প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও প্রাসঙ্গিক কথা
কাজী সিরাজ
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো নয়। বেকারত্ব, অভাব-অনটন, অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তাহীনতা সর্বত্র সৃষ্টি করেছে হতাশা ও আতঙ্ক। অর্থবিত্তশালীরা দেশে যেন ভরসা পাচ্ছেন না। অনেকে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন বিদেশে। কেউ কেউ অর্থকড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন দেশ থেকে। সরকার তার নিজের দলের লোকজনের জীবনেরও নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। দেশের আপাত বড় দুই রাজনৈতিক দলের সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ দুর্বৃত্তদের অতিমাত্রায় খাতির-যত্ন সৎ ও আদর্শবাদী নিবেদিতপ্রাণ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিপাকে ফেলে দিয়েছে। তারা না পারছেন রাজনীতি করতে না পারছেন রাজনীতি ছাড়তে। একটা দেশের জন্য এটা একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। দেশে সুশাসন নেই, দেশে তো নেই-ই, কোনো বড় দলেও প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চা ও অনুশীলন নেই। গণদুর্ভোগ লাঘবে সরকারের কোনো উদ্যোগ চোখেই পড়ে না, উল্টা গত ১১ নভেম্বর সুন্দর একটি দিনকে (১১.১১.১১) সরকার বিষাদময় করে দিয়েছে জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বাড়িয়ে।
এক বছরে জ্বালানি তেলের এটা তৃতীয় দফা মূল্যবৃদ্ধি। জনসাধারণের ওপর এটা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা-এর মতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, দেশের এ বাস্তব চিত্র প্রধানমন্ত্রীর সামনে পরিষ্কার নয়। মনে হয়, সব ব্যাপারে তিনি যথাযথভাবে অবহিত নন। এর অর্থ এই নয় যে, খলিফা ওমরের মতো ছদ্মবেশে দেশময় ঘুরে ঘুরে প্রধানমন্ত্রীকে সবকিছু স্বচক্ষে ও স্বকর্ণে দেখতে-শুনতে হবে। মন্ত্রী-মিনিস্টার আর উপদেষ্টা মিলে তার সাহায্যকারীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। বিভিন্ন জন বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত। স্ব-স্ব ক্ষেত্রের সঠিক তথ্য দায়িত্বপ্রাপ্তরা যথাসময়ে অবহিত করলে কোনো কিছুই প্রধানমন্ত্রীর অজানা থাকার কথা নয়। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, জনসংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহের ব্যাপারে তিনি বেশ অন্ধকারে আছেন। তার পারিষদবর্গ এবং আশপাশের লোকজন তথ্য গোপন করে এবং ভুল তথ্য দিয়ে দেশের প্রকৃত অবস্থা তাকে জানতে দিচ্ছেন না।
পবিত্র ঈদুল আজহার দিন জনগণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে দেশবাসী বিস্ময়ে হতবাক হয়েছেন। তার বক্তব্যে কারো কাছে এটা প্রতীয়মান হতে পারে যে, দেশটা আমাদের সুখের স্বর্গ হয়ে গেছে। তিনি বলেছেন, 'এবার মানুষ ভালোভাবেই ঈদ উদযাপন করতে পেরেছে। জিনিসপত্রের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই ছিল। প্রচুরসংখ্যক কোরবানিই প্রমাণ করে মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। ঈদে এবার মানুষের বাড়ি যেতে কোনো অসুবিধা হয়নি। জনগণ ভালোভাবেই তাদের গন্তব্যে যেতে পেরেছেন। এবার রাস্তা ভাঙা বা খারাপ এসব কথা শুনতে হয়নি।'
