প্রাচীন মিশরীয় একটি চিত্রলিপিতে দেখতে পাওয়া যায়; দুটি সিংহ পরস্পর বিপরীত মুখো হয়ে বসে আছে এবং তাদের মাঝে একটি সূর্য গোলকের অবস্থান। এই সিংহদুটিকে বলা হয়ে থাকে সিংহ দেবতা। এই সিংহ দুটির- একটির নাম গতকাল এবং অপরটির নাম আগামীকাল। মাঝের সূর্য গোলকটিকে উচ্চতর শক্তির আধার হিসাবে মানা হয়ে থাকে। বস্তুত সিংহ দেবতার এই চিত্রলিপিটি শাশ্বত বর্তমানকেই প্রকাশ করে থাকে। অথচ পরবর্তীতে এই চিত্রলিপিটি গুপ্তদর্শন চর্চায় এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে শুরু করে।
তথাকথিত সিংহ দেবতার অন্যতম রহস্যময় এবং জনপ্রিয় এই চিত্রলিপিটিতে নাকি বামের পশ্চিম দিকে মুখ করে বসে থাকা সিংহটি গতকাল এবং ডানের পূর্ব দিকে মুখ করে বসে থাকা সিংহটি আগামীকাল প্রকাশ করে। এর পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা এখানেই শেষ। যদিও এর কোন সঠিক ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি; তথাপি কোন আধিবিদ্যক, আধ্যাত্মিক অথবা গুপ্তজ্ঞানের কোন কিছুই এতে প্রদান করা হয়নি।
১৯৫১ সালে ডি লুবিজ তাঁর সিম্বোল এন্ড দ্যা সিম্বোলিক বইতে চিত্রলিপিটি সম্পর্কে একটি সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। লুবিজের মতে- সূর্য গোলকটি সিংহ দুটির মাঝে পুরোপুরিভাবে সমান ভারসাম্য বজায় রেখেছে, যা সময়ের বাইরে শাশ্বত বর্তমান মুহূর্তকেই প্রকাশ করছে। সূর্য গোলকটি নিজেই গতকাল এবং আগামীকালের মাঝে এক আত্মিক বন্ধনের ভারসাম্য প্রতীক হিসাবে নিজেকে প্রকাশ করছে এবং পুরোপুরি কেন্দ্রীয়ভাবেই এর অবস্থান। সময় বিগত হবে, আগামীর জন্য অতীতের নিরিখে নব প্রত্যয়ে, নব উদ্যমে, নব শক্তি নিয়ে আজকের বেঁচে থাকা; এটাই শাশ্বত সত্য। আর এই বাস্তবতাকেই নিছক এই চিত্রলিপিটিতে তুলে ধরা হয়েছে। গুপ্ত মতবাদের কোন কিছুই এতে প্রকাশিত হয়নি।
বর্তমানে গুপ্তদর্শন চর্চায় যদিও এর প্রচার লক্ষণীয় কিন্তু প্রাচীন অদ্বৈত আধ্যাত্মিক শিক্ষাদানে এর বহুল ব্যবহার ছিল। প্রাচীন অদ্বৈত বেদন্ত, বৌদ্ধধর্ম, জৈন, তাওবাদ, সুফিবাদেও এর চর্চা ছিল বলে লক্ষ্য করা গেছে। প্রায় সকল প্রাচীন ধর্ম, আধ্যাত্মিক পদ্ধতি এবং দর্শন চর্চায় এর অর্থবোধক ব্যবহার রয়েছে।
বস্তুত, বর্তমানের চেয়ে বৃহত্তর শক্তিশালী আর কিছুই নেই। আমাদের অবশ্যই অতীত অথবা ভবিষ্যতের কথা ভাবা উচিৎ নয়; কারণ এই দুটির কোনটিরই অস্তিত্ব বর্তমানে নেই। বর্তমানকেই প্রাধান্য দিতে হবে এবং বর্তমান নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে। আজ যা কিছু আছে তাই সব এবং এগুলোই সব সময় থাকবে। বর্তমান সময়কালই অনন্তের এবং বর্তমান মুহূর্তটি একটি বিভ্রমের জগতের শাশ্বত বাস্তবতা; বর্তমানে আমরা যে পৃথিবীতে বাস করি।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৫