একটি দেশের উন্নয়ন এবং মূল চালিকা শক্তি নির্ভর করে দেশটির অর্থনীতির উপর। আর সেই অর্থনীতি টিকে থাকে তার মানি মার্কেট এবং ক্যাপিটাল মার্কেটের উপর। এটা বুঝতে নিশ্চয় বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ হওয়ার প্রয়োজন নেই; যদিও আমাদের দেশে বড় বড় অর্থনীতিবিদের কোন অভাব নেই। এই পোষ্টের আলোচনার বিষয়বস্তু আমাদের দেশের ক্যাপিটাল মার্কেট নিয়ে।
মূলত ২০১১ সালের শেয়ার বাজারে ধ্বসের পর থেকে অসংখ্য মানুষ হতাশায় ভুগছে। শেয়ার ব্যবসায়ী এবং শেয়ার মার্কেটের সাথে জড়িত সবার মনেই এখন একটাই ভাবনা; কীভাবে চলবে জীবন ? যে বেকার ছেলেটি সহায় সম্বল বিক্রি করে শেয়ার বাজার থেকে কিছু আয়রোজগার করে চলছিলো তার এখন ভিক্ষাবৃত্তির দশা হয়েছে। কিছুদিন আগে এক শেয়ার বিনিয়োগকারী মেইল দিয়ে জানালেন, যেন তার সব শেয়ার বিক্রি করে দেয়া হয়। তার মায়ের অপারেশন করাতে টাকা লাগবে। তার সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে। তার পোর্টফলিও চেক করে দেখা যায়, তিনি তার বিনিয়োগের প্রায় নব্বই শতাংশ লোকসানে আছেন। দেখে মনঃটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। যেখানে ব্রোকার হাউজ এবং মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো পর্যন্ত লোকসানে আছে, সেখানে আর বিনিয়োগকারীরা লাভে থাকে কেমন করে ! বাজার ধ্বসের সময়তেও দেখা গেছে বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে এসেছে তাদের বুকে যেন গুলী করা হয় শ্লোগানে। কেউ কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন।
কিন্তু কেন এই দশা হলো ? প্রকৃতপক্ষে শেয়ার বাজার কোন মুদী দোকান নয়, যে এখানে রোজ ব্যবসা করে সংসার চালানো যাবে। কিন্তু আমরা দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগের এই জায়গাটাকে জুয়ার আসর বানিয়ে ফেলেছি। কেউ কেউ আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছে আর কেউ কেউ হয়েছে দেউলিয়া। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ঋণখেলাপী হয়ে গলায় ফাঁস দিতে বাধ্য হয়েছে। অথচ এমনটা কাম্য ছিলোনা। আমাদের দেশের শেয়ার মার্কেট হলো গুজব নির্ভর মার্কেট। এইখানে কোম্পানির অবস্থার উপরে মার্কেটের দর নির্ভর করেনা। আজকে বৃষ্টি হবে মার্কেট চিৎপটাং আবার আজকে বৃষ্টি হবে না মার্কেট এমন ভাবে বাড়তে শুরু করবে; যেন কেউ ফ্যানের রেগুলেটরটা ঘুরিয়ে দিলো।
শেয়ার মার্কেটে বলা হয়ে থাকে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, জেনে ও বুঝে ফান্ডামেন্টাল শেয়ারে বিনিয়োগের কথা। এইজন্য নাকি শেয়ার বাজারে ধ্বস নেমেছে ! তুলনা দিয়ে বলা হয় আমেরিকাতে দুই দুই বার ধ্বস নেমেছিলো। কিন্তু আমেরিকাতে যে ধ্বস নেমেছিলো সেটা একবার তাদের সাবান কোম্পানির উত্থান ও পতনের কারণে এবং ঠিক একই ভাবে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার মন্দার কারণে হয়েছিলো। আর এটাই স্বাভাবিক যে কোম্পানিগুলোর লাভ লোকসানের উপর নির্ভর করে শেয়ার মার্কেট চলবে। কিন্তু বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেটে যে ধ্বস নামল সেটা কোন কোম্পানির ধ্বসের কারণে হলো সেটাই বোধগম্য নয়। আমাদের শেয়ার মার্কেট মূলত গ্রামীণ ফোন, স্কয়ার, এসিআই, ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো ইত্যাদি নামি দামী কোম্পানিগুলোর সূচকের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু এইসব কোম্পানির কোনটিই লোকসানত নয়ই বরং লাভ করে আসছে। তাহলে শেয়ার মার্কেটে এত বড় ধ্বস নামে কীভাবে ?
