somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চন্দ্রবিলাস ( হূমায়ূন আহমেদ স্মরণে )

১৯ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রথম পর্বঃ

হূমায়ূন নামের কাউকে হূমায়ূন সাহেব মোটেই দেখতে পারেন না। তার মতে পৃথিবীতে হূমায়ূন শুধুমাত্র দুজন। একজন বাদশা আকবরের পিতা হূমায়ূন, আরেকজন তিনি নিজেই। একজন বিখ্যাত, আরেকজন কুখ্যাত। নিজেকে কুখ্যাত অবশ্য তিনি নিজে বলেন না। তার ছেলে বলে। ছেলেটা হয়েছে তার মায়ের মত। তার দু’নম্বরী ধান্ধাকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করে মা-ব্যাটা। তাতে অবশ্য তার কিছু যায় আসেনা, তিনি তার ব্যবসা নিশ্চয়ই সস্তা কিছু আবেগের নীতিকথায় লাটে তুলতে পারেন না। তাই মা ছেলের ওইসব কথা তিনি এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে ওয়াশ বেসিনে ফেলে দেন। সেদিন তার অফিসে এক ছেলে ম্যানেজার পোস্টের জন্য ইন্টারভিউ দিতে এসেছে। সব টেস্ট পাশ ছেলেটা, সুদর্শন, সুশিক্ষিত, বিনয়ী। জয়েনের আগে সাক্ষাতের জন্য তার কেবিনে পাঠানো হয়েছে। ছেলেটাকে বসতে বলে নাম জানতে চাইলেন হূমায়ূন সাহেব। কিন্তু নামটা শুনেই ভুরু কুঁচকে তিনি ছেলেটাকে তৎক্ষণাৎ রিজেক্ট করে দিলেন। হূমায়ূন নামের কাউকে তিনি সহ্যই করতে পারেন না। ইদানিং আরেক হূমায়ূনকে নিয়ে পত্রিকায় বেশ লেখালেখি হচ্ছে। তার জীবনের যাবতীয় কর্ম, লেখালেখি এসব নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে, তার মৃত্যুতে মাতম করছে পুরো দেশবাসী! তিনি বোঝেন না, এতে এত আহামরির কি আছে! একটা মানুষ জন্ম নিল, খেয়ে-দেয়ে জীবন পার করল, তারপর টুপ করে মরে গেল; ব্যস ম্যাটার ফিনিশ, এইটা নিয়ে এত মাতামাতি করার কি আছে!

তিনি গজগজ করতে করতে পত্রিকা ছুঁড়ে ফেলে ড্রইংরুমের সোফাতে গিয়ে বসলেন। দিনের প্রথম সিগারেট জ্বালিয়ে একবুক ধোঁয়া ছাড়লেন। হঠাৎই তার চোখ গেল টি-পয়ে পড়ে থাকা একটা বইয়ের দিকে। কৌতূহলী হয়ে তিনি বইটা টেনে নিলেন। লাল কভারের একটা বই- ‘দ্বিতীয় মানব’। লেখকের নামটা পড়েই তার ভুরু কুঁচকে উঠল- হূমায়ূন আহমেদ! নিশ্চয়ই ছেলের কাজ, এখন এসব বইও পড়ে! উনি রাগে গজগজ করতে করতে বইটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন একপাশে। একমনে তিনি পরের সিগারেটটা জ্বালালেন। সিগারেটটা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, এমন সময় হঠাৎ কেন যেন তার মনে হল কেউ তার নাম ধরে ডাকছে!

: হূমায়ূন… এই হূমায়ূন… এইইইই….

তিনি এদিক ওদিক আশেপাশে মাথা ঘুরিয়ে দেখলেন। কিন্তু রুমে তিনি ছাড়া আর কেউই নেই! নিশ্চয়ই ভুল শুনেছেন। ভুলই হওয়া স্বাভাবিক, এই জগতে তাকে নাম ধরে ডাকবে এমন মানুষ নেই। বাবা মা ডাকতেন তারা তো সেই কবেই উপরে চলে গেছেন। আর তিনিও হূমায়ূন থেকে হূমায়ূন সাহেব হয়ে গেছেন। এখন তাকে নাম ধরে কেই বা ডাকতে পারে! মাথা ঝাঁকিয়ে তিনি আয়েশ করে সিগারেটের শেষটানটা দিলেন। তখনই আবার স্পষ্ট শুনতে পেলেন ডাকটা।

: হূমায়ূন… এই ব্যাটা এইইই…..

