somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

A Journey by Rickshaw with Rakeen and Rakeen’s Mom!

১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট বেলায় আমাদের এই রচনাগুলো বাংলায়, ইংরেজীতে নোট করে মুখস্থ রাখতএ হতো, পরীক্ষায় আসবে বলে। একটা না একটা এসেই যেত!

রচনা আরো ছিল, একটি বটগাছের আত্মকাহিনী, একটা রেললাইনের আত্মকাহিনী, একটি পয়সার আত্মকাহিনী! পরীক্ষায় আসুক আর না আসুক, এই রচনাগুলো পড়ে আমার অনেক ভাল লাগতো!

আরো ছিল শ্রমের মর্যাদা, অধ্যাবসায়! একেবারে টোটস্থ, ঠোঁটের আগায়। ফরফর করে লিখতে পারতাম!

আমার এক বান্ধবী ছিল আরেক কাঠি সরেস! দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন, ড্যাস সহ পুরো জ্যামিতি মুখস্থ রাখতো।

কেউ কেউ শুনেছি একটু বোকাও ছিল, এরা অবশ্য পরের প্রজন্ম। জ্যামিতি মনে রাখতো এক নম্বর উপপাদ্য, দুই নম্বর উপপাদ্য। কোন বেরসিক অংক টিচার যদি পরীক্ষায় অনুশীলনী থেকে কিছু দিতো, তবেই সেরেছে! আর তো পারে না!

যাক, পরচর্চা আর না করি। নিজ চর্চা করি!

আজকাল বড় হয়ে আমি এই রচনাগুলো সৃজনশীল উপায়ে নিজ অভিজ্ঞতায় লেখার চেষ্টা করছি!

গতকাল সাত সমুদ্র তের নদী পেরিয়ে মেঘনা পাড়ি দিয়ে গ্রামের বাড়ির বিয়ে খেয়ে ঢাকায় সদরঘাটে এসে পৌঁছালাম! এসেই বিপত্তি! মিরপুর যাব, সিএনজিওয়ালা ৮০০ টাকা ভাড়া চায়। পুজো পেয়েছে, আমার মাথায় যদিও হিজাব, মনে হয় হিন্দুর বোউ-ই ভেবেছে!

আরে বাপ! আমি তো পুজো করে আসিনি, দুর্গাপূঁজা তো এখনো চলছে। আমি তো গেলাম বাপের বাড়ি, বোনের বিয়ে খেতে! আমাকে এমন পেয়ে বসলি কেন!

একটা রিকশা ঠিক করে সামনে এগোতে থাকলাম, যদি মিরপুর বাসস্ট্যান্ডে এসে কিছু পাই! বাবা! এখানেও একই! কেউ ৮০০ টাকার কমে আসবে না। এদিকে পুরোন ঢাকার সব রোডেই জ্যাম! কিছু কিছু রাস্তা বন্ধ, মন্দির আছে, পূজারীদের ভিড়। অনেক গুলো ট্র্যাভেল ব্যাগ। ইচ্ছে হলো একবার মন্দিরে যাই, রাকীনকে মা দুর্গা দেখিয়ে নিয়ে আসি।

সে বলে মা দুর্গা কি? রমনা কালী মন্দিরের সামনে মেলা বসেছে। আমার ছেলে তো মেলা যাবার জন্য রেডি! কিন্তু সেখানেও নামতে পারলাম না। অনেক ব্যাগ না থাকলে ঠিকই কাল ঢাকা শহরের কোথাও না কোথাও নেমে পরতাম! সবাই হেঁটে হেঁটে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। হিন্দু দিদি বৌদিরাই বেশি। প্রিয়জনের হাত ধরে, ফুলের মালা খোঁপায় পরে।

কোথাও শাঁখ বাজছে! কোথাও ঢোল।
ছোটবেলায় আব্বার হাত ধরে আমি পূজামণ্ডপে গিয়েছি, প্রসাদ খেয়েছি কিনা মনে নেই। আমার ছেলেটাকেও পূজা দেখাতে চেয়েছিলাম। এবারো হলো না। গতবারও চেষ্টা করেছি, মন্দিরের কাছ থেকেই ঘুরে এসেছি। এতো ভিড়! খুব কাছে পৌঁছাতে পারিনি। গতবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকেশ্বরী মন্দিরের কাছে গিয়েছিলাম।