এবার আসুন, যে কোন কোম্পানি যখন শেয়ার মার্কেটে আসে তারা তাদের নেট এসেট ভ্যালূ হিসাবে একটা ফেস ভ্যালূ নিয়ে আসে। যার থেকে শেয়ারের দাম নীচে থাকা মানে হলো ঐ কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার পথে। কিন্তু বর্তমান শেয়ারগুলোর দাম এবং কোম্পানির অবস্থা দেখে অর্থনীতির কোন সূত্র মেলাতে পারিনা। ধরুন একটি ব্যাংকের শেয়ারের ফেস ভ্যালূ হলো ১০ টাকা কিন্তু এর বর্তমান শেয়ারের দর চলছে ৯ টাকার নীচে। এটা কী করে সম্ভব হয়। অথচ উক্ত ব্যাংক এর মোট এসেট এবং তাদের লাভের হিসাব বলে যে এই ব্যাংকের শেয়ারের দাম হওয়া উচিত ফেস ভ্যালূর চেয়ে কয়েকগুন বেশি। তাহলে সমস্যাটা কোথায় ?
শেয়ার বাজারের ধ্বসের পর তদন্ত করে বলা হয়েছিলো যে, যারা মার্কেট ম্যানুপুলেশনের সাথে জড়িত সেই মূল হোতাদের নাম প্রকাশ করা যাবেনা। পরবর্তীতে যদিও নাম প্রকাশ করা হয় কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোন দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্তা নিতে দেখা যায়নি। বরং তারা এখনও মার্কেটের সাথে খুব ভাল ভাবেই জড়িত রয়েছে। এটা নিশ্চয় কোন কাকতালীয় বিষয় নয় যে, দুই দুইবার ১৯৯৬ আর ২০১১ সালে দেশে শেয়ার মার্কেটে ধ্বস নেমেছে। দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে যারা, তাদের পক্ষে সাফাই গেয়ে শেয়ার মার্কেটের উন্নয়নের জোয়াড়ের কথা বলাটা পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। শত শত মানুষের পেটে লাথি মেরে যারা মোরগ পোলাও খাচ্ছে আজ তাদেরই হাতে পুরো শেয়ার মার্কেট জিম্মি হয়ে রয়েছে। এইসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের চোখের পানি আজ ধীরে ধীরে শোকে নির্বাক হয়ে গেছে। এখনতো শুধু এটাই বলতে ইচ্ছে হয় যে, প্রণোদনার নামে যে প্যাকেজ ধরিয়ে দেয়া হয়েছে, সেটা এখন এমনই এক পর্যায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এইসব অসহায় মানুষদেরকে, তাদের জন্য এখন লুব্রিকেন্ট ব্যবহার না করলেও চলে।
যাই হোক, যারা জুয়ার ফাঁদ পেতে বসে আছে শুধু তাদের দোষ দিলেইত আর হবেনা। দোষটা সামগ্রিক ভাবে বিনিয়োগকারীদের উপরেও বর্তায়। দেখা যায়, আজকে কোন শেয়ারের দাম বাড়বে, কালকে বাড়বে কোনটার এইভাবে খবর নিয়ে আমরা বিনিয়োগ করি। কেউ কেউতো এতই বড় জ্যোতিষ যে বলে দিতে পারে কোন শেয়ারের দাম কতদিনের মধ্যে ঠিক কর বাড়বে কিংবা কমবে। আর আমরাও ঠিক ওইসব শেয়ারে বিনিয়োগ করে শেয়ার বাজারে গাড়ি নিয়ে ঢুঁকে সাইকেল হাতে ফেরত চলে আসি। আর এই সুযোগটাই নেয় যারা বাজার নিয়ে জুয়া খেলে। এভাবেই মার্কেট ম্যানুপুলেশনের সুযোগ আমরা নিজেরাই করে দেই। ভাল ডিভিডেন্ট দেয়ার পরেও কোন কোম্পানির শেয়ারের দর না বাড়লেও বেড়ে চলে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া কোম্পানির শেয়ারের দর। তাছাড়া এমনও দেখা যায় এমন নামসর্বস্ব কোম্পানির নিত্যনতুন আইপিওতে অন্তর্ভুক্তি। এই ক্ষেত্রে সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং ডিএসই ও সিএসই র ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ !!
