ভাত দাও মা, রান্না করতে এতো সময় লাগে? প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে।
তুই কোন কাজ কর্ম করিস না তোর অাবার খিদে কিসের? তোর বয়সী ছেলেরা পড়ার পাশাপাশি কিছু একটা করে।
প্রতিদিন একই পেচাল শুনতে ভাল্লাগেনা,
বাপ দাদার যদি একটা মুক্তিযোদ্ধারর কোটা থাকতো ঠিকই এতোদিনে একটা চাকরি পাইতাম।
মা-ছেলের মধ্যে এভাবেই কথা হয় রোজ।
ইয়ন দুপুরের খাবার খেয়ে ঘন্টা খানিক বিশ্রাম নিয়ে বন্ধুদের সাথে অাড্ডা দেওয়ার জন্য যোগাড় হচ্ছে।
মায়ের রুমের দরজাটা ভিতর থেকে বন্ধ দেখে ইয়নের মনটা খারাপ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ অাগেই তার বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছে মা, তারপর থেকেই দরজা বন্ধ।
মন খারাপ থাকলে বা অতিরিক্ত চিন্তা করলে ইয়নের মা এভাবেই দরজা বন্ধ করে রুমের ভিতরদেশ
বসে থাকে। কিন্তু কি করে এটা কেউ জানে না, ধারনা করা হয় নির্জনে কাদে।
" কাদলে হয়তো দুর্বল মনের উন্নতি হয় দুর্বল অর্থনীতির পরির্বতন হয় না "
মা! ও মা! কি হয়েছে দরজা খোলো। দু তিন বার নক করাতেই ভিতর থেকে দরজা খুলে গেল।
অন্যদিন এ বেলায় দরজা বন্ধ করলে ও বেলায় খোলে অাজ ডাক দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খুলে দিয়েছে নিশ্চয় কিছু হয়েছে!
তবুও ইয়নের মায়ের মুখ দেখে বোঝা যায় না উনি চিন্তিত। মায়েরা বোধহয় এমনই হয় "নিজের সুখ জলাঞ্জলি দিয়ে পরিবারের সবার সুখ কিনে"।
তোর বাবা ফোন করেছিল। বুকের ব্যাথাটা নাকি বেড়েছে এই বয়সে চাকরি করতে কষ্ট হয় তোকে কিছু একটা করতে বলেছে।
অাগেও অনেক বার ঢাকা এসেছে ইয়ন। কিন্তু তখনের অাসা অার এখনের অাসার মধ্যে অনেক পার্থক্য। ধানমন্ডির জিগাতলা এক বন্ধুর ম্যাসে উঠেছে ইয়ন, সঙ্গে ব্যাগভর্তি কাপড়, পকেটে ১৬৫ টাকা অার বন্ধুর দেওয়া ভরসা। সে ইয়নকে একটা চাকরি দিয়ে দিবে।
ঘুম থেকে উঠল ইয়ন তখন সকাল ৯টা তানভির পাশে শুয়েছিল হয়তো অাগেই উঠেছে।
তানভির পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরি করে, অাজ অফিস বন্ধ অাগামী দুই দিন ও বন্ধ থাকবে। ইয়ন ভাবলো তানভির হয়তো ওয়াশ রুমে গেছে নয়তো বারান্দায় বসে নবম তম হয়তো এর চেয়ে বেশি তম গার্লফ্রেন্ড এর সাথে গল্প করছে।
এক ঘন্টা কেটে গেছে তানভিরের খোজ নাই, ম্যাসের সবাই একে একে নাস্তা করে যার যার কাজে বেরিয়ে পড়ছে।
"ইয়ন যতটা দুরন্ত ততটা লাজুক" ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই নিজের মুখের গন্ধে নিজেই বিরক্ত হচ্ছে। কাল রাতে ঘুমানোর অাগে বাদাম খেয়েছিল, মুখটা পরিষ্কার করা দরকার
তানভির থাকলে একটু টুথপেষ্ট চেয়ে মুখটা পরিষ্কার করতো, সেও নেই। তাই পানি দিয়েই কাজটা সারলো।
বেলা ১২ টার সময় ম্যাসের এক বড় ভাই বলল নাম কি?
ইয়ন।
বাসা কোথায়? কি কর?
ইয়ন একে একে উত্তর দিল।
ভাত খেয়েছো?
হ্যা ভাই রাতে তো খেয়েছিলাম।
সকালে নাস্তা করো নি?
ইয়ন উত্তর দিতে পারলো না।
তানভির কি হয়?
বন্ধু।
কোথায় গেছে বলে গেছে?
না ভাই, অামি ঘুম থেকে ওঠার অাগেই চলে গেছে।
তারপর বড় ভাই ইয়নকে খাবার খায়ালো অার বলল এটা ম্যাস নিজের খাবার নিজেকেই দায়িত্ব নিয়ে খেতে হয়।
এই উক্তিটা শিক্ষা হিসাবে নিতে পারতো ইয়ন কিন্তু নিল না, কেন নিল না সেটা ইয়নই ভালো জানে।
সারাদিন তানভির বাসায় ফিরলো না, রাতে যখন ইয়ন ঘুমিয়ে পড়ল তারপর তানভির বাসায় ফিরলো। এভাবেই তিনদিন কাটলো।
বন্ধুকে এনে চরম প্রতিদান দিছে তানভির। ইয়ন একবার প্রশ্ন করেছিল ছুটির দিনে বাইরে এতক্ষণ কি করিস?
