন্ত তার নির্দিষ্ট সময় লিখিত ছিল।
সূরা নাহল :
অনন্তর যারা অজ্ঞতাবশতঃ মন্দ কাজ করে, অতঃপর তওবা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে নেয়, আপনার পালনকর্তা এসবের পরে তাদের জন্যে অবশ্যই ক্ষমাশীল, দয়ালু।
সূরা বনী ইসরাঈল :
যে কেউ সৎপথে চলে, তারা নিজের মঙ্গলের জন্যেই সৎ পথে চলে। আর যে পথভ্রষ্ট হয়, তারা নিজের অমঙ্গলের জন্যেই পথ ভ্রষ্ট হয়। কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কোন রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকেই শাস্তি দান করি না।
সূরা আম্বিয়া :
প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।
সূরা হাজ্জ্ব :
যারা আল্লাহর পথে গৃহ ত্যাগ করেছে, এরপর নিহত হয়েছে অথবা মরে গেছে; আল্লাহ তাদেরকে অবশ্যই উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করবেন এবং আল্লাহ সর্বোৎকৃষ্ট রিযিক দাতা।
সূরা আল আহযাব :
বলুন! তোমরা যদি মৃত্যু অথবা হত্যা থেকে পলায়ন কর, তবে এ পলায়ন তোমাদের কাজে আসবে না। তখন তোমাদেরকে সামান্যই ভোগ করতে দেয়া হবে।
তারা তোমাদের প্রতি কুন্ঠাবোধ করে। যখন বিপদ আসে, তখন আপনি দেখবেন মৃত্যুভয়ে অচেতন ব্যক্তির মত চোখ উল্টিয়ে তারা আপনার প্রতি তাকায়। অতঃপর যখন বিপদ টলে যায় তখন তারা ধন-সম্পদ লাভের আশায় তোমাদের সাথে বাকচাতুরীতে অবতীর্ণ হয়। তারা মুমিন নয়। তাই আল্লাহ তাদের কর্মসমূহ নিস্ফল করে দিয়েছেন। এটা আল্লাহর জন্যে সহজ।
মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে। তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেনি।
সূরা আদ দোখান :
তারা সেখানে মৃত্যু আস্বাদন করবে না, প্রথম মৃত্যু ব্যতীত এবং আপনার পালনকর্তা তাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করবেন।
সূরা মুহাম্মদ :
অতঃপর যখন তোমরা কাফেরদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হও, তখন তাদের গর্দার মার, অবশেষে যখন তাদেরকে পূর্ণরূপে পরাভূত কর তখন তাদেরকে শক্ত করে বেধে ফেল। অতঃপর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ কর, না হয় তাদের নিকট হতে মুক্তিপণ লও। তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে যে পর্যন্ত না শত্রুপক্ষ অস্ত্র সমর্পণ করবে! একথা শুনলে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তোমাদের কতককে কতকের দ্বারা পরীক্ষা করতে চান। যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়, আল্লাহ কখনই তাদের কর্ম বিনষ্ট করবেন না।
ফেরেশতা যখন তাদের মুখমন্ডল ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করতে করতে প্রাণ হরণ করবে, তখন তাদের অবস্থা কেমন হবে?
সূরা আল ওয়াক্বিয়া :
আমি তোমাদের মৃত্যুকাল নির্ধারিত করেছি এবং আমি অক্ষম নই।
এবং তোমরা তাকিয়ে থাক,
তখন আমি তোমাদের অপেক্ষা তার অধিক নিকটে থাকি; কিন্তু তোমরা দেখ না।
যদি তোমাদের হিসাব-কিতাব না হওয়াই ঠিক হয়,
তবে তোমরা এই আত্মাকে ফিরাও না কেন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও ?
সূরা মুনাফিকুন :
আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় সে বলবেঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।
হিন্দু /সনাতন ধর্ম বিশ্বাস : জীবের মৃত্যুর পর জীবাত্মা একদেহ পরিত্যাগ করলে কর্মফল ভোগ করার জন্য অন্য দেহ ধারণ করে এ জগতেই পুনরায় জন্মগ্রহণ করে। যেমন একই ব্যক্তি পুরাতন ছিন্ন বস্ত্র ত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে, সেইরূপ জীবাত্মাও জীর্ণ দেহ ত্যাগ করে নতুন দেহ গ্রহন করে। কর্ম করলেই তার ফল উৎপন্ন হবে, আর কর্মকর্তাকে তা অবশ্যই ভোগ করতে হবে। আর এই কর্মফল ভোগ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মোক্ষপ্রাপ্তি বা জন্ম মৃত্যুরূপ সংসারচক্র থেকে মুক্তি হবে না। আর এরূপ পুনঃপুনঃ জন্ম গ্রহণকেই বলা হয় জন্মান্তরবাদ।গীতায় বলা হয়েছেঃ
