স্বপ্নের দেশ মালদ্বীপ। মালদ্বীপের সমুদ্র সৈকতে গড়ে ওঠা শৈল্পিক রিসোর্টগুলোতে দুদন্ড শান্তির অভিপ্রায় আমাদের মাঝে অনেকেরই আছে। আর এই অভিপ্রায় থাকাটা দোষেরও কিছু নয়। দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, তাই জগতটাকে ঘুরে দেখার বাসনা আমাদের সকলেরই থাকবে এটাই চিরন্তন। দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মালদ্বীপ একটি। ২০১৪ সাল পর্যন্ত মালদ্বীপের জিডিপিতে পর্যটন শিল্প থেকে আয় হয়েছে ৪১.৫% এবং ২০১৫-২০২৫ সাল নাগাদ যার প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৩.১%। এখানে বিবেচনার বিষয় হলো মালদ্বীপের এই পর্যটন শিল্পের বিকাশে অনুষঙ্গ হিসেবে মূলত রয়েছে সমুদ্র সৈকত। বাংলাদেশের তুলনায় এছাড়া আর তেমন দর্শনীয় কোন কিছুই মালদ্বীপে নেই। প্রায় ১১১ কিলোমিটার দীর্ঘ পৃথিবীর বৃহত্তর সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের কক্সবাজারের তুলনায় মালদ্বীপের সমুদ্র সৈকত অত্যন্ত ক্ষুদ্রই বলা যেতে পারে। কিন্তু তারপরেও পৃথিবী জুড়ে পর্যটকদের কাছে মালদ্বীপের তুলনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটন শিল্প থেকে আয় হয়েছে মাত্র ১.৯% এবং ২০১৫-২০২৫ সাল নাগাদ যার প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৬.১%। অর্থাৎ ২০২৫ সালে যদি মালদ্বীপের পর্যটন শিল্প থেকে জিডিপিতে অংশ থাকে গড়ে ৩৭.৬% বাংলাদেশের থাকবে তখনও ২.০%। এই সমীক্ষাটি প্রকাশিত হয়েছে ওয়ার্ল্ড ট্র্যাভেল এন্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল এর পক্ষ থেকে ২০১৫ সালে অর্থনীতিতে পর্যটন শিল্পের প্রভাব সম্পর্কিত করা রিসার্চে। যেখানে পৃথিবীর সবকটি দেশের পর্যটন শিল্পের অর্থনৈতিক অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
আমি এখানে শুধুমাত্র বাংলাদেশের সাথে মালদ্বীপের অবস্থানগত পার্থক্যটুকুই তুলে ধরলাম। কারণ সার্কভুক্ত দক্ষিণ এশিয়ার অপর দেশগুলোর তুলনায় মালদ্বীপে শুধুমাত্র সমুদ্র সৈকত ছাড়া বিশেষ আর কোন দর্শনীয় স্থান নেই। এক সমুদ্র সৈকত দিয়েই তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এইযে, পৃথিবীতে বাংলাদেশ এখনও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম; যাকে এখনও অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য বৈদেশিক সাহায্যের অপেক্ষায় থাকতে হয়। অথচ এই দেশের রয়েছে নিজস্ব খনিজ সম্পদ, মানব সম্পদ। রয়েছে গর্ব করার মত পোশাক শিল্প, ওষুধ শিল্প। এক সময় পাটকে বলা হত সোনালী আঁশ তার বৈদেশিক অর্থ উপার্জনের জন্য। কিন্তু সেই ঐতিহ্যবাহী পাট শিল্পকে আমরা শেষ রক্ষা করতে পারিনি অব্যবস্থাপনার কারণে। বর্তমানে পোশাক শিল্পও হুমকীর সম্মুখীন। স্বাধীনতার পর থেকে এই পর্যন্ত গড়ে উঠেনি উৎপাদন মুখী তেমন কোন বড় শিল্প কারখানা। যাও হাতে গোণা কয়েকটি শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে কিন্তু সেগুলো মুখ থুবড়ে পরেছে দুর্নীতি আর সঠিক পরিকল্পনার অভাবে। নাহয় বাদই দিলাম এইসব শিল্প কারখানার কথা। নাহয় তেল, গ্যাস, কয়লা, সিমেন্ট, চিনি, লবন, চিংড়ি কিংবা চুনাপাথর এর কথা বাদই দিলাম। কারণ উন্নত প্রযুক্তির অভাবে সেগুলো থেকে আমরা তেমন সুবিধা করতে পারছিনা। কিন্তু কেন বেহাল দশা পর্যটন শিল্পের ?
