আজ প্রায় ৬মাস পর রক্ত দিতে গেলাম, গিয়ে দেখি রোগী এবং রোগীর অভিভাবক কেউই এখনো পৌছায়নি। যাথারিতি রেডক্রিসেন্ট ফাতেমাবেগম রক্ত কেন্দ্রের সামনে অপেক্ষা করছিলাম। কে রোগী কি রোগ কিছুই আগে থেকে জানতাম না এক কলিগ এর ফোন পেয়ে ছুটে আসলাম । একটু পর রোগীর অভিভাবক আসল তারও কিছুক্ষন পরে রোগী আসল, রোগীকে দেখে আতকে উটলাম ফুলের মত ফুটফুটে একটা বাচ্চা, অনেক মায়াবী চেহারা, যাকে দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করবে বয়স মাত্র ৬ বছর । তার রোগের নাম শুনেই বুকের ভিতর চিনচিন একটা ব্যাথা অনুভব করলাম, এই ফুলের মত বাচ্চাটার থ্যালাসেমিয়া। বাবা ও মা দুজনেরই থ্যালাসেমিয়া জিন থাকায় (unaffected carrier) বাচ্চাটা এই রোগ নিয়েই জম্ম নিয়েছে।
রক্ত দেয়ার আগে ডাক্তারের চাহিদা পত্র এবং রোগীর স্যাম্পল প্রয়োজন হয়, তাই তাকে আগে ব্লাড ট্রান্সফিশান সেন্টারে ভর্তি করাতে নেয়া হল। সেখানে রোগীর অভিভাবক যথারীতি ভর্তির কাজ করছে আমি রোগীর সাথে কথা বলার চেষ্টা করছিলাম, হঠাত বাচ্চাটা বলল তার খারাপ লাগছে তার পরই তার বমি হতে লাগল, এবং ওর অনেক কষ্ট হচ্ছিল, জানতে পারলাম রক্ত দিতে ১মাস পার হয়ে আরো ১ সপ্তাহ হয়ে গেছে তাই রোগী একটু বেশী দুর্বল হয়ে গেছে। তাই সে আজ সকাল থেকে কিছু খায়নি। বাচ্চাটার দিকে তাকাতে আমার কষ্ট হচ্ছিল, আমি ওর জন্য জুস আনার নাম করে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম, রুম থেকে বের হতেই আমার চোখ থেকে দুই ফোটা অশ্রু গরিয়ে পরল, বুক ভেঙ্গে কান্না আসতে চাইল, কোন রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে সামনের দোকানে গেলাম। সেখান থেকে বাচ্চাটার জন্য হালকা কিছু নিয়ে ফিরলাম। তারপর যথারীতি রক্ত দিয়ে পরীটার(বাচ্চাটা) সাথে দেখা করে চলে আসলাম। আমরা যারা সুস্থ,এক ব্যাগ রক্ত আমাদের জন্য কিছুই আর থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য বেচে থাকার উপাদান। সেখান থেকে বের হয়েই আমি ঠিক করলাম রক্তদান আরও নিয়মিত হব এবং রক্তদাতা সংগ্রহে আমাকে আরও সক্রিয় হব যেন ব্লাড ডোনারের অভাবে কেউ এমন কষ্ট না পায়। যারা এই পোষ্টটি কষ্ট করে পরেছেন সবার নিকট অনুরোধ থাকবে আপনারা সবাই স্বেচ্ছা রক্ত দানে এগিয়ে আসবেন।
যারা স্বেচ্ছা রক্ত দানে আগ্রহী তার নিচের ফেসবুক লিংকে ক্লিক করে আমাদের গ্রুপ এ জয়েন করতে পারেন। https://www.facebook.com/groups/bdblooddonors/
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৩