তার এই বক্তব্য সম্পূর্ণই বাস্তবতা বিবর্জিত বলার যথেষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে। পরামর্শক ও পারিষদবর্গের ভুল ও মিথ্যা তথ্যনির্ভর বাগাড়ম্বরকে কেউ যদি জনগণের সঙ্গে উপহাস বলে চিত্রিত করেন, জানি না সরকারি মহল এর কি জবাব দেবে। একটা দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেওয়া যায় সে দেশের উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানসিকতা ও আচরণ থেকে। আমাদের দেশে জমিদারিপ্রথা বিলুপ্তির পর শিল্পপতি, ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিক ঠিকাদারদের (রাজনীতি এখন প্রকৃত ও সৎ রাজনীতিবিদদের হাতে নেই) একটি বিরাট অংশ উচ্চবিত্ত তথা ধনী সম্প্রদায়ভুক্ত আর শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, চাকরিজীবী ছোটখাট ব্যবসায়ীরা মধ্যবিত্ত শ্রেণীভুক্ত। এই দুই শ্রেণীই খুবই দোদুল্যমান। এদের পাওয়ার আকাক্সক্ষা যেমন বেশি, হারাবার ভয়ও সমভাবে বেশি। কিন্তু এই দুই শ্রেণীর প্রথমোক্তদের মধ্যে যখন অস্থিরতা ও চঞ্চলতা পরিদৃষ্ট হয় এবং দ্বিতীয় শ্রেণীটি যখন হারাবার সকল ভয়ভীতি উপেক্ষা করে আন্দোলনকারী ও সংগ্রামমুখর হয় তখন বুঝতে হয় সেই দেশের সার্বিক পরিস্থিতি খারাপ।
আমাদের দেশের উচ্চবিত্তদের অবস্থা কি? পর্যবেক্ষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা হতাশই শুধু নন, আতঙ্কিতও। অর্থবিত্তের লোভ-লালসায় বা চাকরি-বাকরির সুযোগ নিয়ে আমাদের দেশ থেকে বিদেশে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। এসব ক্ষেত্রে আয়-উপার্জনের লক্ষ্যটাই প্রধান। অনেকে বিদেশি নাগরিকত্ব নেওয়ার পরও দেশের মায়া ভোলেননি। আগে নিজে গেছেন, পরে পরিবারের অন্যদের নিয়ে গেছেন সবার আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। বিদেশে অর্থ উপার্জন করে দেশে ঘর-বাড়ি, পাকা দালানকোঠা করেছেন, এমনকি ব্যবসা-বাণিজ্যও পেতেছেন। কিন্তু এখন দেশে বসবাসকারী অর্থ-সম্পদের মালিকরাই দেশে নিরাপদবোধ করছেন না। আইনশৃক্সখলা পরিস্থিতির অবনতি, নিরাপত্তাহীনতা, বড় দুই রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, কাজ-কারবার সবকিছু এক শ্রেণীর সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত ও লুটেরাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার ফলে সৎ, পরিশ্রমী, দেশপ্রেমিক জাতীয় ধনিক শ্রেণী সবকিছু গুটিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন। সবাই হয়তো চলে যাবেন না। কিন্তু এই ভাবনাটা শুভ নয়। আগামীদিনের অশনিসংকেত। কেউ কেউ ইতোমধ্যে দেশে উপার্জিত অর্থ জমাচ্ছেন বিদেশে, দেশের বাড়িঘর বিক্রি করে জমি ও বাড়ি কিনছেন বিদেশে। মালয়েশিয়া, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশকে বানাচ্ছেন 'সেকেন্ড হোম'। দেশের একজন প্রথমসারির বিত্তবান আইনজীবী কথা প্রসঙ্গে ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, 'দুর্বৃত্তায়নের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হওয়ায় দেশ ও মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ সীমিত হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতির অধঃপতন দেখে মাঝে মাঝে এমন হতাশা জাগে যে, ইচ্ছা হয় সবকিছু ছেড়ে- ছুড়ে, বেচাবিক্রি করে বিদেশে চলে যাই'। সুখ-সমৃদ্ধি নয়, শুধু শান্তি-স্বস্তির অন্বেষণে উচ্চবিত্তদের অনেকে এমন ভাবছেন। খোঁজ নিলে জানা যাবে, আমাদের দেশের বড়-ছোট মাঝারি অনেক আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতা এবং ব্যবসায়ী নানাভাবে দেশে উপার্জিত অর্থে ইতোমধ্যে বিদেশে এস্টাবলিশমেন্ট গড়ে তুলেছেন। অনেকে বাচ্চাকে বিদেশি নাগরিক বানানোর উদ্দেশ্যে বিদেশে বিশেষ করে