বাংলাদেশ ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এমন এক লীলাভূমি যা দিয়ে সবচেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন সম্ভব ছিলো। বাংলাদেশ হতে পারত পৃথিবীতে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। দেশের প্রধান অর্থনীতির উৎস হতে পারত দেশের প্রাকৃতিক লীলাভূমি। কিন্তু স্বদিচ্ছা ও পরিকল্পনার অভাবে তেমনটা হয়ে উঠেনি। বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে কিছু পর্যটন মোটেল গড়ে উঠা ছাড়া তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আর আছে কিছু আবাসিক হোটেল কিন্তু সেগুলো বিদেশী পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার মত কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। নেই পর্যাপ্ত ফাইভ স্টার কিংবা থ্রি স্টার হোটেল। নেই উন্নত মানের প্রমোদ এবং বিনোদনের ব্যবস্থা।
কক্স-বাজারে পৃথিবীর দীর্ঘতম ১১১ কি.মি. দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত রয়েছে। কিন্তু এই কক্সবাজারই যখন মালদ্বীপ কিংবা ভারতের ছোট গোঁয়ার কাছে হার মানে তখন সত্যি আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই থাকেনা। কিংবা শ্রীলংকার মন্দিরগুলো যখন হয়ে উঠে পর্যটনের মূল কেন্দ্রস্থল আর আমাদের বান্দরবনের স্বর্ণ মন্দির, ঢাকেশ্বরী মন্দির, ময়নামতি, মহাস্থানগড় কিংবা বিরিশিরির মতো নয়নাভিরাম হাওড়গুলো যখন বিদেশী পর্যটকের অভাবে খাঁ খাঁ করে কিংবা সোনারগাঁও পানাম নগর অথবা এর জামদানী শাড়ি, নকশি কাঁথা থেকে শুরু করে পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতিদের সংস্কৃতি যখন বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয় তখন সত্যি দেশকে ভালোবাসি এই কথা বলতে লজ্জা বোধ হয়।
এই দেশে যেমন রয়েছে নাফাখুমের মত জলপ্রপাত তেমনি রয়েছে মাধবকুন্ড, হিমছড়ি, কিংবা লাউয়াছড়া, লালাখাল, বিছানাকান্দির মত দর্শনীয় স্থান। রয়েছে হাতিয়া, সন্দ্বীপ, মহেশখালী আর সেন্টমার্টিনের মতো দ্বীপ। কক্সবাজার ছাড়াও আরও সমুদ্র সৈকত আছে পতেঙ্গা ও কুয়াকাটায়। রয়েছে কেওকারাডং এর মতো সুউচ্চ পাহাড়, রয়েছে রাঙামাটির ঝুলন্ত ব্রীজ। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে সবুজ চা-বাগান, রয়েছে মনিপুরী কিংবা চাকমাদের রাস নৃত্য। একদিকে যেমন রয়েছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে লাল বাগের কেল্লা তেমনি অন্যদিকে রয়েছে সুন্দরবনের মত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন যার রয়েল বেঙ্গল টাইগার নিয়ে আমাদের গর্বের শেষ নেই। আম, কাঁঠাল, মোঘল খাবার থেকে শুরু করে দোয়েল, কোকিল কিংবা কৃষ্ণচূড়ার এই দেশে কি নেই ! তবু কেন আমরা পিছিয়ে থাকি আমাদেরই নিকটবর্তী দেশ মালদ্বীপ, ভারত, নেপাল কিংবা শ্রীলংকার কাছ থেকে ?
আমরা হরহামেশাই টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স, ইন্দোনেশিয়ান এয়ারলাইন্স কিংবা ভারতীয় এয়ালাইন্সের চটকদার বিজ্ঞাপন দেখি। দেখি নানা রকম ভ্রমণ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন। কেউ দিচ্ছে স্বল্প খরচে দুই দিন তিন রাতে নেপাল ভ্রমণের সুযোগ কেউবা দিচ্ছে স্বল্প খরচে পাতায় বীচে ঘুরে আসার সুযোগ। কিন্তু সেই আশির দশকের পর কি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কোন বিজ্ঞাপন টেলিভিশনের পর্দা জুড়ে কারও নজরে এসেছে ? কিংবা দেখেছেন কখনও কক্সবাজার কিংবা সিলেটে হানিমুন করার কোন দুর্দান্ত চটকদার বিজ্ঞাপন ?