হূমায়ূন সাহেব নিজেকে কানকে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। উনি বাজি ধরে বলতে পারেন, ডাকটা এসেছে একপাশে মেঝেতে পড়ে থাকা ওই ছুঁড়ে ফেলা বইটা থেকেই!


দ্বিতীয় পর্বঃ

নিজের কানকে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছেন না হূমায়ূন সাহেব। কাঁপা হাতে বইটা তুলে নিলেন তিনি নিচু হয়ে। ব্ইটার দিকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন তিনি। কি করা উচিত ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না। রাত হলে নাহয় মেনে নিতেন নেশার ঘোরে ভুল শুনছেন। সাধারণত সন্ধ্যা হতেই তিনি তার প্রাইভেট রুমে বোতল নিয়ে বসে যান। কাল রাতেও বসেছিলেন। আচ্ছা কাল রাতে বেশি খেয়ে ফেলেননি তো! কিন্তু যতই গিলেন না কেন সকালে তিনি পুরোপুরি সজ্ঞানে থাকেন। তবে আজ তার কি হল! তিনি নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, এক বড় বাড়িতে একলা থাকায় নিশ্চয়ই তার নার্ভের ওপর প্রেশার পড়েছে, তার ওপর কালকের নেশারও কিছুটা প্রভাবে তিনি এসব উল্টোপাল্টা শুনছেন। ব্যাখ্যাটা মাথায় আসতেই কিছুটা স্বস্তি ফিরে এল তার। তিনি বইটা হালকা নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলেন। লাল কাভারের বইটার প্রচ্ছদে একটা বিমূর্ত মুখ আঁকা। তিনি পাতা ওলটালেন। হূমায়ূন আহমেদ নামটা দেখতেই তার পুরনো খুঁতখুঁতে ভাবটা ফিরে এল। লোকটার নাম যদু মধু রাম শ্যাম হলেও কোন আপত্তি ছিল না। কিন্তু হূমায়ূন নামটাতেই তার যত অ্যালার্জি। বইটাতে লেখকের একটা ছবিও দেয়া আছে। চশমাঢাকা বুদ্ধিদীপ্ত একজোড়া চোখ। চোখগুলোয় কেমন যেন মায়া আছে! হূমায়ূন সাহেব চেয়ে আছেন লেখক হূমায়ূন আহমেদের ছবির চোখে। তখনই হঠাৎ বইটা ওনার হাত থেকে পড়তে পড়তে কোনমতে উনি সামলে নিলেন। উনি স্পষ্ট দেখেছেন ছবির মানুষটার চোখের একটা পলক পড়ল!

হূমায়ূন সাহেবের বুক ধড়ফড় করছে। এমনিতে উনি হার্টের রোগী। বুঝতে পারছেন না এই অবস্হায় তার কি করা উচিত। শোনর ভুল বলে আগের ব্যাপাটা উড়িয়ে দিয়েছেন, এখন দেখার ভুল বলে এই ব্যাপারটা তো আর উড়িয়ে দিতে পারছেন না। তার কি মাথায় কোন প্রবলেম দেখা দিচ্ছে? বইটা আবার খুলে দেখা দরকার, কিন্তু উনি সেটা করতে সাহস পাচ্ছেন না। এবার খুলে কি না কি দেখেন আবার। কিন্তু কৌতুহলের কাছে তার সে ভয় বেশিক্ষণ টিকতে পারল না। উনি ধীরে ধীরে কাঁপা হাতে বইটা আবার খুললেন। খুলেই তার চোখ কপালে ওঠার জোগাড়! বইয়ের ভেতর মলাটের ছবিটায় লেখক হাসছেন! হূমায়ূন সাহেব চশমাটা খুলে নিয়ে ভাল করে মুছে আবার পড়লেন। না, ভুল দেখছেন না। লেখকের গাল বেয়ে ঝড়ে পড়া ঘামের বিন্দুটাও উনি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন! উনি বুঝতে পারছেন না কি হচ্ছে এসব! বইয়ের ভেতর ছবিটা জ্যান্ত হয়ে উঠেছে!