আমেরিকা, কানাডায় বাচ্চা ডেলিভারি করাচ্ছেন। বৌ-বাচ্চারা থাকছে বিদেশে। নিজেরা বছরে দু'তিনবার দেশ-বিদেশ করছেন। এই শ্রেণীর লোকরা লড়াই-সংগ্রামের পথ পরিহার করে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন বিদেশে। প্রধানমন্ত্রী খবর নিলে জানবেন যে, এ ধরনের লোকের সংখ্যা তার দলেও কম নেই। এমনিতেই দেশের অব্যবস্থাপনা, সুযোগের অভাব, যোগ্য লোকদের প্রতি বঞ্চনা ও অবজ্ঞার কারণে মেধাবী তরুণরা দেশে থাকতে চাইছেন না, থাকছেন না; তার ওপর শিল্প-বাণিজ্য, অর্থনীতি-সমাজকল্যাণে যারা ভূমিকা রাখতে সক্ষম তারাও যখন হতাশ ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে দেশ ত্যাগের পথ নিয়ে ভাবেন তখন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার সাযুজ্য খুঁজে পাওয়া যায় না।
আর মধ্যবিত্ত শ্রেণী? তারাও শান্তিতে নেই, স্বস্তিতে নেই। ফুঁসছে সবাই। বাংলাদেশ যেন হয়ে আছে এক বিসুভিয়াস। এই বুঝি শুরু হবে আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত। উৎকণ্ঠা চতুর্দিকে_ কখন ঘটে, কখন ঘটে বিস্ফোরণ! এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী কি করে অবলীলায় হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় বলতে পারলেন_ দেশের পরিস্থিতি বেশ ভালো! অথচ দেশের অধিকাংশ মানুষের মুখে হাসি নেই। ঈদের দিন প্রধানমন্ত্রী বা বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে মোটাসোটা, তাজাতুজা তেলতেলে চেহারার যে লোকগুলো দেখা করতে যান তাদের দেখে বাংলাদেশ চেনা যায় না, কখনো চেনা যায়ওনি। এরা সুবিধাপ্রাপ্ত একটা আলাদা শ্রেণী। এরা সবসময় ভালো থাকে। এদের অনেকে দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি আর লুটেরা অর্থনৈতিক সংস্কৃতির নষ্ট পলিতে হৃষ্টপুষ্ট 'বিষাক্ত বৃক্ষরাজি'। পাঠক, 'দুই নেত্রীর' দর্শনে ও কদমবুচিতে যাওয়া লোকগুলোর চেহারা যদি মিলিয়ে দেখেন দেখবেন দেহের মোটাতাজা অবস্থা এবং বাহারি পোশাক-আশাকে কোনো পার্থক্য নেই। এদেরকে সমর্থন করে, ভোট দিয়ে যারা ক্ষমতায়িত করে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে এদের অনেক ফারাক। তারা অভাগা। ওইসব গরিব-নিঃস্ব অভাজনদের কথা মনে পড়ে শুধু ভোটের আগে, ক্ষমতার প্রয়োজনে। দেশের সামগ্রিক অবস্থা ভালো না থাকলে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ এই জনকুল ভালো থাকে না, ভালো থাকতে পারে না।
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা মোটেও ভালো নয়। বৈদেশিক মুদ্রায় রিজার্ভের অবস্থা শোচনীয়, রিজার্ভ নেমে এসেছে দশ বিলিয়নের নিচে_ ৯.৬ বিলিয়ন। গতকাল ১২ নভেম্বর পত্র-পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে যে, তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর অবস্থাও নেই। এককালে স্বৈরাচার এরশাদের ও বর্তমানে লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার 'যোগ্য' অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের উচ্চাবিলাসী বাজেট বাস্তবায়ন চরে লঞ্চ আটকে যাওয়ার মতোই ফেঁসে আছে। সরকার অনেকটা দেউলিয়ার মতো বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ থেকে প্রতিদিন একশ' কোটি টাকা ঋণ নিয়ে দেশ চালাচ্ছে। অশীতিপর 'যুবক' অর্থমন্ত্রী পাক্কা অভিনেতার মতো ভয় তাড়ানিয়া গানের সুরে বলছেন, 'ও কিছু না, ওটা খারাপ কিছু নয়।' অথচ প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে অর্থনীতির চাকা। এ সরকারের মেয়াদকালে দেশে নতুন কোনো শিল্প-কারখানা স্থাপনের সুখবর পাওয়া যায়নি। চলতি মূলধনের অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক সম্ভাবনাময় শিল্প প্রতিষ্ঠান। