'ওরা টোকাই কেন' বইটি দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখার সাথে এই প্রথম পরিচিত হলাম। ছয়টি প্রবন্ধ নিয়ে এই বইটি।
'স্মৃতির দখিনা দোয়ার' এ শেখ হাসিনা তাঁর ছেলেবেলাকার সোনাঝরা দিনের স্মরণ করেছেন। তাঁর কাছে গ্রাম অনেক প্রিয়। জীবনের শেষদিনগুলি গ্রামেই কাটানো লেখিকার ইচ্ছা।
গ্রামের সৌন্দর্য মাধুর্যের বর্ণনা এভাবে দেন তিনি,
"নদীর পাড় ঘেঁষে কাশবন, ধান-পাট-আখ ক্ষেত, সারি সারি খেজুর, তাল-নারিকেল-আমলকি গাছ বাঁশ কলা গাছের ঝাড়, বুনো লতাপাতার জংলা, সবুজ ঘন ঘাসের চিকন লম্বা লম্বা সতেজ ডগা, শালিক চড়ুই পাখিদের কলকাকলি, ক্লান্ত দুপুরে ঘুঘুর ডাক। সব মিলিয়ে ভীষণ রকম ভালো লাগার এক টুকরো ছবি যেন। আশ্বিনের এক সোনালি রোদ্দুর ছড়ানো দুপুরে এই টুঙ্গিপাড়া গ্রামে আমার জন্ম। গ্রামের ছায়ায় ঘেরা, মায়ায় ভরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নিরিবিলি পরিবেশ এবং সরল সাধারণ জীবনের মাধুর্যের মধ্য দিয়ে আমি বড় হয়ে উঠি।"
"আমার শৈশবের স্বপ্ন-রঙিন দিনগুলো কেটেছে গ্রাম বাংলার নরম পলিমাটিতে, বর্ষার কাদা পানিতে, শীতের মিষ্টি রোদ্দুরে, ঘাসফুল আর পাতায় পাতায় শিশিরের ঘ্রাণ নিয়ে, জোনাক-জ্বলা অন্ধকারে ঝিঁঝির ডাক শুনে, তাল-তমালের ঝোপে বৈঁচি, দীঘির শাপলা আর শিউলি- বকুল কুড়িয়ে মালা গেঁথে, ধুলোমাটি মেখে, বর্ষায় ভিজে খেলা করে"
"হাচুপা তোমার আব্বাকে আব্বা বলতে দিবে আমায়"
শেখ কামালের এ কথাটি শুনে খুবই আবগ্লাপুত হয়েছি।
'নূর হোসেন' প্রবন্ধে নূর হোসেনকে হত্যার বর্ণনা দেয়া হয়েছে।
'রাষ্ট্র ধর্ম কার স্বার্থে'-তে লেখিকা ধর্মকে রাজনীতির সাথে মিশিয়ে কিভাবে অবমাননা করা হয় তা আলোকপাত করেছেন। এদেশের একটা চক্র বাঙ্গালী পরিচয় মুছে বাংলাদেশী করতে চায়৷ অথচ ভাষা দিয়েই কেবল জাতির পরিচয় না
"বন্যা দুর্গত মানুষের সঙ্গে'-তে লেখিকা ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার দুঃখময় স্মৃতি তুলে ধরেছেন। এই প্রবন্ধটিও পাঠ করার এক পর্যায়ে চোখের কোণে নোনা পানি জমেছে।
পানিতে খলখলানির আওয়াজ পেয়ে আব্দুর রহমা কোচ দিয়ে আঘাত করে। কয়েকটা ঝাঁকি দিয়ে স্থির হয়ে যায় জলের প্রাণীটা। রক্তে লালা হয়ে গেল জায়াগাটা। পানিতে মাছ তুলতে গিয়ে তুলে নিয়ে এল নিজের সন্তানের মৃত লাশ।। ওহ, কী দীর্ঘশ্বাস।
এদেশের রাজনীতিকদের শো অফের কথা এসেছে এই প্রবন্ধে। ফটো সাংবাদিক, মিডিয়া কর্মী অনুপস্থিত থাকায় ত্রান মন্ত্রী পূর্ব নির্ধারিত ত্রান বিতরণ কর্মসূচি বন্ধ রাখেন। আবার অন্যদিকে, এক গ্রামে ১১ হাজার মানুষের জন্য মাত্র দেড় চাল বরাদ্ধ দেয় অথচ আরেক জায়গায় দুই হাজার মানুষের জন্য ৬ টন চাল। এর অর্থ কী?
