somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মূসকের বাজেট-মরণের ফাঁদ

০৪ ঠা জুন, ২০১৬ রাত ২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি দেশের বাজেট তার আর্থিক ব্যবস্থা এবং সম্পদ বন্টনের সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম। তাই সংগত কারনেই দেশের বৃহত্তর জনগোষ্টির ইচ্ছা ও সেই সাথে আর্থিক উন্নয়নের বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা বাজেটে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আমাদের দেশে দরিদ্র জনগোষ্টির পরিমান কাংখিত মাত্রায় কমিয়ে আনা কিংবা সম্পদ বিকেন্দ্রীকরনের কোন পদক্ষেপ যেহেতু আমরা এখনও ফলপ্রসূ করতে পারিনি তাই সম্পদ বন্টনের জায়গায় সমতা তৈরী করার ব্যাপারে বাজেট-ই আমাদের একমাত্র ভরসা। সরকারের বাজেট পরিকল্পনায় কর আরোপকে ব্যবহার করে সহজেই বৈষম্য কমানোর ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া যায়। দেশের হাতেগোনা লোকদের হাতে সিংহভাগ সম্পদ যখন চলে যাচ্ছে তখন অর্থমন্ত্রির উচিত ছিল সরকারের আয় অর্থাৎ টেক্স এমনভাবে সংগ্রহ করা যেন বেশি সম্পদওয়ালারা বেশি করে কর দেয়। ধনী লোকদের নিকট হতে টেক্স কালেকশনের জন্য আয়করের উপযুক্ত বিকল্প নেই বললেই চলে। বিগত অর্থবছরগুলোতে সরকারি রাজস্বের সবচেয়ে বেশি আসত আয়কর হতে। এই ধারাটি কম হলেও মোটামোটি সঠিক পথে ছিল বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে। আয়কর হতে বেশি পরিমানে টেক্স নিয়ে অন্তত এই জিনিশটি স্বিকার করা হত যে সরকারি বাজেট বৈষম্যকে প্রশ্রয় দেয় না। কিন্তু এবারের বাজেটে বৈষম্যকে প্রায় স্বিকৃতি-ই দিয়ে দেয়া হল। বর্তমান বাজেটে সরকারি আয়ের ৩৫.৮% অর্থাৎ সর্বোচ্চ টেক্স আসবে মূসক হতে।
মূল্য সংযোজন কর যেহেতু ভোগ্যসামগ্রীর উপরই নির্ধারিত হয়ে থাকে সেহেতু এই করের চুড়ান্ত চাপ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলকেই ভোগ করতে হবে। ধনীদের টাকা আছে তাই মূসকের পরিমান ১৫% না হয়ে ৫০% হলেও তারা দ্রব্য ও সেবা ভোগ হতে বিরত থাকবে না। গরিবদের টাকা নাই তাই মূসক বাড়ানোর চুড়ান্ত চাপ এই জনগুষ্টির পকেটের উপর পড়বে। এর ফলাফল দুইটি হতে পারে। প্রথমত; গরিবদের ভোগব্যয় কমিয়ে দিতে হবে। সহজ কথায় না খেয়ে হলেও সরকারকে টেক্স দিতে হবে। আয়কর ফাঁকি দেয়া সম্ভব হলেও মূসক কিন্তু ফাঁকি দেয়া সম্ভব নয়। আর দ্বিতীয়ত; মূসক দিয়ে পন্য বা সেবা কিনতে হবে। এর ফলে দরিদ্রদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে টান পড়বে। আয়ের বিপরিতে আবশ্যক ব্যয় বেশি হয়ে গেলে সঞ্চয়ে ভাটা পড়াই স্বাভাবিক। সঞ্চয় না বাড়লে বিনিয়োগও হবে না আর পুঁজিবাদী সমাজে যতই দক্ষতা কিংবা শিক্ষা থাকুক না কেন পুঁজি মানে বিনিয়োগ ছাড়া ধনীর কাতারে নাম লিখানো আর হাতে চাঁদ পাওয়া একি কথা। দক্ষতা থাকলে কিংবা খুব বেশি পরিমানে শিক্ষিত হলে বড় জোর একটা বড় সাইজের প্রতিষ্টানে বড় চাকরি করা যেতে পারে। প্রতিষ্টানের মালিকানায় গিয়ে প্রফিট পেতে হলে পুঁজি ছাড়া অন্য কিছুর দরকার খুব একটা নাই। দরিদ্র জংনগোষ্টির উপর করের বোঝা চাপিয়ে তাদেরকে একটি দুষ্টচক্রের মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলা হচ্ছে। এই চক্র হতে বের হওয়া একেবারেই অসম্ভব। এছাড়াও সরকার ক্রমশ মুক্ত বাজারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বেশ কিছু বিদেশি পন্যর উপর সম্পুরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগামি বাজেটগুলোতে এই ধরনের অবস্থা ঘটতে থাকলে আমাদের শুধু বিদেশি পন্য কিনে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে মুনাফার যোগান ও সরকারকে মূসক দেয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকবে না। শুধুমাত্র মুখে বড় বড় কথা বললেই বৈষম্য দূর হবে না। বৈষম্য দূর করতে হলে সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টির কারণগুলো মাথায় রাখতে হবে।
তবে এবারের বাজেটে বেশ কিছু ভালো দিকও এসেছে। শিক্ষা খাতে বরাদ্ধ বেড়েছে। বাজেটের আকার বড় করা হয়েছে। উন্নয়নের জন্য বড় আকারের বাজেটের প্রয়োজন রয়েছে। যদি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা যায় এবং গৃহিত প্রকল্পগুলোর পূর্ণ কাজ হয় তবে দেশ উন্নয়নের পথে অনেকটাই এগিয়ে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৬ রাত ২:৪৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প বলেছে, বাংলাদেশ পুরোপুরি এনার্খীতে, তারা মাইনোরিটির উপর অত্যাচার করছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৬



৩ দিন পরে আমেকিকার ভোট, সাড়ে ৬ কোটী মানুষ ভোট দিয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যে; ট্রাম্পের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৫১ ভাগ। এই অবস্হায় সনাতনীদের দেওয়ালী উপক্ষে ট্রাম্প টুউট করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×