তখনই বইয়ের ভেতর থেকে লেখক গলা খাঁকারি দিলেন- : এভাবে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছিস কেন? সার্কাস দেখিস নাকি?

ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে হূমায়ূন সাহেব কি উত্তর দিবেন ভেবে পেলেন না। লেখক আবার বললেন-: খুব চায়ের তেষ্টা পেয়েছে। এক কাপ চা হবে? চিনি বেশি, পানি কম, লেবু চা। ছোট একটুকরো আদাও ছেড়ে দিতে পারো। গরাটা খুসখুস করছে খুব।

: আ…আ…আমি…..

: কি রে ব্যটা তোতলাচ্ছিস কেন? চা বানাতে পারিস তো?

হূমায়ূন সাহেব কি ফিট হয়ে যাবেন নাকি এই ধরণের ব্যাটা সম্বোধনে অপমান বোধ করবেন ঠিক করে উঠতে পারলেন না। কেবল হাঁ করে চেয়েই রইলেন।: মুখটা বন্ধ কর গাধা। বদখত গন্ধ আসছে তোর মুখ থেকে।

: আ…আপনি মানে… আপনি…

: হ্যাঁ আমি। তো কি হয়েছে? নিউটনের থার্ড লয়ের অবমাননা? যারে ব্যাটা, আগে চা নিয়ে আয়। আর হ্যাঁ, একটা সিগারেট দিয়ে যা। বহুদিন বুকে ধোঁয়া নিই না।

হূমায়ূন সাহেব কাঁপা হাতে একটা সিগারেট বাড়িয়ে দিলেন।: হাত নাইরে ব্যাটা। প্রকাশককে বলেছিলাম হাতসহ ছবি নিতে। উনি আবক্ষ ছবিই নিলেন। এখন হাত ছাড়া বড়ই কষ্টে আছি।

: তো এখন?

: খাইয়ে দে।

হূমায়ূন সাহেবের এ কথায় অপমান বোধ করা উচিত ছিল। কিন্তু উনি এখন একটা ঘোরের ভেতর আছেন। স্বাভাবিক কোন বোধ কাজ করছে না এখন তার মাথায়। তিনি সিগারেটটা জ্বালিয়ে ছবিটার মুখে ধরলেন। আশ্চর্য হয়ে তিনি খেয়াল করলেন, সিগারেটটা নিয়মিত বিরতিতে ধীরে ধীরে ছোট হচ্ছে আর ছবিটা থেকে ধোঁয়াও বেরোচ্ছে! আস্তে আস্তে শেষ হয়ে গেল সিগারেটটা। লেখক সাহেব একটা তৃপ্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন।

হূমায়ূন সাহেব মিনমিন করে বললেন,: এবার?

: চা এখন আর খাব না। কিন্তু, রেসিপিটা মনে রাখিস চায়ের, চিনি বেশি, পানি কম, লেবু চা। ছোট একটুকরো আদা।

: জ্বি আচ্ছা।

: হুমম, এখন একটা কলম আর দুই দিস্তা কাগজ নিয়ে আয়।

: এসব দিয়ে কি হবে?

: আরে ব্যাটা একটা গল্পের প্লট এসেছে মাথায়। লিখতে হবে।

: আপনার তো হাত নেই। লিখবেন কি করে?

: হাত নেই তো কি হয়েছে রে? তুই তো আছিস আমার হাত। তুইই লিখবি। আর আমি বলে যাব।

: আমি !!

: আরে ব্যাটা দেরী করিস না, প্লটটা মাথা থেকে পিছলে চলে যাবে। শেষে মাথায় হাতুড়ি পিটেও আর বেরোবে না।

হূমায়ূন সাহেব তন্নতন্ন করে খুঁজেও কাগজ পাওয়া গেল না। উনি ড্রাইভারকে কাগজ এনে দিতে বরলেন। ড্রাইভার আসতেই হূমায়ূন সাহেব খেয়াল করলেন লেখক পুরো চুপ। আর কোন শব্দ বা নড়াচড়া কিছুই নেই! বুঝলেন তিনি বড় চিপায় পড়েছেন। ইচ্ছে করলেই অবশ্য এ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। উনি ড্রাইভারকে বইটা দিয়ে দিলেন। : বইটা নিয়ে যাও।

: বই দিয়ে কি করব স্যার?