লেখিকা বলেন, এর অর্থ হচ্ছে। বোলতলিতে হেলিপ্যাড আছে। দেশি বিদেশি বড় কর্তারা এখানেই আসেন। যাদের সরকার ত্রানকার্য দেখাতে চান তাদের এখানেই আনা হয়। কাজেই এখানকার চাহিদা ঠিক রাখলে সততা বজায় রাখার চেষ্টা সফল হবে।
'ওরা টোকাই কেন' প্রবন্ধে লেখিকা খুঁজেছেন স্বর্গের দূত নিষ্পাপ শিশুদের টোকাই হবার কারণ। মেয়েদের অশিক্ষা, তাঁদের পতিতা পল্লীতে নাম লেখানোর কারণ, ধর্মীয় কু-সংস্কার, নিষ্পাপ শিশুদের টোকাই হবার কারণ খোঁজার পাশাপাশি লেখিকা সমাধান বিষয়েও আলোচনা করেছেন এই প্রবন্ধে। । টোকাই মান্নানকে শেখ হাসিনা স্কুলে ভর্তি করালে সে অংকে ১০০ ইংরেজিতে ৯৫ এবং বাংলাতে ৫৬ পায়। এই প্রতিভাদের খবর কেউ রাখে না। রাস্তায় কত প্রতিভা লুকিয়ে আছে আমরা কি তাঁর খবর রাখি?
মারণাস্ত্র বানাতে যে টাকা খরচ হয় তা দিয়ে কোটি কোটি শিশুকে বাঁচানো সম্ভব হতো। এজন্য লেখিকা খুব আক্ষেপ করেছেন। দরিদ্রের প্রতি লেখিকার ভীষণ ভালোবাসা। তিনি আফসোস করে বলেন,
"পৃথিবী থেকে যদি 'দরিদ্র' শব্দটি মুছে ফেলা যেত।
মানুষ নূন্যতম প্রয়োজন মেটাতে পারত।
জানিনা সেই দিন আসবে কিনা।"
পাঠ প্রতিক্রিয়া:
শেখ হাসিনার লেখার ধাঁচ ভালো লেগেছে। তার দূরদর্শিতার প্রশংসা না করলেই নয়। আলোচনা সমালোচনা সবই ভালো লেগেছে। শুধু ধর্মের বিষয়ে দুই একটা যুক্তি ভালো লাগেনি আমার। ওরা টোকাই কেন নামেই আকর্ষিত ছিলাম আমি। এবং আমি একটু হেসেছিলামও এই ভেবে যে,
"উন্নয়ের আলো ঘরে ঘরে জ্বলবে
আমাদের ঘর নাই এই কথা কে বলবে' এই গানের বাস্তব চিত্র তো চোখের সামনেই। তো তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে এখন টোকাই সংখ্যা কতটুকু কমিয়েছেন?
পড়ার পর এই বিষয়ে ধারণা অনেকটাই বদলেছে। এদেশে শিক্ষার হার বাড়িয়েছেন, মাধ্যমিক শ্রেণী পর্যন্ত বিনা মূল্যে বই বিতরণ, নারীদের অধিকার, নারী স্বাধীনতা, নারী শিক্ষা, পরিবার পরিকল্পনা ইত্যাদি কর্মসূচি দেখে শেখ হাসিনার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জেগেছে যদিও সকাল বেলা ঘুম ভাঙতেই চোখের সামনে শিশুশ্রম চোখে পড়ে তবুও....
তবে কিছু বিষয় মেলাতেও পারছি না...
শেখ হাসিনা এদেশের কলুষিত রাজনীতির, তখনকার বিরোধী দলের দুর্নীতি, ত্রাণের নামে শো অফ, স্বৈরশাসন ইত্যাদি যে সমস্ত সমালোচনা করেছেন এখন তার সময়েও এসব সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। বরং অনেক অংশেই বেড়ে চলছে। থাক, বইয়ের কথা বলতে এসে রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা না করায় শ্রেয়। যারা এদেশের সমস্যা নিয়ে ভাবেন, দেশকে এগিয়ে নেয়ার স্বপ্ন দেখেন তাঁদের জন্য বইটি মাস্টরিড বলে আমি মনে করি।
এমনিতেই অগোছালো লেখা তার উপর সময় স্বল্পতা, ব্যস্ততার ধরুণ এই লেখাটা অতিমাত্রায় অগোছালো হবার জন্য দুঃখিত।
[১২-০৮-২০২০]
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ২:৪৭