
হিন্দু সম্প্রদায়ের লক্ষ্মীদেবীর বাহন লক্ষ্মীপেঁচারা সত্যিই এক লক্ষ্মী পাখি। মূল খাদ্য ধেনো ইঁদুর। শহরে ধেনো ইঁদুর তো মেলে না, খায় গেছো ইঁদুর ও নেংটি ইঁদুর। ধেনো ইঁদুর কৃষকের শত্রু। গেছো ইঁদুর গাছের ও ফল-ফলারির শত্রু। লক্ষ্মীপেঁচারা এদের খেয়ে মানুষের মহাউপকার করে। এরা নিশাচর পাখি। দিনে কোটরে-খোঁড়লে আত্মগোপনে থাকে। কিন্তু গ্রামবাংলায় ওদের আশ্রয় নেয়ার জায়গার আজ প্রচন্ড সঙ্কট। টিলা-পাহাড়ময় অঞ্চলেও এই সঙ্কট। তাই আজকাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব ছোট-বড় শহরেই দেখা মেলে এদের। শহরের দরদালানের কোটর-ফাটল, সাইনবোর্ড-বিলবোর্ড এবং ঢাকার বহুতল ভবনগুলোর কার্নিশ ও সানশেডে এরা পায় নিশ্চিন্তা আশ্রয়। পুরনো দর-দালান তো আছেই। রাতে দালানের ছাদ থেকে গেছো-নেংটি ইঁদুরসহ অন্যান্য পোকামাকড় ধরতেও দেখা যায়। সদ্য উড়তে শেখা অনেক পাখি মাঝেমধ্যে সকালবেলায় কাকের আক্রমণে পড়ে বেদিশা হয়ে যায়, মানুষের হাতে ধরা-মারাও পড়ে। ভোর হওয়ার আগেই আশ্রয়ে না ফিরতে পারায় আনাড়ি পাখিরা এমন বিপত্তিতে পড়ে।

বাংলাদেশের অন্য পেঁচাদের মুখের সঙ্গে লক্ষ্মীপেঁচার মুখ মেলানো যাবে না। এদের মুখের গড়নটা বেশ কৌতুককর, যেন সার্কাসের জোকার! অশ্বত্থ পাতার গড়নের সঙ্গে যেমন মিলিয়ে নেয়া যাবে তেমনই বানর বা লজ্জাবতী বানরের মুখের সঙ্গেও মিলিয়ে নেয়া যাবে।
এদের ইংরেজি নাম Barn Owl. বৈজ্ঞানিক নাম Tyto alba. শরীরের মাপ ৩৪-৩৬ সেমি।

ছানাদের দেখলেই হাসি পায়, আদর করতে ইচ্ছা করে। যেন তুলতুলে ফার বা উলের বল ওরা। বুক-পেট-পিঠ ও মাথার তুলোট মিহি পালকগুলো সাদা। বয়সী পাখির মুখম-ল সাদাটে, সাদাটে পেট-বুক। পিঠের উপরিভাগ ও ডানার উপরিভাগে যেন সোনার মিহি গুঁড়ো লাগানো। অর্থাৎ লালচে-বাদামি ছিট-অসংখ্য। গাও তুলোট সাদা।
বর্ষা ছাড়া বছরের যে কোনো সময়ে ডিম-ছানা তুলতে পারে।

এরা ডিম দেয় ৬-৯টি আর ফোটে ৩০-৩৩ দিনে।
কৃতজ্ঞতায় : শরীফ খান