এরপর রিকশা আরো এগোচ্ছে। আমার ছেলের আর ধৈর্যে কুলাচ্ছে না। আর কতদূর?!
আমিও রিকশায় বসে থেকেই ক্লান্ত। ভাবছি রিকশাওয়ালার কত কষ্ট হচ্ছে, সেই সদরঘাট থেকে মিরপুর!
উনাকে একবার পানিও সেধেছি, একটু বিশ্রাম নিতেও বলেছিলাম।
পূজায় অনেক বাড়ি লাইট দিয়ে সাজানো। রাকীনের সেগুলো দেখে মনে হচ্ছিল বিয়ে বাড়ি। মাত্র আগের দিনই খালার বিয়ের বাড়ি দেখেছে, লাইটিং করা।

একসময়ে এলিফ্যান্ট রোড ধরে এগোচ্ছিলাম। রাকীনকে শুনালাম সেই পুরোনো দিনে এই রাস্তা দিয়ে হাতির দল হাতির ঝিলে গিয়ে গোসল করতো! ওর অবাক বিস্ময়, তুমি এতোটা জানো কিভাবে? তুমি কি দেখেছ?

আমি বললাম, আরে না! সেটা আমার জন্মেরও আগে!

এরপর সোনারগাঁও রোড হয়ে, রাজাবাজার হয়ে সংসদ ভবনের সামনে দিয়ে এগোতে থাকলাম। ততক্ষণে সন্ধ্যে হয়ে গেছে। কতজনে দল বেঁধে ফুচকা খাচ্ছে!

আজকে আর আমার ঢাকার সন্ধ্যে উপভোগ করা হচ্ছিল না। কেবল দেখেই শান্তি! ভালই ভালই বাসায় ফিরতে পারলেই বেঁচে যাই!

গতরাতে ভীষণ গ্যাস্ট্রিক পেইন উঠেছিল, পেটে পীড়াও ছিল, তাই শরীরটা অনেকটাই দুর্বল ছিল। সারাদিন স্যালাইন খেয়ে খেয়ে কাটাচ্ছিলাম। ঘুরে বেড়ানোর সাহসটুকু আজকের জন্য নেই!

একসময়ে আগারগাঁও পেরোলাম, মেট্রোরেলের স্টেশনের নিচ দিয়ে যাবার সময় রাকীনের আবারো বিস্ময়, রাস্তার উপরে এমন ছাদ কেন?! আমি বললাম, ওটা রেলস্টেশন, রেলগাড়িগুলো আমাদের মাথার উপর দিয়ে যায়। তুমি চড়েছ তো মেট্রোরেল এ। এবার বুঝলো।

অবশেষে শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, মিরপুর ১০ নম্বর পার হয়ে পড়লাম ভাঙ্গা রাস্তার উপরে। এতোক্ষণ জ্যাম থাকলেও রাস্তাঘাট ভাল ছিল। এবার একেকটা ঝাঁকি খাই, আর প্রাণ বেরিয়ে যায় যায়! সেই কবে রাস্তাগুলো খনন করা হয়েছে, জায়গায় জায়গায় উঁচু, নিচু। এবড়ো থেবড়ো। এখনো রাস্তার পুনর্নির্মাণের কাজ শেষ হয় না!

এরই মাঝে আমার মেয়ে নাফিসা ফোন দিলো তারা রেষ্টুরেন্টে খেতে যাচ্ছে। আমার কাজিন তাদেরকে নিয়ে যাচ্ছে। সাথে সাথে আমি আর রাকীনের আবদার, আমাদের জন্যও আনতে হবে, তোমরা যাই-ই খাও। আমার ছেলের তো আফসোসের শেষ নেই! ইশ!কেন যে আমার সাথে বিয়েতে গেল! নইলে তো সে আপুর সাথে আজকে সন্ধ্যায় রেস্টুরেন্টে খেতে যেতে পারতো! আমি বললাম, নো ওরি! আন্টি ঠিকই আনবে আমাদের জন্য। শেষ পর্যন্ত আমরা পিতজা খেতে পেরেছি।

এরই মাঝে রাকীন এর আরেকটি প্রশ্ন। আম্মু মেয়েরা বিয়েতে কাঁদে কেন? মাওয়া আন্টি কাঁদলো কেন?

