আজব! এই দুনিয়া, আজব! এই দুনিয়ার মানুষ; মানুষের মাঝে শুধুই বিরাজ করে ভেদাভেদ।
ভেদাভেদ ধর্ম নিয়েও- ধর্মীয় রীতিনীতি, প্রার্থনাগত নিয়ম-শৃঙ্খলা সবকিছুতেই ভিন্নতা। কিন্তু ভেবে দেখার বিষয় হলো- এইযে এত ভেদাভেদ; অথচ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোর মাঝে গঠনশৈলীগত মিল বিন্যাস বিদ্যমান। পিরামিড কত সহস্রাব্দীর স্থাপত্য শৈলী! পিরামিড নিয়ে রহস্য, জল্পনা-কল্পনা কোনকিছুরই কমতি নেই। অথচ ত্রিভুজাকৃতির এই পিরামিডের সাথে মিল রয়েছে গীর্জা, মন্দির, প্যাগোডা, মসজিদের কাঠামোগত নির্মাণশৈলীর। কোনটা হয়ত গম্বুজ আকৃতির কিন্তু হলেও সেগুলো শীর্ষ থেকে ভূমি পর্যন্ত ত্রিভুজাকারেই বিন্যস্ত। খুব সম্ভবত, পৃথিবীর আদি স্থাপত্যগুলোর মধ্যে পিরামিড সবচেয়ে আদিমতম স্থাপত্য নিদর্শন। এরও বহু পরে নির্মিত হয়েছে বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়। অর্থাৎ মতের অমিল থাকলেও মানুষ তার পবিত্র স্থানগুলোকে ভিন্ন নামে ডাকলেও আকার-আকৃতিতে পার্থক্য করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেনি। এই যেমন- পারেনি HEAVEN or HELL ধারনাতে খুব একটা ভিন্নতা প্রকাশ করতে!
মিশরের আদিমতম সভ্যতার পুরাকীর্তি পিরামিড নির্মাণের বহু বছর পর গৌতম বুদ্ধের আগমন এবং তারও অনেক পরে নির্মিত হয়েছে প্যাগোডা। বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩ অথবা ৪৮০ অব্দে আর পিরামিডের ইতিহাস খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫০০০ বছর আগের। এশিয়ার মধ্যে এক মায়ানমারেই রয়েছে হাজারটা প্যাগোডা! আর এইসব প্যাগোডাগুলোর নির্মাণশৈলীর সাথে মিল রয়েছে পিরামিডের নির্মাণশৈলীর। অথচ মায়ানমারের প্যাগোডাগুলোর নির্মাণ ইতিহাস কিন্তু খুব একটা বেশী পুরাতন নয়! তারপরেও মিল থাকার কারণ কী? নিশ্চয় অনুকরণ বা অনুসরণ নয়! কারণ মানুষ আসলেই তার পবিত্র স্থান এবং অস্তিত্বের স্বরূপে আমূল পরিবর্তন আনতে ইচ্ছা পোষণ করেনি। আধুনিক স্কলারদের পক্ষে আদিম স্থাপত্যশৈলীর ব্যতিক্রম কিছু নির্মাণ না করার কারণ অনুধাবনে অপারগতা থাকলেও যুগে যুগে পুরো পৃথিবী জুড়েই নির্মিত হয়ে আসছে প্রায় একই পিরামিড আকৃতির নির্মাণশৈলী।
মায়ানমারের প্রায় অধিকাংশ বুদ্ধ মন্দির-প্যাগোডা স্থাপিত রয়েছে পাগান বা বাগান রাজ্যে। পাগানে নির্মিত হয়েছিলো প্রায় দশ হাজার পিরামিড আকৃতির মন্দির-প্যাগোডা। কিন্তু দুঃখজনক হলো এগুলোর মধ্যে প্রায় অর্ধেক এখন পর্যন্ত টিকে আছে।
শ্বেসান্ডা প্যাগোডা
রাজা আনাওরাহতা মিনসো ১০৫৭ সালে এটি নির্মাণ করেছিলেন। এটির নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে টেরাকোটা। গম্বুজ থেকে ভূমি পর্যন্ত পিরামিডের মত ধাপে ধাপে এর বিন্যাস।
দহ্ম্মায়ণ গাই মন্দির
পাগানের সবচেয়ে বৃহৎ মন্দির যা নির্মিত হয় ১১৬৭-১১৭০ সালের রাজা নরথুর সময়কালে। কিন্তু রাজার মৃত্যুর পর অজ্ঞাত কারণে এর নির্মাণ বন্ধ হয়ে যায়। মন্দিরটির একটি বিশেষ অংশ ইট দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়।
ঠিক যেমনটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল মিশরের বিখ্যাত খুফুর পিরামিডের একটি বিশেষ অংশ এবং সেটির কারণও অজ্ঞাত রয়েছে আজ অবধি।
বুলেঠি মন্দির
শ্বেসান্ডা প্যাগোডার মতই এটির নির্মাণশৈলী। কিন্তু এখানে রয়েছে মিশরীয় পুরাকীর্তির অবিকল এক পুরাকীর্তি দুটি সিংহের পশ্চাদ্দেশ লাগিয়ে বিপরীত মুখো হয়ে বসে থাকার মূর্তি।
সুলামণি মন্দির
১১৮৩ সালে নরপতিশীথু এই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। এর নির্মাণশৈলীতে রয়েছে ট্রিপটিচ (পাশাপাশি আটকান তিন তক্তার উপর অংকিত ছবি)অর্থাৎ একসারিতে তিনটি দরজা যা অনেক মসজিদ কিংবা গীর্জাতেও দেখা যায় কিংবা দরজা না হলেও উপাসনালয়গুলোর দেয়ালে কিংবা গীর্জায় যেখানে যীশুর মূর্তি স্থাপিত হয় সেখানে এমন ট্রিপটিচ আকারে খোদাই করে ফাঁকা স্থান রাখা হয়।
বাইয়েন নিউউ
প্রায় ১২০০ সালে রাজা আলাউংশীথুর রাজত্বের সময়কালে এটি নির্মিত হয় যার বিন্যাস কৌশলে রয়েছে পিরামিডের বিন্যাসগত মিল। এখানেও রয়েছে ট্রিপটিচগত মিল।
গাওডাও পালিন
পাগানে এটি হচ্ছে দ্বিতীয় বৃহৎতম মন্দির যার নির্মাণ শুরু হয়েছিল রাজা নরপতিশীথুর সময়কালে এবং ১২২৭ সালে রাজা হিটলোমিনলোর সময়কালে শেষ হয়। এর নির্মাণ শৈলীতেও বাইয়েন নিউউর মতই কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে।
আনন্দ মন্দির
গুরুত্বের দিক দিয়ে পাগানে সবচেয়ে বেশী পবিত্র মনে করা হয় আনন্দ মন্দিরকে যা নির্মিত হয়েছিল ১১০৫ সালে রাজা কায়ানযিত্থার সময়কালে।
যদিও, ১৯৭৫ সালের ভূমিকম্পে এইসকল মন্দির-প্যাগোডার বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল; পরবর্তীতে এগুলোর হারানো ঐতিহ্য পুনরায় ফিরিয়ে আনা হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৫৭