: কি করবে মানে কি? যা খুশি তাই করবে।

: যা খুশি তাই স্যার!

: আচ্ছা শোনো, পার্কে চলে যাও। ওখানে প্রথম যে বাদামওয়ালা পাবে তাকে বইটা দেবে। নিজে সামনে দাঁড়িয়ে থেকে বইটা তাকে দিয়ে ছেঁড়াবে। তারপর ওই পাতাগুলোর সবকয়টায় করে বাদাম বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত নিজে দাঁড়িয়ে থাকবে। এখন যাও।

ড্রাইভার চলে যেতেই হূমায়ূন সাহেব স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন। যাক আপদ গেছে। খুব ক্লান্ত লাগছে। হূমায়ূন সাহেব তার প্রিয় বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন। এমন সময় হঠাৎ তিনি শুনতে পেলেন কে যেন বলছে –: আমাকে এভাবে বিনা নোটিশে পাচার করে দিলি রে ব্যাটা?

হূমায়ূন সাহেবের সারা শরীর কেঁপে উঠল। পাশের বালিশটা সরাতেই দেখলেন বিছানার ওপর খোলা পড়ে আছে বইটা। আর লেখক তার দিকে চেয়ে নিঃশব্দে হাসছেন !!!


শেষ পর্বঃ

হূমায়ূন সাহেব লিখছেন। দরজা বন্ধ করে লিখছেন। পাতার পর পাতা লেখা হচ্ছে, থামাথামি নেই। বিরতি বলতে সেটুকুই যখন ছবির ভেতর হতে লেখক হূমায়ূন সাহেব সিগারেট কিংবা চায়ের বায়না করেন। এখন পর্যন্ত মোট দেড় প্যাকেট সিগারেট আর চার কাপ চা শেষ, যার মধ্যে তার কপালে জুটেছে মোটে দুইখানা সিগারেট আর আধা কাপ চা। তার কাপের অর্ধেক চা টাও লেখক সাবড়ে দিয়েছেন। চা খাওয়ার নিয়মটাও অদ্ভুত! চা টা আস্তে আস্তে বইটার ওপর ঢালতে হয়, আর ঢালতেই চা কি এক আশ্চর্য যাদুবলে ভ্যানিশ! বইটা পর্যন্ত ভিজেনা! এরইমধ্যে হূমায়ূন সাহেব বুঝে নিয়েছেন তাকে লেখকের কথামতই চলতে হবে এখন, মৃত্যুর পর এখন উনি এই বইটাতে এসেই ঘাঁটি করেছেন, আর সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে তাকে উনি নিজে ছাড়া আর কেউই দেখতে পাচ্ছে না! উনি অনেকক্ষণ ধরে এটাই ভেবে পাচ্ছেন না উনি উনার এত হাজার হাজার ভক্ত ফেলে এমন একজনকেই কেন বেছে নিলেন যে কিনা তাকে সহ্যই করতে পারে না! বাইরে থেকে নক হচ্ছে দরজায়। নিশ্চয়ই সাদ্দাম, তার সমস্ত পাপের দোসর।: কিরে দোস্ত, দরজা বন্ধ করে কি করিস, আজ আমাকে ছাড়াই শুরু!

হাজার ডাকেও আজ হূমায়ূন সাহেব সাড়া দিলেন না। বন্ধু বিরক্ত হয়ে চলে গেল। এরপর এল হূমায়ূন সাহেবের ডান হাত কুত্তা রানা। সে মানুষকে কুত্তার মত মারতে পারে। তাই ওর নাম হয়ে গেছে কুত্তা রানা।: বস দরজা খুলেন।

: কেন, কি হয়েছে?

: আমাদের গোডাউনে পুলিশের রেড পড়বে বস। সংবাদ আইছে।

: হুমম জানি। খবরটা পুলিশকে আমিই দিয়েছি।

: কি কন বস! ধান্ধার কি হইবো।

: কি হবে সেটা পরে দেখা যাবে, এখন তুমি পালাও, আর এসো না। পুলিশ তোমাকেও ধরতে পারে।

: কি কন এসব বস!