বললাম, সে যে ওর বাপের বাড়ি ছেড়ে, ভাই ভাবীদের ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে, এই বাসায় যে আর আগের মতো থাকতে পারবে না, এজন্য কাঁদছে। আমিও কেঁদেছিলাম। দেখ না, নিশি আন্টিও আগের মতো ওর আম্মুর কাছে থাকতে পারে না। মাঝে মাঝে আসে। তাই মেয়েরা কাঁদে।

হ্যাঁ, ঠিক তো। বুঝলো রাকীন।

তুমিও তো নাফিসা আপুর জন্য কাঁদবে, যখন তার বিয়ে হবে!

এই বিয়েতে আরো মজার অভিজ্ঞতা। আমার ছোট্ট কাজিন ভেবেই সারা, মাওয়া আপু এমন কাঁদলো! আমিও তো অনেক অনেক কাঁদবো! সে এতোদিন এই বাড়িতে ছিল!

সেই কাজিনতা আবার ছিঁচকাঁদুনে। একটু ছুঁতো পেলেই কেঁদে বুক ভাসিয়ে দেয়! বললাম, তোমাকে নিয়ে তো বিপদ! তুমি এক কাজ করবে। এক সপ্তাহ আগে থেকেই চাচা চাচি, বড় আপু সবাইকে জড়িয়ে ধরে ধরে অনেক কেঁদে নিবে। তাহলে বিয়ের দিন তোমার আর বেশি কান্না জমে থাকবে না। নইলে তো, সব কাজল চোখের আশপাশে লেপ্তে যাবে, লিপস্টিক ঠোঁটের চারপাশে মেখে একাকার হয়ে যাবে। কি বিচ্ছিরি দেখাবে!

সে আবার সাজতে অনেক ভালবাসে! দেখলাম, বুদ্ধিটা তার মনে ধরেছে। :`>

আরেক পুচকি আছে, এক কাজিনের মেয়ে। সে বলে, এতো কাঁদবার কি হলো! কালই তো আবার আসবে। ওর মা বলে, তুই তো তোর বিয়েতে আমার জন্য একটুও কাঁদবি না! এখনই এই কথা! :||

বিয়ে উপলক্ষে এই রিকশা ভ্রমণ খুব আনন্দময় না হলেও একেবারে মন্দও ছিল না!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:৪৩
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি জাতির কান্না......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২২ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৫২

একটি জাতির কান্না......

স্বাধীন সিকিম রাষ্ট্রের ভারত ভুক্তির নেপথ্য!
১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান ব্রিটিশদের কাছে থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। ওই সময় উপমহাদেশে ৫৬৫ টি "Princely States" বা "সতন্ত্র দেশিয় রাজ্য" ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

এসব কিসের ইঙ্গিত?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২২ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:২৯


ক্ষমতাচ্যুত হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার দাবিতে হঠাৎ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছাত্রলীগ নেতাদের বিক্ষোভ মিছিল! সোমবার (২১ অক্টোবর) সকালে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

‘নির্দেশ আছে তোকে ক্রস ফায়ারে মেরে ফেলার’ - হুমায়ুন কবির

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২২ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:১৪

(মানব জমিনে হুমায়ুন কবির ভাইয়ের গুম নির্যাতনের কথা পড়ে মনোকষ্ট নিয়ে বসে আছি। আপনার জন্য দোয়া করি, আপনাদের আত্মত্যাগেই এই জাতি স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে, এখন কাজ হচ্ছে তাদের বিচার করা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী থেকে বরখাস্ত করার জন্য কোটার দরকার আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ২২ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৬



**** চাকুরী সৃষ্টি করতে জানে না বাংগালী জাতি, কিন্তু চাকুরী থেকে তাড়াতে জানে; কিছু কিছু ব্লগার মানুষকে তাদের কাজের যায়গা থেকে বিতাড়িত করার জন্য ব্লগে চীৎকার করছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ফিরে যেতে ইচ্ছে করে কৈশোরে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৫


এখানে কী আছে বলো তো, এখানে কী আছে আর
কেন যে সময়ের পিঠে হলাম সওয়ার;
সময় আমায় নিয়ে এ কোথায় এলো
স্বপ্ন সব হয়ে গেল এলোমেলো।

সেই প্রাথমিকের গন্ডি, পা রাখি ইচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×