তবে, অবস্থা যেমনই হোক না কেন; এই অবস্থা থেকে একজন সাধারণ বিনিয়োগকারীর উত্তরণের পথ হলো মার্কেট সম্পর্কে ধারণা রাখা। বিনিয়োগের আগে কোম্পানি সম্পর্কে ধারণা নেয়া। এনালাইসিস করা। যদিও এনালাইসিস করে বলা সম্ভব নয় যে কোন শেয়ারের দাম বাড়বে আর কোন শেয়ারের দাম কমবে তথাপি অন্তত এইটুকু বোঝা সম্ভব হবে কোন শেয়ারটির দর কমতির পথে আর কোনটির বৃদ্ধির পথে। এই এনালাইসিস থেকে অন্তত শেয়ার ক্রয় এবং বিক্রয় সম্পর্কে ধারণা করা যাবে।
এনালাইসিসের মাধ্যমে ট্রেড করার সঠিক ধারণা পাওয়া যেতে পারে। এনালাইসিস মূলত ৩ প্রকারঃ
১। ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস
২। টেকনিক্যাল এনালাইসিস
৩। সেন্টিমেন্টাল এনালাইসিস
আমি এই পোষ্টে শুধুমাত্র টেকনিক্যাল এনালাইসিস নিয়ে আলোচনা করবো। টেকনিক্যাল এনালাইসিস মূলত ডাটা এবং চার্ট নির্ভর। টেকনিক্যাল এনালাইসিসে প্রাইসের মুভমেন্টের ওপর ভিত্তি করে ট্রেড করা হয়। মূল বিষয় হলো এখানে পূর্বের প্রাইস মুভমেন্ট, বর্তমানের প্রাইস মুভমেন্ট এবং ভবিষ্যতের প্রাইস কেমন হবে সে সম্পর্কে ধারনা অর্জন করা যায়।
টেকনিক্যাল এনালাইসিস এর ৩ টি জনপ্রিয় চার্ট হলোঃ
১। লাইন চার্ট
২। বার চার্ট
৩। ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট
এই পোষ্টে আমি বহুল ব্যবহৃত ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট নিয়ে আলোচনা করবো।
১৮ শতকে জাপানী চাল ব্যবসায়ী মুনেহিসা হোম্মা চালের ব্যবসা করতে গিয়ে ক্যান্ডেলস্টিক এর প্রচলন করেন। যা ধীরে ধীরে সমগ্র জাপানে একসময় দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। পরবর্তীতে স্টিভ নেলসন এক জাপানী চাল ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ক্যান্ডেলস্টিক সম্পর্কে জেনে রিসার্চ করা শুরু করেন এবং পরবর্তীতে ক্যান্ডেলস্টিক ১৯৯০ এর দিকে পুরো পৃথিবী জুড়ে জনপ্রিয়তা পায়।
ক্যান্ডেলস্টিক সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণাঃ
-> যেকোনো টাইমফ্রেমে ব্যবহার করা যায়। এমন কি দিন, ঘণ্টা বা কয়েক মিনিট’এর জন্যও।
-> এটি ব্যবহার করা হয় নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে দামের উঠা-নামা দেখানোর জন্য।
-> এই ক্যান্ডেল তৈরি হয় নিদির্ষ্ট সময়সীমার ওপেন, হাই, লো এবং ক্লোজিং প্রাইস দিয়ে।
