’’আমাদের পাশের বাসার আপা বলছিল এ ঘটনাটি। সে যখন ঘটনাটি আমার বোনের কাছে বলছিল তখন কান্নায় ভেঙ্গে পরছিল। আমি আমার ঘর হতে শুনতে পেলাম এক অসহায় মায়ের আহাজারির কথা। বৃদ্ধ মহিলাটি তার ফুফু লাগে। তাদের বাড়ি বরিশালে।
উক্ত আপা জানান আমার ফুফু খুব আদর যতœ করে বড় করে তার ফুফাতো ভাইকে। একমাত্র সন্তান। এসএসসি পাশ করার পর দোকানের কাজে ব্যাস্ত থাকে। একসময় আমার ফুফু ধুমধাম করে বিয়ে দেয় ছেলের। ঘরে আসে লাল টুকটুকে সুন্দর একটি বৌ। সবাই বলে এত সুন্দর বউ গো, তোমার ঘর আলো করে দিল। আমার ফুফু খুব আনন্দ পায়। বলে তোমরা সবাই আমার বউমার জন্য দোয়া কর। ২ মাস যেতে না যেতে নানান ভুল ধরতে থাকে আমার ফুফুর। বউটি ঘর নোংরা করে ছেলেকে বলে তোমার মা নোংরা করেছে, তার মা রান্না করে কিন্তু বউটি বলে আমি রান্না করতে করতে কাহিল হয়ে গেলাম। ঘরদোর সব পরিস্কার করে তার মা। কিন্তু বলে আমি এত বড় বাড়ি কিভাবে পরিস্কার করবো। ছেলে সারা দিন কাজ শেষে বাড়িতে ফিরে, আমার ফুফু ছেলেকে আদর করতে গেলে গোপনে বউ শাশুড়ীকে চোখ রাঙ্গানী দেয়। আর বলে আমি এত কাজ আর করতে পারবো না। তোমার মা কোন কাজ করে না, শুধু পাড়া বেড়ায়, তুমি আমাকে বাপের বাড়ী পাঠায়ে দাও, আরও কত কি বলে। আমার ভাইটি বউকে বুঝায় কিন্তু বউ কিছুতেই শুনে না। সুন্দরী বউ বলে তাকে আর কিছু বলেও না। একদিন বউ বলে তোমার মাকে অন্য কোথাও রেখে আস, নাহলে বৃদ্ধ নিবাসে রেখে আস, আমি আর তোমার মায়ের সাথে থাকবো না। ভাইটি আমার ফুফুকে আমাদের বাড়ী রেখে যায়। কয়েক মাস পর আবার কিভেবে তাদের বাড়ী নিয়ে যায়। আমার ফুফাতো ভাই যখন বাড়ী হতে কাজে যায় তখন আমার ফুফুকে একটি নারিকেলের মালা করে একবার ভাত দিত। ভাত চাইলেও আর আমার ফুফুকে ভাত দিত না। এভাবেই চলতে থাকে। আমার ফুফাতো ভাইএর এক ছেলে হয়। সে আস্তে আস্তে বড় হয়। নাতী খুবই ভক্ত দাদীর। দাদীও খুব ভালবাসে নাতীকে। কিন্তু দাদীর কাছে বেশী ভিড়তে দিত না তার ছেলের বৌ। একদিন নাতী বলে, মা তুমি আমাদের সাথে দাদীকে খেতে দাও, আরো ভাত দাও দাদীকে। কিন্তু তার মা কোন কথা শুনে ন্।া এভাবে চলতে থাকে। উক্ত ছেলেটি ছোট হতে বড় হয়। কিন্তু ততদিনে তার দাদী আর এই পৃথিবীতে নেই।
একদিন মহাধুমধাম করে আমার ফুফাতো ভাই তার ছেলেকে বিয়ে করায়। বিয়ের পরের দিন ছেলে বউকে ডেকে কাছে আনে এবং বলে তুমি এই নারিকেলের মালা করে আমার মাকে ভাত দাও। তার বৌ বলে আমার পরিবার এ শিক্ষা দেয় নাই। মা তো মা..ই। আমি মাকে এ নারিকেলের মালা করে ভাত দিতে পারবো না। কিন্তু স্বামীর পীড়াপীড়িতে একাজ করতে বাধ্য হয়। যখন বউ নারিকেলের মালা করে তার শ্বাশুড়ীকে ভাত দিতে গিয়েছে,,,তখন আমার ফুফাতো ভাইএর বউ কান্না করে আকাশ বাতাস এক করে ফেলল,,,আর বলতে লাগলো,,,তোকে কি এজন্য এত কষ্ট করে মানুষ করেছি? সেই সময় ছেলে তার সামনে এসে বলল মা আমি এদিনটির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তুমি যখন আমার দাদীর সাথে খারাপ আচরণ করতে তখন আমার বাবারও খারাপ লাগতো, কিন্তু সে মুখ বুজে সহ্য করতো কিছু বলতো না তোমাকে। আমি খুবই কষ্ট পেতাম তোমার আচরণে। তুমি আমায় লেখাপড়া শিখিয়েছো,,,আমি তোমার সাথে খারাপ আচরণ করবো একথা ভাবলে কি করে? ছেলের বউও এগিয়ে এসে বলে আপনি আমাদের মা, আপনি আমাদের দোয়া করবেন, আমরা সবাই মিলে ভালভাবে এই সংসারে থাকতে চাই।
আমার ফুফাতো ভাইএর বউ কান্না করতে থাকে, আর বলে, আমি তো আগে বুঝতে পারি নাই, তোর দাদীর সাথে কত খারাপ ব্যবহার করেছি। ’’
যখন এই কথাগুলি শুনছিলাম তখন সিনেমার মত শুনাচ্ছিল, তিনি যেভাবে আরো হৃদয় বিদারক করে বলছিলেন আমি সেভাবে লিখতে পারলাম না।
আমাদের চারপাশে কত মা যে নির্যাতিত হচ্ছে, অবহেলার শিকার হচ্ছে, কত বেলা যে না খেয়ে কাটিয়ে দিচ্ছে, কত মাকে যে বৃদ্ধ নিবাসে পাঠিয়ে দিচ্ছে তার খবর কে রাখে। যে সন্তান তার মাকে বৃদ্ধ নিবাসে রেখে ঘরে ফিরার জন্য সামনের দিকে পা ফেলে, সে কি পেছন ফিরে একটু দেখে না তার মায়ের মুখে কত কষ্ট, তারপরও হাসিমুখে সন্তানকে বলে ভাল থাকিস বাবা। ধিক সেই সব সন্তানদের।
হায়রে সন্তান! যে সন্তানকে মা এত কষ্ট করে বড় করলো সে উড়াল দিল শহরে/বিদেশে,,,আর মাকে দেখতে আসে না, মার খোঁজও রাখে না, কাছে থেকেও আবার মাকে বোঝা মনে করে। কিন্তু কেন????