তানভির ইয়নকে বলেছিল ও তুই বুঝবি না।
অাজ তানভিরই ইয়নকে ঘুম থেকে ডেকে তুললো। একসাথে নাস্তা করলো ।
দোস্ত অামার জন্য চাকরি দেখেছিস?
দেখতেছি চিন্তা করিস না।
কিছু টাকা ধার দিবি? অামার কাছে চলার মত টাকা নাই।
দোস্ত ইয়ে মানে এ মাসের বেতন এখোনো পাই নাই। তানভিরের কাছ থেকে এমন জবাব ইয়ন প্রত্যাশা করেনি।
তারপর ইয়ন বলল চল অাজকে কোথাও ঘুরতে যাই,
তানভির বলল নারে অাজকে অার হবে না অফিস অাছে।
দুঃসম্পর্কের এক অান্টির সাথে প্রায়ই কথা হতো ইয়নের, সেই মহিলা খুবই ধুরন্ধাজ।
মিথ্যা কথা তার বিনানুমতিতে মুখের উপর বসে থাকে কখন বের হবো কখন বের হবো।
তবুও ইয়ন মনে করে সেই মহিলা তার সাথে ছলচাতুরি বা কোন মিথ্যা বলে না। ইয়ন একবার তাকে ঠাট্টা করে বলেছিল "অাপনি মিথ্যা বলার জন্য গ্রিনেচ ওয়ার্ড রেকর্ড করবেন একদিন"। তারপর দেড় মাস কোন যোগাযোগ ছিল না। হটাৎ সেই অান্টি ইয়নের মোবাইলে ফোন করলো।
এদিকে ইয়নের নাজেহাল অবস্থা ইয়ন শুধু মনে মনে ভাবছে এ কেমন বন্ধু, এ কেমন বন্ধুত্ব।
ফোনটা রিসিভ করলো ইয়ন তারপর দুজনের মধ্যে অনেক কথা হলো। অান্টির এক পরিচিত ধানমন্ডিতেই থাকে নাম সাইফুল।
সাইফুলের ফোন নাম্বার ইয়নকে দিল অার বলল সাইফুল সেখানে অনেকদিন ধরে অাছে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারবে।
সাইফুলের সাথে যোগাযোগ হলো ফোনে, তখনও ইয়ন বন্ধুর ম্যাসে অার ইয়নকে দেখে মনে হচ্ছে সে খুব অসহায়! অাসলেই কি ইয়ন অসহায়?
সাইফুল ইয়নকে রায়ের বাজার অাসতে বলল। ইয়ন জিগাতলা পর্যন্ত হাটলো তারপর একটা রিক্সা নিল। জিগাতলা থেকে ৪০ টাকার পথ রায়ের বাজার। পকেটে ১৬৫ টাকা নিয়ে ঢাকার শহরে দু-চার বার রিক্সায় চড়লেই টাকা ফুরুত হবে এ কথা ইয়ন ভালো করেই জানে, তাই যাওয়ার সময় রিক্সায় গেল অার পথ চিনতে থাকলো ফেরার পথে হেটে ফিরবে।
সাইফুলের চেহারায় বোঝা যায় না এই লোক ধোকা দিতে পারে কিন্তু অতিরিক্ত অাতিথীওতায় এহেন সন্দেহ হওয়াই স্বাভাবিক। যে ইয়নকে চাকরি দিবে সাইফুল তার কাছে ইয়নকে নিয়ে গেল, ইন্টারনেট লাইনের কাজ। যখন গ্রাহক ফোন দিবে তাদের সমস্যার সমাধান করতে হবে, অার নতুন সংযোগ দিতে হবে। কাজ বলতে এতটুকুই, ইয়নও কাজটা পেয়ে খুব খুশি।
তানভিরের ম্যাসে ফিরে ইয়ন দেখে তানভিরের অারেকজন বন্ধু এসেছে।
ইয়ন এতোক্ষণ কোথায় ছিল তা জানতে চেয়ে তানভির ওর হাত ধরে টেনে ছাদে নিয়ে গেল তারপর ফিসফিস করে বলল, দোস্ত তোকে যে কারনে এখানে এনেছি তার কারন হলো অামার ম্যাসে দুই জন এলাও না। তাছাড়া এই বন্ধু খুব বড়লোকের ছেলে, বিপদে পড়ে অামার কাছে উঠেছে, ওকে না করি কি করে। তুই যদি অাজকে অন্য কোথাও থাকতে পারতি!
রাত নয় টা বাজে। ইয়ন চা খাচ্ছে ১২৫ টাকা থেকে অারো ৮ টাকা কমলো, তানভিরের ম্যাস থেকে বের হয়েছে অাধ ঘন্টা অাগে।
দুজন গেস্ট থাকাটা কোন ব্যাপার না, তবুও তানভির ইয়নকে রাখতে চাইলো না। রাতের বেলা ইয়ন ম্যাস ছেড়ে বেরিয়ে গেল। কোথায় যাবে কি করবে এ সম্পর্কে তানভির কোন প্রশ্ন করলো না, তানভিরের হাবভাব দেখে বোঝা যায় তাড়াতে পারলে বাচে। বের হওয়ার সময় ইয়ন কিছু টাকা ধার চেয়েছিল জবাবে তানভির মিষ্টি করে বলে দিয়েছে বেতন পাই নি রে!
----------------------------------------------------------------
***গল্প: এইতো জীবন***
হাবিবুর রহমান অন্তনীল
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:২৩