-> ক্লোজিং প্রাইস যদি ওপেন প্রাইসের উপরে হয়, তাহলে একটি ফাঁকা (সাদা) ক্যান্ডেলস্টিক দেখা যায়।
-> ক্লোজিং প্রাইস যদি ওপেন প্রাইসের নীচে হয়, তাহলে একটি ভর্তি (কালো) ক্যান্ডেলস্টিক দেখা যায়।
-> ফাঁকা বা ভর্তি জায়গাটাকে “রিয়েল বডি“ বা শুধুই “বডি” বলা হয়।
-> বডির উপরে যে সরু লেগ গুলি দেখা যায়, সেগুলোকে “শ্যাডো“ বলে।
-> বুল ক্যান্ডেলটি শুরু হয়েছে ছবির ওপেন পয়েন্টে।
-> তারপর প্রইস নীচে নেমে লো পর্যন্ত গিয়েছে।
-> তারপর প্রাইস উঠতে উঠতে হাই পর্যন্ত উঠেছে।
-> তারপর হাই থেকে নেমে প্রাইস ক্লোজ হয়েছে।
-> পরবর্তীতে পড়ার আগে বিয়ার ক্যান্ডেলটা প্রাইস ওপেন হয়ে হাই পয়েন্টে গিয়েছে। তারপর লো পয়েন্টে এসে আবার উপরে উঠে ক্লোজ হয়েছে।
ক্যান্ডেলস্টিক ২ প্রকারের হয়ঃ
বুল ক্যান্ডেল -যদি ক্লোজিং প্রাইস ওপেন প্রাইসের উপরে থাকে।
বিয়ার ক্যান্ডেল - যদি ক্লোজিং প্রাইস ওপেন প্রাইসের নীচে থাকে।
২ টা ক্যান্ডেলই ওপেন, হাই, লো এবং ক্লোজ প্রাইস দেখায়। এছাড়াও ক্যান্ডেলে চিকন ও প্রশস্ত অংশ আছে। চিকন অংশটাকে শ্যাডো বলে। শ্যাডো দেখলে বুঝে নিতে হবে যে, প্রাইস সেই পর্যায়ে গিয়ে ফেরত এসেছে। প্রশস্ত অংশটিকে বডি বলে। বডি দেখায় যে, প্রাইস কোথা থেকে শুরু হয়ে কোথায় যেয়ে থেমেছে।
ক্যান্ডেলস্টিক বডির আচরণ
বডি যত লম্বা হয় লেনদেন ততোই ভালো হয়। এটির মাধ্যমে বুঝানো হয় এই পরিধিতে ট্রেডাররা ভালোই লেনদেন করছে। একইভাবে, একটা ছোট বডি বোঝায় যে, এই লেনদেন তেমন একটা ভাল হচ্ছে না।
-> লম্বা সাদা বডি ক্যান্ডেলস্টিক ইঙ্গিত করে সাধারনত দাম বৃদ্ধি পাওয়াকে।
-> লম্বা কালো বডি ক্যান্ডেলস্টিক ইঙ্গিত করে সচরাচর দাম কমে যাওয়াকে।
ক্যান্ডেলস্টিক লেগ/শ্যাডো
-> নীচের শ্যাডো সেশান লো বোঝায়।
-> উপরের শ্যাডো সেশান হাই বোঝায।
-> লম্বা শ্যাডো ইঙ্গিত দেয় যে ট্রেড ওপেন এবং ক্লোজ হবার পূর্বে মাকের্টে প্রচুর পরিমাণে বাই ও সেল ছিলো।
-> ছোট শ্যাডো ইঙ্গিত দেয় যে ট্রেড ওপেন এবং ক্লোজ হরার পূর্বে মাকের্টে কম পরিমাণে বাই ও সেল ছিলো।
স্পিনিং টপ ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
-> স্পিনিং টপ/রিভার্স ক্যান্ডেলস্টিকের লম্বা আপার এবং লোয়ার শ্যাডো এবং ছোট রিয়েল বডি হয়।
