ইসলাম তত্বগত ভাবে শ্রেণীভেদ মানে না কিন্তু মুঘল আমলে ভারতে প্রচুর শ্রেণী তৈরী হয়েছিল | মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক শ্রেণী ভেদ তৈরী হয়েছিল | সুধীর চক্রবর্তীর লেখা বাউল ফকির কথা বলে একটি বইতে এই শ্রেনিভেদের কথা লেখা আছে | সেখান থেকেই কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি |
মুসলিম সমাজে উচ্চবর্ণ বলতে বোঝায় আশরাফ দের আর নিম্নবর্ণ বলতে বুঝায় আতরাফ দের | আশরাফ আর আতরাফ এই দুই মূল ভেদ |
আশরাফদের মধ্যেও অনেক ভেদ আছে | আশরাফ বা শরিফ আদমী তারাই যারা আরব পারসিক বা আফগান খান্দান থেকে এসেছে | অথবা উচ্চ বর্ণের হিন্দুরা ধর্মান্তরিত হয়ে আশরাফ হন | আর ধর্মান্তরিত দেশী মুসলিমরা আতরাফ |
আশরাফদের মধ্যেও বহু ভেদ আছে | সৈয়দরা সবচেয়ে উঁচু বা মান্য কারণ তারা নবীর কন্যা ফতিমার বংশধর | তার পর আছে যথাক্রমে শেখ , মুঘল আর পাঠান | আতরাফদের মধ্যেও ভেদ ছিল | তবে ওদের মধ্যে যারা সবচেয়ে নিম্নবর্ণের : জোলা, নিকিরি, কাহার,নলুয়া , বেদে : এদের বলা হত অর্জল বা রাজিল |
মুঘল আমলে দেশী মুসলমান বা আতরাফদের উচ্চপদে নিয়োগ হত না | এবিষয়ে প্রমান পাওয়া যায় ইমতিয়াজ আহমেদের বই থেকে :
নিজাম উল মুলুক জুনায়িদীর সুপারিশে সম্রাট ইলতুতমিশ যখন জামাল মারজাককে কনৌজের এক উচ্চ পদে নিয়োগ করলেন তখন আপত্তি জানালো আজিজ বাহরুজ নাম এক উচ্চ আমলা , কারণ জামাল নিম্নবর্ণজাত | সঙ্গে সঙ্গে ইলতুতমিশ সেই নিয়োগ বাতিল তো করলেনই উপরন্তু নিজাম উল মুলুক-এর বংশ পরিচয় নিয়ে তদন্ত করলেন | তদন্তে ফল বেরুলো যে নিজাম জাতিতে জোলা | সঙ্গে সঙ্গে নিজাম বরখাস্ত হলেন |
এইরকম জাতপাতের নির্দয়তা মুসলিম সমাজে মুঘল আমলে ছিল | ভারতের উর্দুভাষী মুসলমানরাই নিজেদের উচ্চবর্ণের মনে করত | আর বাংলাভাষী মুসলমানদের ছোটলোক বলে মনে করত | এর প্রমান পাওয়া যায় দেওয়ান খান বাহাদুর ফজলের রচিত অরিজিন অফ মুসলমানস অফ বেঙ্গল গ্রন্থে | আর নবাব আব্দুল লতিফের উক্তিতে | লতিফ বাংলাভাষী দেশী মুসলিমদের ছোটলোক বলেই জানতেন |
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৬ রাত ৯:০৬