“জাতস্য হি ধ্রবো মৃত্যুর্ধ্রুবং জন্ম মৃতস্য চ।
তস্মাদপরিহার্যেহর্থে ন ত্বং শোচিতুমর্হসি।।” (গীতা ২/২৭)
অথ্যাৎ, যার জন্ম হয়েছে তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী; এবং যার মৃত্যু হয়েছে তার জন্মও অবশ্যম্ভাবী। অতএব তোমার কর্তব্য সম্পাদন করার সময় শোক করা উচিত নয়।
বাইবেল : মৃত্যুর পরে শুধু যে জীবন আছে তা-ই নয়, আছে এক চমৎকার অনন্ত জীবন, যা “কেউ চোখেও দেখে নি, কানেও শোনে নি এবং মনেও ভাবে নি” (১ করিন্থীয় ২:৯খ)।
“আমাদের পাপের জন্যই তাঁকে বিদ্ধ করা হয়েছে; আমাদের অন্যায়ের জন্য তাঁকে চুরমার করা হয়েছে। যে শাস্তির ফলে আমাদের শান্তি এসেছে সেই শাস্তি তাঁকেই দেওয়া হয়েছে; তিনি যে আঘাত পেয়েছেন তার দ্বারাই আমরা সুস্থ হয়েছি” (যিশাইয় ৫৩:৫)।
রোমীয় ৪:২৫ পদ বলে, “আমাদের পাপের জন্য যীশুকে মৃত্যুর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল এবং আমাদের নির্দোষ বলে গ্রহণ করবার জন্য তাঁকে মৃত্যু থেকে জীবিত করা হয়েছিল।”
যীশু বলেছেন, “আমিই পুনরুত্থান ও জীবন। যে আমার উপর বিশ্বাস করে সে মরলেও জীবিত হবে। আর যে জীবিত আছে এবং আমার উপর বিশ্বাস করে সে কখনও মরবে না” (যোহন ১১:২৫-২৬)।
অন্যান্য ধর্মমত ও ধর্মবিশ্বাস :
লিম্বো :
লিম্বো খ্রিষ্টধর্মের একটি জনপ্রিয় বিশ্বাস। মধ্যযুগের ধর্মতাত্ত্বিকদের দ্বারা এই মতটি বিকশিত হয়। কিন্তু যথেষ্ট জনপ্রিয় মত হলেও একে রোমান ক্যাথলিক চার্চ কখনও একটি ডগমা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় নি। তবুও চার্চগুলোতে এটাকে জনপ্রিয় ধর্মতাত্ত্বিক মতবাদ হিসেবে ধরা হয়। লিম্বো মতবাদ অনুসারে কোন বাপ্টিজম বা অভিসিঞ্চনের মধ্য দিয়ে না যাওয়া কোন নিষ্পাপ আত্মা যেমন শিশু অবস্থায় মৃতের নিষ্পাপ আত্মা, যিশুখ্রিষ্টের জন্মের পূর্বে মৃত কোন নিষ্পাপ ব্যক্তির আত্মা অথবা যারা অভিসিঞ্চনের পূর্বেই মারা গেছেন তাদের আত্মা স্বর্গ বা নরক কোথাও অবস্থান করে না। তাই এই আত্মারা না ইশ্বরদর্শন লাভ করে, না কোন শাস্তিপ্রাপ্ত হয়। কারণ তারা কোন ব্যক্তিগত পাপে পাপী নন কিন্তু অভিসিঞ্চিত না হবার কারণে তারা জন্মগত পাপের বোঝাও বহন করেন। তাই তারা সময়ের শেষ হবার আগ পর্যন্ত একটি প্রাকৃতিক সুখের অবস্থায় থাকবেন, কিন্তু অতিপ্রাকৃতিক সুখ তারা লাভ করবেন না। কিছুকিছু ক্ষেত্রে লিম্বোকে একটি মধ্যবর্তী অবস্থা বা বন্দী অবস্থা বলা হয়েছে।
পারগেটরি :
পারগেটরি এর ধারণাটি বিশেষভাবে ক্যাথলিক চার্চের সাথে সম্পর্কিত। ক্যাথলিক চার্চ অনুসারে, যারা ঈশ্বরের অনুগ্রহ ও বন্ধুত্বপ লাভ করে মারা গিয়েছেন, কিন্তু সম্পূর্ণভাবে শুদ্ধ হননি তাদের পরিণতি হিসেবে চিরমুক্তি নির্ধারিত হয়েছে। কিন্তু মৃত্যুর পর তাদেরকে একটি পরিশোধন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যাতে তিনি স্বর্গে গমন করার জন্য প্রয়োজনীয় পবিত্রতা লাভ করতে পারেন। আর এই শোধন প্রক্রিয়া পাপাত্মাদের শাস্তির প্রক্রিয়া থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। কিছু জায়গায় পারগেটরিকের জায়গায় "ক্লিন্সিং ফায়ার" বা "পরিষ্কারক অগ্নি" শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
অ্যাংলো-ক্যাথলিক ট্রেডিশনের অ্যাংলিকানগণও এই বিশ্বাসকে ধারণ করেন। মেথোডিজম মতবাদের উদ্ভাবক জন ওয়েসলি মৃত্যু এবং মৃত ব্যক্তির পুনরুত্থানের মধ্যে একটি মধ্যবর্তী অবস্থার ধারণায় বিশ্বাস করতেন যেখানে "আত্মার মাঝে পবিত্রতা বৃদ্ধি পাবার" একটি সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু মেথোডিজম আনুষ্ঠানিকভাবে এই মতবাদকে স্বীকৃতি দেয় না। তারা এই মধ্যবর্তী অবস্থা এবং প্রার্থনার মাধ্যমে এই অবস্থায় থাকা মৃত ব্যক্তিকে সাহায্য করার নীতিকে অস্বীকার করে।
( তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:১৭