ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
[যারা স্পয়লার এড়িয়ে যেতে চান আপনারা একটু স্কিপ করে নীচে চলে যান। ফ্ল্যাপে লেখা কথামালা, উদ্বৃতি ও পাঠ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারেন]
অপেক্ষা কি কখনো সুখকর হয়?
বই পুস্তকে, প্রবাদ প্রবচনে আমরা যে পড়ে থাকি, 'অপেক্ষা ফল সুমিষ্ট হয়'
বাস্তবে কি তাই হয়? অপেক্ষা কখনো সুখ নিয়ে আসে, কখনো জীবনকেই করে তুলে অস্বাভাবিক।
গল্পে ফেরা যাক। সুরাইয়া। হাসানুজ্জামের স্ত্রী। রাত বারোটা। এখনো বাসায় ফিরেনি তার স্বামী। শুরু হয় সুরাইয়ার অপেক্ষা। সারা রাত ধরে অপেক্ষা করে। এরপর থানা পুলিশ করেও হাসানুজ্জামানের সন্ধ্যান পাওয়া যায় নি। হাসানুজ্জামানের নিখোঁজ হওয়াটা সুরাইয়ার জীবনকে এলোমেলো করে দেয়। তার আদর থেকে বঞ্চিত হতে হয় তার মেয়ে সুপ্রভা ও তার ছেলে ইমনকে। সে অপেক্ষা করতে থাকে তার স্বামীর জন্য। তার বিশ্বাস তার ছেলে ইমনের বিয়ের দিন তার স্বামী ফিরে আসবে।
ইমনের বিয়ে হয়। মাঝখানে অনেক অনেক ঘটনা ঘটে যায়
ইমনের বিয়ের রাতে কি ফিরবে সুরাইয়ার স্বামী? তার সব অপেক্ষার অবসান হবে কি?
ইমনের বিয়ের রাতে কলিং বেল বেজে উঠল। সুরাইয়ার হাত পা জমে গেল। মানুষটা কি এসেছে। নাকি তিনি ভুল শুনেছেন।
না ভুল তো না। এই তো আবারো বেল বাজল। এই তো আবারো। কে এসেছে কে?
ফ্ল্যাপে লেখা কথা:
মানুষে জীবন কি চক্রের মতো? চক্রের কোন শুরু নেই, শেষ নেই। মানবজীনও কি তাই? রহস্যময় চক্রের ভেতর এই জীবন ঘুরপাক খেতে থাকে? শুরু নেই, শেষ নেই। চক্র ঘুরছে।
এই চক্রের ভেতর ঘুরপাক খেতে খেতে অপেক্ষা করে কেউ কেউ। কিংবা সকলেই। কিসের অপেক্ষা?
পাঠ প্রতিক্রিয়া:
স্বল্পকথায়, হুমায়ূন আহমেদের সব বই-ই আমার ভালো লাগে(পোকা বইটি বাদে) এটাও এর ব্যতিক্রম নয়। ভালো লেগেছে। ইমনের চাচা ইমনকে চিঠির সাথে ১০০ ডলারের দুটি নোট। চিঠিটা পড়ার সময়ে চোখের কোণে জমেছে পানি। আপনাদেরও জমতে পারি। আমার রেটিং ৪/৫ ।।।
কিছু উদ্বৃতি:
আমার একটা অভ্যাস হল বই পড়ার সময় কিছু লাইন কোট করে রাখি।। পিডিএফ পড়লে স্ক্রিনশট। যেগুলো ভালো লাগে। অপেক্ষা বইয়েরও তেমন কিছু উদ্বৃতি দিচ্ছি। একটা বই থেকে এত উদ্বৃতি এর আগে আমি কখনো দেই নি। ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু দৃষ্টিকটু লাগে। কিন্তু কি আর করা। সবগুলো শেয়ার না করলেও মনের ভেতর থেকে যাবে খচখচানি। মাফ করবেন এতগুলো প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় উদ্বৃতি দেয়ার জন্য।
১। যেকোন ঘটনাই বড় করে দেখলে বড়, ছোট করে দেখলে ছোট। পুরো জিনিসটাই নির্ভর করছে কিভাবে দেখা হচ্ছে তার উপর।
২। মিথ্যা কথা বললে দোষ হয়। লিখলে দোষ হয় না। উপন্যাসিকরা যে ক্রমাগত মিথ্যা কথা লিখেন তাদের তো দোষ হয় না।