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারছেন না। চাঁদাবাজি, কমিশনবাজিতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। শেয়ারবাজার থেকে লোপাট হয়ে গেছে হাজার হাজার কোটি টাকা। বিদেশে শ্রমবাজারে অস্থিরতার কারণে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। এক মাসের ব্যবধানে রেমিটেন্স কমেছে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আগস্টে এসেছে ৭ হাজার ৯৭৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বরে এসেছে ৬ হাজার ২৪০ কোটি ৫৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা।
বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে নতুন কর্মসংস্থানের অভাবে। যাদের সৎ আয়- রোজগার আছে ব্যয়ের সঙ্গে তার সঙ্গতি নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী যে বললেন, দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক আছে_ তা কোন দ্রব্যমূল্য? চালের কেজি সর্বনিম্ন এখন কত তা কি জানেন না প্রধানমন্ত্রী? খাওয়ার প্রায় অযোগ্য নিকৃষ্ট মানের চালের কেজি এখন ৩৫/৩৬ টাকার নিচে নয়। খাওয়ার উপযোগী মাঝারি মানের চালের কেজি সর্বনিম্ন ৪০/৪২ টাকা। ৩/৪ মাস আগেও যে নাজিরশাইল প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ৪৬/৪৭ টাকায়, সে চাল এখন কিনতে হচ্ছে ৫৮/৫৯ টাকায়। ছোট পুঁটি মাছের কেজিও এখন ২০০-২২০ টাকা। চাষের পাঙ্গাস আর চাষের কই মাছ ছাড়া অন্য কোনো মাছে হাত দেওয়া দায়। গরু, খাসি, মুরগির মাংসও মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তের কাছে স্বপ্নের বস্তুতে পরিণত হয়েছে। সয়াবিন তেলের লিটার ১২০ টাকার ওপর। মসুর ডালের কেজি ১১০ টাকা। চিনির কেজি ৭০ টাকা। হলুদ, মরিচ, পিয়াজ, আদা, লবণ কোন জিনিসটা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আছে? প্রধানমন্ত্রী কিসের ভিত্তিতে বললেন দ্রব্যমূল্য নিয়ে মানুষের অভিযোগ নেই! রাস্তাঘাট সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রীকে অতিরঞ্জিত তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। রাস্তাঘাটের অবস্থা ভালো, ঈদ উপলক্ষে ঘরে ফেরা মানুষের কোনো কষ্ট হয়নি_ এমন কথা তিনি যেদিন বলেছেন, তার আগের দিনই পত্র-পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে যে, দু'ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে লাগছে নয় ঘণ্টা। রাস্তাঘাটের বেহাল দশার কারণে এবার অনেকে আপনজনদের সঙ্গে ঈদ করার পরিকল্পনাই বাদ দিয়েছেন। রাস্তাঘাটের ভঙ্গুর দশায় যানজটের কারণে এবার চাহিদা মতো গরুই আনতে পারেনি বেপারিরা। পথের দুর্গতি ও অধিকহারে চাঁদাবাজির কারণে গরুর অভাবে রাজধানীর বিপুলসংখ্যক মানুষ এবার কোরবানি দিতে পারেননি। এ খবরটাও যদি প্রধানমন্ত্রীর কানে না পেঁৗছে এর চাইতে দুর্ভাগ্যের আর কি থাকতে পারে? আইনশৃক্সখলা পরিস্থিতির বয়ান দিতে গেলে এই লেখার কলেবর অনেক বেড়ে যাবে। বিষয়টি আগামী কোনো লেখার জন্য থাক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার সামনে-পাশে যে লোকগুলো আছেন দু'হাতে তাদের সরিয়ে একটু সামনে আসুন। চোখ মেলে তাকান। এরাই আসল মানুষ। এদের চেহারা আয়নায় দেখুন, আপনার শাসনে কেমন চলছে দেশ, কী সুখে আছে মানুষ।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৩ নভেম্বর,২০১১