-> এদের প্যাটার্ন থেকে অনেকটা বোঝা যায় যে ক্রেতা এবং বিক্রেতারা উভয়েই মার্কেট নিয়ে কি ভাবছে সেই সময়ে।
-> আপট্রেন্ডের সময়ে স্পিনিং টপ/রিভার্স বোঝায় যে মার্কেটে ক্রেতা কমে যাচ্ছে এবং এটি একটি রিভার্সালের দিকে ইঙ্গিত করে।
-> ডাউনট্রেন্ডের সময়ে স্পিনিং টপ/রিভার্স বোঝায় যে মার্কেটে বিক্রেতা কমে যাচ্ছে এবং এটি একটি রিভার্সালের দিকে ইঙ্গিত করে।
যেসব ক্যান্ডেলে বড় আপার শ্যাডো এবং লোয়ার শ্যাডো থাকে এবং ছোট বডি থাকে। বুল অথবা বিয়ার বডি যেটাই হোক, সেটা তেমন প্রয়োজনীয় না। স্পিনিং টপ বায়ার ও সেলারের মধ্যে দ্বিধা চলছে বুঝায়।
স্পিনিং টপে শ্যাডো ইঙ্গিত করে যে বায়ার ও সেলার দুজনেই প্রাইস নিজের দিকে টেনে নিতে সক্ষম হয়েছিলো কিন্তু শেষে প্রাইস ওপেনের কাছাকাছি ক্লোজ হয়েছে। মানে বুল ও বিয়ার কেউই সেই পিরিওডে জয়লাভ করতে পারেনি।
যদি স্পিনিং টপ আপট্রেন্ড অথবা ডাউনট্রেন্ডের শেষে ফর্ম করতে দেখা যায়, তার মানে মার্কেটে পর্যাপ্ত পরিমানে বায়ার অথবা সেলার নেই। আর তা মার্কেট রিভার্স করতে পারে তার ইঙ্গিত করে।
মারোবোজু
মারোবোজুর কোন শ্যাডো থাকে না। হাই এবং লো, ওপেন ও ক্লোজ প্রাইসের সমান থাকে।
বুলিশ মারোবোজু
ওপেন = লো
ক্লোজ = হাই
এটি ইঙ্গিত করে যে বুলরা পুরো পিরিয়োডটায় রাজত্ব করেছে। এটি যখন দেখা যায় তখন বুলিশ ট্রেন্ড সম্প্রসারণ অথবা বুলিশ রিভার্সালের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে।
দোজি
দোজির সাধারনত ওপেন ও ক্লোজ প্রাইস অভিন্ন হয়ে থাকে অথবা এদের বডি খুব ছোট হয়ে থাকে। দোজি বুল ও বিয়ারের মধ্যে বিবাদের ইঙ্গিত করে থাকে। প্রাইস উপরে অথবা নীচে যেতে সক্ষম হয় কিন্তু ক্লোজ হয় ওপেনের কাছে। ফলাফল শূণ্যতে গিয়ে দাঁড়ায়।
চার্টে আমরা সাধারনত ৪ ধরনের দোজি দেখতে পাই।
যখন দোজি ফর্ম করে তখন আগের ক্যান্ডেলগুলোর দিকে ভালভাবে নজর দিতে হবে। বুলিশ মুভমেন্টের পরে যদি দোজি ফর্ম করতে দেখা তাহলে বুঝতে হবে যে, বায়াররা ক্লান্ত হয়ে গেছে আর রিভার্সাল হতে পারে। যদি বিয়ারিশ মুভমেন্টের পরে দোজি ফর্ম করতে দেখা তাহলে বুঝতে হবে যে, সেলাররা ক্লান্ত হয়ে গেছে আর রিভার্সাল হতে পারে।
হ্যামার ও হ্যাঙ্গিং ম্যান
হ্যামার এবং হ্যাঙ্গিং ম্যান দেখতে এক রকম মনে হয় কিন্তু পূর্বের প্রাইস অ্যাকশনের উপর নির্ভর করে ভিন্ন জিনিস বোঝায়।
হ্যামার