আমাদেরকে ব্র্যান্ডিং করতে হবে। প্রচার করতে হবে কক্সবাজার পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ সমুদ্র সৈকত কিংবা ম্যানগ্রোভ বনের সৌন্দর্য তুলে ধরতে হবে। পৃথিবীর কাছে আমাদের খাবার, ঐতিহ্য, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি তুলে ধরতে হবে। টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায় ভীন দেশের অনুকরণে রিয়্যালিটি শো কিন্তু দেখা যায়না নিজের সংস্কৃতকে তুলে ধরার কোন প্রয়াস। কক্সবাজারে রয়েছে প্রায় ৪৫০টির মত হোটেল যার বেশিরভাগেই নেই উন্নত আধুনিক ব্যবস্থা। নেই সুইমিং পুল, ক্যাসিনো কিংবা কোন বার। তাহলে বিদেশী পর্যটকরা আকর্ষিত হবে কেমন করে ? নেই পর্যাপ্ত সিকিউরিটি ব্যবস্থা।
অতীতে বাংলাদেশের জন্য বড় একটি সুখবর দিয়েছিলো লোনলি প্ল্যানেট নামের একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। সংগঠনটির মতে বিদেশী পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য পৃথিবীর সেরা দেশ হতে পারে বাংলাদেশ। মূলত তাদের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক পর্যটক তাদের গন্তব্য ঠিক করেন। শুধু বাংলাদশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার আরো কয়েকটি দেশ পর্যটনকে শিল্প হিসেবে গড়ে তুলতে বিশেষ নজর দিয়েছে। বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়নের জন্য ১৯৯২ সালে প্রথম জাতীয় পর্যটন নীতিমালা করা হয়েছিলো। ওই নীতিমালায় বলা হয়, বিদেশী পর্যটকদের আধুনিক ও চিত্তবিনোদনের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হবে। সুন্দরবন ও কক্সবাজারের জন্য নেয়া হবে মহাপরিকল্পনা। বিদেশী পর্যটকদের আগমন ও বহির্গমন সহজ করা হবে। দূতাবাসগুলোতে এ সংক্রান্ত সব তথ্য দেয়া হবে। কিন্তু এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বাস্তবে আসলে তেমন আশানুরূপ কিছুই হয়নি। ২০১০ সালে প্রণীত পর্যটন নীতিমালাটি হালনাগাদ করে জাতীয় পর্যটন নীতিমালা ২০১০ নামে আরেকটি নীতিমালা করেছিলো সরকার। আগের নীতিমালায় যা যা করার কথা ছিলো, তার সবই স্থান পেয়েছে পরবর্তী পরিকল্পনায়ও। কিন্তু কবে নাগাদ সেটি বাস্তবায়িত হবে, তা জানা নেই কারো। এত অবহেলার পরও বাংলাদেশে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে। পর্যটন কর্পোরেশনের তথ্যানুযায়ী ২০০০ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন ১ লাখ ৯৯ হাজার ২১১ জন পর্যটক। ২০০১ সালে বেড়ে হয় এর প্রায় দ্বিগুণ। এরপর টানা কয়েক বছর তা বাড়লেও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ২০১৩ সাল থেকে তা আবার হ্রাস পায়। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের বিপরীতে মোট ১৭ হাজার ৪১১ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। অথচ যা পূর্বের অর্থবছর থেকে ১৫৯ কোটি টাকা কমিয়ে বাজেট ধার্য করা হয়েছে। অথচ যেখানে অর্থনৈতিক ভাবে বিশাল উন্নতির জন্য পর্যটন শিল্পে রয়েছে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা। পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তর ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনকে পর্যটন শিল্পের জন্য বিকশিত করে তোলার বদলে; এখানে কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রকল্প হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। যা জাতি হিসেবে অত্যন্ত দুঃখজনক আমাদের জন্য।
প্রধান প্রতিবন্ধকতা সমূহঃ
১। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দুর্নীতি।
২। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও অরক্ষিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
৩। অনুন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা ও সড়ক দুর্ঘটনা।
৪। বিদেশী হত্যাকান্ড ও জঙ্গি তৎপরাতা বিষয়ক প্রোপাগান্ডা।
৫। অনুন্নত হোটেল ও মোটেল ব্যবস্থাপনা এবং অপর্যাপ্ত বিনোদন ব্যবস্থা।
৫। ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা।
৬। নানাবিধ সামাজিক অপরাধের কারণে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়া।
৭। বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা জনিত সমস্যা।
৮। কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, টেকনাফ, কুয়াকাটা, সুন্দরবনের সমুদ্রসৈকত, রাঙ্গামাটির সুভলং ঝরনা এবং বান্দরবানের শৈলপ্রপাত ও বগা লেক তথা সর্বত্র পরিবেশ দূষণ।
