"মানুষ যতদিন বৃদ্ধ না হয়,
ততদিন যৌবনের মূল্য বুঝে না।
আর জীবনের মূল্য মূল্য বুঝে না মৃত্যুর মুখোমুখি না হলে"
মূভির এই কথাগুলো বারবার ভাবাবে।। মৃত্যুকে আরো আরো গভীরভাবে অনুধাবন করতে শেখাবে। শেখাবে জীবনের মূল্য বুঝতে।
ভূমিকম্প, দারিদ্র, দূর্ভোগ ও অসহায়ত্ব, প্রিয়জন হারানোর বেদনা, বেদনা কাটিয়ে ওঠে আবার নতুন জীবনে মানিয়ে নেয়া - এটিই 'এবং জীবন বয়ে চলে' মুভিটির মূল থিম। " And life goes on" কি আসলেই কোন মুভি? কোন ডকুমেন্টারি নয়তো আবার? এমন দ্বিধান্বিত হলেও হতে পারেন।
জীবন নদীর স্রোতের মতন চির বহমান, কখনো কোন কিছুর জন্য থেমে যায় না। দারিদ্র, দুঃখ-দুর্দশা,অসহায়ত্ব, এমনকি প্রিয় মানুষ হারানোর শোকচ্ছায়াও জীবকে আটকে রাখতে পারে না।
ভূমিকম্প বিধ্বস্ত নগর-গ্রাম। বিধ্বস্ত জনজীবন। মাটি আর পাথরে নীচে চাপা পড়েছে কত দেবশিশু, কত প্রাণ গেল হারিয়ে। মানুষের মাঝে প্রবল শোকচ্ছায়া। দারিদ্র ও অসহায়ত্বে সম্মুখে মলিন মুখ।
এরপরও, এরপরও... আপনি দ্বিধান্বিত না হয়ে পারবেন না যখন বিশ্বকাপ খেলা দেখার জন্য উৎসুক এক লোক পরিচালকের প্রশ্নের জবাব দেয় এইভাবে-
"The world cup comes once every four year and life goes on"
দ্বিধায় থাকতেই হয়। কেননা এই দৃশ্যটি দেখে আপনার মনে হতে পারে ইরানের মানুষজন প্রত্যেকেই স্বাভাবিকভাবে চলছে। জীবনে চলার পথে মানুষের বহু বাধা থাকে। সব বাধা পেরিয়ে জীবন চলতে থাকে জীবনের নিজস্ব গতিতে । এমনকি ভূমিকম্পের মতন ভয়াবহ প্রতিকূল সময়েও।
ডজন ডজন আত্মীয় হারিয়েও ভূমিকম্পের পরদিনই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া এক দম্পতিকে দেখা যায় মুভিটিতে। প্রিয়জন হারানোর বেদনা পর্যবেক্ষণ করলে তাঁদের বিয়ে থেমে যেতে পারে অনির্দিষ্টকালের জন্য। অপেক্ষা করতে হতো বহুদিন। এই ভয়ে ওরা ওদের চিরকালের প্রথা ভেঙে নিজে নিজেই বিয়ে করে ফেলে! আসলেই! জীবন বয়ে চলে জীবনের মতো।
পরিচালকের শিশু পৈয়া সফট ড্রিংকস কিনতে চায়। দোকানি কাজে ব্যস্ত। ওর ডাকে সারা দেয় না। শিশুটি টাকা রেখে দিয়ে নিজেরই ড্রিনকসের বোতল নেয়া আমাদের মেসেজ দেয়। চুরি না করার শিক্ষা দেয়। সততার শিক্ষা দেয়।
আবার সে যখন ড্রিংকস ফেলে দিচ্ছিল তখন এক শিশুর কান্নাও বাজছিল কানে। এক মা এসে পৈয়াকে বলে, "না ফেলে আম্মার বাচ্চার জন্য একটু দাও না?" আমরা কত খাবার নষ্ট করি। অথচ চাইলেই বেঁচে যাওয়া খাদ্য দিয়ে অন্যের উপকার করতে পারি। পৈয়ার এই ড্রিংকস ফেলে দেয়ার দৃশ্যটাও আমাদের বিবেককে তাড়িয়ে বেড়ায়।
আবার মুভিটির শেষ দৃশ্যটি দিয়েও মেসেজ দেয়ার চেষ্টা করেছেন আব্বাস কিয়েরোস্তামি। পরিচালকের গাড়ি খাড়া পাহাড়ে উঠতে ব্যর্থ হয়। একটু নীচে নেমে আবার গাড়ি স্টার্ট দেয়। আবারো ব্যর্থ। এবার আগের চেয়ে আরো অনেক নীচে নেমে গাড়ি চালায় এবং এবার উঠতে সফল হয়। এই দৃশ্যটাও আমাদের ব্যর্থতা, গ্লানি, হতাশাকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা দেয়।
"And life goes on" আব্বার কিয়েরোস্তামির 'কোকার ট্রিলজি'র দ্বিতীয় মুভি।
১৯৯০ সালে ইরানের মানজিল ও রুদবারে মারাত্মক একটি ভূমিকম্প হয় যাতে প্রাণ হারায় চল্লিশ হাজারের মতো মানুষ। মৃতদের বেশিরভাগই ছিল শিশু। ভূমিকম্পের পাঁচদিন পর কিংবদন্তী পরিচালক আব্বাস কিয়েরোস্তামি তাঁর পুত্রকে নিয়ে কোকার নামক একটি জায়গাতে যান। উদ্দেশ্য তারই পরিচালিত "Where is the friend's home?" মুভিতে অভিনয় করা দুজন শিশুর খোঁজ নেয়া। তাঁর এই ভ্রমণ ছিক শোকাবহ। আর পরবর্তীতে এই কাহিনী নিয়েই তিনি নির্মাণ করেন এই মুভিটি। মুভিটি "Life And nothing more" নামেও পরিচিত।
মুভিটি এতই সরল, স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক যে মুভিটিকে আপনার মনে হলেও হতে পারে। মুভিটিতে প্রাকৃতিক দৃশ্য খুব সুন্দরভাবে ধারণ করা হয়েছে।। আর আবহ সঙ্গীতও অসাধারণ।
মুভিটির প্রায় অর্ধেক অংশই গাড়িতে। আপনার মনে হবে যে আপনি গাড়ির পেছনের সিটে বসে বসে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখছেন, ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত জনজীবন দেখছেন। মানুষের দুঃখ কষ্টের সঙ্গী হচ্ছেন। যে প্রশ্নকে সামনে রেখে মুভির যাত্রা শুরু হয় অর্থাৎ "বন্ধুর বাড়িটা কোথায়?" মুভির নায়ক কেমন আছে, কোথায় আছে সেই প্রশ্নের উত্তর কিন্তু মেলেনি শেষ পর্যন্ত? উত্তরটা জানানোর দরকার ছিল।
[এর আগেও পোস্ট মন্তবের প্রতি উত্তর দিতে পারিনি। এবারও হয়তো পারব না, পারলেও অনেক পরে প্রতি উত্তর দিতে হবে। এজন্য আগাম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।।
@আকতার আর হোসাইন [ ২২/১১/২০২০]
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:১৯