হ্যামার একটি বুলিশ রিভার্সাল প্যাটার্ন। কিন্তু হ্যামার একাই প্রাইস রিভার্সালের জন্য যথেষ্ট নয়। হ্যামার ফর্মের পরে একটা বুল ক্যান্ডেল রিভার্সালের কনফারমেশনের ধারনা দিতে পারে।
হ্যামার চেনার উপায়
-> শ্যাডো বডির চেয়ে ২ থেকে ৩ গুন বড় হবে।
-> ছোট অথবা কোন আপার শ্যাডো থাকবে না।
-> বডিটা উপরমূখী হবে
-> বুল অথবা বিয়ার বডি হতে পারে। বুল হলে ভাল।
হ্যাঙ্গিং ম্যান
হ্যাঙ্গিং ম্যান একটি বিয়ারিশ রিভার্সাল প্যাটার্ন। এটি একটি শক্তিশালী রেজিস্টেন্স লেভেল হিসেবেও গন্য হয়। যখন হ্যাঙ্গিং ম্যান ফর্ম করে, তখন বিয়াররা বুলদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়।
হ্যাঙ্গিং ম্যান চেনার উপায়
-> শ্যাডো বডির চেয়ে ২ থেকে ৩ গুন বড়।
-> ছোট অথবা কোন আপার শ্যাডো থাকবে না।
-> বডিটা উপরমূখী হবে।
-> বুল অথবা বিয়ার বডি হতে পারে। বিয়ার হলে ভাল।
ইনভার্টেড হ্যামার ও শুটিং স্টার
ইনভার্টেড হ্যামার ও শুটিং স্টার ও দেখতে একরকম লাগে। পার্থক্য হলো যে, আপট্রেন্ডে না ডাউনট্রেন্ডে ফরম করে।
ইনভার্টেড হ্যামার ও শুটিং স্টার চেনার উপায় হ্যামার ও হ্যঙ্গিং ম্যানের মত।
চার্টে ইনভার্টেড হ্যামার ফর্ম করেছে, সেলারদের ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত করছে। আর শুটিং স্টার যখন ফর্ম করছে তখন বাইয়ারদের ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত করছে।
বুলিশ ও বিয়ারিশ এনগাল্ফিং প্যাটার্ন
বুলিশ ও বিয়ারিশ এনগাল্ফিং প্যাটার্ন ট্রেন্ডের শেষে ফর্ম হতে দেখা যায়। এরা শক্তিশালী রিভার্সালের সংকেত দিয়ে থাকে।
বুলিশ এনগাল্ফিং প্যাটার্ন ডাউনট্রেন্ডের শেষের দিকে ফর্ম করতে দেখা যায়। প্রথম ক্যান্ডেলটা বিয়ারিশ হয়। পরের ক্যান্ডেলটা বুলিশ হয় যেটা প্রথম ক্যান্ডেলটাকে ঢেকে ফেলে।
অন্যদিকে, বিয়ারিশ এনগাল্ফিং প্যাটার্ন আপট্রেন্ডের শেষের দিকে ফর্ম করতে দেখা যায়। প্রথম ক্যান্ডেলটা বুলিশ হয়। পরের ক্যান্ডেলটা বিয়ারিশ হয় যেটা প্রথম ক্যান্ডেলটাকে ঢেকে ফেলে।
টুইজার টপ ও টুইজার বটম
টুইজার ট্রেন্ড রিভার্সালের সংকেত দিয়ে থাকে। সাধারনত টুইজার ট্রেন্ডের শেষের দিকে ফর্ম হয়ে থাকে।
সবচেয়ে কার্যকরী টুইজারের নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যঃ
-> প্রথম ক্যান্ডেলটা ট্রেন্ডের অনুরুপ হবে। যদি আপট্রেন্ড হয়, তাহলে প্রথম ক্যান্ডেলটা বুলিশ হবে।