৩। খুব খারাপ সময়ের পরপরই খুব ভালো সময় আসে। এটা জগতের নিয়ম।
৪। কোন কিছুই নিষিদ্ধ না। বাংলাদেশে সবই সিদ্ধ। কোনটা বেশি সিদ্ধ। কোনটা অল্প সিদ্ধ।
৫। প্রকৃতি যাকে দেবার তাকে উজার করেই দেয়। যাকে দেবার না তাকে কিছুই দেয় না। এই জন্যেই একজন হয় রবীন্দ্রনাথ একজন হয় ঠেলাগাড়ির ড্রাইভার মোকাদ্দেছ।
৬। ছেলে পাগলের চেয়ে মেয়ে পাগল ভয়ংকর।
৭। শৈশবের কিছু কিছু ভয় মানুষের সঙ্গে থেকে যায়। মানুষের বয়স বাড়ে, শৈশবের অনেক কিছুই তাকে ছেড়ে যায়-- ভয়টা ছাড়ে না।
৮। মানুষ স্নেহ ও ভালোবাসাকে চরিত্রের বিরাড় দুর্বলতা মনে করেন। সেই দুর্বলতা প্রকাশ হয়ে পড়লেই তাঁদের লজ্জার সীমা থাকে না।
৯। পেন্সিলে আঁকা ছবি পছন্দ না হলে রাবার দিয়ে ঘসে তুলে ফেলা যায়। অপছন্দের কথা মুছে ফেলার কোন ব্যবস্থা নেই। থাকলে খুব ভালো হতো।
১০। হাসলে মেয়েদের যত সুন্দর লাগে হাসি চেপে রাখলে তারচে দশগুণ বেশি সুন্দর লাগে।
১১। প্রচন্ড শারীরিক যন্ত্রণার সময় কোন প্রিয়জনকে ডাকতে ইচ্ছা করে।
১২। কেউ কারো মত হতে পারে না। সবাই হয় তার বিজের মত। সব মানুষই আলাদা।
১৩। জগতের বোকারা ভালো মানুষ ধরণের হয়।
১৪। যার কপালে যা লেখা থাকে তার তাই হয়।
১৫। ফেরেশতার মত মানুষ কখনো ইন্টারেস্টিং হয় না। তারা সব সময় সত্যি কথা বলবে, সব সময় শুদ্ধ কাজ করবে।
১৬। পাগলরা মানুষ খুব ভালো চেনে। ওদের সেন্স কুকুরের মত। গন্ধ শুকেই বলে দিতে পারে কার কাছে মহাবিপদের সম্ভাবনা।
১৭। যেকোন শহরকে সবচেয়ে কুৎসিত দেখায় সন্ধ্যাবেলা। তখন প্রকৃতি তার আলো নিভিয়ে দেয়। মানুষ তার আলো জ্বালাতে শুরু করে। প্রকৃতির শেষ আলোর স্মৃতি মাথায় থেকে যায় বলেই মানুষের আলো অসহ্য বোধ হয়।
১৮। পৃথিবীর সবচেয়ে আনন্দময় জিনিষগুলির জন্য কিন্তু টাকা লাগে না। বিনামূল্যে পাওয়া যায়। যেমন ধর জোছনা, বর্ষার দিনের বৃষ্টি, মানুষের ভালোবাসা......।
১৯। একটা বয়সের পর মানুষ খানিকটা একা থাকতে চায়।
২০। মুক্তির আনন্দে মানুষ অনেক উদ্ভট কান্ডকারখানা করে।
২১। একটা বয়সের পর ছেলেরা বাবা-মা কারো কথাই শুনতে চায় না। শুধু স্ত্রীর কথা শোনে।
২২। যেসব ছেলে খুব সুন্দর তারা আবার রূপবতী মেয়ে পছন্দ করে না। সুন্দরী মেয়েদের তারা নিজেদের রাইভ্যাল মনে করে।
......
বই: অপেক্ষা
লেখক: হুমায়ূন আহমেদ
প্রকাশন: আফসার ব্রাদার্স
ধরণ: সমকালীন উপন্যাস
মূল্য: ৩০০ টাকা [রকমারিতে ২৫% ছাড়ে ২২৫ টাকা]
যারা পিডিএফ পড়েন আপনাদের জন্য পিডিএফ লিংক দিলাম। ডাওনলোড লেখাতে কেউ ক্লিক করবেন না। একটু নীচে গেলে একটা বক্স দেখবেন। বক্সেএ উপরে কয়েকটা সংখ্যা দেয়া থাকবে। সেই সংখ্যাগুলো বক্সে টাইপ করে সাবমিট দিলেই ডাওনলোড হবে।
ডাওনলোড লিংক: অপেক্ষা ইবুক
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৫০