বলা বাহুল্য এ কথা বিদিত যে, শয়তান স্বভাবসুলভ কারণেই শয়তান। আর বলা হয়ে থাকে , প্রাণ পণ চেষ্টায় তবে মানুষ।
আসলে মানুষের সাথে শয়তানের তুলনা চলে না। মানুষ শব্দের বিশেষ্য করলে দাঁড়ায় : মানব জাতি ,একজন অনুভূতিশীল ব্যক্তি,পরিণত বা প্রাপ্তবয়স্ক।শুধুমাত্র দুপায়ে ভর দিয়ে চলে এবং দলবদ্ধভাবে সামাজিক জীবন যাপন করে বলেই এরা মানুষ নয় বরং চিন্তার ক্ষমতা এবং জটিল ও বিশদ ভাষার ব্যবহার এদেরকে প্রাণীজগতের মধ্যে স্বকীয় করে তুলেছে। এখন কথা হলো, চিন্তার ক্ষমতা টা কি? বহুবিধ ভাষার আদানপ্রদানই বা কি?
আসলে চিন্তা হলো মানুষের অনেক কর্ম এবং মিথস্ক্রিয়ার কারণ, শারীরিক এবং আধিবিদ্যক উদ্ভব, প্রক্রিয়াসমূহ, এবং প্রভাব বোঝার চেষ্টা ভাষাবিদ্যা, মনোবিজ্ঞান, স্নায়ুবিজ্ঞান, দর্শন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জীববিদ্যা, সমাজবিজ্ঞান এবং বোধ বিজ্ঞান তথা সর্বপরি একটি আপেক্ষিক ও জৈবিক কর্মশালা।
যদিও চিন্তা করা মানবতার একটি অপরিহার্য কার্যকলাপ, তবুও মজার ব্যাপার হলো একে সংজ্ঞায়িত বা এটা বোঝার কোনো সাধারণ ঐক্যমত্য নেই।চিন্তা করার ফলে সে তার অনুভূত অভিঙ্গতা দ্বারা জানা, ব্যাখ্যা,শেখা ও বুঝতে সহায়তা করে। চিন্তা আসলে একক ভাবনার অংশ হওয়া উচিত। যেমনঃ "আমি ভেবেছিলাম, সেখানে যাব না "। এখানে চিন্তার মূল থিম হলো "না "। তারপরও চিন্তা অনেক সময় সামষ্টিকতায় রূপ নেয়। সেক্ষেত্রে মতামত, বাধ্য করা, বশ করা, প্রভাবিত করা ইত্যাদি প্রাধান্য পায়। যেমনঃ যেতেই হবে, যাওয়া উচিত, যাওয়া ভালো ইত্যাদি। চিন্তার তাই সার্বজনীন একক ব্যাখ্যা দেওয়া দুরুহ। চিন্তা মানে শুধু ভালো মন্দের পার্থক্য নয়, চিন্তা হলো এমন এক মিথস্কিয়া যা আমাদেরকে আলোড়িত করে।
ভাষায় ব্যবহারও এমনই।
তাই চিন্তা ও এর প্রয়োগিক ক্ষেত্র হলো , একটি ধারণার উপর বিবেচনা বা ধারণার প্রতিফলন।
তাই মানুষের সাথে সৃস্টিগত কারণে মননে অন্যান্য Being /জীবদের কোনও তুলনায় চলে না।
আর শয়তান কে? সাধারণভাবে ধরা হয় যে শয়তান উৎপথগামী, অবিশ্বাসী এবং অন্যান্যদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। অবশ্য বিভিন্ন ধর্মে শয়তান তে অবাধ্য হিসাবে দেখা হয়েছে। শয়তানকে যদি সত্তা ও adjective উভয়ই ধরি, তবে সারবস্তু টা কেমন হবে সঙ্গায়িত করার ক্ষেত্রে?
প্রথমতঃ শয়তান কে সত্তা হিসাবে ধরলেও এটা কোন জৈব সত্তা নয়। কারণ সাধারণভাবে একে দেখা যায় না, এর আহার নিন্দ্রার প্রয়োজন পড়ে না; তাই সার্বিক ভাবে বলতে গেলে এ এক অতিমানবীয় সত্তা। সুতরাং সৃষ্টি গত কারণে এ এক ভিন্নধর্মী সত্তা যা মানব সত্তার সাথে সম্পূর্ণরূপে বিপরীতমুখী।
দ্বিতীয়তঃ শয়তান যদি মানবের একধরনের মননের মিথস্ক্রিয়ার ফল হয়ে থাকে তবে তা প্রথমত উৎপত্তিগত ভাবে চিন্তনের পর্যায়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে পৃথিবীর সকল মানুষই শয়তান।
তৃতীয়তঃ শয়তান যদি সত্তা ও Adjective দুটির সামষ্টিক রূপও হয় তবে জৈবিক ও মানবিকগত ভাবেও এটা মানবের বিপরীতধর্মী।
তাই আমরা কি শয়তান?
অথবা
আমারা কে না শয়তান?
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ২:৫৪