-> ২য় ক্যান্ডেলটা ট্রেন্ডের বিপরীত হবে। যদি আপট্রেন্ড হয়, তাহলে ২য় ক্যান্ডেলটা বিয়ারিশ হবে।
-> ক্যান্ডেলের শ্যাডোগুলো সমান দৈর্ঘ্যর হবে। টুইজার টপের সমান হাই হবে আর টুইজার বটমের সমান লো হবে।
ইভিনিং স্টার ও মর্নিং স্টার
মর্নিং স্টার ও ইভিনিং স্টার হল রিভার্সাল প্যাটার্ন। এগুলো নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্য দিয়ে চেনা যায়;
ইভিনিং স্টার
-> ১ম ক্যান্ডেলটা বুলিশ হবে যা সাম্প্রতিক আপট্রেন্ডের অংশ।
-> ২য় ক্যান্ডেলটার ছোট বডি থাকবে যা মার্কেটে বুল ও বিয়ারের মধ্যে দ্বিধার সংকেত দেয়। এটি বুলিশ অথবা বিয়ারিশ যে কোন একটি হতে পারে।
-> ৩য় ক্যান্ডেলটা বিয়ার ক্যান্ডেল যা ১ম ক্যান্ডেলের অর্ধেকের বেশি ছাড়িয়ে ক্লোজ হবে। এটি ট্রেন্ড রিভার্সালের কনফারমেশন হিসেবে কাজ করে।
মর্নিং স্টার
-> ১ম ক্যান্ডেলটা বিয়ারিশ হবে যা সাম্প্রতিক ডাউনট্রেন্ডের অংশ।
-> ২য় ক্যান্ডেলটার ছোট বডি থাকবে যা মার্কেটে বুল ও বিয়ারের মধ্যে দ্বিধার সংকেত দেয়। এটি বুলিশ অথবা বিয়ারিশ যে কোন একটি হতে পারে।
-> ৩য় ক্যান্ডেলটা বুল ক্যান্ডেল যা ১ম ক্যান্ডেলের অর্ধেকের বেশি ছাড়িয়ে ক্লোজ হবে। এটি ট্রেন্ড রিভার্সালের কনফারমেশন হিসেবে কাজ করে।
থ্রি হোয়াইট সোলজারস এবং ব্ল্যাক ক্রোস
থ্রি হোয়াইট সোলজারস
থ্রি হোয়াইট সোলজারস ফর্ম করে যখন ডাউনট্রেন্ডের পরে ৩ টা বুলিশ ক্যান্ডেল ফর্ম করে। এটি রিভার্সালের সংকেত দেয়। থ্রি হোয়াইট সোলজারস যখন ফর্ম করে, তখন বুঝতে হবে যে, হয় ডাউনট্রেন্ড শেষ হয়ে গেছে, বিশেষ করে এক্সটেন্ডেড ডাউনট্রেন্ড এবং ছোট একটি কনসোলিডেশন পিরিয়োডের পরে।
প্যাটার্নের বৈশিষ্ট্যঃ
-> ২য় ক্যান্ডেল ১ম ক্যান্ডেলের চেয়ে বড় হবে।
-> ২য় ক্যান্ডেল হাই এর কাছাকাছি ক্লোজ হবে।
-> ৩য় ক্যান্ডেল কমপক্ষে ২য় ক্যান্ডেলের সমান হবে।
-> শ্যাডো ছোট হবে আর না থাকলেও হবে।
থ্রি ব্লাক ক্রো ফর্ম করে যখন আপট্রেন্ডের পরে ৩ টি বিয়ারিশ ক্যান্ডেল ফর্ম করে। এটি রিভার্সালের সংকেত দেয়। থ্রি ব্লাক ক্রো যখন ফর্ম করে, তখন বুঝতে হবে যে, হয় আপট্রেন্ড শেষ হয়ে গেছে অথবা কনসোলিডেশন যা আপট্রেন্ড অনুসরন করছিলো; তা শেষ হয়ে গেছে। বৈধ প্যাটার্নের বৈশিষ্ট্য;
-> ২য় ক্যান্ডেল ১ম ক্যান্ডেলের চেয়ে বড় হবে।