: হুমম, আর শোনো, এখন থেকে আর কুত্তার মত মানুষ মারবে না। নামের সাথে কুত্তা নামটা শোভা পায়না।

: বস, হাতে রক্ত না লাগলে ঘুম আয়ে না।

: তাহরে এক কাজ কর, ফার্মের মুরগীর দোকান দাও। তখন তোমার নাম হবে মুরগী রানা, অন্ততঃ কুত্তার চেয়ে ভাল। আর ওখানে ঘুম আনার মত যথেষ্ট রক্ত পাবে।

কুত্তা রানা কি বুঝে কে জানে মাথা নেড়ে সায় দিয়ে চলে গেছে এই শুনে।

সে যাই হোক এখন হূমায়ূন সাহেব লিখেই চলেছেন। এখন লিখে যাওয়া ছাড়া তার কোন উপায় নেই। তিনি একন সময়ের গন্ডিতে বাঁধা পড়ে গেছেন। লেখকের অনুচ্চ উদ্বেলিত কন্ঠের সাথে কাল রেখে উনি যন্ত্রের মত লিখে চলেছেন। অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন হূমায়ূন সাহেব খামখেয়ালী লেখককে তার এখন আর তেমনটা খারাপও লাগছে না!

১ বছর পরঃহূমায়ূন সাহেব এবছর একুশে সাহিত্য পুরষ্কারটা পেয়েছেন। আরো বেশ অনেকগুলো সম্মাননাও পেয়েছেন। এখন তার লেখা গল্প উপন্যাস মানুষের মুখে মুখে। মানুষ বলে তার লেখায় যেন দ্বিতীয় হূমায়ূন আহমেদ ফিরে এসেছে। তার যাবতীয় সমস্ত অপকর্ম থেকে তিনি এখন অনেক দূরে সরে এসেছেন। সবাই তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেও তিনি জানেন এ প্রাপ্য তার নয়। তাই তিনি পুরষ্কার নিয়েই তার কাছেই ছুটছেন এটা যার আদতে পাওনা। গত এক বছর উনি শুধুমাত্র ছবিতে থাকা লেখকের বলা গল্পই শুধু লিখে গেছেন। হূমায়ূন সাহেবের চোখে পানি চলে আসছে, হূমায়ূন আহমেদ তার জীবনটাই পুরো আমূল পালটে দিয়েছেন!ঘরে ফিরেই উনি তাড়াতাড়ি বইটা খুললেন। লেখককে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে হবে তার। কিন্তু বইটা খুলতেই সেখানে আর কোন ছবি পাওয়া গেল না। ছবির জায়গায় কালো কালিতে সুন্দর হস্তাক্ষরে লেখা আছে,

“প্রিয় হূমায়ূন,অনেক ভালোবাসা নিও। এই এক বৎসর কাল তোমার ঘাড়ে চড়ে অনেক বিরক্ত করেছি তোমায়। সারাক্ষণ জ্বালিয়েছি, যা তোমার পছন্দ নয় তাও করতে বাধ্য করেছি। কিন্তু বিশ্বাস কর এটাই ছিল তোমার নিয়তি, যে তুমি একজন বড় লেখক হবে। আমি শুধু তোমাকে তোমার সে নিয়তির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি মাত্র। আমার লেখার একজন উত্তরসূরী বড় প্রয়োজন ছিল আমার। আর এজন্য আমি ঠিকই বুঝেছিলাম যে তুমিই সবচে যোগ্য। এই পুরষ্কার আজ তোমার প্রাপ্য, তোমার লেখা প্রতিটি লাইন তোমার কল্পনা প্রসূত, সেখানে আমার কোন অবদান নেই। আমি শুধু তোমার অবচেতন মন থেকে তোমায় প্রেরণা দিয়েছি, সামনে এগোবার। এখন তুমি সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আর আমার প্রয়োজন নেই। তাই আমি যাচ্ছি আমার নির্ধারিত গন্তব্যে, অন্য কোন নবীন লেখকের মগজে ঘর বাঁধতে। তুমি ভাল থেকো হূমায়ূন, থেকো সৃষ্টির সাথে।

ইতি
একজন চন্দ্রাহত মানুষ”

বই বন্ধ করে একমনে বেশ কিছুক্ষণ বইটার দিকে চেয়ে রইলেন হূমায়ূন সাহেব। তার চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝড়ছে। কি মনে হতেই তিনি বইটা আবার খুললেন, আর অবাক হয়ে দেখলেন পাতাটায় কিছুই লেখা নেই !!!

।। সাতকাহন ।।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×