৯। কক্সবাজার ও কুয়াকাটার মতো স্থানে রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোকে এপার্টমেন্ট ব্যবসার অনুমোদন দেয়া।
১০। রাজনৈতিক অস্থিরতা।
উত্তরণের উপায় সমূহঃ
১। পর্যটন বান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পর্যটন কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী তৈরি করতে হবে।
২। ব্র্যান্ডিং ও প্রাচরনা চালানো।
৩। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করণ।
৪। পর্যটন এলাকা জুড়ে লোকজ সংস্কৃতিক মেলা ও উৎসবের আয়োজন।
৫। ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতিক রুচি ভেদে পর্যটন সুবিধার ভিন্নতা তৈরি।
৬। পর্যটন কেন্দ্র ঘীরে পর্যটকদের জন্য সুইমিং জোন, ক্যাসিনো, পানশালা বিশেষায়িত ক্লাব, ইনডোর-আউটডোর স্পোর্টসজোন, পার্টি এন্ড এক্সিবিশন সেন্টার, বহুজাতিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ইত্যাদি গড়ে তুলতে হবে।
৭। সমুদ্র সৈকত জুড়ে স্কুবা ডাইভিং, কারলিং, সার্ফিং, ফিশিং, বোটিং সুবিধা, ওয়াটার রাইডিং, বীচ স্পোর্টস ও পাহাড়ে ক্লাইম্বিং ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৮। জীববৈচিত্র্যকে পুঁজি করে পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করা।
৯। সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে অংশগ্রহণ ও দায়িত্ববোধমূলক পরিবেশবান্ধব পর্যটন সেবা সৃষ্টি করা, যা আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
১০। বার্মিজ মার্কেট নামক তথাকথিত বিদেশী পণ্যের মার্কেটের বদলে দেশীয় পণ্য ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ বাজার সৃষ্টি করতে হবে।
ভৌগোলিক অবস্থান এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে অত্যন্ত সহায়ক। তাই সরকারী ও বেসরকারী বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন যাতে পর্যটন কেন্দ্রগুলোর আধুনিকায়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং পর্যাপ্ত বিনোদন ব্যবস্থা চালু করা যায়। এ জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। পর্যটন স্থানগুলোর সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে জাতীয় পরিকল্পনায় পর্যটন শিল্পকে আগ্রাধিকার প্রদান পূর্বক জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ রাখা, ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পর্যটন পুলিশ গড়ে তোলা, পরিকল্পিত প্রচারণা চালানো, দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা এবং পরিকল্পিত বিনিয়োগ প্রয়োজন। পর্যটন স্থানগুলোর জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো একান্ত আবশ্যক। স্বয়ংসম্পূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অবশ্যই বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের করতে হবে। পর্যটন স্থানগুলোয় উন্নত মানের হোটেল, রেস্টুরেন্টের সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি করা দরকার তেমনি উন্নত সেবাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাছাড়া এ শিল্পে কর্মরত পর্যটক গাইড সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং দক্ষ ও পেশাদার জনবল তৈরি করাও প্রয়োজন। এ জন্য দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ সংশ্লিষ্ট কোর্স চালুর মাধ্যমে তা করা যেতে পারে। পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ঘটাতে পারলে আমরা ব্যাপকভাবে লাভবান হতে পারি।
বাংলাদেশ তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কাজে লাগিয়ে হতে পারে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশের মধ্যে অন্যতম একটি দেশ। আমাদের নিজেদের দেশের স্বার্থেই আমাদের চিন্তা চেতনায় পরিবর্তন আনতে হবে। পর্যটকদের সেই পর্যায় সন্মান দেখাতে হবে যেন তারা নিজ দেশে ফিরে গিয়েও আবারও বাংলাদেশে ভ্রমণে ইচ্ছুক হয়। এই আমরাই যখন নেপালে গিয়ে মুগ্ধ হয়ে ফিরে এসে নেপালের গুণগান গাইতে থাকি; ঠিক যেন তেমনি ইউরোপ থেকে কেউ এসে বাংলাদেশে ঘুরে গিয়ে; নিজ দেশে ফিরে বলতে পারে বাংলাদেশের প্রবালদ্বীপ স্বপ্নের হাতছানি দেয়। তবেই প্রকৃত স্বাধীন দেশ হিসেবে আমরা সার্থক হতে পারব।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ২:১২