-> ২য় ক্যান্ডেল হাই এর কাছাকাছি ক্লোজ হবে।
-> ৩য় ক্যান্ডেল কমপক্ষে ২য় ক্যান্ডেলের সমান হবে।
-> শ্যাডো ছোট হবে আর না থাকলেও হবে।
থ্রি ইনসাইড আপ ও ডাউন
থ্রি ইনসাইড আপ ও ডাউন হল রিভার্সাল প্যাটার্ন যা ট্রেন্ডের শেষের দিকে দেখা যায়। এটি ট্রেন্ড শেষ হবার সংকেত দিয়ে থাকে।
প্যাটার্ন চেনার উপায়
-> ১ম ক্যান্ডেলটা ট্রেন্ডের শেষের দিকে দেখা যাবে এবং টেন্ডের মত বড় আকারের ক্যান্ডেল হবে। যদি আপট্রেন্ড হয়, তাহলে বুলিশ আর ডাউনট্রেন্ড হলে বিয়ারিশ।
-> ২য় ক্যান্ডেলটা অন্ততপক্ষে ১ম ক্যান্ডেলের অর্ধেক পর্যন্ত আসবে।
-> ৩য় ক্যান্ডেলটা ১ম ক্যান্ডেলের হাই এর উপর গিয়ে ক্লোজ হতে হবে। এটি সংকেত দেয় যে বায়াররা সেলারদের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে গেছে।
বুলিশ ও বিয়ারিশ শব্দ দুটি যথাক্রমে বুল এবং বিয়ার এই শব্দ দুটি থেকে এসেছে । মার্কেট বুলিশ বলতে বোঝায় মার্কেট এখন উর্ধমুখী আর মার্কেট বিয়ারিশ বলতে বোঝায় মার্কেট এখন নিম্নমুখী । আর এর সাথে সংগতি রেখে আপ ক্যান্ডেলগুলোকে বুল ক্যান্ডেল এবং ডাউন ক্যান্ডেলগুলোকে বিয়ার ক্যান্ডেল বলা হয়।
নাসদাক, লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ, টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জ, ইউরোনেক্সট, হংকং স্টক এক্সচেঞ্জ, সিক্স সুইস এক্সচেঞ্জ ইত্যাদি পৃথিবীর নামী দামী শেয়ার মার্কেটে এই জাপানী ক্যান্ডেলস্টিক বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের দেশের শেয়ার মার্কেটেও যদিও এর প্রচলন রয়েছে, তথাপি মার্কেটের অবস্থার কারণে অনেক সময়েই যথাযথ ফলাফল দিতে ব্যর্থ হলেও, অন্তত এইটুকু বোঝা যায় যে, কখন কোন শেয়ারের দাম কতটুকু পরিমাণ কমবে কিংবা বাড়বে। আর যা দেখে খুব সহজেই সিদ্ধ্যান্ত নেয়া যায়। কোনরূপ জুয়ার ফাঁদে পা নাদিয়ে এবং জ্যোতিষের মুখাপেক্ষী না থেকে; শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে নিজের এনালাইটিক্যাল জ্ঞান বৃদ্ধির মাধ্যমেই একজন প্রকৃত শেয়ার বিনিয়োগকারী হয়ে উঠার মাঝেই সার্থকতা বিরাজমান।
তথ্যসূত্রঃ
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ
স্টক বাংলাদেশ
অন-লাইন ট্রেডিং কনসেপ্টস
একাডেমী অফ পিপস
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ ভোর ৪:৩৬